Ajker Patrika

দুর্গাপুরে আ. লীগের দু-গ্রুপের সংঘর্ষে পুলিশের লাঠিপেটা, আহত ৮ 

দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
দুর্গাপুরে আ. লীগের দু-গ্রুপের সংঘর্ষে পুলিশের লাঠিপেটা, আহত ৮ 

রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করে পুলিশ। এতে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমানের সমর্থক ৮ আহত হয়েছেন। 

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দুর্গাপুর মেডিকেল মোড় সংলগ্ন রোডে এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাজারের মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

আহতরা হলেন—এমপি সমর্থকের উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুলু (৪৫), উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের মন্ডল (৫০), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক আবু হানিফ (৫২), যুবলীগের কর্মী গোলাম রাব্বানী (২৬), জিল্লুর রহমান (২৭), দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কাওসার হোসেন (২৩), ছাত্রলীগ নেতা রাতুল (২১) ও পিয়াস (২২)। 

প্রত্যক্ষদর্শী নেতা-কর্মীরা জানান, গতকাল সোমবার রাতে এক বছর পর দুর্গাপুর পৌর আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারার সমর্থক আজাহার আলীকে সভাপতি ও শরীফুজ্জামান শরিফকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি পুনর্বহালের আদেশ দেয় রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে বর্তমান এমপি মনসুর রহমান ও সাবেক এমপি ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারার সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান এমপি মনসুর রহমান সমর্থিত নেতা-কর্মীরা কমিটির প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এমপির সমর্থকেরা সিংগাহাট মাঠ থেকে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মেডিকেল মোড়ের দিকে আসার চেষ্টা করেন। 

অপরদিকে সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারার সমর্থিত দুর্গাপুর পৌর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সভাপতি আজাহার আলী ও সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরিফের লোকজন আনন্দ মিছিল নিয়ে আসার পথে মেডিকেল মোড় সংলগ্ন রোডে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করে। এতে এমপি সমর্থকদের ৮ নেতা-কর্মী আহত হন। তাঁদের দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমানের সমর্থক ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুল বলেন, ‘আমিও আহত হয়েছি। চিকিৎসার জন্য এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে উদ্দেশে বের হয়েছি। আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল ছিল। কিন্তু তারা অর্তকিতভাবে সেই মিছিলে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের কয়েকজন নেতা-কর্মী সমর্থক আহত হয়েছে।’

নতুন কমিটিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেএদিকে সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারার সমর্থক ও দুর্গাপুর পৌর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সভাপতি আজাহার আলীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ উভয় পক্ষকে লাঠিপেটা করেছে। এ সময় উভয় পক্ষ ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। নইলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল। দুই পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আর যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এ জন্য মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’ 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুঠিয়া সার্কেল) রাজীবুল হক বলেন, ‘খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’ 

যে কোনো অপ্রীতিকর এড়াতে মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছেউল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৯ মার্চ দুর্গাপুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নৌকার বিরোধিতাকারী আজাহার ও শরীফকে সভাপতি-সম্পাদক করা হয়। ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে নৌকার বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করেন বলে তাঁদের বিরুদ্ধে পৌর আওয়ামী লীগের পদ প্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা অভিযোগ আনেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্মেলনের পর এ কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। তারই এক বছর পর গতকাল সোমবার রাতে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সেই কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে পুনর্বহাল করে। এতে বর্তমান এমপি ও সাবেক এমপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত