Ajker Patrika

রাবি শিক্ষকের সন্তানকে যৌন হয়রানির অভিযোগ মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে

রাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৭: ৫৯
রাবি শিক্ষকের সন্তানকে যৌন হয়রানির অভিযোগ মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক শিক্ষিকার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। 

আজ মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে নগরের বোয়ালিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। গতকাল সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে নগরের তালাইমারী এলাকার আমেনা ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম ডা. রাজু আহমেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের উপপ্রধান চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। এ ঘটনার আড়াই ঘণ্টা পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তালাইমারী মোড়ে দুর্বৃত্তদের হামলায় ওই চিকিৎসক আহত জানা গেছে। দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়ে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

তবে ভুক্তভোগী শিশুর মায়ের দাবি, ঘটনার সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর একটু হাতাহাতি হয়েছে। এ বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি হামলার শিকার বলে চালাচ্ছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। 

ভুক্তভোগীর মা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, চিকিৎসক রাজু আহমেদের সঙ্গে তাঁর (ভুক্তভোগীর মা) ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি (অভিযুক্ত চিকিৎসক) তাঁকে বোন বলে ডাকেন। সেই সম্পর্কের জের ধরে তাঁর মেয়েকে তাঁর কাছে নিয়মিত দাঁতের চিকিৎসা করান। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে নগরের তালাইমারী এলাকার আমেনা ক্লিনিকের নিচতলায় ওই চিকিৎসকের চেম্বারে তাঁর মেয়েকে চিকিৎসা করাতে যান। 

পরে রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে ভুক্তভোগীর মায়ের মোবাইল নম্বরে কল আসলে তিনি কথা বলার জন্য চেম্বার থেকে বাইরে বের হন। এমতাবস্থায় ওই চিকিৎসক তাঁর মেয়ের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। এতে তাঁর মেয়ে ভয়ে চিৎকার দেয়। এরপর তিনি ভেতরে প্রবেশ করলে তাঁর মেয়েকে কান্নারত অবস্থায় দেখতে পান এবং মেয়ের মুখে ঘটনার বর্ণনা শোনেন। 

ভুক্তভোগীর মা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই ডাক্তারের কাছে আমার মেয়েকে দাঁতের চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে তিনি যৌন হয়রানিমূলক হেনস্তা করেন। এ নিয়ে আমাদের দুজনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দুজন দুজনের দিকে মারতে তেড়ে গেলে, একটু হাতাহাতি হয়। পরে তিনি হার্টের অসুখে পড়ে বসে পড়েন। এ ঘটনাকেই তিনি বিকৃত করে হামলা বলছেন।’ 

অভিযুক্ত চিকিৎসক রাজু আহমেদ। ছবি: সংগৃহীতএ ব্যাপারে নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে আজ সকালে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ 

অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে মানববন্ধন

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. রাজু আহমেদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ ও স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুতির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

আজ দুপুর ১২টার দিকে প্যারিস রোডে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। 

এ সময় অংশগ্রহণকারীরা ‘চরিত্রহীনের কালো হাত ভেঙে দাও’, ‘চরিত্রহীন ডাক্তার রাজুর প্রত্যাহার চাই’, ‘যৌন নিপীড়নকারী সামাজিক কীট’ ‘পবিত্র পেশায় নিযুক্ত কুলাঙ্গারকে বয়কট করুন’, ‘ক্যাম্পাসে হয়রানি কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘এক দফা এক দাবি, রাজুর অব্যাহতি’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও স্লোগান দেন। মানববন্ধন শেষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে দেখা করেন। তাঁরা অভিযুক্তের যথাযথ শাস্তির দাবি জানান। 

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘ভুক্তভোগীর শিশুর পরিবার আমাদের সঙ্গে এসে দেখা করেছেন। আমরা একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তা ছাড়া যেহেতু একটি মামলা করা হয়েছে। মামলাটি রাষ্ট্রীয় আইনি প্রক্রিয়ায় চলমান থাকবে।’ 

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তিনি একই ধরনের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে ঘটাচ্ছেন। এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে নারীদের শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠেছিল। যিনি নিজেকে সংযত রাখতে পারেন না; তাঁর শুধু চাকরি না, চিকিৎসার সনদ বাতিল করা দরকার।’ এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোবাররা সিদ্দিকা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের একই দাবিতে বারবার রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। আমরা সহকর্মী, শিক্ষক ও নারী হিসেবে কোথাও নিরাপদ নই। এটি অত্যন্ত দুঃখের নাকি লজ্জার বিষয়, কী বলব বুঝতে পারছি না।’ যেহেতু একটি মামলা হয়েছে তাই রাষ্ট্রীয় আইনে আসামিকে অতি দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি। 

এ ছাড়া মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আইন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল আলিম, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু, রাজশাহী মহিলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট দিলসেতারা চুনি প্রমুখ। 

এ ছাড়া কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রিজাউল করিম শেখ, ড. তৌফিক আলম, ড. সৈয়দ এম এ ছালাম, ড. এ নাঈম ফারুকী, ড. ছাইফুল ইসলাম, ড. খাইরুল ইসলাম প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত