Ajker Patrika

রাজশাহীতে সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ করে রাখার হুমকি জাতীয় যুবশক্তি নেতার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ১৭
রাজশাহীতে সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ করে রাখার হুমকি জাতীয় যুবশক্তি নেতার। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীতে সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ করে রাখার হুমকি জাতীয় যুবশক্তি নেতার। ছবি: আজকের পত্রিকা

সংবাদ প্রচার বন্ধ করে বেরিয়ে না এলে সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ করে রাখার হুমকি দিয়েছেন রাজশাহী নগর জাতীয় যুবশক্তির দুই নেতা। পরে বিক্ষুব্দ সাংবাদিকদের তোপের মুখে দুঃখ প্রকাশ করেন তাঁরা।

আজ সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাজশাহী পর্যটন মোটেলে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত নেতারা হলেন রাজশাহী মহানগর জাতীয় যুবশক্তির যুগ্ম সদস্যসচিব সোয়েব আহমেদ ও একই যুব সংগঠনের মুখ্য সচিব মেহেদি হাসান ফারাবি।

এর মধ্যে সোয়েব আহমেদের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। নগরীর আসাম কলোনি এলাকায় দুই নারীকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

সাংবাদিকেরা জানান, গত শনিবার এনসিপির রাজশাহী জেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরদিন গতকাল রোববার কমিটি থেকে একজন পদত্যাগ করেন। ওই রাতে কয়েকজন জুলাই যোদ্ধা সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামকে আওয়ামী দোসর আখ্যায়িত করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেন। এসবের মধ্যে আজ বিকেলে জেলা এনসিপির নতুন কমিটির পরিচিতি সভার আয়োজন করা হয়।

এ নিয়ে উত্তেজনা ছিল। খবর পেয়ে বিকেলে সাংবাদিকেরা সভাস্থল রাজশাহী পর্যটন মোটেলে যান। সেখানে কমিটির আরও পাঁচজন পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং সাইফুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেন।

পরে সাংবাদিকেরা এনসিপির জেলা কমিটির পরিচিতি সভায় যান। তাঁরা অভিযোগের বিষয়ে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ সরাসরি সম্প্রচার (লাইভ) করছিলেন।

ওই সময় মেহেদি হাসান ফারাবি ও সোয়েব আহমেদ ভেতরে প্রবেশ করেন। সোয়েব আহমেদ সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখনই সাংবাদিকেরা বেরিয়ে যান। তা না হলে সাংবাদিকসহ সবাইকে তালা মেরে দেওয়া হবে।’ এ ছাড়া তিনি আরও কিছু আপত্তিকর কথা বলেন।

তাৎক্ষণিক সাংবাদিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ করেন। তখন দ্রুত মোটেলের সম্মেলনকক্ষ থেকে বাইরে বেরিয়ে যান সোয়েব। পেছনে পেছনে সাংবাদিকেরাও বের হন। বাইরে তাঁকে ঘিরে ধরে তাঁর কথার প্রতিবাদ জানান। তখন উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে। একপর্যায়ে নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন সোয়েব।

এর আগে সভাকক্ষে পরিচিতি সভা চলাকালে সোয়েবসহ কিছু তরুণ মোটেলের ভেতরে প্রবেশ করে ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় মোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের বোঝান যে, ভেতরে ৫৩ জন অতিথি আছেন। মোটেলের ভেতর এমন স্লোগান দিলে তাঁরা আতঙ্কিত হবেন। এরপর তাঁরা মোটেলের বাইরে অবস্থান নেন। সেখানে থেকেও তাঁরা নানা ধরনের স্লোগান দিচ্ছিলেন।

এদিকে আওয়ামী সম্পৃক্ততার অভিযোগের বিষয়ে জেলা এনসিপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার কোনো আওয়ামী সম্পৃক্ততা নেই। বরং, আমি আগে জিয়া পরিষদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। পরে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম।’

অপর দিকে সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ করে রাখার হুমকির বিষয়ে এনসিপির মহানগর শাখার আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলী বলেন, ‘ছেলেটা (সোয়েব আহমেদ) আমাদের সঙ্গে থাকে। কিন্তু এনসিপিতে কোনো পদ নেই। সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা। বয়স কম, এমন কথা বলে ফেলেছে।’

সাংবাদিক হেনস্তায় নিন্দা

সংবাদ সংগ্রহে বাধা ও সাংবাদিকদের হেনস্তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-আরটিজেএ। এ ঘটনাকে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি ও জুলাইয়ের চেতনাবিরোধী উল্লেখ করে সংগঠনের নেতারা অবিলম্বে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

আজ সন্ধ্যায় আরটিজেএর আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শ্যামল ও সদস্যসচিব আব্দুল জাবীদ অপু এক বিবৃতিতে এ নিন্দা ও দাবি জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, আরটিজেএ মনে করে, এ ধরনের আচরণ ফ্যাসিবাদী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় গঠিত রাজনৈতিক দলের কর্মী ও নেতাদের কাছ থেকে এ ধরনের আগ্রাসী ভূমিকা গণমাধ্যমের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ ও হুমকি।

এ ধরনের ঘটনা এনসিপির প্রতিশ্রুত নতুন বাংলাদেশে স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার পথে বড় অন্তরায়। তাই অবিলম্বে এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে আরটিজেএ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ