রিমন রহমান, রাজশাহী
একটি হামলার পর রাজশাহীর একটি সাঁওতালপাড়া মানুষশূন্য হয়ে পড়েছে। পাড়াটিতে ১২টি বাড়ি রয়েছে। আজ সোমবার পাড়ায় গিয়ে শুধু একটি বাড়িতে এক বৃদ্ধাকে দেখা গেছে। বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা অবস্থায় দেখা গেছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে জিনিসপত্র।
এই সাঁওতালপাড়া রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগসারা গ্রামে। বারনই নদীর তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পুলের ওপর প্রায় পাঁচ বছর আগে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এই ১২ পরিবার বাড়ি করে। এর মধ্যে সাতটি পরিবার সাঁওতাল, চারটি ধাঙ্গড় (ওরাঁও) ও একটি রবিদাস সম্প্রদায়ের।
বাড়িগুলোর পাশ দিয়েই খালের মতো বয়ে গেছে বারনই নদী। নদীর পরে মো. বাবলু নামের এক বিএনপি কর্মীর জমি। তাঁর জমির সামনের দিকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর বাড়ি করা নিয়ে আগে থেকে ক্ষুব্ধ ছিলেন বিএনপি কর্মী বাবলু। যদিও জায়গাগুলো পাউবোর। গত ৩০ জুলাই সকালে এই বাবলুর সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে সাঁওতালপাড়ার বাসিন্দাদের। এর জেরে দুপুরে ও সন্ধ্যায় দুই দফা হামলা হয় এ পাড়ায়।
পুলের পাশে সারি সারি ১২টি বাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের। আজ সকালে পাড়ায় ঢুকে প্রথম বাড়িটিতেই যাওয়া হয়। কিন্তু কথা বলার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। পরের বাড়িটি হিমেন রবিদাসের। বাড়িতে ছিলেন তাঁর শাশুড়ি অমলা দাসী। তিনি জানালেন, তাঁর বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুরে। ১৫ দিন আগে তিনি চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছেন। তিনি হাঁটতে পারেন না। এই বাড়িতে থেকে রাজশাহীতে চিকিৎসা করাচ্ছেন। অমলা বলেন, ‘কয়দিন আগে গন্ডগোল হয়েছে। তারপর তো কেউ নাই। আমি চলতে পারি না, আছি।’
হিমেনের পরের বাড়িটিতেও কেউ নেই। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বাড়ির জিনিসপত্র। ঘরের দেয়ালে টানানো রয়েছে বিদ্যুৎ বিলের বেশ কিছু কাগজ। একটি কাগজে দেখা যায়, বাড়িটির মালিক শ্যামল মুর্মু। তিনিই এই সাঁওতালপাড়ার সর্দার। শ্যামলের পরের বাড়িটিও একইভাবে তছনছ অবস্থায় দেখা যায়। এ বাড়ির দেয়ালেও বিদ্যুৎ বিলের কপিগুলো টানানো। একটি কপি নিয়ে দেখা যায়, এই বাড়ির মালিকের নাম বেরজন টুডু। বিলের কপিতে মোবাইল নম্বরও রয়েছে। সেই নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বেরজন টুডুর পরের বাড়িটির দরজা বন্ধ। কয়েকবার ডেকেও ভেতর থেকে কারও সাড়া পাওয়া গেল না। পরের বাড়ির ঘরের টিনে হামলার চিহ্ন স্পষ্ট। টিন ফুটো হয়ে গেছে। বাইরে থেকে ঘরের ভেতর দেখা যাচ্ছে। বিছানায় এখনো মশারি টানানো। ঘরে শুয়ে দুটি কুকুর। বাইরে থেকে টিনের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিতেই ঘেউ ঘেউ করে একটি কুকুর বাড়ির বাইরে এল।
পাড়ার ৭ ও ৮ নম্বর বাড়ির দরজা বাঁশের বাতা দিয়ে তৈরি। তাতেই ছোট ছোট দুটি তালা লাগানো। পরের বাড়িটির ঘরের মাটির দেয়াল ভাঙা। বাইরে থেকে দেখা গেল, মেঝেতে পড়ে রয়েছে জিনিসপত্র। হাঁড়িতে ভাত ছিল। কয়েক দিন সে ভাত পচে গেছে। পাড়ার ১০ নম্বর বাড়িটিতে কোনো তালা নেই। ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, ঘরে তালা দেওয়া। বারান্দায় দড়িতে ঝুলছে কাপড়চোপড়। পাড়ার অন্য দুটি বাড়িতেও তালা লাগানো। কেউ নেই।
সুনসান এ এলাকার পুলের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি জানালেন, তিনি ভ্যান চালান। এলাকায় থাকেন না। হামলার পর তিনি শুনেছেন। তিনি জানান, প্রথমে বাবলুর সঙ্গে সাঁওতালদের হাতাহাতি হয়। পরে দুপুরে ও সন্ধ্যায় দুই দফা হামলা হয়েছে। বিকেলের হামলায় দলের লোকজন ছিল। কোন দল, জানতে চাইলে তিনি তা বলতে চাননি।
কথা হয় আরও এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, ঘটনার দিন সকালে পাড়ার কয়েকজন বাড়ির সামনে বসে দেশীয় মদ পান করছিলেন। পাশের জমির মালিক বাবলু সেদিক দিয়ে যাওয়ার পথে তাঁদের এভাবে প্রকাশ্যে মদ না খাওয়ার জন্য বলেন। তখন কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে পাড়ার এক নারী বাবলুর শার্টের কলার ধরেন। এরপর পুরুষেরা তাঁকে মারধর করেন। পরে বাবলু আবার তাঁর লোকজন নিয়ে এসে দুই দফা এই পাড়ায় হামলা করেন।
পুলের ওপর দিয়ে জমিতে শ্রমিকদের জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছিলেন বাবলুর স্ত্রী ডলি বেগম। কথা হয় তাঁর সঙ্গেও। তিনি জানান, তাঁর স্বামী বাজারে গেছেন। তাই তিনি খাবার এনেছেন। সেদিনের ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে ডলি বলেন, ‘এরা আমাদের জমির সামনে বাড়ি করেছে। খুব অত্যাচার করে। জমির ফসল হতে দেয় না। কিছু বলাও যায় না।’
তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মদ খেতে নিষেধ করায় তারা আমার স্বামীকে মেরেছে। তখন আমার স্বামীও লোকজন নিয়ে এসেছিল। কিন্তু কাউকে মারেনি। তারা ভয়ে পালিয়ে গেছে।’ বাড়িঘর ভাঙল কে, জানতে চাইলে ডলি জানান, তাঁরাই নিজেরা এসে পরে বাড়িঘর ভেঙে গেছেন।
ডলি বেগম বলেন, ‘ঘটনার পর পুলিশ এসেছিল। বলে গেছে যে সাঁওতালরা তাদের বাড়িতে থাকবে। কেউ যেন কিছু না বলে। এতই যখন দরদ, তাহলে তাদের নিয়ে গিয়ে জমি কিনে বাড়ি করে দিক। আপনি এসেছেন, আপনিও নিয়ে যান। নিয়ে গিয়ে এদের বাড়ি করে দেন। এখানে কেন থাকতে হবে।’ এই জায়গা তো পাউবোর—এ কথা বললে ডলি বলেন, ‘সরকারি হলেও তো আমাদের জমির সামনে। আমরা তো খুব অত্যাচারের মধ্যে আছি।’
বিদ্যুৎ বিলের কপিতে পাওয়া নম্বরে ফোন করে পাওয়া যায় এই সাঁওতালপাড়ার সর্দার শ্যামল মুর্মুকে। তিনি জানান, আগে তাঁদের বাড়ি ছিল গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ি এলাকায়। সেই এলাকা থেকে তাঁরা এদিকে কৃষিকাজে আসতেন। দূর থেকে আসতেন বলে এলাকার তিনজন কাউন্সিলর পাঁচ বছর আগে তাঁদের এই পুলের ওপর বাড়ি করতে দিয়েছিলেন। সেই বাড়ি ছেড়ে তাঁরা যে যেদিকে পেরেছেন, চলে গেছেন। এখনো ভয়ের মধ্যে রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সেদিন ময়লা ফেলাকে কেন্দ্র করে বাবলু পাড়ার এক মহিলাকে খিস্তি করছিল। এতে নিষেধ করলে সে রেগে যায় এবং মালতি মুর্মু নামের এক মহিলাকে মারে। তখন পাড়ার যুবক ছেলেরাও বাবলুকে একটু মারে। ঘটনার পর মালতিকেও হাসপাতালে ভর্তি করি।’
তিনি জানান, এই ঘটনার পর দুপুরে বাবলু কয়েকজনকে নিয়ে এসে হরি, তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে মারধর করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে বিকেলে পুলিশ আসে। তারা সবাইকে শান্ত থাকার নির্দেশনা দিয়ে যায়। স্থানীয় বিএনপি নেতা মোকছেদ আলীও পুলিশের সঙ্গে গিয়েছিলেন। তাঁরা চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যার আগে আবার দলবল নিয়ে গিয়ে পাড়ায় হামলা করেন বাবলু। তাঁদের কাছে হাঁসুয়া, বল্লম ও ছোরা ছিল। এ রকম আক্রমণ দেখে সাঁওতালপাড়ার সবাই পালিয়ে যান। শ্যামল অভিযোগ করেন, পালানোর সময় কেউ কিছু নিয়ে যেতে পারেননি। সব লুটপাট হয়ে গেছে। তাঁর নিজের বাড়িতে ১০ হাজার টাকা ছিল। সেগুলো লুট হয়েছে। ২৫টি কবুতর ছিল। খাঁচাসহ কবুতরগুলোও নিয়ে গেছে হামলাকারীরা।
শ্যামল বলেন, ‘হরি আর তার বাড়িওয়ালি জমিতে কাজ করে। ১২ হাজার টাকা ছিল। তারা কয়েকটা বস্তায় বাড়ির জিনিসপত্র আর টাকাটা নিয়ে যাচ্ছিল। বাগসারা মোড়ের ওপর গেলে তার কাছ থেকে বস্তাগুলোও কেড়ে নিয়েছে। কেউই কিচ্ছু নিয়ে যেতে পারেনি। সবাই এক কাপড়ে চলে গেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছি। দেখি কী ব্যবস্থা নেয়।’
আজ দুপুরে পবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ বলেন, ‘সাঁওতালদের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ হলে বিষয়টি আমি গতকালই অবহিত হয়েছি। আমি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পবা থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছি।’
পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুপক্ষের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাঁওতালদের কয়েকজন আহত হয়েছিল। আমরা তাদের মামলা করার জন্য ডেকেছি। কিন্তু কেউ মামলা করতে আসেনি। এখন তারা মামলা না করলে তো আমার কিছু করার নেই।’
একটি হামলার পর রাজশাহীর একটি সাঁওতালপাড়া মানুষশূন্য হয়ে পড়েছে। পাড়াটিতে ১২টি বাড়ি রয়েছে। আজ সোমবার পাড়ায় গিয়ে শুধু একটি বাড়িতে এক বৃদ্ধাকে দেখা গেছে। বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা অবস্থায় দেখা গেছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে জিনিসপত্র।
এই সাঁওতালপাড়া রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগসারা গ্রামে। বারনই নদীর তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পুলের ওপর প্রায় পাঁচ বছর আগে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এই ১২ পরিবার বাড়ি করে। এর মধ্যে সাতটি পরিবার সাঁওতাল, চারটি ধাঙ্গড় (ওরাঁও) ও একটি রবিদাস সম্প্রদায়ের।
বাড়িগুলোর পাশ দিয়েই খালের মতো বয়ে গেছে বারনই নদী। নদীর পরে মো. বাবলু নামের এক বিএনপি কর্মীর জমি। তাঁর জমির সামনের দিকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর বাড়ি করা নিয়ে আগে থেকে ক্ষুব্ধ ছিলেন বিএনপি কর্মী বাবলু। যদিও জায়গাগুলো পাউবোর। গত ৩০ জুলাই সকালে এই বাবলুর সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে সাঁওতালপাড়ার বাসিন্দাদের। এর জেরে দুপুরে ও সন্ধ্যায় দুই দফা হামলা হয় এ পাড়ায়।
পুলের পাশে সারি সারি ১২টি বাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের। আজ সকালে পাড়ায় ঢুকে প্রথম বাড়িটিতেই যাওয়া হয়। কিন্তু কথা বলার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। পরের বাড়িটি হিমেন রবিদাসের। বাড়িতে ছিলেন তাঁর শাশুড়ি অমলা দাসী। তিনি জানালেন, তাঁর বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুরে। ১৫ দিন আগে তিনি চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছেন। তিনি হাঁটতে পারেন না। এই বাড়িতে থেকে রাজশাহীতে চিকিৎসা করাচ্ছেন। অমলা বলেন, ‘কয়দিন আগে গন্ডগোল হয়েছে। তারপর তো কেউ নাই। আমি চলতে পারি না, আছি।’
হিমেনের পরের বাড়িটিতেও কেউ নেই। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বাড়ির জিনিসপত্র। ঘরের দেয়ালে টানানো রয়েছে বিদ্যুৎ বিলের বেশ কিছু কাগজ। একটি কাগজে দেখা যায়, বাড়িটির মালিক শ্যামল মুর্মু। তিনিই এই সাঁওতালপাড়ার সর্দার। শ্যামলের পরের বাড়িটিও একইভাবে তছনছ অবস্থায় দেখা যায়। এ বাড়ির দেয়ালেও বিদ্যুৎ বিলের কপিগুলো টানানো। একটি কপি নিয়ে দেখা যায়, এই বাড়ির মালিকের নাম বেরজন টুডু। বিলের কপিতে মোবাইল নম্বরও রয়েছে। সেই নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বেরজন টুডুর পরের বাড়িটির দরজা বন্ধ। কয়েকবার ডেকেও ভেতর থেকে কারও সাড়া পাওয়া গেল না। পরের বাড়ির ঘরের টিনে হামলার চিহ্ন স্পষ্ট। টিন ফুটো হয়ে গেছে। বাইরে থেকে ঘরের ভেতর দেখা যাচ্ছে। বিছানায় এখনো মশারি টানানো। ঘরে শুয়ে দুটি কুকুর। বাইরে থেকে টিনের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিতেই ঘেউ ঘেউ করে একটি কুকুর বাড়ির বাইরে এল।
পাড়ার ৭ ও ৮ নম্বর বাড়ির দরজা বাঁশের বাতা দিয়ে তৈরি। তাতেই ছোট ছোট দুটি তালা লাগানো। পরের বাড়িটির ঘরের মাটির দেয়াল ভাঙা। বাইরে থেকে দেখা গেল, মেঝেতে পড়ে রয়েছে জিনিসপত্র। হাঁড়িতে ভাত ছিল। কয়েক দিন সে ভাত পচে গেছে। পাড়ার ১০ নম্বর বাড়িটিতে কোনো তালা নেই। ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, ঘরে তালা দেওয়া। বারান্দায় দড়িতে ঝুলছে কাপড়চোপড়। পাড়ার অন্য দুটি বাড়িতেও তালা লাগানো। কেউ নেই।
সুনসান এ এলাকার পুলের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি জানালেন, তিনি ভ্যান চালান। এলাকায় থাকেন না। হামলার পর তিনি শুনেছেন। তিনি জানান, প্রথমে বাবলুর সঙ্গে সাঁওতালদের হাতাহাতি হয়। পরে দুপুরে ও সন্ধ্যায় দুই দফা হামলা হয়েছে। বিকেলের হামলায় দলের লোকজন ছিল। কোন দল, জানতে চাইলে তিনি তা বলতে চাননি।
কথা হয় আরও এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, ঘটনার দিন সকালে পাড়ার কয়েকজন বাড়ির সামনে বসে দেশীয় মদ পান করছিলেন। পাশের জমির মালিক বাবলু সেদিক দিয়ে যাওয়ার পথে তাঁদের এভাবে প্রকাশ্যে মদ না খাওয়ার জন্য বলেন। তখন কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে পাড়ার এক নারী বাবলুর শার্টের কলার ধরেন। এরপর পুরুষেরা তাঁকে মারধর করেন। পরে বাবলু আবার তাঁর লোকজন নিয়ে এসে দুই দফা এই পাড়ায় হামলা করেন।
পুলের ওপর দিয়ে জমিতে শ্রমিকদের জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছিলেন বাবলুর স্ত্রী ডলি বেগম। কথা হয় তাঁর সঙ্গেও। তিনি জানান, তাঁর স্বামী বাজারে গেছেন। তাই তিনি খাবার এনেছেন। সেদিনের ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে ডলি বলেন, ‘এরা আমাদের জমির সামনে বাড়ি করেছে। খুব অত্যাচার করে। জমির ফসল হতে দেয় না। কিছু বলাও যায় না।’
তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মদ খেতে নিষেধ করায় তারা আমার স্বামীকে মেরেছে। তখন আমার স্বামীও লোকজন নিয়ে এসেছিল। কিন্তু কাউকে মারেনি। তারা ভয়ে পালিয়ে গেছে।’ বাড়িঘর ভাঙল কে, জানতে চাইলে ডলি জানান, তাঁরাই নিজেরা এসে পরে বাড়িঘর ভেঙে গেছেন।
ডলি বেগম বলেন, ‘ঘটনার পর পুলিশ এসেছিল। বলে গেছে যে সাঁওতালরা তাদের বাড়িতে থাকবে। কেউ যেন কিছু না বলে। এতই যখন দরদ, তাহলে তাদের নিয়ে গিয়ে জমি কিনে বাড়ি করে দিক। আপনি এসেছেন, আপনিও নিয়ে যান। নিয়ে গিয়ে এদের বাড়ি করে দেন। এখানে কেন থাকতে হবে।’ এই জায়গা তো পাউবোর—এ কথা বললে ডলি বলেন, ‘সরকারি হলেও তো আমাদের জমির সামনে। আমরা তো খুব অত্যাচারের মধ্যে আছি।’
বিদ্যুৎ বিলের কপিতে পাওয়া নম্বরে ফোন করে পাওয়া যায় এই সাঁওতালপাড়ার সর্দার শ্যামল মুর্মুকে। তিনি জানান, আগে তাঁদের বাড়ি ছিল গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ি এলাকায়। সেই এলাকা থেকে তাঁরা এদিকে কৃষিকাজে আসতেন। দূর থেকে আসতেন বলে এলাকার তিনজন কাউন্সিলর পাঁচ বছর আগে তাঁদের এই পুলের ওপর বাড়ি করতে দিয়েছিলেন। সেই বাড়ি ছেড়ে তাঁরা যে যেদিকে পেরেছেন, চলে গেছেন। এখনো ভয়ের মধ্যে রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সেদিন ময়লা ফেলাকে কেন্দ্র করে বাবলু পাড়ার এক মহিলাকে খিস্তি করছিল। এতে নিষেধ করলে সে রেগে যায় এবং মালতি মুর্মু নামের এক মহিলাকে মারে। তখন পাড়ার যুবক ছেলেরাও বাবলুকে একটু মারে। ঘটনার পর মালতিকেও হাসপাতালে ভর্তি করি।’
তিনি জানান, এই ঘটনার পর দুপুরে বাবলু কয়েকজনকে নিয়ে এসে হরি, তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে মারধর করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে বিকেলে পুলিশ আসে। তারা সবাইকে শান্ত থাকার নির্দেশনা দিয়ে যায়। স্থানীয় বিএনপি নেতা মোকছেদ আলীও পুলিশের সঙ্গে গিয়েছিলেন। তাঁরা চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যার আগে আবার দলবল নিয়ে গিয়ে পাড়ায় হামলা করেন বাবলু। তাঁদের কাছে হাঁসুয়া, বল্লম ও ছোরা ছিল। এ রকম আক্রমণ দেখে সাঁওতালপাড়ার সবাই পালিয়ে যান। শ্যামল অভিযোগ করেন, পালানোর সময় কেউ কিছু নিয়ে যেতে পারেননি। সব লুটপাট হয়ে গেছে। তাঁর নিজের বাড়িতে ১০ হাজার টাকা ছিল। সেগুলো লুট হয়েছে। ২৫টি কবুতর ছিল। খাঁচাসহ কবুতরগুলোও নিয়ে গেছে হামলাকারীরা।
শ্যামল বলেন, ‘হরি আর তার বাড়িওয়ালি জমিতে কাজ করে। ১২ হাজার টাকা ছিল। তারা কয়েকটা বস্তায় বাড়ির জিনিসপত্র আর টাকাটা নিয়ে যাচ্ছিল। বাগসারা মোড়ের ওপর গেলে তার কাছ থেকে বস্তাগুলোও কেড়ে নিয়েছে। কেউই কিচ্ছু নিয়ে যেতে পারেনি। সবাই এক কাপড়ে চলে গেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছি। দেখি কী ব্যবস্থা নেয়।’
আজ দুপুরে পবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ বলেন, ‘সাঁওতালদের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ হলে বিষয়টি আমি গতকালই অবহিত হয়েছি। আমি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পবা থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছি।’
পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুপক্ষের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাঁওতালদের কয়েকজন আহত হয়েছিল। আমরা তাদের মামলা করার জন্য ডেকেছি। কিন্তু কেউ মামলা করতে আসেনি। এখন তারা মামলা না করলে তো আমার কিছু করার নেই।’
চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে এক নারীসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় এই তথ্য জানায়। এ ছাড়া সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৯ জনের ডেঙ্গু এবং ২০ জনের চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে।
০১ জানুয়ারি ১৯৭০শেরপুরে গলায় রশি প্যাঁচানো অবস্থায় হোসেন আলী (১৫) নামের এক কিশোর অটোরিকশাচালকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেলে সদর উপজেলার গাজিরখামার ইউনিয়নের খরখরিয়া ব্রিজসংলগ্ন রাস্তার পাশে ডোবা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
৮ মিনিট আগেচট্টগ্রামের আনোয়ারায় খালে মাছ ধরার জাল পাতা নিয়ে বিরোধের জেরে আবদুর শুক্কুর হত্যা মামলায় পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তিনজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রোজিনা খান মামলার এ রায় দেন। আ
১৩ মিনিট আগে৪ আগস্ট ২০২৪, শ্রাবণের শেষ বিকেল। ফেনীর মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিল হাজারো ছাত্র-জনতা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে জড়ো হয়েছিল তারা। হাতে ছিল লাল-সবুজের পতাকা, চোখে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন।
১৪ মিনিট আগে