Ajker Patrika

পাবনার চাটমোহরে নকল দুধে সোডা-ডিটারজেন্ট

  • পার-অক্সাইড নামের কেমিক্যালের উপস্থিতিও পেয়েছেন নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তারা।
  • অভিযানে মিলেছে প্রমাণ, দেওয়া হয়েছে কারাদণ্ড।
শাহীন রহমান, পাবনা 
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৫, ০৯: ৩০
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

আসল দুধের সঙ্গে সোডা, পাম তেল, ডিটারজেন্ট, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডসহ বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল দুধ তৈরি করা হতো। সরবরাহ করা হতো স্থানীয় প্রাণ দুগ্ধ সংগ্রহ কেন্দ্রে। সেই দুধ চলে যেত রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে।

ভেজাল দুধ তৈরির এই কারখানার সন্ধান মিলেছে পাবনার চাটমোহরে। এতে জড়িত স্থানীয় কিছু খামারি ও ব্যবসায়ী। অভিযোগ রয়েছে, এসব ভেজাল দুধ কারবারিদের সঙ্গে জড়িত প্রাণ দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। যার প্রমাণ মিলেছে প্রশাসনের অভিযানে।

অভিযানে প্রাণ দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র থেকে জব্দ করা দুধ পরীক্ষা করে তার মধ্যে ডিটারজেন্ট ও হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নামের কেমিক্যালের উপস্থিতি পেয়েছেন নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তারা।

গত সোমবার চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুসা নাসের চৌধুরী উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের লাঙ্গলমোড়া গ্রামে ও ছাইকোলা চৌরাস্তায় প্রাণের হাব সেন্টারে এই অভিযান পরিচালনা করেন।

ইউএনও মুসা নাসের চৌধুরী জানান, উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের লাঙলমোড়া গ্রামে বেশ কয়েকটি পরিবার পাম তেল, সোডাসহ বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে নকল দুধ তৈরি করে আসছে এবং প্রতিদিনই তৈরি করা সেই বিপুল পরিমাণ ভেজাল দুধ ছাইকোলা চৌরাস্তা মোড়ে প্রাণ ডেইরি হাবের দুগ্ধ শীতলীকরণ সেন্টারে সরবরাহ করে আসছিল।

প্রথমে লাঙ্গলমোড়া গ্রামে ভেজাল দুধ তৈরিকারকদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখান থেকে আটক করা হয় পাঁচজনকে। সেখান থেকে ভেজাল দুধ তৈরির উপকরণ সোডা, পাম তেল, কেমিক্যালজাতীয় কিছু পদার্থসহ বেশ কিছু ড্রাম জব্দ করা হয়। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছাইকোলা চৌরাস্তা মোড়ে প্রাণ ডেইরি হাবের দুগ্ধ শীতলীকরণ সেন্টারে অভিযান চালানো হয়। সেখানে মজুত করা ৬ হাজার লিটার জব্দ করা হয়। দুধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দুধের মধ্যে তেল ও ডিটারজেন্ট, কেমিক্যালের উপস্থিতি পাওয়ায় জনসম্মুখে ভেজাল দুধ বিনষ্ট করা হয়।

ভেজাল দুধ সংগ্রহ, মজুত ও সরবরাহের অভিযোগে প্রাণ হাবের তিন কর্মকর্তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুসা নাসের চৌধুরী। তাঁরা হলেন প্রাণ ডেইরি হাবের গুরুদাসপুর অঞ্চলের এরিয়া ম্যানেজার পাবনার ফরিদপুর উপজেলার জন্তিহার গ্রামের শামসুল আলম (৩৬), সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার চক চিথুলয়া গ্রামের জহির রায়হান (২৭) ও পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা গ্রামের নাজমুল হোসাইন (৩৫)।

একই সঙ্গে ভেজাল দুধ তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে আটকের পর নিয়মিত মামলা করে থানায় সোপর্দ করা হয়। পরে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

পাবনার অতিরিক্ত নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমরা ওখানকার প্রাণ দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রের দুধ পরীক্ষা করি। একটাতে পেয়েছিলাম ডিটারজেন্ট আর একটাতে পেয়েছিলাম হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড। ডিটারজেন্ট কাপড়চোপড় পরিষ্কার করার জন্য এবং হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড কাপড়ে রং করার কাজে ব্যবহৃত হয়। যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর।’

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) সালেহ্ মুহাম্মদ আলী বলেন, ‘হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড হলো জীবাণুনাশক। যা দিয়ে শরীরের ক্ষত পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহার হয়। আবার ডিটারজেন্টও কিন্তু কাপড় পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহার হয়। এগুলো ক্ষারজাতীয় পদার্থ। এসব যদি পেটে যায়, তাহলে খাদ্যনালি পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থায়ীভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে খাদ্যনালি। আর শিশুরা মারাও যেতে পারে।’

শিশুখাদ্যে এমন ভেজাল দুঃখজনক উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘খাদ্য হলো মৌলিক অধিকার। এখানে কোনো ভেজাল মেনে নেওয়া যায় না।’

প্রাণ ডেইরি সেকশনের এ জি এম শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘পাবনা জেলায় প্রাণ ডেইরি হাব আছে একটি। আর এর সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলা মিলিয়ে দুধ সংগ্রহ শীতলীকরণ কেন্দ্র আছে ২১টি। এসব কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন দুধ সংগ্রহ করা হয় ৩৫-৪০ হাজার লিটার। যা ঢাকায় নিয়ে প্যাকেজিংয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়।’

চাটমোহরে প্রাণ দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রে ভেজাল দুধ তৈরির বিষয়টি জানেন কি না, আর এ বিষয়ে আপনারা কী ভাবছেন, জনগণের আস্থা নষ্ট হবে কি না—এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টা আমি বলতে পারব না। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাদের মিডিয়া বিভাগ আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্ধারিত দামে মিলছে না সার, বিপাকে কৃষক

আজিনুর রহমান আজিম, পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) 
নির্ধারিত দামে মিলছে না সার, বিপাকে কৃষক

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে সারের সংকটের অজুহাতে বাজারে দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে সার পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। এতে ক্ষোভ ও হতাশায় পড়েছেন উপজেলার হাজারো কৃষক। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডিলার ও পরিবহন সিন্ডিকেট মজুত করে সারের বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ করছে। অথচ সারের কৃত্রিম সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি রোধে কৃষি অধিদপ্তর থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না

জানা গেছে, রবি মৌসুমের শুরুতে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি সারসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় ২০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দরে সার কিনতে হচ্ছে। এতে চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা বলেন, ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি), মিউরেট অব পটাশ (এমওপি)—সব ধরনের সার বেশি টাকা না দিলে পাওয়া যায় না। ডিলাররা বলেন, সার নেই। তাই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে। কেউ কেউ আবাদ কমানোর কথাও ভাবছেন।

কৃষকেরা জানান, সরকার নির্ধারিত ৫০ কেজি টিএসপি সারের দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯৬০ থেকে ২ হাজার ১০০ টাকায়। ডিএপি সারের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। ইউরিয়া সারের দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকার জায়গায় ১ হাজার ৪৫০ টাকা, আর পটাশ সারের দাম ১ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

জানতে চাইলে জগতবেড় ইউনিয়নের পশ্চিম জগতবেড় গ্রামের কৃষক মফির উদ্দিন বলেন, ‘সারের বাজারে আগুন। আমি ১৯ বস্তা টিএসপি সার কিনেছি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৬০০ টাকা বেশি দিয়ে। ইউরিয়াও ১০০ টাকা বেশি দিতে হয়েছে। এখন কীভাবে আবাদ করব?’ জোংড়া ইউনিয়নের ইসলামনগর এলাকার কৃষক আবু সাঈদ বলেন, ‘এক একর জমিতে ফুলকপি লাগিয়েছি। টিএসপি সার প্রতি বস্তায় ৬০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। সামনে ভুট্টার আবাদে কী করব ভেবে পাচ্ছি না।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় চাষাবাদযোগ্য জমি রয়েছে ২৬ হাজার ১৫১ হেক্টর। এই অঞ্চলের প্রায় ৪১ হাজার ৫০০ পরিবার সরাসরি কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। রবি মৌসুমে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ইউরিয়া সারের চাহিদা ৬ হাজার ৫৫০ টন, বরাদ্দ এসেছে মাত্র ২ হাজার ৩৬৪ টন। টিএসপি, ডিএপি ও পটাশ সারের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা—চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ প্রায় অর্ধেক।

তবে সারের দোকানদারদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পাওয়ায় বাইরের জেলা থেকে বেশি দামে সার কিনে আনতে হচ্ছে। এ জন্য কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দাম নেওয়া হয়। পাটগ্রাম বাজারের ডিলার হরিপদ দে বলেন, এখন কৃষকদের মধ্যে ভয় কাজ করছে, সার পাওয়া যাবে না—এই আশঙ্কায় সবাই একসঙ্গে সার কিনতে ছুটছেন। ফলে চাহিদা বেড়েছে। সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছে, তা কৃষকের চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে বাজার মনিটরিং চলছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে কৃষক যেন সার পান, সে ব্যাপারে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কেউ সারের কৃত্রিম সংকট বা কালোবাজারি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, সারের ঘাটতি ধীরে ধীরে পূরণ করা হচ্ছে। তবে যদি কেউ বেশি দামে বিক্রি করে, কৃষকেরা লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্রাহ্মণপাড়ায় রাতভর যৌথ বাহিনীর অভিযান, মাদক ধ্বংস

ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মাদক ও চোরাচালানবিরোধী বিশেষ অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মাদক ও চোরাচালানবিরোধী বিশেষ অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মাদক ও চোরাচালানবিরোধী বিশেষ অভিযানে বিপুল পরিমাণ মদের খালি বোতল ও গাঁজা ধ্বংস করেছে উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের বাগড়া, তেতাভূমি ও ব্রাহ্মণপাড়া সদর ইউনিয়নের পূর্বপাড়া এলাকায় টানা কয়েক ঘণ্টা এই অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা জাহান। এতে সেনাবাহিনী, থানা-পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন। পুলিশের নেতৃত্বে ছিলেন ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম এবং সেনাবাহিনীর (১২ বীর) দলের নেতৃত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট মো. এহসান সিরাজী সাদ।

প্রশাসন ও যৌথ বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে অনেক মাদক কারবারি ও চোরাকারবারি পালিয়ে যায়। তবে তেতাভূমি এলাকায় ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত কয়েক হাজার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদের খালি বোতল ধ্বংস করা হয়। পরে ব্রাহ্মণপাড়া সদর ইউনিয়নের পূর্বপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা কয়েকটি গাঁজার পুরিয়াও ধ্বংস করা হয়। এ সময় সীমান্ত এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালানো হয়।

অভিযান শেষে ইউএনও মাহমুদা জাহান বলেন, মাদক, চোরাচালান ও অপরাধ দমনে টাস্কফোর্সের অভিযান নিয়মিত চলবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পীরগঞ্জে আরও ৯ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ শনাক্ত

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি  
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ছবি: সংগৃহীত
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় আরও ৯ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ পাওয়া গেছে। আজ বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাসুদ রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিরা হলেন রামনাথপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামের আশুরা বেগম (৬৫), রবিউল ইসলাম (৫৫), শাহিন মিয়া (২৩), শরীফ মিয়া (২২), খাসা মিয়া (৫২), চেরাগপুরের রওহাবুল মিয়া (৩২), দ্বারিয়াপুরের শিল্পী (২৮), মামুন (১৬) ও খোরশেদ ইসলাম (২৫)।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চেরাগপুর গ্রামের শমসের আলীর ছেলে সাদেক আলী ৪ অক্টোবর অসুস্থ গরু জবাই করে ১৮টি পরিবারের মধ্যে মাংস বিতরণ করেন। পরে ১১ অক্টোবর দ্বারিয়াপুর গ্রামের টুটুল মিয়াও অসুস্থ গরু জবাই করে গ্রামবাসীর মধ্যে মাংস ভাগ করে দেন। ধারণা করা হচ্ছে, এসব গরুর মাংস খেয়ে বা কাটাকাটির সময় সংস্পর্শে এসে তাঁরা অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়েছেন।

আক্রান্ত শিল্পী, মামুন ও খোরশেদ জানান, গরু জবাইয়ের পরপরই কয়েকজনের শরীরে ঘা দেখা দেয়। তাঁরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন।

রংপুর জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার পর্যন্ত রংপুরের পীরগাছায় ৩৮, কাউনিয়ায় ১৮, মিঠাপুকুরে ১২, গঙ্গাচড়ায় ৭, পীরগঞ্জে একজনসহ জেলায় ৭৮ জন সন্দেহজনক অ্যানথ্রাক্স রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে পীরগঞ্জের নতুন ৯ জন আক্রান্তের তথ্য এখনো ওই হিসাবে যুক্ত হয়নি।

জেলা সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা জানান, জেলায় এখন পর্যন্ত অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্তের সংখ্যা ১১। তবে সন্দেহজনক রোগীর সংখ্যা আরও বেশি। তিনি বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্স রোগীর শরীরে কাঁচা ঘা না থাকলে নমুনা সংগ্রহ করা যায় না, তাই অনেক ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।’ এদিকে গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরে পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গে দুজনের মৃত্যু হয়। পরে গাইবান্ধায়ও একাধিক আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সর্বশেষ ৪ অক্টোবর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের রোজিনা বেগম (৪৫) অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তাড়াশে কীটনাশকের দোকান থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার মালপত্র চুরি

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় সার ও কীটনাশকের দোকানে চুরি। ছবি: আজকের পত্রিকা
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় সার ও কীটনাশকের দোকানে চুরি। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় রাতের আঁধারে সার ও কীটনাশকের দোকানে চুরি হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার মালপত্র খোয়া গেছে মালিকের।

গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলার কাস্তা বাজারে মেসার্স জিসা এন্টারপ্রাইজে এই ঘটনা ঘটে।

দোকানের মালিক জাহাঙ্গীর আলম দাবি করে বলেন, ‘রাত সাড়ে ৯টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাই। সকালে এসে দেখি দোকানের পেছনের টিন কাটা। দোকান থেকে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার কীটনাশক ও অন্য মালপত্র চুরি হয়ে গেছে।’

এ বিষয়ে তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘চুরির বিষয়ে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত