Ajker Patrika

গরু কেনার সামর্থ্য নেই, তিন যুগ ধরে নিজেই ঘানি টানছেন বৃদ্ধ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিনীলফামারী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ৪৭
তেলের ঘানি টেনে চলেছেন মোস্তকিন আলী। এ কাজে সহায়তা করছেন স্ত্রী ছকিনা বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা
তেলের ঘানি টেনে চলেছেন মোস্তকিন আলী। এ কাজে সহায়তা করছেন স্ত্রী ছকিনা বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা

বয়সের ভারে ন্যুব্জ শরীর, তবু টানছেন তেলের ঘানি। একটু টান দিলেই হাঁপিয়ে ওঠেন। তারপরও বিশ্রাম নেই। দুপুর থেকে বিকেল অবধি ঘানি টেনে চলেছেন বৃদ্ধ মোস্তাকিন আলী (৬৫)। টানাটানির সংসারে গরু কেনার সামর্থ্য কখনো হয়নি তাঁর। গরু না থাকায় তিন যুগ ধরে নিজেই তেলের ঘানি টেনে চলেছেন তিনি।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি পাগলাটারি গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাকিন আলী। এলাকায় তিনি পরিচিত ‘মোস্তাকিম তেলি’ নামে। সংসার খরচ, প্রতিবন্ধী সন্তানদের দেখভাল আর মেয়েদের বিয়ে দিতে গিয়ে রোজগারের সব টাকা খরচ করতে হয়েছে তাঁকে। তাই গরু কেনার সামর্থ্য কখনোই হয়ে ওঠেনি। কিন্তু এখন বয়স হওয়ায় শরীরের শক্তিতে আর কুলায় না।

মোস্তাকিন আলীর দিন শুরু হয় সরিষা সংগ্রহ দিয়ে। আশপাশের গ্রাম ঘুরে সংগ্রহ করেন সরিষা। দুপুর নাগাদ বাড়ি ফিরে শুরু হয় ঘানি টানা। কাঠের গুঁড়ি আর ভারী পাথরের সঙ্গে শরীরের জোরে চলে এই সংগ্রাম। পাশে থেকে সহযোগিতা করেন স্ত্রী ছকিনা বেগম।

দিনে পাঁচ কেজি সরিষা ভেঙে ১ লিটার ২৫০ গ্রাম তেল আর ৩ কেজির মতো খৈল পাওয়া যায়। বিকেলে বাজারে গিয়ে তেল বিক্রি করেন। খরচ বাদে হাতে থাকে দুই থেকে আড়াই শ টাকা। এই টাকা দিয়েই চলে সংসার। তবে বয়সের ভারে এখন ঘানি টানতে পারেন না বৃদ্ধ মোস্তাকিম। তার ওপর বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় সংসারের খরচ কুলিয়ে উঠতে হিমশিম খান।

সরেজমিন দেখা যায়, মোস্তাকিন আলীর বাড়ির আঙিনায় জোড়াতালি দেওয়া টিনের ছাপরার ভেতরে রয়েছে কাঠের ঘানি। ঘামে ভিজে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘানি টেনে চলেন এ বৃদ্ধ দম্পতি। তাঁদের সংসার চালানোর একমাত্র ভরসা এই ঘানি। টিনের ঘরটিতে ঝুপঝাপ বৃষ্টিতে পানি চুইয়ে পড়ে।

কথা বলে জানা গেছে, ভিটেমাটি ছাড়া কোনো জমিজমা নেই এই দম্পতির। সংসারে তিন ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে এই দম্পতির। তাদের মধ্যে দুই ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী। বড় ছেলে ঘাড়ে টিউমার নিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা সংসার পেতেছেন। দীর্ঘদিনের উপার্জনের জমানো টাকা দিয়ে কোনোরকমে চার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন মোস্তাকিম। তবে বিয়ের বছর দুয়েক পরে যৌতুক দিতে না পারায় এক মেয়েকে বাবার সংসারে ফিরে আসেন।

মোস্তাকিন বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে ঘানি টানা শুরু করি। এখন প্রায় তিন যুগ ধরে এভাবে সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু বয়সের কারণে শরীর আর সায় দেয় না। হাঁপিয়ে যাই। কেউ যদি একটা গরু কিনে দিত, তাহলে সেই গরু দিয়েই ঘানি টেনে সংসারটা ভালোভাবে চালাতে পারতাম। আমার গরু কেনার টাকা নাই, তাই নিজেই ঘানি টানতে হয়।’

স্ত্রী ছকিনা বেগম বলেন, ‘আমরা বিয়ের পর থেকে একসঙ্গে বুক দিয়ে ঘানি টেনে তেল বানাই। বয়স হয়েছে, শরীর আর পারছে না। তিন বেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না। ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে কোনোরকম বেঁচে আছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি, তাঁরা এভাবে নিজেই ঘানি টানেন। আমরা এলাকাবাসী মাঝেমধ্যে সহায়তা করি। তবে কেউ একটা গরু দিয়ে সহায়তা করলে তাঁদের জন্য ভালো হতো।’

প্রতিবেশী হালিম মিয়া বলেন, ‘এই স্বামী-স্ত্রীর বয়স হয়েছে। এই বয়সে ঘানি টানা খুবই কষ্টদায়ক। আমি দীর্ঘ সময় ধরে দেখছি, তারা এভাবে ঘানি টেনে সংসার চালাচ্ছে।’

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে দ্রুতই তাঁদের সরকারি সুবিধার আওতায় আনার চেষ্টা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা

নরসিংদী প্রতিনিধি
নিহত প্রান্তোষ কর্মকার। ছবি: সংগৃহীত
নিহত প্রান্তোষ কর্মকার। ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর রায়পুরায় প্রান্তোষ কর্মকার (৪২) নামে এক জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের দিঘলিয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের কাছে এ ঘটনা ঘটে। নিহত প্রান্তোষ কর্মকার বাঁশগাড়ি নতুন বাজারের স্বর্ণকার ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রান্তোষকে রাতের খাবারের পর কয়েকজন মুখোশধারী ব্যক্তি লেনদেনের কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে বাইরে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ শুনে স্থানীয়রা বিদ্যালয়ের পাশে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে দ্রুত উদ্ধার করে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক প্রথমিক চিকিৎসা দিয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে পৌঁছানোর পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।

নিহতের স্ত্রী স্বর্ণলতা কর্মকার বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে কিছু লোকজনের সঙ্গে তাঁর স্বামীর বিরোধ চলছিল। তারা প্রান্তোষকে নানা সময়ে হুমকি দিত বলেও অভিযোগ করেন তিনি। পরিকল্পিতভাবেই তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। বুক ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলির চিহ্ন রয়েছে।’

জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার জানান, বাঁশগাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ব্যবসায়ী নিহতের ঘটনা ঘটেছে। কারা এবং কেন এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের ধরতে পুলিশের পৃথক টিম মাঠে নেমেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ রাখার হুমকি দেওয়া যুবশক্তির দুই নেতাকে অব্যাহতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৯
জাতীয় যুবশক্তির দুই নেতা গত সোমবার সাংবাদিকদের হুমকি দিচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাতীয় যুবশক্তির দুই নেতা গত সোমবার সাংবাদিকদের হুমকি দিচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীতে সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ করে রাখার হুমকি দেওয়া জাতীয় যুবশক্তির দুই নেতাকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সংগঠনের যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) আসাদুর রহমান এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, গুরুতর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় যুবশক্তির রাজশাহী মহানগর শাখার মুখ্য সংগঠক মেহেদী হাসান ফারাবি এবং যুগ্ম সদস্যসচিব সোয়াইব আহমেদকে কমিটির সকল দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত কর্মকাণ্ডের দায়ে এই দুজনকে কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না, সে বিষয়ে আগামী দুই দিনের মধ্যে লিখিত এবং সশরীর উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম এবং সদস্যসচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম নির্দেশ দিয়েছেন।

আসাদুর রহমান আরও জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া না হলে সংগঠনের নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, সোমবার রাজশাহী পর্যটন মোটেলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নতুন জেলা কমিটির পরিচিতি সভা ছিল। সে সভা পণ্ড করতে যান মেহেদী হাসান ফারাবি ও সোয়াইব আহমেদসহ এনসিপির কয়েকজন নেতা-কর্মী। তাঁরা অভিযোগ তোলেন, এনসিপির জেলা কমিটির নতুন আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের দোসর। তাঁরা তাঁর পদত্যাগ চান।

এ অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকেরা মোটেলের সম্মেলনকক্ষে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলছিলেন। প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালে সম্মেলনকক্ষের ভেতরে প্রবেশ করেন সোয়েব আহমেদ ও মেহেদী হাসান ফারাবি।

ঢুকেই সোয়েব বলেন, ‘ভাই, সাংবাদিক যাঁরা আছেন, এইটা যদি এখনই বন্ধ না করেন, আপনাদেরসহ আমরা তালা মেরে দেব। আপনারা পায়খানা-প্রস্রাব সব এইখানে করতে হবে।’

পাশ থেকে ফারাবি বলেন, ‘এত লোক সব বাইরে বসে আছে। আপনারা ফাইজলামি করছেন এখানে, নাকি?’ সাংবাদিকেরা কিছু না বললে ফারাবি আবার বলেন, ‘ভাই চিল্লাচ্ছি, কানে যাচ্ছে না কথা?’

এরপর সোয়েব তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এখনই যদি বন্ধ না করেন এটা, আপনাদের সাংবাদিকদেরসহ কিন্তু আমরা তালা মেরে দেব।’

এরপরই সাংবাদিকেরা এসে এর প্রতিবাদ করেন। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রাতেই বিবৃতি দেয় রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখা। এ ছাড়া মঙ্গলবার রাজশাহী এডিটরস ফোরাম বিবৃতি দিয়ে এর নিন্দা জানায়।

সাংবাদিক সংগঠনগুলো এই ঘটনাকে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি এবং জুলাইয়ের চেতনাবিরোধী উল্লেখ করে অবিলম্বে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বনের টিলা কেটে ভবন নির্মাণ

  • সংরক্ষিত বনের মধ্যে বসবাসের জন্য অবৈধভাবে চলছে পাকা স্থাপনা নির্মাণকাজ।
  • রাজকান্দি বন রেঞ্জের সংরক্ষিত এলাকায় এমন বেশ কয়েকটি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়।
মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কালেঞ্জি গ্রামে বন রেঞ্জের সংরক্ষিত এলাকায় টিলা কেটে চলছে ভবন নির্মাণকাজ। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কালেঞ্জি গ্রামে বন রেঞ্জের সংরক্ষিত এলাকায় টিলা কেটে চলছে ভবন নির্মাণকাজ। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় সংরক্ষিত বনের মধ্যে বসবাসের জন্য অবৈধভাবে চলছে পাকা স্থাপনা নির্মাণকাজ। এ জন্য কাটা হয়েছে টিলা। রাজকান্দি বন রেঞ্জের সংরক্ষিত এলাকায় এমন বেশ কয়েকটি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবৈধভাবে এই স্থাপনা নির্মাণকাজ চলে।

সম্প্রতি রাজকান্দি বন রেঞ্জে আদমপুর ইউনিয়নের কালেঞ্জি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, টিলার একটি অংশ কেটে বসবাসের জন্য ভবন নির্মাণকাজ করছেন শ্রমিকেরা। তবে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তাঁরা ভয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আদমপুর ইউনিয়নের কালেঞ্জি গ্রামে সংরক্ষিত বনের জমিতে শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা ঘরবাড়ি তৈরি করে বাস করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি সেখানে নুরনবী, আব্দুল নবী, মহেব উল্যাহ নামের তিনজন ব্যক্তি পাশাপাশি তিনটি বাড়িতে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন। তাঁদের এই ভবন নির্মাণে বন বিভাগ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। ঘর নির্মাণের বিষয়টি জানার জন্য এসব বাড়িতে গিয়েও তাঁদের পাওয়া যায়নি। গত কয়েক বছরে এমন আরও কয়েকটি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয় সংরক্ষিত এই বনের জমিতে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বনের এই গ্রামে রাস্তার পাশেই বাড়িঘর। বন বিভাগের লোকজন প্রতিদিন কয়েক দফা এদিকে আসা-যাওয়া করেন। তাঁদের অনুমতি ছাড়া পাকা ঘর নির্মাণের সাহস কেউ করবে না।

এদিকে সংরক্ষিত এলাকায় ভবন নির্মাণের ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। কাটা পড়ছে টিলা ও গাছপালা।

জানা গেছে, ২০ হাজার ২৭০ একর এলাকা নিয়ে রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। আদমপুর, কুরমা ও কামারছড়া বন বিটের আওতায় রয়েছে এই বন। সীমান্তঘেঁষা এই বনে ২০১৮ সালে ‘বাংলাদেশ জার্নাল অব প্ল্যান্ট ট্যাক্সোনমি’তে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, বনটিতে ১২৩ উদ্ভিদ পরিবারের প্রায় ৫৪৯ প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ শনাক্ত হয়েছে। প্রায় ১২ প্রজাতির বটগাছ এবং ১০ প্রজাতির কাষ্ঠল লতার বৈচিত্র্য খুব কম বনেই আছে।

বনটিতে সোনালি বিড়াল, এশীয় কালো ভালুক, বনছাগল, খুদে নখের ভোঁদড়, বনরুইও রয়েছে। প্রায় ৩০০ প্রজাতির পাখির বিচরণও এই বনে। ১৯৭৩ সালে গৃহীত বিপন্ন বন্য প্রাণী এবং উদ্ভিদ প্রজাতির বাণিজ্যসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ বা সাইট্রাসভুক্ত বহু উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিচরণস্থল এই বন। বনটিতে বানর, হরিণ, উল্লুক, হনুমান, শূকরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও পাখির এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। নানা প্রজাতির পাখি, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ বনটিতে শুরু হয়েছে অবক্ষয়। বনের মধ্যে অবৈধভাবে পাকা স্থাপনা তৈরি করা গুরুতর অপরাধ। এটি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর অধীনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।

কমলগঞ্জের রাজকান্দি বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ বলেন, শুধু রাজকান্দি রেঞ্জ নয়, কোনো সংরক্ষিত বনের মধ্যে পাকা স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি নেই। পাকা ঘর যারা নির্মাণ করেছে, তাদের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।

মৌলভীবাজার বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) নাজমুল আলম বলেন, ‘সংরক্ষিত বনে পাকা ঘর নির্মাণ করা যাবে না। আমি বিষয়টি এখন জানলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক তৌহিদুজ্জামান পাভেল বলেন, ‘বিষয়টি আমি এখন জানতে পারলাম। সংরক্ষিত বনের মধ্যে কেউ অবৈধভাবে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজীপুরের শ্রীপুর: দখলের কবলে সুতিয়া মোহনা-চরে প্রাচীর

  • নদীর চরে চলছে উঁচু সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কর্মযজ্ঞ।
  • একই সঙ্গে হুমকিতে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র আর শীতলক্ষ্যা।
রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর)  
গাজীপুরের শ্রীপুরে তিন নদীর মোহনায় চর দখল করে নির্মিত প্রাচীর।	ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুরের শ্রীপুরে তিন নদীর মোহনায় চর দখল করে নির্মিত প্রাচীর। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে তিন নদীর মোহনায় উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করে সুতিয়া নদীর বিরাট অংশ দখলের ঘটনা ঘটেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর চরে চলছে উঁচু সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। এতে করে মারাত্মক দখলের কবলে পড়ছে স্বচ্ছ জলের নদী সুতিয়া। একই সঙ্গে হুমকিতে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র আর শীতলক্ষ্যা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসন ও নদী রক্ষা সংশ্লিষ্টদের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নদীর চর জবরদখলের হিড়িক চালাচ্ছেন এক প্রভাবশালী। মাদ্রাসার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নদীর চরে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছেন। প্রভাবশালীর ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পান না স্থানীয়রা। নদীর মোহনায় উঁচু প্রাচীরে প্রতিবন্ধকতা তৈরির ফলে নদীভাঙনের শঙ্কা করছেন জনপদের বাসিন্দারা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামে ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা ও সুতিয়া—তিনটি নদী মিলিত হয়েছে। সুতিয়া নদীটি নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রাম ঘেঁষে বয়ে গেছে। ঠিক তিন নদীর মোহনায় সুতিয়ার শুরুতেই উঁচু সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে জবরদখলে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নদীর বিরাট অংশ দখলে নিয়ে সীমানাপ্রাচীরের এক অংশের কাজ শেষ করেছে। অপর অংশের নির্মাণকাজ চলমান। নদীর অনেক অংশ ইতিমধ্যে দখলে নিয়েছে। স্থানীয় ওয়াহিদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি মাদ্রাসার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নদীর চর দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, সীমানাপ্রাচীরের ভেতর কমপক্ষে এক বিঘা জমি জবরদখলে নিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ নদীর জায়গা।

স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, যেখানে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটি সম্পূর্ণ নদীর জায়গা। একসময় এখানেই নদী ছিল। কয়েক বছর যাবৎ এখানে চর জাগে। এখনো বর্ষার শুরুতেই থইথই পানি থাকে। অনেক স্রোত বহমান এই জায়গা দিয়ে। এখানে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরির কারণে নদীভাঙন শুরুর আশঙ্কা রয়েছে। এমন একটি জায়গায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে তিনটি নদীর পানি প্রবাহিত হয়। বর্ষাকালে অনেক বেশি স্রোত থাকে।

নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, যিনি নদীর জমি জবরদখল করছেন, তিনি তো সমাজের একজন কর্তাব্যক্তি। উনি কী করে এমনটি করতে পারেন? এখানে তো কয়েক বছর আগেও নদী ছিল। কয়েক বছর হলো চর জাগছে। আবার হয়তোবা নদী হবে। মোহনার কাছে নদী একটি স্টেডিয়ামের মতো বড়। আজ দখল হতে হতে এতটুকু। তাও আবার উঁচু সীমানা নির্মাণ করে।

অভিযুক্ত ওয়াহিদুল রহমান বলেন, ‘আমার নিজস্ব জমিতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছি। এখানে কিছু অংশ থাকতে পারে নদীর। তবে মাপজোখ করা হয়নি।’ ‘আপনি তো নদীর বিরাট অংশ দখলে নিয়েছেন, যেটা দৃশ্যমান নদী।’ এ কথার জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন নদী নেই।’

নদী পরিব্রাজক দল শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা একটি বড় দখল। এমন দৃশ্যমান দখলের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে সীমানাপ্রাচীর অপসারণের উদ্যোগ নেবে।’

ইউএনও সজীব আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। দ্রুত সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত