Ajker Patrika

দরজা-জানালাবিহীন ঘরে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম

প্রতিনিধি, সারিয়াকান্দি (বগুড়া) 
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬: ০৫
দরজা-জানালাবিহীন ঘরে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে একচালা টিনের ঘরে। ঘরগুলোর চারদিকে নেই কোনো বেড়া। নেই কোনো দরজা-জানালা। হালকা ঝোড়ো হাওয়াতেই শিক্ষার্থীরা ভিজে যায়। এমনকি শিক্ষার্থীদের বই-খাতাও ভিজে যায়। প্রখর রোদ হলে গরমে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, শিক্ষকদের জন্যও নেই কোনো আলাদা বসার জায়গা। নেই কোনো স্টোর রুম ও ব্ল্যাকবোর্ড।

জানা যায়, নদীভাঙনে যমুনায় বিলীন হয়ে যায় ভাঙ্গরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মানিকদাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয় দুটি এ বছর বন্যায় সম্পূর্ণরূপে যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ফলে একচালা টিনের অস্থায়ী ঘরে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। যমুনায় বিলীন হয়ে যাওয়া ভাঙ্গরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ৮৪ বছর আগে ১৯৩০ সালে স্থাপিত হয়। স্থাপনের ৩০ বছর পর প্রথম ভাঙনের শিকার হয়েছিল ১৯৬০ সালে। 

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী বলেন, বিদ্যালয়টি ছয়বার ভাঙনের কবলে পড়ে। প্রথমে বিদ্যালয়টি ছিল চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের ভাঙ্গরগাছা চরে। তারপর নদীভাঙনের পর নেওয়া হয় হাটবাড়ী চরে, হাটবাড়ী চর থেকে নেওয়া হয় শিমুলতাইড় চরে। সেখান থেকে ২০১৬ সালে নেওয়া হয় ভাঙ্গরগাছা চরে, সেখান থেকে ২০১৯ সালে নেওয়া হয়েছিল চরনোয়ারপাড়া চরে। এ বছর চর নোয়ারপাড়া ভাঙলে কোনোমতে শিমুলতাইড় গুচ্ছগ্রামের ধারে একচালা ছাপরা করে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৯৪ জন ছাত্রছাত্রী ও ২ জন শিক্ষক রয়েছে। বর্তমানে একচালা টিনশেডের চারদিকে কোনো বেড়া না থাকায় বিদ্যালয়ের চেয়ার ও বেঞ্চি অরক্ষিত অবস্থায় আছে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘আমি ভাঙ্গরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন বছর আগে যোগদান করেছি। এই তিন বছরে বিদ্যালয়টি দুবার নদীভাঙনের শিকার হলো। গত বছরই বিদ্যালয়টি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল।’ 

অপরদিকে, কাজলা ইউনিয়নের মানিকদাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও এ বছর যমুনার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ফলে একটি টিনের চালা নির্মাণ করে চলছে পাঠদান। এ বিদ্যালয়টিরও কোনো দরজা-জানালা না থাকায় ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকেরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। স্কুলের আসবাব রয়েছে অরক্ষিত। 

মানিকদাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি মানিকদাইড় চরে ১৯৮০ সালে নির্মাণ করা হয়। ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট নদীভাঙনের শিকার হলে বিদ্যালয়টিকে নেওয়া হয় দক্ষিণ মানিকদাইড় চরে। তারপর এ বছরের ৩০ আগস্ট আবার ভাঙনের শিকার হলে কোনোমতে টেংরাকুড়া চরে অস্থায়ী ভিত্তিতে পাঠদান শুরু করা হয়েছে।   
 
মানিকদাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জিন্নাত আলী শেখ বলেন, ‘আমাদের নিজেদের উদ্যোগে বিদ্যালয়টির অস্থায়ী টিনের চালা নির্মাণ করে পাঠদান করছি। বিদ্যালয়টি পুনর্নির্মাণে এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।’ 

এ বিষয়ে কথা হলে সারিয়াকান্দি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. গোলাম কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, স্কুল দুটি সরেজমিন পরিদর্শন করে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের অস্থায়ী ভিত্তিতে পাঠদান শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে স্কুল দুটি পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত