Ajker Patrika

সংকট নিরসনে ভ্যানে করে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ

বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি 
সংকট নিরসনে ভ্যানে করে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ

তীব্র তাপপ্রবাহে নাকাল মানুষ। এর ওপর অনাবৃষ্টি ও তীব্র খরায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। পানির জন্য হাহাকার মানুষের। এমন অবস্থায় ব্যক্তি উদ্যোগে ভ্যানে করে সুপেয় পানি সরবরাহ করছেন এক স্কুলশিক্ষক রতন কুমার ভৌমিক।

রতন কুমার রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের বাউসা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি ব্যাংক এশিয়ার বাউসা বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার পরিচালক। নিজ অর্থায়নে তাঁর এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, ফসলি জমিতে সেচেসহ দৈনন্দিন নিত্য-প্রয়োজনীয় কাজ ব্যাহত হচ্ছে পানি সংকটের কারণে। দীর্ঘ ৬ মাস বৃষ্টি না হওয়ায় উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। একটু পানির জন্য হাহাকার মানুষের। শুধু ফল, ফসল আর গবাদিপশু নয় জনজীবনে বিরাজ করছে অস্বস্তি।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার বাউসা বাজারে নিজ সাবমার্সেবল (জল মোটর) থেকে পানি নিয়ে উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের আড়ানী রেল স্টেশন, নূননগর, বেড়েরবাড়ি, হরিপুর, বাউসা ইউনিয়নের বাউসা বেনুপুর, হাট বাউসা, বাউসা মিয়াপাড়া, টাউরিপাড়া, তেনাচুরা, সরকারপাড়া, ভেড়ালিপাড়া, পূর্বপাড়া গ্রামে প্রতিদিন পানি সরবরাহ করছেন।

বাউসা মিয়াপাড়া গ্রামের সুমাইয়া আক্তার রিয়া বলেন, ‘গ্রামে টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। সাংসারিক নানা প্রয়োজনে পানি দরকার। এ সময়ে আমাদের পাশ দাঁড়িয়েছেন রতন দাদা। তার দেওয়া পানিতে আমরা উপকৃত হচ্ছি।’

বাউসা বাজারের চা দোকানি রাজা মিয়া বলেন, ‘আশপাশে কোনো টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। পানি সংকটে মনে হচ্ছিল দোকান চালাতে পারব না। এমন সময় রতন ভৌমিকের ঘোষণা পানি প্রয়োজন হলে মুঠোফোনে জানাবেন পৌঁছে যাবে পানি। পানি পেয়ে চা দোকান সুন্দরভাবে চালিয়ে উপকৃত হচ্ছি।’

জানা গেছে, রাজশাহীর পূর্ব দক্ষিণ বাঘা-চারঘাট উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদী শুকিয়ে খাঁ-খাঁ করছে। উপজেলার আড়ানী পৌর এলাকা দিয়ে বয়ে বড়াল নদসহ অন্য শাখা নদীগুলো মৃত প্রায়। বর্তমানে খাল-বিলসহ প্রায় নদীতেও মাছের পরিবর্তে চাষ হচ্ছে নানা ফসল, নিধন করা হচ্ছে গাছপালা। এতে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশই নিচে নামছে। ক্রমশ মানুষের মধ্যে বাড়ছে পানির জন্য হাহাকার।

পানিবাহী ভ্যানগাড়ির চালক আজব আলী বলেন, ‘রতন দাদা এমন কাজকে সমর্থন জানিয়ে চারজন ভ্যান চালক পানি সরবরাহ করছি। ভাড়া যাইহোক এ কাজ করে আনন্দ পাচ্ছি। বিভিন্ন এলাকা থেকে মুঠোফোনে পানি প্রয়োজনের বিষয়ে জানালে পানি পৌঁছে দিচ্ছি।’

রতন কুমার ভৌমিক বলেন, ‘মানুষ চাইলেও প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতে পারছে না। তাই জনস্বার্থে নিজ অর্থায়নে পানি বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সংকট থাকা পর্যন্ত নিয়মিত পানি সরবরাহ চালিয়ে যাওয়া চেষ্টা করব।’

উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ের প্রকৌশলী মিঠন কুমার রবি দাস বলেন, ভূ-গর্ভস্থ পানি স্তর ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচে নেমে যাওয়ায় পানি পেতে সমস্যা হচ্ছে। তীব্র তাপপ্রবাহ, অনাবৃষ্টি, পুকুর খনন, জলাশয় ভরাট, গভীর নলকূপের বসানো কারণে এলাকার পানিস্তর নেমে যাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, পানির স্তর নেমে যাওয়ার দেখা দিয়েছে সংকট। শুনেছি উপজেলার অনেকে বাউসা এলাকায় রতন কুমার ভৌমিকের মতো ভ্যান গাড়িতে করে গ্রামের লোকজনের বাড়ি ও বাজারের দোকানগুলোতে নিজ উদ্যোগে পানি সরবরাহ করছেন। কাজ সত্যই প্রশংসার যোগ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত