Ajker Patrika

অসুস্থ ছাত্রকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন: মারধরের সহযোগী মাদ্রাসাশিক্ষক গ্রেপ্তার

সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯: ৪৯
Thumbnail image

পাবনার সাঁথিয়ায় আসাদুল নামের এক মাদ্রাসাছাত্রকে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক মারধরের ঘটনায় জড়িত দুজন শিক্ষকের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর শিক্ষককে (প্রধান অভিযুক্ত) গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

গতকাল সোমবার রাতে সাঁথিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর বাবা। এরপর নির্যাতনে সহযোগিতা করায় ওই মাদ্রাসার শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলার গৌরীগ্রাম ইউনিয়নের হাড়িয়াকাহন বাইতুল উলুম নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটে। 

গ্রেপ্তার শিক্ষক হলেন শাহাদৎ হোসেন (১৯)। তিনি বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার পূর্ব ধারাবর্ষা গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে। নির্যাতনকারী অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন ইকবাল হোসেন (২২)। তিনি পলাতক রয়েছেন। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, হাড়িয়াকাহন বাইতুল উলুম নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন শিবরামপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুল (১০) অসুস্থতার কারণে মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছিল। পরে ৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থী সঙ্গে নিয়ে শিক্ষক ইকবাল হোসেন আসাদুলকে বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় ডেকে নেয়। পরে অনুপস্থিত থাকার অপরাধে ইকবাল হোসেন ভুক্তভোগী ছাত্রকে অপর শিক্ষক শাহাদৎ হোসেনের সহযোগিতায় রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে, মাথা টেবিলের নিচে দিয়ে কোমরের নিচে বেত এবং স্টিলের স্কেল দিয়ে বেধড়ক মারধর করে জখম করেন। একপর্যায়ে আসাদুল অচেতন হয়ে পড়ে। এ সময় তাকে কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। 

আসাদুলের মা শোভা খাতুন খবর পেয়ে মাদ্রাসায় ছুটে যান। সেখানে গিয়ে ছেলেকে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তিনি দেখতে পান তাকে একটি কক্ষে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই দিন রাত ১টার দিকে সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি করায় তার পরিবার। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘আমার ছেলেকে অমানবিকভাবে মারধর করে জখম করার বিষয়টা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে জানাই। তাঁরা চিকিৎসার খরচ বাবদ দুই হাজার টাকা দিয়েছেন এবং ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়ে মামলা করতে নিষেধ করেন। পরে আমি ন্যায়বিচার না পেয়ে, টাকা ফেরত দিয়ে থানায় মামলা করেছি। বর্তমানে আমার ছেলেকে বাড়িতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’ 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবারকে থানায় মামলা করতে নিষেধের বিষয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আশরাফ আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ওই শিক্ষককে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কারের (ইস্তফা) ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মামলা হলে বিষয়টি জানাজানি হলে মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুণ্ন হবে এবং প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভর্তির ওপর প্রভাব পড়বে। এ কারণে নিষেধ করা হয়েছিল। ওই শিক্ষার্থীর চিকিৎসা বাবদ খরচও দেওয়া হয়েছে।’ 

এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষক শাহাদৎ হোসেনকে গতকাল সোমবার রাতে মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করে, আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর শিক্ষক ইকবাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত