Ajker Patrika

পানিশূন্য তিস্তায় সংকটে সেচ প্রকল্প

মাসুদ পারভেজ রুবেল, ডিমলা (নীলফামারী)
পানিশূন্য তিস্তায় সংকটে সেচ প্রকল্প

বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদী শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় সংকটে পড়েছে দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প। সেচের লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশও পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। মোটা অঙ্কের টাকার এই প্রকল্প থেকে সেচ সুবিধা বঞ্চিত নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার লাখো কৃষক। দ্বিগুণ খরচে দিতে হচ্ছে বিকল্প সেচ ব্যবস্থা। 

পাউবো সূত্র বলছে, তিস্তা ব্যারাজের উজানে ১০০০-১৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া যাচ্ছে। তবে ব্যারাজের ভাটিতে প্রায় ১১০ কিলোমিটার তিস্তায় ১০০ কিউসেক পানিও সরবরাহ নেই। 

তিস্তা ব্যারাজ থেকে শুরু হয়ে সেচ প্রকল্পের খাল নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২ উপজেলায় বিস্তৃত। এর দৈর্ঘ্য ৭৬৬ কিলোমিটার। মূল খাল থেকে টারশিয়ারি ও সেকেন্ডারি নালার মাধ্যমে পানি পৌঁছায় কৃষকের জমি পর্যন্ত। কিন্তু পানি না পাওয়া ও দেরিতে পাওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রকল্প এলাকার অনেক কৃষক। একই এলাকার অনেক কৃষককে দ্বিগুণ খরচে বিকল্প উপায়ে সেচ দিতে হচ্ছে।

সুবিধাভোগীরা বলছেন, নদীতে পানি না থাকায় তাঁরা আবাদ নিয়ে বেকায়দায় আছেন। পানির প্রবাহ নিশ্চিত না করায় বেশির ভাগ সেচনালা কোনো কাজেই আসছে না।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৭৯ সালে দেশের শস্যভান্ডার খ্যাত উত্তর জনপদের ৮ জেলায় ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ব্যারাজের উজানে ভারত বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করায় প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হয়। 
পরে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ১ লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১৯৯৩ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্পের অপারেশনাল কার্যক্রম চালু করা হলেও কখনোই তা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। এর মূল কারণ শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকা। ফলে চড়া দামে ডিজেল কিংবা বিদ্যুৎ-চালিত সেচযন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে কৃষকদের।

পাউবো সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ১০ হাজার, ২০১৭ সালে ৮ হাজার, ২০১৮ সালে ৩৫ হাজার, ২০১৯ সালে ৪০ হাজার, ২০২০ সালে ৪১ হাজার এবং ২০২১ ও ২০২২ সালে ৫৩ হাজার, ২০২৩ সালে ৪৫ হাজার হেক্টর এবং চলতি মৌসুমে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লক্ষ্যমাত্রা শুধু কাগজে কলমে, বাস্তবে অর্ধেক জমিতেও সেচ দিতে পারছে না পাউবো।

সূত্র জানায়, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিস্তা নদীতে ৬০-৬৫ হাজার কিউসেক পানিপ্রবাহ থাকে। অক্টোবর থেকে পানি কমতে শুরু করে। ডিসেম্বরে তিস্তা শুকিয়ে যায়। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত তিস্তায় ৭০০-১৫০০ কিউসেক পানি থাকে। সে সময় সেচের জন্য তিস্তায় কমপক্ষে ৫ হাজার কিউসেক পানি থাকা দরকার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তিস্তা ব্যারাজের উজানে সামান্য কিছু পানি থাকলেও ভাটিতে কোনো পানিই নেই। নদীর বুকে জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল বালুচর। সেচ প্রকল্পের আওতাভুক্ত নীলফামারীর বিভিন্ন গ্রামের ফসলি জমি ঘুরে দেখা গেছে, যেসব এলাকার কৃষকেরা আগে সেচের পানি পেতেন, তাঁরা ডিজেলচালিত শ্যালো পাম্প বসিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। অথচ এসব এলাকার কৃষকেরা আগে নামমাত্র খরচে সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে চাষাবাদ করতেন।

কৃষকেরা বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে পুরো মৌসুমের জন্য সেচ প্রকল্প থেকে পানি নেওয়া হলে খরচ পড়ে ২০০ টাকার মতো। কিন্তু বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্প থেকে পানি নিতে ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি। ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিনের পানির খরচ আরও বেশি।

ডিমলার সোনাখুলি গ্রামের কৃষক সাফিন, আফতাবসহ কয়েকজন বলেন, দুর্বল ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিকল্পনার অভাবে পাঁচ-ছয় বছর ধরে সেচ খাল থেকে পানি পাচ্ছেন না তাঁরা। নালার পানি আসতে আসতে আবাদ শেষ। বাধ্য হয়ে যন্ত্রের মাধ্যমে সেচ দিতে হচ্ছে কৃষকদের। তাতে প্রতি বিঘায় ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সেচযন্ত্র বসাতে গিয়েও খরচ হয় ৮-১০ হাজার টাকা। পানির খরচ কমাতে প্রকল্প এলাকার বেশির ভাগ কৃষক তাঁদের বোরো ধানের জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছেন।

ওই এলাকার পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি আতোয়ার হোসেন বলেন, সেচ প্রকল্প এলাকার ৬০-৭০ ভাগ কৃষক পাম্প বা শ্যালো মেশিনে সেচ দিয়ে ভুট্টা আবাদ করছেন।

উত্তর সোনাখুলি চরের কৃষক নুরুজ্জামান বলেন, ‘তিস্তার বুকে ফসল চাষাবাদ করছি, অথচ সেচের পানি পেতে হচ্ছে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে।’

নীলফামারীর ইটাখোলার ডাঙ্গাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল গফুর বলেন, বোরো রোপণের সময় ক্যানেলে পানিই থাকে না। আবার পানি আসে অসময়ে। ফলে ফসল ডুবে নষ্ট হয়। তার দুই একর জমিতে সেচ দিতে হয় শ্যালো মেশিন দিয়ে। একই কথা বলেন জেলার বিভিন্ন সেচ প্রকল্প এলাকার অন্তত ২০ জন কৃষক। তাঁদের দাবি, তিস্তা নদী খনন করে নির্দিষ্ট একটি চ্যানেলে পানি প্রবাহিত করা হলে উপকৃত হবেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। তাতে সারা বছরই নদী ও সেচ ক্যানেলে পানির প্রবাহ থাকবে।

এদিকে পানি কতটুকু প্রবাহিত হবে, সে অনিশ্চয়তার মধ্যেই প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হচ্ছে তিস্তা সেচ প্রকল্পের খাল। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফউদদৌলা বলেন, প্রকল্প এলাকা বাড়াতে সেচ খাল সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে ১ লাখ হেক্টর কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে।

তবে কৃষক ও নদী সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। তিস্তায় স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ৫ হাজার কিউসেক থাকার কথা থাকলেও উজানে একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে শুকনো মৌসুমে তা ১০০০ কিউসেকের নিচে নেমে আসে। প্রয়োজনের তুলনায় সিকিভাগ পানিও না মেলে না তখন।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল হাসান বলেন, যেখানে তিস্তার পানিই অনিশ্চিত, সেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে সেচ খাল সংস্কার করলেও তা কাজে আসবে না। তিনি আরও বলেন, ‘উজানের পানি ব্যারেজের জলকপাট বন্ধ করে আটকে সেচ কাজে লাগানোর জন্য ভাটিতে নদী মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমরা শুনে আসছি তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোনো বাস্তব উদ্যোগ দেখা যায়নি।’

পানিশূন্য তিস্তায় সংকটে সেচ প্রকল্প। ছবি: আজকের পত্রিকাপানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর বিভাগের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, ‘প্রকল্প এলাকার কৃষকেরা ফেব্রুয়ারি মাসে বোরো রোপণ করে। এ সময় নদীতে পানি থাকে না। আবার ভুট্টা লাগানো হয় অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। তখন পর্যাপ্ত পানি থাকে। কিন্তু মাঠে রবিশস্য (ভুট্টা, সরিষা, পেঁয়াজ, আলু) ফসল ও পাকা আমন ধান থাকে। ফলে ক্যানেলে পানি ছাড়া সম্ভব হয় না। এ জন্য সব ফসল একসঙ্গে কাটা ও লাগানোর সময় এগিয়ে নিয়ে একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে আনতে আমরা কৃষি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করছি। আর তিস্তা নদী খনন ও ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারের উচ্চমহলের ব্যাপার।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বহিরাঙ্গন কর্মকর্তা কৃষিবিদ সেকেন্দার আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে কৃষকেরা ‘বিকল্প ভেজানো ও শুকানো’ (এডব্লিউডি) পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছে। এ পদ্ধতিতে কম সেচে ফসল আবাদ হয়। কিন্তু সেচ প্রকল্পের পানি বণ্টন পদ্ধতিতে এভাবে চাষাবাদ সম্ভব হয় না। এ কারণে সেচ ক্যানেলের পানি কাজে আসছে না বেশির ভাগ কৃষকের। সব ফসল একসঙ্গে কাটা ও লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এখন একই জমিতে বছরে তিন-চারবার ফসল হয়। তাই মৌসুম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়েই ফসল রোপণ করতে হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লাল চিনিতে ভেজাল মেশানোয় জরিমানা

ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় লাল চিনিতে ভেজাল মেশানোয় ২ হাজার কেজি চিনি জব্দ এবং আ. সালাম নামের এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

আজ বুধবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

আ. সালামের বাড়ি ফুলবাড়িয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড লাহেড়িপাড়া মহল্লায় পলাশতলী গ্রামে।

চিনিতে ভেজাল মেশানোর খবর পেয়ে ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় এক ড্রাম চিটাগুড় ও ভেজালমিশ্রিত ২ হাজার কেজি লাল চিনি জব্দ করা হয়।

ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, চিনিতে ভেজাল মেশানোয় ২ হাজার কেজি চিনি জব্দ এবং আ. সালাম নামের এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে পদ্মার চর থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজবাড়ী-পাবনা সীমান্তবর্তী পাংশা উপজেলার হাবাসপুর খেয়াঘাট এলাকার অদূরে পদ্মার চর থেকে হাত-পা বাঁধা অজ্ঞাতনামা এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আজ বুধবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন জানান, পদ্মায় মাছ ধরার সময় দুপুরে জেলেরা চরে মরদেহটি দেখতে পান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে মরদেহটি উদ্ধার করেছে। মরদেহটি পাবনা জেলার সীমানায় পাওয়ায় পাবনা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে।

ওসি আরও জানান, ধারণা করা হচ্ছে, দু-এক দিন আগে হত্যার পর লাশ চরে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। মরদেহের পরিচয় নিশ্চিতে কাজ করছে পুলিশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনা নাগরিককে ছুরিকাঘাত করা যুবক পালাল পুলিশকে ছুরিকাঘাত করে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে চীনা নাগরিককে ছুরিকাঘাত করে পালানোর সময় গণধোলাইয়ে আহত ছিনতাইকারী এবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশকে ছুরিকাঘাত করেছে। তবে ঘটনার পর পুলিশের একাধিক দলের সাঁড়াশি অভিযানে ছুরিকাঘাতকারী ওই যুবকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাতে চমেক হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে পাহারায় নিয়োজিত এক কনস্টেবলকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় ইমাম হোসেন আকাশ (৩০) নামের ওই যুবক। তিনি আনোয়ারার দিঘীরপাড় বরুমছড়া এলাকার মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে এবং বন্দর এলাকার আজাদ কলোনির বাসিন্দা। পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার তাঁর দুই সহযোগীর নাম এখনো জানা যায়নি।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলায়মান আজকের পত্রিকাকে বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়া ছিনতাইকারী ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই বিষয়ে একটি ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

পাঁচলাইশ থানা-পুলিশের একটি সূত্র জানায়, চমেক হাসপাতালে পুলিশের পাহারায় ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন অভিযুক্ত ছিনতাইকারী ইমাম হোসেন আকাশ। ওই দিন রাতে ইমামের সঙ্গে দুজন নারীসহ তিনজন দেখা করতে আসেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইমাম হোসেন রাজু সেখানে দায়িত্বরত একজন কনস্টেবলকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর ওই দিন রাতেই নগর পুলিশের একাধিক টিম ওই ছিনতাইকারীকে ধরতে মাঠে নামে। পরে আজ বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে সীতাকুণ্ডের কুমিরা এলাকা থেকে তাঁকে দুই সহযোগীসহ আটক করা হয়।

গত মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর সিপিআর ৫ নম্বর গেট-সংলগ্ন ব্রিজের সামনে এক চীনা নাগরিক ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। দুই-তিনজন ছিনতাইকারী ওই চীনা নাগরিককে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে তাঁর সঙ্গে থাকা পাসপোর্ট, ভিসা, নগদ অর্থ ও নথিপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় সেখানে উপস্থিত জনতা ধাওয়া দিয়ে দুই ছিনতাইকারীদের ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।

বন্দর থানার পুলিশ জানায়, ঘটনার পর পুলিশের হাতে আটক দুই ছিনতাইকারীদের মধ্যে ইমাম হোসেন আকাশ গুরুতর আহত থাকায় তাঁকে পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। শাহাদাত হোসেন (২৫) নামের আরেক ছিনতাইকারীকে হাজতে রাখা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘নির্যাতন সইতে না পেরে’ কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন, গৃহবধূর মৃত্যু

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি 
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া মিতু বেগম। ছবি: সংগৃহীত
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া মিতু বেগম। ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনের ঘটনায় দগ্ধ এক গৃহবধূ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। যৌতুকের জন্য স্বামী ও শাশুড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মারা যাওয়া নারীর নাম মিতু বেগম (২০)। গায়ে আগুন দেওয়ার পাঁচ দিন পর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মিতু বেগম ফরিদগঞ্জের উত্তর হাঁসা গ্রামের অটোরিকশাচালক রাকিবের স্ত্রী।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মিতু তাঁর স্বামীর বসতঘরে পারিবারিক কলহের জেরে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় তাঁর মা পারভীন বেগম ফরিদগঞ্জ থানায় মিতুর স্বামীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে যৌতুকের জন্য চাপ ও নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়।

পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর আগে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে জামাতা ও তার পরিবার আমার মেয়েকে যৌতুকের জন্য চাপ দেয় এবং শারীরিক নির্যাতন করে আসছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও আমার মেয়েকে মারধর করলে নির্যাতন সইতে না পেরে নিজ শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাঁচ দিন পর আমার মেয়ের মৃত্যু হয়। আমি থানায় অভিযোগ করেছি। এ ঘটনায় উপযুক্ত বিচার চাই।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মিতু বেগমের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর স্বামী রাকিব ও পরিবারের সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন।

ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অগ্নিদগ্ধ মিতু ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাঁর মায়ের অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত