Ajker Patrika

অফিসেই সহকর্মীকে ধর্ষণচেষ্টা, ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজশাহীতে সহকর্মীকে ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্ত রেলওয়ের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে শুধু রাজশাহী থেকে বদলি করে পাবনার পাকশীতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। উল্টো ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযুক্ত কর্মচারীর নাম খালেক সিকদার। তিনি রেলওয়ের একজন ফেরো প্রিন্টার। আগে তিনি রাজশাহীতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের (সিএমই) দপ্তরে কর্মরত ছিলেন।

ওই দপ্তরেই তিনি সহকর্মীকে ধর্ষণচেষ্টা চালান গত বছরের ৭ মে। এ ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিকে এখনো সাময়িক বরখাস্ত করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে গত বছরের ২০ জুন নগরের চন্দ্রিমা থানায় মামলা করেন। তদন্তে পুলিশ প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে খালেক সিকদারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

তবে এখনো খালেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তদন্তের নামে গড়িমসি করার অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগমতে, ঘটনার দিন বিকেলে অফিস শেষে খালেক সিকদার ছাড়া সবাই চলে যান। তিনিও বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মোবাইল ফোন নিয়ে বের হতে ভুলে যান। তিনি মোবাইল ফোনটি নিতে গেলে তাঁকে জাপটে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা চালান।

এ সময় ধস্তাধস্তি হলে তিনি আহত হন। পরদিন তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। তখন যন্ত্র প্রকৌশলী (সদর) ফজলে রব দুজনকে ডাকেন। সেখানে খালেক নিজের অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চান। কিন্তু খালেক সিকদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ঘটনার এক মাস পর ৬ জুন রেলওয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন ডেপুটি সিওপিএস হাসিনা খাতুন। তাঁকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কিন্তু তিনি প্রতিবেদন দিতে গড়িমসি শুরু করেন। এ জন্য ২০ জুন থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। ইতিমধ্যে পুলিশ এ মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে।

ভুক্তভোগী নারী জানান, অভিযুক্ত খালেকের সঙ্গে হাসিনা খাতুনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ফলে তিনি প্রতিবেদনই দিচ্ছিলেন না। অবশেষে প্রায় ছয় মাস পর তিনি একটি তদন্ত প্রতিবেদন দেন, যাতে তিনি ঘটনার সত্যতা পাননি বলে উল্লেখ করেন। উল্টো ওই প্রতিবেদনে ভুক্তভোগী নারীকেই কটাক্ষ করা হয়। ওই প্রতিবেদনকে মনগড়া বলছেন ভুক্তভোগী নারী।

হাসিনার ওই প্রতিবেদনে প্রকৃত ঘটনা উঠে না আসায় ওই নারী রাজশাহী মহিলা সহায়তা কর্মসূচিতে অভিযোগ করেন। এ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহবুবা সুলতানা অবশ্য সরেজমিন তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পান। তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এ ঘটনায় হাসিনা খাতুনকে তদন্তে রাখা উচিত হয়নি। বাহ্যিক প্রভাবের চেষ্টা ছিল, যা আমি নিজ চোখে দেখেছি।’

অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে আজ বুধবার দুপুরে হাসিনা খাতুনকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। অভিযুক্ত ফেরো প্রিন্টার খালেক সিকদারও ফোন ধরেননি। তাই তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, ডেপুটি সিওপিএস হাসিনা খাতুনের সঙ্গে পূর্ববিরোধ ছিল তাঁর। আর খালেকের সঙ্গে ছিল সুসম্পর্ক। এ জন্য তিনি ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে খালেকের পক্ষে প্রতিবেদন দেন।

শুধু তা-ই নয়, হাসিনা খাতুন ঈশ্বরদীতে বদলি হয়ে যাওয়ার পর খালেককেও সেখানে নিয়ে যান। বর্তমানেও একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তবে ঈশ্বরদী থেকে হাসিনা ও খালেক তদন্ত কমিটিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বলে তাঁর অভিযোগ।

ভুক্তভোগী নারী জানান, ঘটনার কিছুদিন পর খালেক সিকদারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। তবে তদন্তপ্রক্রিয়া শেষ না হতেই তাঁর বরখাস্ত তুলে নেওয়া হয়েছে। তাঁকে ঈশ্বরদীতে বদলি করা হয়েছে। হাসিনার তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকৃত ঘটনা উঠে না আসার কারণে রেল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি আরও একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছে।

ভুক্তভোগী নারী দাবি করেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, হাসিনা খাতুন এই কমিটিকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন, যাতে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরা না হয়। প্রকৃত ঘটনা উঠে এলে তাঁর প্রতিবেদন মিথ্যা প্রমাণিত হবে—এ জন্যই তিনি এটি করছেন।

‘অভিযোগপত্র দাখিল হলে নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে খালেক সিকদারকে চাকরিতে বহাল রাখা হয়েছে।’

জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘খালেকের বিষয়টা আমি জানি। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে, এটা আমার নলেজে নেই। অভিযোগপত্র দাখিল হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে আসার আগে একবার তদন্ত হয়েছিল। সেই রিপোর্ট আমি দেখিনি। আমি আসার পরে আবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। আশা করছি, দ্রুতই প্রকৃত ঘটনা এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আসবে। তারপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

জি এম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা ও মামলা প্রত্যাহার

ভারতকে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

প্লট–ফ্ল্যাট বরাদ্দে সচিব, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিসহ যাঁদের কোটা বাতিল

জর্ডান-মিসরকে নিয়ে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করতে চান নেতানিয়াহু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত