Ajker Patrika

দূরের জেলায় বদলির আদেশ বাতিল উপসহকারী প্রকৌশলীর, পদায়ন পাশের উপজেলায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী 
উপসহকারী প্রকৌশলী সমসের আলী। ছবি: সংগৃহীত
উপসহকারী প্রকৌশলী সমসের আলী। ছবি: সংগৃহীত

অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নাটোর সদর উপজেলা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী সমসের আলীকে এক সপ্তাহ আগে তাৎক্ষণিক বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়েছিল। আজ বুধবার তাঁর যোগ দেওয়ার কথা ছিল কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায়। কিন্তু এক দিন আগে গতকাল মঙ্গলবার বদলির আদেশ বাতিল করে সমসের আলীকে নাটোরের লালপুরে পদায়ন করা হয়।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপসহকারী প্রকৌশলী সমসের আলী নাটোর সদরের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শফিকুল ইসলাম শিমুলের লোক হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের এই সাবেক এমপি নিজে এলজিইডির সব কাজ করতেন। তাঁর কাজ তুলে দিতেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আকরামুল ইসলাম আক্কু ওরফে আক্কু বিহারি ও এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী সমসের আলী। এভাবে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন সমসের।

সম্প্রতি আক্কু বিহারি ও সমসের আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয় এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন দপ্তরে। অভিযোগে ১৮ কোটি টাকার একটি রাস্তার কাজে ব্যাপক অনিয়ম তুলে ধরা হয়।

অভিযোগে বলা হয়, নাটোর এলজিইডির রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (আরসিআইপি) প্রকল্পের অধীনে নাটোর সদরের দত্তপাড়া থেকে নাজিরপুর ভায়া হালসা পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার রাস্তার কাজটি করেন নাটোরের তৎকালীন এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল। এ কাজের জন্য খায়রুল কবীর রানা নামের রংপুরের একটি লাইসেন্স ব্যবহার করা হয়। শিমুলের হয়ে কাজটি করছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আক্কু বিহারি ও উপসহকারী প্রকৌশলী সমসের আলী। দুই বছর আগে কাজটি শুরু হয়। এর মধ্যে আওয়ামী সরকারের পতনের পর শিমুল ও তাঁর আস্থাভাজন ঠিকাদার আক্কু বিহারি পালিয়ে যান। পরে একা সমসের কাজটি শেষ করতে পারেননি। এর মধ্যে কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এলজিইডি নতুন করে মেয়াদও বাড়ায়নি।

অভিযোগে ওই কাজের সুনির্দিষ্ট ১০টি অনিয়মের কথা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ওই রাস্তার কাজে পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী টেন্ডার ইনস্যুরেন্স করা হয়নি। এর মধ্যে যে কাজ হয়েছে, তা স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী হয়নি। সম্পাদন হয়নি ল্যাব টেস্ট। পাথরের মান ঠিক নেই। কার্পেটিংয়ের সময় স্টোন ডাস্টের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে বালু। পাড়ে ৫ শতাংশ বিটুমিন দেওয়ার কথা থাকলেও বড়জোর ৪ শতাংশ দেওয়া হয়েছে। বিটুমিনও নিম্নমানের। ডব্লিউবিএম থিকনেস ঠিক নেই। পুরোনো রাস্তার খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে নতুন রাস্তায়। অন্য নির্মাণসামগ্রীর অনুপাত ঠিক নেই। শিমুলের কাজ বলে কেউ কিছু বলার সাহস পায়নি।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, এই অভিযোগ পাওয়ার পর প্রকৌশলী সমসের আলীকে ১৯ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা কার্যালয়ে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাঁকে কিশোরগঞ্জে যোগ দিতে বলা হয়। কিন্তু সমসের আলী ওই স্ট্যান্ড রিলিজ ঠেকাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। গতকাল সমসেরের ওই স্ট্যান্ড রিলিজ বাতিল করা হয়। এরপর তাঁকে নাটোরের লালপুর উপজেলা কার্যালয়ে পদায়ন করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডির এক প্রকৌশলী জানান, সাবেক এমপি শিমুলের হয়ে সব কাজ করতেন সমসের আলী। কাজ তুলে দেওয়ার পাশাপাশি এলজিইডির বড় কর্তাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করার কাজ করতেন তিনি। শিমুলের কাজ করে সমসের বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। নাটোর শহরের কানাইখালিতে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে বানিয়েছেন আলিশান বাড়ি। স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়ার পর তা ঠেকাতে সমসের আলী মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করেন বলে ওই প্রকৌশলী জানিয়েছেন।

সমসের আলী লালপুরে পদায়নের আদেশ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বোঝেনই তো! (আমার) নাটোরে বাড়ি, এখানেই থাকতে চাই।’

শিমুলের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে জানতে চাইলে সমসের আলী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এত দিন ক্ষমতায় ছিল। তখন আওয়ামী লীগের বাইরে কেউ ছিল? কেউ এমপিদের কথার বাইরে যেতে পেরেছেন?’

সমসের আলী অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ৭৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বাড়িটা করেছি। বাড়ি ছাড়া আমার কোনো সম্পদ নেই।’

এলজিইডির নাটোর সদর উপজেলা প্রকৌশলী শেখ মো. আবু সাঈদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সমসের আলীকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছিল। আজ অফিসে এসে দেখি, গতকাল তাঁর সেই আদেশ বাতিল করে লালপুরে পদায়ন করা হয়েছে। তিনি এখন অফিসে আছেন। ছাড়পত্র নিয়ে হয়তো লালপুরে চলে যাবেন।’

রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে আবু সাঈদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কাজটা এখনো শেষ হয়নি। অনেক কাজ বাকি। যদিও মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমি এসেছি তিন মাস হলো। আগে কী হয়েছে, বলতে পারব না।’

এলজিইডির রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী গৌতম প্রসাদ চৌধুরী বলেন, ‘সমসেরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ সপ্তাহখানেক আগে পেয়েছি। তদন্ত করার জন্য সেটা নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলীকে দিয়েছি। তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সমসের আলীর স্ট্যান্ড রিলিজ বাতিল করে একই বিভাগে পদায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে গৌতম প্রসাদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে বদলি হলে সেটা আমি করি, কিন্তু বিভাগের বাইরে গেলে সেটা হেড অফিস থেকে করা হয়। স্ট্যান্ড রিলিজ বাতিল করে নতুন পদায়ন ঢাকা থেকে হয়েছে। এ বিষয়ে আমি এখনো কিছু জানি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ওপর হামলাকারীরা সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছে কি না—তা শতভাগ নিশ্চিত নয় বিজিবি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা

বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ঢাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণকারী ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়েছে কি না—তা এখনো শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর বিজিবি ক্যাম্পে তিনি আরও জানান, শুক্রবার ৯টার মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় সম্ভাব্য পাচারের রুটগুলো চিহ্নিত করে টহল এবং চেকপোস্ট বসানো হয় সীমান্তের অধিকাংশ স্থানে। পরদিন অর্থাৎ শনিবারে পুলিশ এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। ঢাকা থেকে আগত পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টর কমান্ডারের নিয়মিত যোগাযোগ এবং অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলোচনায় দুটি স্থানে একসঙ্গে অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অবস্থানরত ফিলিপ স্নালকে আটকের পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশের আরেকটি টিম হালুয়াঘাট এলাকায় অপারেশনের প্ল্যান করে। হালুয়াঘাটে অপারেশনের বিষয়ে বিজিবির সোর্স এবং অন্যান্য বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করেছে। অপর দিকে নালিতাবাড়ীর বারোমারি এলাকায় অপারেশন পরিচালিত হয় বিজিবির নেতৃত্বে এবং ঢাকা হতে আগত ও হালুয়াঘাট থানার পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে। কিন্তু ফিলিপকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী ডেলটা চিরান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং মানব পাচারকারী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়।’

তাঁদের পরিবারের তিনজনসহ এ পর্যন্ত বিজিবি চারজনকে আটক করেছে। এঁদের মধ্যে সোমবার সকালে মানব পাচারকারী বেঞ্জামিন চিরামকে আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরগুনায় স্বামীকে গলা টিপে হত্যা, স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক আটক

বরগুনা প্রতিনিধি
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার বামনা উপজেলায় পরকীয়া প্রেমের জেরে এক প্রবাসফেরত স্বামীকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আব্দুল জলিল (৪৫)। তিনি উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোপখালী গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক আলামিনকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে আব্দুল জলিলের নিজ বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর ধরে একই এলাকার আবু খতিবের ছেলে আলামিন নিহতের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নাজমা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ১৫ দিন আগে প্রবাস থেকে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন আব্দুল জলিল।

অভিযোগ রয়েছে, রোববার বিকেলে স্ত্রী ও ওই গৃহকর্মী মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় আব্দুল জলিলকে গলা টিপে হত্যা করেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে বামনা থানায় নিয়ে যায়। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিককে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মহান বিজয় দিবসে মেট্রোরেল সাময়িক বন্ধ থাকবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় প্যারাজাম্প অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে প্যারাট্রুপারদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএমটিসিএল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১১টা ৫০ মিনিট হতে ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ৪০ মিনিটের জন্য মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

ডিএমটিসিএল সাময়িক অসুবিধার জন্য যাত্রীসাধারণের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। যাত্রীদের এই সময়সূচি মেনে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয়মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত

বাসায় আটকে রেখে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর ডেমরা থানার উপপরিদর্শক এসআই মুরাদ হোসেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ইলামনি আজ সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আগামী ২৮ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্রটি উপস্থাপন করা হবে। পরে এ সংক্রান্ত মামলা বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।

নোবেলের আইনজীবী মোসতাক আহমেদ জানান, এই ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করেছেন নোবেল। তাঁরা সংসার করছেন।

গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন ইডেন কলেজের ওই ছাত্রী। নোবেলকে গ্রেপ্তার করার পর কারাগারে পাঠানো হলে বিয়ের শর্তে তিনি জামিন পান। ১৯ জুন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে নোবেল ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন।

এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় নোবেলের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নোবেল তাঁর স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ছাত্রীকে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নেন। এরপর ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেন। কথামতো না চললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখান।

অভিযোগে বলা হয়, ওই তরুণীকে ছয় মাস ধরে ডেমরার ওই বাসায় আটকে রাখা হয়, মারধর করা হতো প্রায়ই। দু-তিন জনের সহায়তায় বাদীকে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখেন নোবেল। ওই ঘটনার ভিডিও ছড়ালে বাদীর বাবা-মা তাঁকে চিনতে পারেন। এরপর পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাঁকে ১৯ মে উদ্ধার করে এবং পুলিশ নোবেলকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নোবেল বাদীকে আটক রেখে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। বাসায় না থাকলে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে তাঁকে মারপিট করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, বাদীর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি নোবেল জামিনে আছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও বলেছেন, বাদীকে মারধর ও ধর্ষণে আসামিকে আরও কয়েকজন সহযোগিতা করেছেন। তবে তাঁদের নাম-ঠিকানা উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব হলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এখন কী হবে:

নোবেলের আইনজীবী বলেছেন, নোবেল মামলার বাদীকে বিয়ে করে সংসার করছেন। তাই এই অভিযোগপত্রে নোবেলের কোনো সমস্যা হবে না। বিচারিক ট্রাইব্যুনালে বাদী আপসনামা দেওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি হবে। খালাস পাবেন নোবেল।

উল্লেখ্য, ভারতের সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ‘সা রে গা মা’ দিয়ে পরিচিতি পান এই গায়ক। এর আগে মাদকে আসক্ত হয়ে সংগীত ছেড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও শ্রোতাদের সামনে হাজির হন। সেবার নোবেল জানিয়েছিলেন, তিনি আর কখনো দর্শকদের হতাশ করবেন না। সব অতীত পেছনে ফেলে নিয়মিত গান উপহার দেবেন।

কিন্তু ২০২৩ সালে অগ্রিম টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ায় প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জানা যায়, ওই বছর ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়ার প্রতারণায় অভিযোগে আটক হয়েছিলেন। সে সময় একদিন রিমান্ডেও ছিলেন এই গায়ক। পরে আপসের মাধ্যমে ওই মামলা থেকে অব্যাহতিও পান নোবেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত