Ajker Patrika

গাজীপুরের শ্রীপুর: দখলের কবলে সুতিয়া মোহনা-চরে প্রাচীর

  • নদীর চরে চলছে উঁচু সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কর্মযজ্ঞ।
  • একই সঙ্গে হুমকিতে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র আর শীতলক্ষ্যা।
রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর)  
গাজীপুরের শ্রীপুরে তিন নদীর মোহনায় চর দখল করে নির্মিত প্রাচীর।	ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুরের শ্রীপুরে তিন নদীর মোহনায় চর দখল করে নির্মিত প্রাচীর। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে তিন নদীর মোহনায় উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করে সুতিয়া নদীর বিরাট অংশ দখলের ঘটনা ঘটেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর চরে চলছে উঁচু সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। এতে করে মারাত্মক দখলের কবলে পড়ছে স্বচ্ছ জলের নদী সুতিয়া। একই সঙ্গে হুমকিতে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র আর শীতলক্ষ্যা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসন ও নদী রক্ষা সংশ্লিষ্টদের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নদীর চর জবরদখলের হিড়িক চালাচ্ছেন এক প্রভাবশালী। মাদ্রাসার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নদীর চরে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছেন। প্রভাবশালীর ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পান না স্থানীয়রা। নদীর মোহনায় উঁচু প্রাচীরে প্রতিবন্ধকতা তৈরির ফলে নদীভাঙনের শঙ্কা করছেন জনপদের বাসিন্দারা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামে ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা ও সুতিয়া—তিনটি নদী মিলিত হয়েছে। সুতিয়া নদীটি নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রাম ঘেঁষে বয়ে গেছে। ঠিক তিন নদীর মোহনায় সুতিয়ার শুরুতেই উঁচু সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে জবরদখলে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নদীর বিরাট অংশ দখলে নিয়ে সীমানাপ্রাচীরের এক অংশের কাজ শেষ করেছে। অপর অংশের নির্মাণকাজ চলমান। নদীর অনেক অংশ ইতিমধ্যে দখলে নিয়েছে। স্থানীয় ওয়াহিদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি মাদ্রাসার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নদীর চর দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, সীমানাপ্রাচীরের ভেতর কমপক্ষে এক বিঘা জমি জবরদখলে নিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ নদীর জায়গা।

স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, যেখানে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটি সম্পূর্ণ নদীর জায়গা। একসময় এখানেই নদী ছিল। কয়েক বছর যাবৎ এখানে চর জাগে। এখনো বর্ষার শুরুতেই থইথই পানি থাকে। অনেক স্রোত বহমান এই জায়গা দিয়ে। এখানে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরির কারণে নদীভাঙন শুরুর আশঙ্কা রয়েছে। এমন একটি জায়গায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে তিনটি নদীর পানি প্রবাহিত হয়। বর্ষাকালে অনেক বেশি স্রোত থাকে।

নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, যিনি নদীর জমি জবরদখল করছেন, তিনি তো সমাজের একজন কর্তাব্যক্তি। উনি কী করে এমনটি করতে পারেন? এখানে তো কয়েক বছর আগেও নদী ছিল। কয়েক বছর হলো চর জাগছে। আবার হয়তোবা নদী হবে। মোহনার কাছে নদী একটি স্টেডিয়ামের মতো বড়। আজ দখল হতে হতে এতটুকু। তাও আবার উঁচু সীমানা নির্মাণ করে।

অভিযুক্ত ওয়াহিদুল রহমান বলেন, ‘আমার নিজস্ব জমিতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছি। এখানে কিছু অংশ থাকতে পারে নদীর। তবে মাপজোখ করা হয়নি।’ ‘আপনি তো নদীর বিরাট অংশ দখলে নিয়েছেন, যেটা দৃশ্যমান নদী।’ এ কথার জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন নদী নেই।’

নদী পরিব্রাজক দল শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা একটি বড় দখল। এমন দৃশ্যমান দখলের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে সীমানাপ্রাচীর অপসারণের উদ্যোগ নেবে।’

ইউএনও সজীব আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। দ্রুত সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ