Ajker Patrika

বালুঘাট চালু-বন্ধের দাবিতে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
বালুমহাল চালু করার দাবিতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বালুমহাল চালু করার দাবিতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীতে বালুমহাল চালু করা এবং বন্ধ করে দেওয়ার দাবিতে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার ফুলতলা বালুঘাটের সামনে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী ও স্থানীয় বিএনপির নেতা–কর্মীরা। এর আগে সকালে বালুঘাট চালু রাখার দাবিতে ইজারাদারের পক্ষে মানববন্ধন হয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে।

গোদাগাড়ী উপজেলার ফুলতলা ও প্রেমতলী-শেখেরপাড়া এলাকার দুটি বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন মোখলেসুর রহমান মুকুল নামের এক ব্যক্তি। স্থানীয়দের অভিযোগ, ফুলতলা ও শেখেরপাড়া বালুমহালের পাশাপাশি বিদিরপুর গ্রামে স্বপন ঘাটিয়ালের বাড়ির পাশে আরেকটি অবৈধ ঘাট খোলা হয়েছে। এই তিন বালুমহালেই নদী থেকে বালু তোলার পাশাপাশি মাটি কাটা হচ্ছে তীরের। নদী তীরের এই মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।

এই মাটি কাটা বন্ধের দাবিতে স্থানীয়রা কয়েক দফা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। উপজেলা সদরে মানববন্ধনও করেছেন।

এসব আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকছেন মাটিকাটা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আহসানুল কবির টুকু ও উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুদ্দিন টমাস। গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর আদালত এলাকায় মারধরের শিকার হন ছাত্রদল নেতা সাইফুদ্দিন টমাস।

সাইফুদ্দিন টমাসের অভিযোগ, বালুমহালে মাটি কাটার প্রতিবাদ করার কারণে ইজারাদারের ভাতিজা সাজিম ও জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল সরকার ডিকো তাকে মারধর করেছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে সাজিম ও ডিকো বলছেন, টমাস বালুঘাট থেকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন। তাই সাধারণ জনগণ তাকে গণপিটুনি দিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ‘বালুমহালে কর্মরত শ্রমিক, মালিক ও সচেতন নাগরিক সমাজের’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৩ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রদল নেতা টমাস শেখেরপাড়া বালুমহালে যান এবং দৈনিক ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে কোনোভাবেই এখান থেকে বালু উত্তোলন করতে দেবেন না বলে তিনি হুমকি দেন।

তিনি বলেন, ‘পরদিন বেলা ১টার দিকে টমাস, রাকিব রাজিব, শরিফুল, রফিকসহ অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জন বালুমহালে গিয়ে হট্টগোল করে পুরোপুরি বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন। বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়ায় আমার প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিন আনুমানিক ১০–১২ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে।’

শফিকুল বলেন, ‘তাদের ভয়ে আমরা যেতে পারছি না। সেখানে কর্মরত এক্সাভেটর ড্রাইভার, ট্রাক ড্রাইভারসহ দায়িত্বে থাকা সবাইকে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই প্রশাসন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিক এবং বালুমহাল চালুর ব্যবস্থা করুক।’

এদিকে ছাত্রনেতা টমাসের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে শেখেরপাড়া বালুমহালের সামনে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী ও স্থানীয় বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা ফুলতলা বালুমহালের সামনে একই কর্মসূচি পালন করেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বালুমহালে অবৈধভাবে মাটি কাটার ফলে আশপাশের গ্রামগুলো ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে। যখন এর প্রতিবাদ করা হয়, তখনই গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়। গত বছর ইজারাদার গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। তারা কেউ বালুমহাল থেকে কোনো চাঁদা চান না। এলাকায় বালুমহালও চান না তারা।

গোদাগাড়ীর ইউএনও আবুল হায়াত বলেন, ‘গ্রামবাসীর অভিযোগ বালুমহালে অবৈধভাবে মাটি কাটা হয়। আর ইজারাদারের অভিযোগ, চাঁদা না পেয়ে বালুমহাল বন্ধ করে দিতে চায় একটি পক্ষ। এটা নিয়ে বেশ জটিলতা চলছে। এবারের ইজারার মেয়াদ শেষ হলে আমরা গ্রামবাসীর সঙ্গে বসব। তারা না চাইলে ওই এলাকায় আর বালুমহাল ইজারা দেওয়া হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত