ফারাক্কার ফাঁদে ৫০ বছর
রিমন রহমান, রাজশাহী
একসময় রাজশাহী অঞ্চলের প্রাণ ছিল পদ্মা নদী। এই নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল মানুষের জীবিকা ও সভ্যতা। প্রমত্তা পদ্মার বুকে মাছ ধরেই দিন চলত হাজারো জেলের। দূর থেকে শোনা যেত নদীর গর্জন। কিন্তু সেই দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি। পদ্মার যৌবন হারিয়ে গেছে অনেক আগেই। পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীর আয়তন এখন অর্ধেকেরও কম, গভীরতাও নেই আগের মতো। যেখানে একসময় ঢেউ খেলত উত্তাল পানি, সেখানে আজ বিস্তীর্ণ বালুচর। প্রমত্তা পদ্মা এখন এক বিবর্ণ মরুভূমি। এর ফলে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের নদীকেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে কৃষির ভবিষ্যৎ।
পদ্মার এই মরণদশার শুরু ৫০ বছর আগে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে উজানে ১৮ কিলোমিটার ভেতরে ফারাক্কা বাঁধ চালু করে ভারত। সেই বাঁধ পদ্মার পানি ঢুকিয়ে দিয়েছে ভাগীরথী নদীতে। এর ফলে সচল থাকছে কলকাতা বন্দর। ফারাক্কা বাঁধের দক্ষিণের অংশ সব সময় পানিতে ডুবে থাকলেও উত্তরে জেগে থাকে চর।
বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের সাত গবেষক সম্প্রতি রাজশাহীতে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন। এটি স্প্রিঙ্গার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৭৪ সালে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় প্রতি সেকেন্ডে পানিপ্রবাহ ছিল ৩ হাজার ৬৮৫ ঘনমিটার। তবে ১৯৭৫ সালে ফারাক্কা বাঁধ উদ্বোধনের পর এখন শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ কমে ১ হাজার ৭৬ ঘনমিটারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ৫০ বছরে পদ্মার প্রবাহ কমেছে ২৬০৯ ঘনমিটার, হ্রাস পেয়েছে ৭১ শতাংশ। বর্তমানে পদ্মায় প্রবাহ রয়েছে মাত্র ২৯ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, পদ্মায় এভাবে পানি প্রত্যাহার অব্যাহত থাকলে আগামীতে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি বড় অংশ মরুকরণের দিকে চলে যেতে পারে। তাঁরা সতর্ক করেছেন, যদি আন্তর্জাতিক পানিবণ্টন চুক্তি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন না হয় এবং বর্ষাকালে পানি সংরক্ষণে বিকল্প পানির উৎসের উন্নয়ন না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
সারা দেশের নদ-নদী নিয়ে গবেষণা করেন হেরিটেজ রাজশাহীর প্রতিষ্ঠাতা মাহবুব সিদ্দিকী। তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত পদ্মার মূল দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। এই এলাকায় মহানন্দ, পাগলা, পুনর্ভবা, বড়াল, গড়াই, নারদ, হোজা, ভৈরব, বারনই, মুছাখান, ইছামতী, কালীগঙ্গা, ধলাই, হুড়াসাগর, চিকনাই, মাথাভাঙ্গা, নবগঙ্গা, চিত্রা, বেতনা, কালীকুমার, হরিহর, কাজল, হিসনা, সাগরখালী, চন্দনা, বেলাবতসহ পদ্মার শতাধিক শাখানদীর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। উৎসমুখে পানি না পেয়ে ২৫টি নদী তো একেবারেই শেষ হয়ে গেছে। এর ফলে কৃষিকাজে কৃষক আর নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। শ্যালো কিংবা গভীর নলকূপ বসিয়ে তাঁদের ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে হচ্ছে চাষাবাদের জন্য। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে এসব অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতিতে।
ভারতের গঙ্গা নদী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে পদ্মা নামে। এরপর রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ী দিয়ে গিয়ে এই নদী যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। যমুনার এই মিলিত স্রোতও পদ্মা নামেই প্রবাহিত হয়। তারপর মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর হয়ে চাঁদপুরে গিয়ে পদ্মা নদী মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এই মিলনের পর নদীর নাম হয়েছে মেঘনা। এই মেঘনা পতিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। উজানেই ব্যারাজ নির্মাণ করে পদ্মার পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বাংলাদেশের বিশাল এলাকাজুড়ে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে যেতে হয় পদ্মা পাড়ি দিয়ে। এই ইউনিয়নের জোতকাদিরপুর গ্রামের বাসিন্দা মোকসেদুর রহমান। ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি খরস্রোতা পদ্মার যৌবন দেখেছেন। এখন বছরের বেশির ভাগ সময় পদ্মায় পানি থাকে না। মোকসেদুর রহমানের মতে, পদ্মা এখন তিন মাসের নদী। বাকি সময় এটি মরুভূমি ছাড়া আর কিছু না।
মোকসেদুর রহমান বলেন, ‘ভারত যখন ফারাক্কা বাঁধ করল, তখন থেকেই পদ্মা নদীতে পানি কমতে থাকল। ২০০০ সালের দিকেও পদ্মার গর্জন শোনা যেত। কিন্তু এখন কোনো সময় নদীর ডাক শোনা যায় না। বছরের বেশির ভাগ সময়ই তো পানি থাকে না। ধু ধু বালুচর হেঁটেই নদী পার হতে হয়। বছরের তিনটি মাস আমরা নৌকায় পুরো নদী পার হতে পারি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফিজুর রহমান কয়েকজন ভারতীয় গবেষকের সঙ্গে যৌথভাবে ফারাক্কা ব্যারাজের প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, পদ্মায় এখন প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত পানি থাকে না। এই সময় সরু একটি জলধারা প্রবাহিত হলেও তাতে স্রোত থাকে না। কারণ, তখন ভারত ফারাক্কার মাধ্যমে গঙ্গার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বর্ষায় বৃষ্টিপাত হয় বলে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। তখন পানি ছাড়া হয়। ফলে ওই সময়ে পদ্মায় পানি থাকে, কিন্তু শীত শেষ হওয়ার আগেই পদ্মায় চর পড়তে থাকে।
এদিকে নদীতে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বর্ষা মৌসুমে বারবার বন্যা হচ্ছে। কারণ নদী অতিরিক্ত পানি ধারণ করতে পারছে না। এ ছাড়া নদী শুকিয়ে যাচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদি খরা সৃষ্টি হচ্ছে, যা কৃষি, জীববৈচিত্র্য এবং জীবন-জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামস মুহা. গালিব জানান, পদ্মায় একসময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। পদ্মায় মাছ ধরে হাজার হাজার পরিবারের সংসার চলত। গবেষণায় তাঁরা দেখেছেন, এখন পদ্মায় মাছের প্রাচুর্যও কমেছে। উপায় না পেয়ে হাজার হাজার জেলে পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে লক হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামানের গবেষণায় উঠে এসেছে, পদ্মায় পানি না থাকায় কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। শাখানদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় পলি জমা বন্ধ হয়ে পড়ছে। ফলে প্রতিবছর বর্ষার পলি জমে যে প্রাকৃতিক সার তৈরি হতো, তা আর হয় না। পদ্মার পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় সমুদ্রের লবণাক্ত পানি এখন আরও উত্তর দিকে ঢুকে পড়ে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষিজমি লবণাক্ত হয়ে অনেক এলাকায় ধান ও সবজি চাষ বন্ধ হয়ে গেছে। পানিসংকটের কারণে নদীতীরবর্তী এলাকা শুকিয়ে ধীরে ধীরে মরু অঞ্চলের মতো হয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষির পাশাপাশি বাস্তুতন্ত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে ১৯৭৭ সালে প্রথম গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি সই হয়। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে ৩০ বছরের জন্য চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রতি ১০ দিন পরপর ৩৫ হাজার কিউসেক পানি ভাগ করে নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন। পানিবণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছর। এবার বাংলাদেশকে বাঁচাতে নায্য হিস্যা আদায় করেই ভারতের সঙ্গে পানিবণ্টন চুক্তি করার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে পদ্মাকে বাঁচাতে হবে। যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে একটি বিধ্বংসী পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। কেননা, যত সময় যাচ্ছে সংকট আরও গভীর হচ্ছে। এ অবস্থা মোকাবিলায় বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে অববাহিকাভিত্তিক সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণও জরুরি।’
একসময় রাজশাহী অঞ্চলের প্রাণ ছিল পদ্মা নদী। এই নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল মানুষের জীবিকা ও সভ্যতা। প্রমত্তা পদ্মার বুকে মাছ ধরেই দিন চলত হাজারো জেলের। দূর থেকে শোনা যেত নদীর গর্জন। কিন্তু সেই দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি। পদ্মার যৌবন হারিয়ে গেছে অনেক আগেই। পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীর আয়তন এখন অর্ধেকেরও কম, গভীরতাও নেই আগের মতো। যেখানে একসময় ঢেউ খেলত উত্তাল পানি, সেখানে আজ বিস্তীর্ণ বালুচর। প্রমত্তা পদ্মা এখন এক বিবর্ণ মরুভূমি। এর ফলে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের নদীকেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে কৃষির ভবিষ্যৎ।
পদ্মার এই মরণদশার শুরু ৫০ বছর আগে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে উজানে ১৮ কিলোমিটার ভেতরে ফারাক্কা বাঁধ চালু করে ভারত। সেই বাঁধ পদ্মার পানি ঢুকিয়ে দিয়েছে ভাগীরথী নদীতে। এর ফলে সচল থাকছে কলকাতা বন্দর। ফারাক্কা বাঁধের দক্ষিণের অংশ সব সময় পানিতে ডুবে থাকলেও উত্তরে জেগে থাকে চর।
বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের সাত গবেষক সম্প্রতি রাজশাহীতে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন। এটি স্প্রিঙ্গার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৭৪ সালে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় প্রতি সেকেন্ডে পানিপ্রবাহ ছিল ৩ হাজার ৬৮৫ ঘনমিটার। তবে ১৯৭৫ সালে ফারাক্কা বাঁধ উদ্বোধনের পর এখন শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ কমে ১ হাজার ৭৬ ঘনমিটারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ৫০ বছরে পদ্মার প্রবাহ কমেছে ২৬০৯ ঘনমিটার, হ্রাস পেয়েছে ৭১ শতাংশ। বর্তমানে পদ্মায় প্রবাহ রয়েছে মাত্র ২৯ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, পদ্মায় এভাবে পানি প্রত্যাহার অব্যাহত থাকলে আগামীতে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি বড় অংশ মরুকরণের দিকে চলে যেতে পারে। তাঁরা সতর্ক করেছেন, যদি আন্তর্জাতিক পানিবণ্টন চুক্তি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন না হয় এবং বর্ষাকালে পানি সংরক্ষণে বিকল্প পানির উৎসের উন্নয়ন না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
সারা দেশের নদ-নদী নিয়ে গবেষণা করেন হেরিটেজ রাজশাহীর প্রতিষ্ঠাতা মাহবুব সিদ্দিকী। তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত পদ্মার মূল দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। এই এলাকায় মহানন্দ, পাগলা, পুনর্ভবা, বড়াল, গড়াই, নারদ, হোজা, ভৈরব, বারনই, মুছাখান, ইছামতী, কালীগঙ্গা, ধলাই, হুড়াসাগর, চিকনাই, মাথাভাঙ্গা, নবগঙ্গা, চিত্রা, বেতনা, কালীকুমার, হরিহর, কাজল, হিসনা, সাগরখালী, চন্দনা, বেলাবতসহ পদ্মার শতাধিক শাখানদীর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। উৎসমুখে পানি না পেয়ে ২৫টি নদী তো একেবারেই শেষ হয়ে গেছে। এর ফলে কৃষিকাজে কৃষক আর নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। শ্যালো কিংবা গভীর নলকূপ বসিয়ে তাঁদের ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে হচ্ছে চাষাবাদের জন্য। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে এসব অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতিতে।
ভারতের গঙ্গা নদী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে পদ্মা নামে। এরপর রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ী দিয়ে গিয়ে এই নদী যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। যমুনার এই মিলিত স্রোতও পদ্মা নামেই প্রবাহিত হয়। তারপর মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর হয়ে চাঁদপুরে গিয়ে পদ্মা নদী মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এই মিলনের পর নদীর নাম হয়েছে মেঘনা। এই মেঘনা পতিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। উজানেই ব্যারাজ নির্মাণ করে পদ্মার পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বাংলাদেশের বিশাল এলাকাজুড়ে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে যেতে হয় পদ্মা পাড়ি দিয়ে। এই ইউনিয়নের জোতকাদিরপুর গ্রামের বাসিন্দা মোকসেদুর রহমান। ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি খরস্রোতা পদ্মার যৌবন দেখেছেন। এখন বছরের বেশির ভাগ সময় পদ্মায় পানি থাকে না। মোকসেদুর রহমানের মতে, পদ্মা এখন তিন মাসের নদী। বাকি সময় এটি মরুভূমি ছাড়া আর কিছু না।
মোকসেদুর রহমান বলেন, ‘ভারত যখন ফারাক্কা বাঁধ করল, তখন থেকেই পদ্মা নদীতে পানি কমতে থাকল। ২০০০ সালের দিকেও পদ্মার গর্জন শোনা যেত। কিন্তু এখন কোনো সময় নদীর ডাক শোনা যায় না। বছরের বেশির ভাগ সময়ই তো পানি থাকে না। ধু ধু বালুচর হেঁটেই নদী পার হতে হয়। বছরের তিনটি মাস আমরা নৌকায় পুরো নদী পার হতে পারি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফিজুর রহমান কয়েকজন ভারতীয় গবেষকের সঙ্গে যৌথভাবে ফারাক্কা ব্যারাজের প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, পদ্মায় এখন প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত পানি থাকে না। এই সময় সরু একটি জলধারা প্রবাহিত হলেও তাতে স্রোত থাকে না। কারণ, তখন ভারত ফারাক্কার মাধ্যমে গঙ্গার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বর্ষায় বৃষ্টিপাত হয় বলে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। তখন পানি ছাড়া হয়। ফলে ওই সময়ে পদ্মায় পানি থাকে, কিন্তু শীত শেষ হওয়ার আগেই পদ্মায় চর পড়তে থাকে।
এদিকে নদীতে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বর্ষা মৌসুমে বারবার বন্যা হচ্ছে। কারণ নদী অতিরিক্ত পানি ধারণ করতে পারছে না। এ ছাড়া নদী শুকিয়ে যাচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদি খরা সৃষ্টি হচ্ছে, যা কৃষি, জীববৈচিত্র্য এবং জীবন-জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামস মুহা. গালিব জানান, পদ্মায় একসময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। পদ্মায় মাছ ধরে হাজার হাজার পরিবারের সংসার চলত। গবেষণায় তাঁরা দেখেছেন, এখন পদ্মায় মাছের প্রাচুর্যও কমেছে। উপায় না পেয়ে হাজার হাজার জেলে পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে লক হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামানের গবেষণায় উঠে এসেছে, পদ্মায় পানি না থাকায় কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। শাখানদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় পলি জমা বন্ধ হয়ে পড়ছে। ফলে প্রতিবছর বর্ষার পলি জমে যে প্রাকৃতিক সার তৈরি হতো, তা আর হয় না। পদ্মার পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় সমুদ্রের লবণাক্ত পানি এখন আরও উত্তর দিকে ঢুকে পড়ে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষিজমি লবণাক্ত হয়ে অনেক এলাকায় ধান ও সবজি চাষ বন্ধ হয়ে গেছে। পানিসংকটের কারণে নদীতীরবর্তী এলাকা শুকিয়ে ধীরে ধীরে মরু অঞ্চলের মতো হয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষির পাশাপাশি বাস্তুতন্ত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে ১৯৭৭ সালে প্রথম গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি সই হয়। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে ৩০ বছরের জন্য চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রতি ১০ দিন পরপর ৩৫ হাজার কিউসেক পানি ভাগ করে নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন। পানিবণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছর। এবার বাংলাদেশকে বাঁচাতে নায্য হিস্যা আদায় করেই ভারতের সঙ্গে পানিবণ্টন চুক্তি করার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে পদ্মাকে বাঁচাতে হবে। যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে একটি বিধ্বংসী পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। কেননা, যত সময় যাচ্ছে সংকট আরও গভীর হচ্ছে। এ অবস্থা মোকাবিলায় বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে অববাহিকাভিত্তিক সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণও জরুরি।’
লালমনিরহাটে সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে মারুফ হোসেন (২২) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের সাতপাটকি এলাকার জহুরুলের বাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় রহিম মিয়া (৩০) নামের আরেক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন।
২ মিনিট আগেজাতীয়তাবাদী মহিলা দল খুলনা মহানগর শাখার ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আজ শনিবার কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া অতিসত্বর খুলনা মহানগর শাখা কমিটি গঠন করা হবে বলে...
২৫ মিনিট আগেইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহ সভাপতি ও বিসিসি নির্বাচনে হাতপাখার মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন, ‘দেশে বিচার পাওয়ার সুযোগ ছিল না। ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে। তাই বরিশাল সিটি নির্বাচনে ফলাফল বাতিল ও তাকে নির্বাচিত করার জন্য আদালতে মামলা দায়ের করেছি।
২ ঘণ্টা আগেবরগুনার তালতলীতে এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি ইব্রাহীম ওরফে জসিমকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে তালতলী থানা-পুলিশ। শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বরগুনা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হলৈ তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ইব্রাহীম ওরফে জসিম পাথরঘাটা উপজেলার...
২ ঘণ্টা আগে