তানিম আহমেদ ও সাবিত আল হাসান, নারায়ণগঞ্জ থেকে

রাত পোহালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক নগরী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) নির্বাচন। সদ্য সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী কি জয়ের হ্যাটট্রিক করবেন নাকি নগরবাসী নতুন নগর পিতা নির্বাচন করবেন সেটাই নারায়ণগঞ্জ তথা দেশবাসীর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। দুই হেভিওয়েট প্রার্থী আইভী ও তৈমুর আলম খন্দকার সহিংসতার আশঙ্কা করলে তা উড়িয়ে দিচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন। তাঁদের দাবি ভোটাররা ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে বাসায় ফিরতে পারেন, তার ব্যবস্থাই করা হয়েছে। অন্যদিকে ভোটদের দাবি, তাঁরা যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে, সুষ্ঠুভাবে ভোট দিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারেন।
নাসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সাতজন হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপি থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের হাতি প্রতীকের। নির্বাচনী প্রচারণায় এগিয়ে ছিলেন এই দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা।
অন্য পাঁচজন মেয়র প্রার্থী হলেন খেলাফত মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন (বটগাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম (ঘোড়া)।
চ্যালেঞ্জের সামনে আইভী
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, নারায়ণগঞ্জের যেকোনো অধিকার আদায়ে আইভী সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তেমন অভিযোগও ওঠেনি। এই কারণে তাঁর ওপরেই আস্থা রেখেছে দল। নির্বাচনী প্রচারণায়ও আমরা বিপুল সাড়া পেয়েছি। প্রার্থী যেমন আশা করছে লক্ষাধিক ভোটে তিনি বিজয়ী হবেন, আমাদের তেমন না থাকলে আশা রাখছি ৬০ থেকে ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হব।
নির্বাচন পরিচালনার জন্য সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানককে সমন্বয়ক করে একটি টিম করে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ২৭ ওয়ার্ড ভিত্তিক আলাদা কমিটি করে তাঁরা। নেতারা প্রতিদিনই প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেন। প্রচারণার শেষদিন শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের একটি ক্লাবে সবাই বৈঠক করেন। সেখানে তাঁরা ওয়ার্ডভিত্তিক ভোটের একটি চিত্র তুলে ধরেন। সেখানকার চিত্র অনুযায়ী আইভী ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।
তবে, এই চিত্রের বিপরীত কথাও বলছেন দলটির কেউ কেউ। তাঁদের দাবি গত দুইবারের নির্বাচনে আইভী যত সহজে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এইবার তত সহজ হবে না। টানা তিন মেয়াদে তিনি নারায়ণগঞ্জের নগরপিতার দায়িত্বে রয়েছেন। এতে অনেকই লাভক্ষতির হিসাব মেলাচ্ছেন। এ ছাড়া গত দুইবারের তুলনায় এইবার এখানে দলীয় কোন্দল বেশিই ভোগাচ্ছে। এই হিসাবে নৌকা তীরে ভিড়তে কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের এক নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিগত দুই মেয়াদে আইভী নারায়ণগঞ্জের চেহারাই বদলে দিয়েছেন। অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন করেছেন। দলের একপক্ষের বাধার মধ্যে শেখ রাসেল পার্ক করেছেন। এতে উন্নয়নেও নির্ভার থাকতে পারছি না। কারণ বিগত কয়েক ধাপে অনুষ্ঠিত বিএনপিবিহীন ইউপি নির্বাচনের নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবিতে আমাদের ভাবাচ্ছে। কারণ দেশে এখন দুই ধরনের মানুষ আছে। একটা আওয়ামী লীগ। আরেকটা অ্যান্টি-আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনগুলোতে বিএনপিসহ তাঁদের জোটের কিছু ভোট আইভী পেয়েছিল। তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও বেশিরভাগ ভোটগুলো তৈমুরের হাতিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের ওসমান ও চুনকা পরিবার আওয়ামী লীগ করলেও তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রজন্মের পর প্রজন্মের। সেই ধারাবাহিকতা ওসমান পরিবারের সদস্য সরকার দলীয় সাংসদ শামীম ওসমান ও চুনকা পরিবারের সদস্য মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর মধ্যে বিদ্যনাম। দুজনেরই সাপে নেউলে সম্পর্ক। নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে শামীম ওসমানকে গডফাদার বলেও আখ্যা দেন আইভী। তৈমুরকে ওসমান পরিবারের প্রার্থী বলেও দাবি করেন তিনি। আইভীর এমন দাবির পরে সংবাদ সম্মেলন বিরোধ থাকা সত্ত্বেও নৌকার পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দেন সাংসদ শামীম ওসমান।
আইভীর অনুসারীদের দাবি ঘোষণা দিলেও শামীম ওসমানের অনুসারীরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়নি। কাজও করেনি। তাঁদের অনুসারী যেসব নেতা সাংগঠনিক দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরা শুধু কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে হাজিরা দিচ্ছেন। এর বাইরে তেমন কাজ করছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দলীয় ও উপদলীয় কোন্দল প্রকট। কোন্দলের কারণে অনেকই আইভীর পক্ষে তেমন সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আইভীর ভোটের ওপর।
নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, যে যাই বলুক না কেন নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের একটা প্রভাব ও নিজস্ব কিছু ভোটব্যাংক রয়েছে। আইভী শামীম ওসমানকে গডফাদারে আখ্যায়িতসহ নানান কটূক্তি করেছেন। নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিন পর্যন্ত সেটা অব্যাহত ছিল। তাঁর এমন অহংকারী আচরণ তাঁদের বিক্ষুব্ধ করতে পারে। যার জবাব তাঁরা ব্যালটে দিতে পারেন।
ওই নেতা বলেন, এখানে শামীম ওসমান বিরোধী একটা বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে সেটা সত্য। এই ব্যাংকের বেশি ভোট কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের। সেই ভোট ব্যাংকগুলোকে কাছে রাখতে আইভী নিয়মিতই শামীম বিরোধিতা করে গেছেন। আবার প্রচার-প্রচারণায় তিনি দলীয় নেতাদের তেমন গুরুত্বও দেন নাই। ভোটের রাজনীতিতে বেশিরভাগের মনজয় করে চলতে হয়।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান দীপু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী আইভী নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের প্রার্থী। তাঁর বিজয়ে আমরা শতভাগ আশাবাদী। তিনি এবার বিজয়ে হ্যাটট্রিক করবেন।’
আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এই নির্বাচনে আইভীর বিজয়ের মধ্য দিয়ে আরও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায় সরকার।’
পরাজিত হলে সারা দেশে সরকারের ভাবমূর্তি কিছুটা হুমকির সম্মুখীন হবে জেনেও জয়-পরাজয়ের চিন্তা মাথায় নিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। আইভীকে আস্থায় নিয়ে এই সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হচ্ছে।
বিজয়ে আত্মবিশ্বাসী তৈমুরও
আওয়ামী লীগের মতো নারায়ণগঞ্জের বিএনপিতেও কোন্দল রয়েছে। সিটি এলাকার দুই সাবেক সাংসদ আবুল কালাম ও গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে তৈমুর আলম খন্দকারের। সেটি এখনো না মিটলেও বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জের দুই নেতার বেশকিছু অনুসারীদের হাতির পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে। তাতে নিজের বিজয়ে আত্মবিশ্বাসী তৈমুর।
হাতি মার্কার প্রার্থী তৈমুরকে আজ শনিবার আরও ফুরফুরে আচরণ করতে দেখা গেছে। আইভী-শামীমের ভেতরে বিরোধ মীমাংসা হয়নি এখনো। বিরোধের মীমাংসা না হওয়ায় নির্বাচনে তাঁর জয়ের ক্ষেত্রে আস্থা তৈরি হয়েছে। তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁর নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করার অভিযোগ তুললেও হতাশ নন তৈমুর।
হাতির নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রেপ্তার তৎপরতা থাকলেও শামীম ওসমানের সঙ্গে আইভীর বিরোধ শেষ না হলে শামীম অনুসারীদের ভোট তাঁর বক্সেই পড়বে। পুলিশি তৎপরতায় তৈমুর কিছু অনুসারী না পেলেও সেই শূন্যতা শামীম ওসমানের অনুসারীরাই পূর্ণ করবে।
তাঁর ওই কর্মী বলেন, হাতির লোককে কেন্দ্র থেকে দূরে রাখতে পারে একমাত্র শামীম ওসমানের অনুসারীরাই। পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাষ্ট্রীয়বাহিনী অতিরঞ্জিত অবস্থানে থাকলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আইভীর অনুসারীর পক্ষে তা সম্ভব নয়।
আজ শনিবার নিজ বাড়িতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তৈমুর বলেন, ‘মরে গেলেও মাঠ ছাড়ব না। নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। মাঠে থাকব, পালিয়ে যাইনি।’ সংবাদ সম্মেলনে লক্ষাধিক ভোটে জয়ী হওয়ার আশা প্রকাশ করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক এই উপদেষ্টা।
ভোটারদের ভাবনা
আজ শনিবার নগরীর কালী বাজার, চাষাঢ়া, টানবাজার, দেওভোগ ও মাসদাইর এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। তাঁদের অনেকই সুষ্ঠু ও সহিংসমুক্ত ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ কেউ মনে করেছেন তিনি হয়তো নিজের ভোটটা দিতে পারবেন না। তবে তাঁদের ধারণা, সুষ্ঠু ভোট হলে এবার নৌকা-হাতির লড়াই হবে জমজমাট। কারণ আইভী দীর্ঘদিন সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন। আবার তৈমুর আলম খন্দকারও মানুষের সঙ্গে ছিলেন। তাই কেউ কাউকে সহজে হারাতে পারবেন না।
টানবাজার শীতলক্ষ্যার পাড়ের কয়েকজন ভোটার বলেন, নৌকার প্রার্থী আইভী টানা ১৮ বছর ধরে দায়িত্ব ছিলেন। এই সময় অবকাঠামো অনেক উন্নয়নই করেছেন। কিন্তু গত নির্বাচনের আগে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, শীতলক্ষ্যা ও কদম রসুল ব্রিজ করে সিটি করপোরেশনের দুই পাড়ের মানুষের মাঝে জোড়া লাগাবেন। কিন্তু সেটা তিনি পারেননি। এখনো নৌকায় করে বন্দর যেতে হয়। বৃষ্টির সময়ের ভোগান্তি শুধু ভুক্তভোগীর জানেন। এবার ভোটে তার প্রভাব পড়তে পারে।
চাষাঢ়া মোড়ের চা দোকানে আড্ডারত আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত নির্বাচনেও আমরা আইভীকে ভোট দিয়েছি। এবার নতুন প্রার্থীকে দিতে চাই। তবে আমার স্ত্রী বলতেছেন, আইভীকে ভোট দিতে। কালকে সকালেই চিন্তা করব কাকে ভোট দেব।’
তবে নারায়ণগঞ্জের বেশির ভাগ ভোটারই জানিয়েছেন, আইভীর বিজয়ে সব সময় নিয়ামক থাকেন নারী ভোটাররা। এবারও সেই ধারা আছে। আইভী নিজেও সেটা মনে করেন। শুক্রবার নিজ বাস ভবনে আইভী বলেছিলেন, ‘আমি প্রশাসনের কাছে বরাবরই বলে আসছি যে, ভোটের দিন যাতে উৎসবমুখর থাকে। আমার নারী ভোটাররা যেন আসতে পারে। আমার ইয়াং ভোটাররা যেন আসতে পারে। কারণ আমি জানি এই ভোটগুলো আমার। আমি নির্বাচনে জিতবই ইনশাল্লাহ।’
শনিবার যেভাবে পার করলেন আইভী-তৈমুর
শনিবার অনেকটা নীরবেই দেওভোগের নিজ বাসভবনেই কাটিয়েছেন নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। সারা দিনে গণমাধ্যম কর্মীরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার চেষ্টা করেও পারেননি। অনেককেই ফিরতে হয়েছে বাসার সামনে থেকে। রাত সাড়ে ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আইভী বাসাতেই ছিলেন। রোববার সকালে আইভী বাড়ির পাশের শিশুবাগ স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেবেন বলে জানা গেছে। পরে তিনি বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন।
এদিকে ভোটের আগের দিন বাসায় ছিলেন হাতির মার্কার প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। বেলা ১২টার আগে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি সুষ্ঠু ভোটের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চালুর আবেদন করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে কোনো ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ নয়; বরং প্রশাসনকেই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমার গুরুত্বপূর্ণ নেতা কর্মীদের আটক করছে। আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
ক্লাবে আ. লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠক
নাসিক নির্বাচনের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় সমন্বয় করা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েকজন শনিবার সারা দিনই নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে ছিলেন। নেতাদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনসহ একাধিক নেতা দফায় দফায় স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন।
শনিবার বিকেলে আইভীর প্রচারণার দায়িত্বে থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, এইমাত্র ক্লাবে নানক ভাইদের সঙ্গে বৈঠক করে বাসায় আসালাম। ফ্রেশ হয়ে আইভীর বাসায় যাব। আওয়ামী লীগের নেতারা কি এখনো ক্লাবেই আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা বলেন, শুনেছি বের হয়ে যাবে। এখন আছে কিনা জানি না।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কাস্টিং ভোটের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে নৌকার প্রার্থী জয়ী হবে। তবে আজ (শনিবার) কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আমরা কোনো বৈঠক করিনি। তাঁরা কোথায় আছেন সেটাও আমি জানি না।’
ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ ইসি ও প্রশাসনের
ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চালু রাখার যে আবেদন স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার করেছেন তা নাকচ করে দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার। তিনি বলেন, কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা কাজ করবে না। কেন্দ্রে যদি সিসি ক্যামেরা কাজ করে, তাহলে তো কেন্দ্রের ভেতরে বুথের গোপনীয়তা রক্ষা হলো না। কাজেই কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বন্ধ থাকবে। সব কেন্দ্রে তো নেই। যেখানে আছে সেখানে বন্ধ থাকবে।
প্রার্থীরা নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা করলেও রিটার্নিং কর্মকর্তা তা মনে করছেন না। ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্নে করার জন্য সব প্রস্তুতি ইসি নিয়েছেন বলেনও জানান মাহফুজা আক্তার। তিনি বলেন, ভোটাররা তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে আসবেন। শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে আসবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাঁরা ভোটকেন্দ্রে আসবেন, ভোট দেবেন। ভোট শেষে উৎসবমুখর পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যে ফিরে যাবেন।
সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে রোববার (ভোটগ্রহণের দিন) নারায়ণগঞ্জে বহিরাগতরা ‘অ্যালাউ’ না বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল ইসলাম। পুলিশ লাইনে ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, কোনো বহিরাগতকে আমরা ভোটের দিন নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতে দেব না। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আমাদের যে মোবাইল টিম থাকবে, আমাদের চেকপোস্ট থাকবে, জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে আমরা মানুষকে চলাচল করতে দেব। রোববার নারায়ণগঞ্জ মহানগর এলাকার যে বা যারা বের হবেন দয়া করে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বের হবেন, যাদের বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে।’
তিনি বলেন, ‘সবার প্রতি আহ্বান, কেউ যেন নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা না করে। কেউ যদি বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে, তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।’ পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আমরা কঠোর অবস্থানে আছি, কঠোর অবস্থানেই থাকব। মা-বোনেরাসহ যাঁরা আছেন, আপনারা সবাই ভোটকেন্দ্রে আসবেন। কেউ বাধা দিলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
গণগ্রেপ্তার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জায়েদুল আলম বলেন, ‘নির্বাচনসংক্রান্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’

রাত পোহালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক নগরী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) নির্বাচন। সদ্য সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী কি জয়ের হ্যাটট্রিক করবেন নাকি নগরবাসী নতুন নগর পিতা নির্বাচন করবেন সেটাই নারায়ণগঞ্জ তথা দেশবাসীর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। দুই হেভিওয়েট প্রার্থী আইভী ও তৈমুর আলম খন্দকার সহিংসতার আশঙ্কা করলে তা উড়িয়ে দিচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন। তাঁদের দাবি ভোটাররা ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে বাসায় ফিরতে পারেন, তার ব্যবস্থাই করা হয়েছে। অন্যদিকে ভোটদের দাবি, তাঁরা যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে, সুষ্ঠুভাবে ভোট দিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারেন।
নাসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী সাতজন হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপি থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের হাতি প্রতীকের। নির্বাচনী প্রচারণায় এগিয়ে ছিলেন এই দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা।
অন্য পাঁচজন মেয়র প্রার্থী হলেন খেলাফত মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন (বটগাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম (ঘোড়া)।
চ্যালেঞ্জের সামনে আইভী
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, নারায়ণগঞ্জের যেকোনো অধিকার আদায়ে আইভী সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তেমন অভিযোগও ওঠেনি। এই কারণে তাঁর ওপরেই আস্থা রেখেছে দল। নির্বাচনী প্রচারণায়ও আমরা বিপুল সাড়া পেয়েছি। প্রার্থী যেমন আশা করছে লক্ষাধিক ভোটে তিনি বিজয়ী হবেন, আমাদের তেমন না থাকলে আশা রাখছি ৬০ থেকে ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হব।
নির্বাচন পরিচালনার জন্য সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানককে সমন্বয়ক করে একটি টিম করে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ২৭ ওয়ার্ড ভিত্তিক আলাদা কমিটি করে তাঁরা। নেতারা প্রতিদিনই প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেন। প্রচারণার শেষদিন শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের একটি ক্লাবে সবাই বৈঠক করেন। সেখানে তাঁরা ওয়ার্ডভিত্তিক ভোটের একটি চিত্র তুলে ধরেন। সেখানকার চিত্র অনুযায়ী আইভী ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।
তবে, এই চিত্রের বিপরীত কথাও বলছেন দলটির কেউ কেউ। তাঁদের দাবি গত দুইবারের নির্বাচনে আইভী যত সহজে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এইবার তত সহজ হবে না। টানা তিন মেয়াদে তিনি নারায়ণগঞ্জের নগরপিতার দায়িত্বে রয়েছেন। এতে অনেকই লাভক্ষতির হিসাব মেলাচ্ছেন। এ ছাড়া গত দুইবারের তুলনায় এইবার এখানে দলীয় কোন্দল বেশিই ভোগাচ্ছে। এই হিসাবে নৌকা তীরে ভিড়তে কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের এক নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিগত দুই মেয়াদে আইভী নারায়ণগঞ্জের চেহারাই বদলে দিয়েছেন। অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন করেছেন। দলের একপক্ষের বাধার মধ্যে শেখ রাসেল পার্ক করেছেন। এতে উন্নয়নেও নির্ভার থাকতে পারছি না। কারণ বিগত কয়েক ধাপে অনুষ্ঠিত বিএনপিবিহীন ইউপি নির্বাচনের নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবিতে আমাদের ভাবাচ্ছে। কারণ দেশে এখন দুই ধরনের মানুষ আছে। একটা আওয়ামী লীগ। আরেকটা অ্যান্টি-আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনগুলোতে বিএনপিসহ তাঁদের জোটের কিছু ভোট আইভী পেয়েছিল। তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও বেশিরভাগ ভোটগুলো তৈমুরের হাতিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের ওসমান ও চুনকা পরিবার আওয়ামী লীগ করলেও তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রজন্মের পর প্রজন্মের। সেই ধারাবাহিকতা ওসমান পরিবারের সদস্য সরকার দলীয় সাংসদ শামীম ওসমান ও চুনকা পরিবারের সদস্য মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর মধ্যে বিদ্যনাম। দুজনেরই সাপে নেউলে সম্পর্ক। নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে শামীম ওসমানকে গডফাদার বলেও আখ্যা দেন আইভী। তৈমুরকে ওসমান পরিবারের প্রার্থী বলেও দাবি করেন তিনি। আইভীর এমন দাবির পরে সংবাদ সম্মেলন বিরোধ থাকা সত্ত্বেও নৌকার পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দেন সাংসদ শামীম ওসমান।
আইভীর অনুসারীদের দাবি ঘোষণা দিলেও শামীম ওসমানের অনুসারীরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়নি। কাজও করেনি। তাঁদের অনুসারী যেসব নেতা সাংগঠনিক দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরা শুধু কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে হাজিরা দিচ্ছেন। এর বাইরে তেমন কাজ করছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দলীয় ও উপদলীয় কোন্দল প্রকট। কোন্দলের কারণে অনেকই আইভীর পক্ষে তেমন সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আইভীর ভোটের ওপর।
নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, যে যাই বলুক না কেন নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের একটা প্রভাব ও নিজস্ব কিছু ভোটব্যাংক রয়েছে। আইভী শামীম ওসমানকে গডফাদারে আখ্যায়িতসহ নানান কটূক্তি করেছেন। নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিন পর্যন্ত সেটা অব্যাহত ছিল। তাঁর এমন অহংকারী আচরণ তাঁদের বিক্ষুব্ধ করতে পারে। যার জবাব তাঁরা ব্যালটে দিতে পারেন।
ওই নেতা বলেন, এখানে শামীম ওসমান বিরোধী একটা বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে সেটা সত্য। এই ব্যাংকের বেশি ভোট কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের। সেই ভোট ব্যাংকগুলোকে কাছে রাখতে আইভী নিয়মিতই শামীম বিরোধিতা করে গেছেন। আবার প্রচার-প্রচারণায় তিনি দলীয় নেতাদের তেমন গুরুত্বও দেন নাই। ভোটের রাজনীতিতে বেশিরভাগের মনজয় করে চলতে হয়।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান দীপু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী আইভী নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের প্রার্থী। তাঁর বিজয়ে আমরা শতভাগ আশাবাদী। তিনি এবার বিজয়ে হ্যাটট্রিক করবেন।’
আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এই নির্বাচনে আইভীর বিজয়ের মধ্য দিয়ে আরও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায় সরকার।’
পরাজিত হলে সারা দেশে সরকারের ভাবমূর্তি কিছুটা হুমকির সম্মুখীন হবে জেনেও জয়-পরাজয়ের চিন্তা মাথায় নিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। আইভীকে আস্থায় নিয়ে এই সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হচ্ছে।
বিজয়ে আত্মবিশ্বাসী তৈমুরও
আওয়ামী লীগের মতো নারায়ণগঞ্জের বিএনপিতেও কোন্দল রয়েছে। সিটি এলাকার দুই সাবেক সাংসদ আবুল কালাম ও গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে তৈমুর আলম খন্দকারের। সেটি এখনো না মিটলেও বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জের দুই নেতার বেশকিছু অনুসারীদের হাতির পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে। তাতে নিজের বিজয়ে আত্মবিশ্বাসী তৈমুর।
হাতি মার্কার প্রার্থী তৈমুরকে আজ শনিবার আরও ফুরফুরে আচরণ করতে দেখা গেছে। আইভী-শামীমের ভেতরে বিরোধ মীমাংসা হয়নি এখনো। বিরোধের মীমাংসা না হওয়ায় নির্বাচনে তাঁর জয়ের ক্ষেত্রে আস্থা তৈরি হয়েছে। তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁর নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করার অভিযোগ তুললেও হতাশ নন তৈমুর।
হাতির নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রেপ্তার তৎপরতা থাকলেও শামীম ওসমানের সঙ্গে আইভীর বিরোধ শেষ না হলে শামীম অনুসারীদের ভোট তাঁর বক্সেই পড়বে। পুলিশি তৎপরতায় তৈমুর কিছু অনুসারী না পেলেও সেই শূন্যতা শামীম ওসমানের অনুসারীরাই পূর্ণ করবে।
তাঁর ওই কর্মী বলেন, হাতির লোককে কেন্দ্র থেকে দূরে রাখতে পারে একমাত্র শামীম ওসমানের অনুসারীরাই। পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাষ্ট্রীয়বাহিনী অতিরঞ্জিত অবস্থানে থাকলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আইভীর অনুসারীর পক্ষে তা সম্ভব নয়।
আজ শনিবার নিজ বাড়িতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তৈমুর বলেন, ‘মরে গেলেও মাঠ ছাড়ব না। নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। মাঠে থাকব, পালিয়ে যাইনি।’ সংবাদ সম্মেলনে লক্ষাধিক ভোটে জয়ী হওয়ার আশা প্রকাশ করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক এই উপদেষ্টা।
ভোটারদের ভাবনা
আজ শনিবার নগরীর কালী বাজার, চাষাঢ়া, টানবাজার, দেওভোগ ও মাসদাইর এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। তাঁদের অনেকই সুষ্ঠু ও সহিংসমুক্ত ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ কেউ মনে করেছেন তিনি হয়তো নিজের ভোটটা দিতে পারবেন না। তবে তাঁদের ধারণা, সুষ্ঠু ভোট হলে এবার নৌকা-হাতির লড়াই হবে জমজমাট। কারণ আইভী দীর্ঘদিন সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন। আবার তৈমুর আলম খন্দকারও মানুষের সঙ্গে ছিলেন। তাই কেউ কাউকে সহজে হারাতে পারবেন না।
টানবাজার শীতলক্ষ্যার পাড়ের কয়েকজন ভোটার বলেন, নৌকার প্রার্থী আইভী টানা ১৮ বছর ধরে দায়িত্ব ছিলেন। এই সময় অবকাঠামো অনেক উন্নয়নই করেছেন। কিন্তু গত নির্বাচনের আগে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, শীতলক্ষ্যা ও কদম রসুল ব্রিজ করে সিটি করপোরেশনের দুই পাড়ের মানুষের মাঝে জোড়া লাগাবেন। কিন্তু সেটা তিনি পারেননি। এখনো নৌকায় করে বন্দর যেতে হয়। বৃষ্টির সময়ের ভোগান্তি শুধু ভুক্তভোগীর জানেন। এবার ভোটে তার প্রভাব পড়তে পারে।
চাষাঢ়া মোড়ের চা দোকানে আড্ডারত আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত নির্বাচনেও আমরা আইভীকে ভোট দিয়েছি। এবার নতুন প্রার্থীকে দিতে চাই। তবে আমার স্ত্রী বলতেছেন, আইভীকে ভোট দিতে। কালকে সকালেই চিন্তা করব কাকে ভোট দেব।’
তবে নারায়ণগঞ্জের বেশির ভাগ ভোটারই জানিয়েছেন, আইভীর বিজয়ে সব সময় নিয়ামক থাকেন নারী ভোটাররা। এবারও সেই ধারা আছে। আইভী নিজেও সেটা মনে করেন। শুক্রবার নিজ বাস ভবনে আইভী বলেছিলেন, ‘আমি প্রশাসনের কাছে বরাবরই বলে আসছি যে, ভোটের দিন যাতে উৎসবমুখর থাকে। আমার নারী ভোটাররা যেন আসতে পারে। আমার ইয়াং ভোটাররা যেন আসতে পারে। কারণ আমি জানি এই ভোটগুলো আমার। আমি নির্বাচনে জিতবই ইনশাল্লাহ।’
শনিবার যেভাবে পার করলেন আইভী-তৈমুর
শনিবার অনেকটা নীরবেই দেওভোগের নিজ বাসভবনেই কাটিয়েছেন নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। সারা দিনে গণমাধ্যম কর্মীরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার চেষ্টা করেও পারেননি। অনেককেই ফিরতে হয়েছে বাসার সামনে থেকে। রাত সাড়ে ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আইভী বাসাতেই ছিলেন। রোববার সকালে আইভী বাড়ির পাশের শিশুবাগ স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেবেন বলে জানা গেছে। পরে তিনি বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন।
এদিকে ভোটের আগের দিন বাসায় ছিলেন হাতির মার্কার প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। বেলা ১২টার আগে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি সুষ্ঠু ভোটের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চালুর আবেদন করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে কোনো ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ নয়; বরং প্রশাসনকেই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমার গুরুত্বপূর্ণ নেতা কর্মীদের আটক করছে। আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
ক্লাবে আ. লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠক
নাসিক নির্বাচনের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় সমন্বয় করা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েকজন শনিবার সারা দিনই নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে ছিলেন। নেতাদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনসহ একাধিক নেতা দফায় দফায় স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন।
শনিবার বিকেলে আইভীর প্রচারণার দায়িত্বে থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, এইমাত্র ক্লাবে নানক ভাইদের সঙ্গে বৈঠক করে বাসায় আসালাম। ফ্রেশ হয়ে আইভীর বাসায় যাব। আওয়ামী লীগের নেতারা কি এখনো ক্লাবেই আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা বলেন, শুনেছি বের হয়ে যাবে। এখন আছে কিনা জানি না।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কাস্টিং ভোটের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে নৌকার প্রার্থী জয়ী হবে। তবে আজ (শনিবার) কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আমরা কোনো বৈঠক করিনি। তাঁরা কোথায় আছেন সেটাও আমি জানি না।’
ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ ইসি ও প্রশাসনের
ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চালু রাখার যে আবেদন স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার করেছেন তা নাকচ করে দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার। তিনি বলেন, কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা কাজ করবে না। কেন্দ্রে যদি সিসি ক্যামেরা কাজ করে, তাহলে তো কেন্দ্রের ভেতরে বুথের গোপনীয়তা রক্ষা হলো না। কাজেই কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বন্ধ থাকবে। সব কেন্দ্রে তো নেই। যেখানে আছে সেখানে বন্ধ থাকবে।
প্রার্থীরা নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা করলেও রিটার্নিং কর্মকর্তা তা মনে করছেন না। ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্নে করার জন্য সব প্রস্তুতি ইসি নিয়েছেন বলেনও জানান মাহফুজা আক্তার। তিনি বলেন, ভোটাররা তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে আসবেন। শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে আসবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাঁরা ভোটকেন্দ্রে আসবেন, ভোট দেবেন। ভোট শেষে উৎসবমুখর পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যে ফিরে যাবেন।
সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে রোববার (ভোটগ্রহণের দিন) নারায়ণগঞ্জে বহিরাগতরা ‘অ্যালাউ’ না বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল ইসলাম। পুলিশ লাইনে ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, কোনো বহিরাগতকে আমরা ভোটের দিন নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতে দেব না। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আমাদের যে মোবাইল টিম থাকবে, আমাদের চেকপোস্ট থাকবে, জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে আমরা মানুষকে চলাচল করতে দেব। রোববার নারায়ণগঞ্জ মহানগর এলাকার যে বা যারা বের হবেন দয়া করে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বের হবেন, যাদের বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে।’
তিনি বলেন, ‘সবার প্রতি আহ্বান, কেউ যেন নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা না করে। কেউ যদি বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে, তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।’ পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আমরা কঠোর অবস্থানে আছি, কঠোর অবস্থানেই থাকব। মা-বোনেরাসহ যাঁরা আছেন, আপনারা সবাই ভোটকেন্দ্রে আসবেন। কেউ বাধা দিলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
গণগ্রেপ্তার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জায়েদুল আলম বলেন, ‘নির্বাচনসংক্রান্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’

আবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে খুলে পড়ল ভারী বিয়ারিং প্যাড। এবার রাবার ও ইস্পাতের তৈরি শক্ত এ বস্তুর আঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ গেছে এক পথচারীর। এতে দুজন আহত হয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগে
একসময় প্রবাস জীবনযাপন করেছেন, এরপর দেশে ফিরে ঘর বেঁধেছেন বছর পাঁচেক আগে। ঘরে আছে দুই সন্তান ও স্ত্রী। নিজে ভালো থাকা, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা আবুল কালাম চোকদারের জীবন থেমে গেল। গতকাল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে যে বিয়ারিং প্যাড খুলে
৪ ঘণ্টা আগে
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদের তীর দখল করে কারখানা গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ কবির মোস্তাক আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গ্রামটির সেতুর পাশে কংস নদের জায়গায় মাটি ভরাট, দেয়াল ও পিলার স্থাপন করে শিল্পকারখানা নির্মাণ করছেন তিনি।
৪ ঘণ্টা আগে
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভার এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাত্র তিনজন চিকিৎসকের ওপর। চিকিৎসক ও জনবল স্বল্পতায় বেহাল অবস্থায় চলছে ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
৪ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে খুলে পড়ল ভারী বিয়ারিং প্যাড। এবার রাবার ও ইস্পাতের তৈরি শক্ত এ বস্তুর আঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ গেছে এক পথচারীর। এতে দুজন আহত হয়েছেন।
গতকাল দুপুরের এ দুর্ঘটনার পর নিরাপত্তার কারণে প্রায় তিন ঘণ্টা মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়। তবে বেলা ৩টার পর উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় মতিঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ফার্মগেট হয়ে পুরো রুটে আবার কখন ট্রেন চালু হবে, তা বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগে বলা যাবে না।
১৩ মাসে দুবার এমন গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম খুলে পড়ায় মেট্রোরেলের নিরাপত্তা- ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত বছর প্রথমবার প্যাড খুলে পড়ার পর খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, নির্মাণকাজের সময়ই এ উপকরণটির মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, গতকাল দুপুর ১২টার কিছু আগে মেট্রোরেল চলার সময় ওপর থেকে হঠাৎ একটি বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে পথচারী আবুল কালামের (৩৫) মাথায় আঘাত করে। এতে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। এ ঘটনায় কাছে থাকা আরও দুজন আহত হন এবং ফুটপাতসংলগ্ন একটি চায়ের দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সঙ্গে থাকা পাসপোর্টের কথা উল্লেখ করে পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তি শরীয়তপুরের বাসিন্দা আবুল কালাম।
মেট্রোরেলের লাইন যে কংক্রিটের কাঠামোর ওপর পাতা থাকে, তা হচ্ছে ভায়াডাক্ট। আর ভায়াডাক্টগুলো দাঁড়িয়ে থাকে বিশাল ও প্রশস্ত খুঁটি বা পিলারের ওপর। ভায়াডাক্ট ও পিলারের সংযোগস্থলের মধ্যে রাবার ও স্টিলের তৈরি ৮০ কেজি ওজনের বিয়ারিং প্যাড বসানো হয়। এটি ট্রেন চলাচলের সময় ওপরের কাঠামোর ভার নিচের পিলারে স্থানান্তর করে এবং কম্পন শোষণ করে। এতে কাঠামোর ক্ষয় ও সম্ভাব্য স্থানচ্যুতি রোধ করা যায়।
মেট্রোরেল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) প্রকৌশল সূত্র বলেছে, বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়া অত্যন্ত অস্বাভাবিক ঘটনা। বিষয়টি কাঠামোর নির্মাণত্রুটি নাকি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যর্থতা, তা খতিয়ে দেখা হবে।
জানা গেছে, মেট্রোরেলের দুই পিলারের মাঝখানে থাকা প্রতিটি স্প্যানের জন্য চারটি করে বিয়ারিং প্যাড রয়েছে। মেট্রোরেলের এ পর্যন্ত চালু হওয়া ৬ নম্বর লাইনটিতে (মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত) মোট পিলার আছে ৬২০টি।
তদন্ত কমিটি গঠন
এ ঘটনায় সাবেক মেট্রোরেল এমডি এবং বর্তমান সেতুসচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—বুয়েটের অধ্যাপক এ বি এম তৌফিক হাসান, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) সহকারী অধ্যাপক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জাহিদুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব এবং সড়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আসফিয়া সুলতানা। কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিহত ব্যক্তির পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের কেউ কর্মক্ষম থাকলে মেট্রোরেলে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
দুর্ঘটনার পরপরই ফার্মগেটে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি এ সময় বলেন, ‘এটা নির্মাণকাজের ত্রুটির জন্য হয়েছে নাকি নাশকতামূলক কিছু ঘটেছে, সেটি তদন্তে বের হবে। যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করা হবে এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে সুপারিশ করা হবে।’
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিয়ারিং প্যাডের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ আলগা হয়ে পড়ে যাওয়া কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এটি রক্ষণাবেক্ষণে নজরদারির ঘাটতি বা নির্মাণপর্যায়ে মান নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতার ফল হতে পারে। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো পুরো ট্র্যাকের নিরাপত্তা নিরীক্ষা করা।’
এবার বিয়ারিং প্যাড পড়েছে ৪৩৩ নম্বর পিলার থেকে, যার অবস্থান ফার্মগেট স্টেশনের পশ্চিম পাশে। ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্যাড পড়েছিল ৪৩০ নম্বর পিলার থেকে। তবে সেবার কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তখন আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল ১১ ঘণ্টা।
প্যাড নিয়ে উদ্বেগ পুরনো
মে্ট্রোরেলের ভায়াডাক্টে ব্যবহৃত বিয়ারিং প্যাড নিয়ে নির্মাণের সময়ই প্রশ্ন উঠেছিল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে এ ব্যাপারে আপত্তিও জানানো হয়েছিল। বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে কারিগরি পরীক্ষা করে একাধিক প্যাডের মানে ঘাটতি পাওয়া যায়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। কিন্তু তখন অজ্ঞাত কারণে কেউ তাতে কর্ণপাত করেনি। তবে নতুন করে ‘উন্নত’ প্যাড আনার উদ্যোগের কথাও বলা হয়েছিল।
বুয়েটের ল্যাবে উত্তরা–আগারগাঁও অংশের দুটি প্যাকেজের জন্য আমদানি করা প্যাডের মান পরীক্ষা করা হয়েছিল। এসব প্যাড সরবরাহ করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতাল–থাই। তবে যখন অভিযোগ ওঠে, ততদিনে প্রায় আট কিলোমিটার উড়ালপথে প্যাড বসানোর কাজ হয়ে গিয়েছিল।
যাত্রীদের উদ্বেগ ও ভোগান্তি
বিচিত্র ধরনের এ দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজাদুল হক নামের এক যাত্রী লিখেছেন, ‘আমরা ভাবতাম মেট্রোরেল সবচেয়ে নিরাপদ। এখন ভয় লাগছে; যদি ট্র্যাকের নিচ থেকে কিছু খুলে পড়ে, তাহলে নিরাপত্তা কোথায়?’ স্টেশনের যাত্রীদের মধ্যেও এ নিয়ে গুঞ্জন চলে।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে হঠাৎ ট্রেন চলাচল বন্ধের পর ফার্মগেট ও মতিঝিল স্টেশন এলাকায় যাত্রীদের বেশ ভিড় দেখা যায়। অনেকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বিকল্প পরিবহন খুঁজে নিতে বাধ্য হন। অফিস ছুটির পর নিয়মিত যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন।
গতকাল বিকেলে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ আপাতত বন্ধ থাকবে। আজ (রোববার) চালু করা সম্ভব হবে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পুরো রুট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তবে নির্দিষ্ট সময় এখনই বলা যাচ্ছে না।’

আবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে খুলে পড়ল ভারী বিয়ারিং প্যাড। এবার রাবার ও ইস্পাতের তৈরি শক্ত এ বস্তুর আঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ গেছে এক পথচারীর। এতে দুজন আহত হয়েছেন।
গতকাল দুপুরের এ দুর্ঘটনার পর নিরাপত্তার কারণে প্রায় তিন ঘণ্টা মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়। তবে বেলা ৩টার পর উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় মতিঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ফার্মগেট হয়ে পুরো রুটে আবার কখন ট্রেন চালু হবে, তা বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগে বলা যাবে না।
১৩ মাসে দুবার এমন গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম খুলে পড়ায় মেট্রোরেলের নিরাপত্তা- ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত বছর প্রথমবার প্যাড খুলে পড়ার পর খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, নির্মাণকাজের সময়ই এ উপকরণটির মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, গতকাল দুপুর ১২টার কিছু আগে মেট্রোরেল চলার সময় ওপর থেকে হঠাৎ একটি বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে পথচারী আবুল কালামের (৩৫) মাথায় আঘাত করে। এতে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। এ ঘটনায় কাছে থাকা আরও দুজন আহত হন এবং ফুটপাতসংলগ্ন একটি চায়ের দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সঙ্গে থাকা পাসপোর্টের কথা উল্লেখ করে পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তি শরীয়তপুরের বাসিন্দা আবুল কালাম।
মেট্রোরেলের লাইন যে কংক্রিটের কাঠামোর ওপর পাতা থাকে, তা হচ্ছে ভায়াডাক্ট। আর ভায়াডাক্টগুলো দাঁড়িয়ে থাকে বিশাল ও প্রশস্ত খুঁটি বা পিলারের ওপর। ভায়াডাক্ট ও পিলারের সংযোগস্থলের মধ্যে রাবার ও স্টিলের তৈরি ৮০ কেজি ওজনের বিয়ারিং প্যাড বসানো হয়। এটি ট্রেন চলাচলের সময় ওপরের কাঠামোর ভার নিচের পিলারে স্থানান্তর করে এবং কম্পন শোষণ করে। এতে কাঠামোর ক্ষয় ও সম্ভাব্য স্থানচ্যুতি রোধ করা যায়।
মেট্রোরেল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) প্রকৌশল সূত্র বলেছে, বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়া অত্যন্ত অস্বাভাবিক ঘটনা। বিষয়টি কাঠামোর নির্মাণত্রুটি নাকি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যর্থতা, তা খতিয়ে দেখা হবে।
জানা গেছে, মেট্রোরেলের দুই পিলারের মাঝখানে থাকা প্রতিটি স্প্যানের জন্য চারটি করে বিয়ারিং প্যাড রয়েছে। মেট্রোরেলের এ পর্যন্ত চালু হওয়া ৬ নম্বর লাইনটিতে (মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত) মোট পিলার আছে ৬২০টি।
তদন্ত কমিটি গঠন
এ ঘটনায় সাবেক মেট্রোরেল এমডি এবং বর্তমান সেতুসচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—বুয়েটের অধ্যাপক এ বি এম তৌফিক হাসান, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) সহকারী অধ্যাপক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জাহিদুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব এবং সড়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আসফিয়া সুলতানা। কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিহত ব্যক্তির পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের কেউ কর্মক্ষম থাকলে মেট্রোরেলে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
দুর্ঘটনার পরপরই ফার্মগেটে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি এ সময় বলেন, ‘এটা নির্মাণকাজের ত্রুটির জন্য হয়েছে নাকি নাশকতামূলক কিছু ঘটেছে, সেটি তদন্তে বের হবে। যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করা হবে এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে সুপারিশ করা হবে।’
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিয়ারিং প্যাডের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ আলগা হয়ে পড়ে যাওয়া কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এটি রক্ষণাবেক্ষণে নজরদারির ঘাটতি বা নির্মাণপর্যায়ে মান নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতার ফল হতে পারে। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো পুরো ট্র্যাকের নিরাপত্তা নিরীক্ষা করা।’
এবার বিয়ারিং প্যাড পড়েছে ৪৩৩ নম্বর পিলার থেকে, যার অবস্থান ফার্মগেট স্টেশনের পশ্চিম পাশে। ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্যাড পড়েছিল ৪৩০ নম্বর পিলার থেকে। তবে সেবার কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তখন আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল ১১ ঘণ্টা।
প্যাড নিয়ে উদ্বেগ পুরনো
মে্ট্রোরেলের ভায়াডাক্টে ব্যবহৃত বিয়ারিং প্যাড নিয়ে নির্মাণের সময়ই প্রশ্ন উঠেছিল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে এ ব্যাপারে আপত্তিও জানানো হয়েছিল। বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে কারিগরি পরীক্ষা করে একাধিক প্যাডের মানে ঘাটতি পাওয়া যায়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। কিন্তু তখন অজ্ঞাত কারণে কেউ তাতে কর্ণপাত করেনি। তবে নতুন করে ‘উন্নত’ প্যাড আনার উদ্যোগের কথাও বলা হয়েছিল।
বুয়েটের ল্যাবে উত্তরা–আগারগাঁও অংশের দুটি প্যাকেজের জন্য আমদানি করা প্যাডের মান পরীক্ষা করা হয়েছিল। এসব প্যাড সরবরাহ করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতাল–থাই। তবে যখন অভিযোগ ওঠে, ততদিনে প্রায় আট কিলোমিটার উড়ালপথে প্যাড বসানোর কাজ হয়ে গিয়েছিল।
যাত্রীদের উদ্বেগ ও ভোগান্তি
বিচিত্র ধরনের এ দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজাদুল হক নামের এক যাত্রী লিখেছেন, ‘আমরা ভাবতাম মেট্রোরেল সবচেয়ে নিরাপদ। এখন ভয় লাগছে; যদি ট্র্যাকের নিচ থেকে কিছু খুলে পড়ে, তাহলে নিরাপত্তা কোথায়?’ স্টেশনের যাত্রীদের মধ্যেও এ নিয়ে গুঞ্জন চলে।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে হঠাৎ ট্রেন চলাচল বন্ধের পর ফার্মগেট ও মতিঝিল স্টেশন এলাকায় যাত্রীদের বেশ ভিড় দেখা যায়। অনেকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বিকল্প পরিবহন খুঁজে নিতে বাধ্য হন। অফিস ছুটির পর নিয়মিত যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন।
গতকাল বিকেলে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ আপাতত বন্ধ থাকবে। আজ (রোববার) চালু করা সম্ভব হবে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পুরো রুট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তবে নির্দিষ্ট সময় এখনই বলা যাচ্ছে না।’

রাত পোহালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক নগরী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) নির্বাচন। সদ্য সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী কি জয়ের হ্যাটট্রিক করবেন নাকি নগরবাসী
১৫ জানুয়ারি ২০২২
একসময় প্রবাস জীবনযাপন করেছেন, এরপর দেশে ফিরে ঘর বেঁধেছেন বছর পাঁচেক আগে। ঘরে আছে দুই সন্তান ও স্ত্রী। নিজে ভালো থাকা, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা আবুল কালাম চোকদারের জীবন থেমে গেল। গতকাল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে যে বিয়ারিং প্যাড খুলে
৪ ঘণ্টা আগে
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদের তীর দখল করে কারখানা গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ কবির মোস্তাক আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গ্রামটির সেতুর পাশে কংস নদের জায়গায় মাটি ভরাট, দেয়াল ও পিলার স্থাপন করে শিল্পকারখানা নির্মাণ করছেন তিনি।
৪ ঘণ্টা আগে
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভার এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাত্র তিনজন চিকিৎসকের ওপর। চিকিৎসক ও জনবল স্বল্পতায় বেহাল অবস্থায় চলছে ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
৪ ঘণ্টা আগেনারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

একসময় প্রবাস জীবনযাপন করেছেন, এরপর দেশে ফিরে ঘর বেঁধেছেন বছর পাঁচেক আগে। ঘরে আছে দুই সন্তান ও স্ত্রী। নিজে ভালো থাকা, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা আবুল কালাম চোকদারের জীবন থেমে গেল। গতকাল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে যে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে, সেটির আঘাতে মৃত্যু হয় তাঁর।
শরীয়তপুরের আবুল কালাম চোকদার পাঁচ বছর আগে ঘর বেঁধেছিলেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায়, প্রিয়ার সঙ্গে। ঘরে আছে দুই সন্তান আবদুল্লাহ ও ফারিয়া। বয়স যথাক্রমে ৪ ও ২ বছর। তাদের নিয়ে পাঠানটুলী এলাকায় মনোয়ার ভিলায় থাকতেন।
গতকাল সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, আবুল কালামের শাশুড়ি রিনা আক্তার বিলাপ করছেন। আর স্বামীর লাশের পাশে আর্তনাদ করছেন প্রিয়া।
প্রিয়ার বোন নুসরাত বলেন, ‘কালাম ভাই ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করতেন। এখন আমার বড় বোন অসহায় হয়ে গেল। ছেলেমেয়েদের নিয়ে কীভাবে থাকবে? আমার বাবা ইতালি থাকেন। আমাদের কোনো ভাই নেই। উনিই আমাদের ভাইয়ের অভাব পূরণ করেছিলেন।’
নিহত কালামের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের জলিল চোকদার ও হনুফা বেগম দম্পতির ছেলে আবুল কালাম চোকদার। চার ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে কালাম ভাইদের মধ্যে ছোট। প্রায় ১৫ বছর আগে তাঁর বাবা ও মা মারা যান।
কালামের চার ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই ইলিয়াস চোকদার চাঁদপুরে সিলভারের ব্যবসা করেন এবং পরিবার নিয়ে সেখানেই থাকেন। বাড়িতে তাঁর একটি ঘর রয়েছে এবং মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়ি আসেন।
মেজ ভাই খোকন চোকদার বাড়িতেই থাকেন এবং কৃষিকাজ করে সংসার চালান। তাঁকে মাঝেমধ্যে আর্থিক সহযোগিতা করতেন আবুল কালাম।
আবুল কালাম ছয়-সাত বছর আগে মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসেন। এরপর তিনি আর বিদেশে যাননি। ঢাকাতেই জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ফার্মগেট এলাকায় তিনি একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করতেন। স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে বসবাস করতেন নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায়। গ্রামে থাকা মেজ ভাইয়ের সংসারের জন্যও নিয়মিত টাকা পাঠাতেন তিনি।
কালামের ভাবি আসমা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সকালে ফোনে কথা হইছিল। আমি বলছিলাম, ভাইয়ের সাথে কথা বলো, বাড়িতে চলে আসো। সে বলেছিল, কয়েক দিনের মধ্যেই আসব। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর শুনি—মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে মারা গেছে।’
সরকারের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আসমা বলেন, ‘আমাদের সংসারের হাল ও-ই ধরেছিল। এখন ওর সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।’
ছোটবেলা থেকে কালাম পরিশ্রমী ছিলেন বলে জানান তাঁর চাচাতো ভাই আব্দুল গণি মিয়া চোকদার। তিনি বলেন, ‘সংসারের বোঝা একা কাঁধে নিয়েছিল সে। হঠাৎ এমন মৃত্যুকে মেনে নেওয়া কঠিন।’
গতকাল রাত ১০টায় পাঠানটুলীর বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদে কালামের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর তাঁর মরদেহ শরীয়তপুরে নিজ গ্রামে নেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আজ সোমবার সকাল ৯টায় নড়িয়া পৌর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।

একসময় প্রবাস জীবনযাপন করেছেন, এরপর দেশে ফিরে ঘর বেঁধেছেন বছর পাঁচেক আগে। ঘরে আছে দুই সন্তান ও স্ত্রী। নিজে ভালো থাকা, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা আবুল কালাম চোকদারের জীবন থেমে গেল। গতকাল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে যে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে, সেটির আঘাতে মৃত্যু হয় তাঁর।
শরীয়তপুরের আবুল কালাম চোকদার পাঁচ বছর আগে ঘর বেঁধেছিলেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায়, প্রিয়ার সঙ্গে। ঘরে আছে দুই সন্তান আবদুল্লাহ ও ফারিয়া। বয়স যথাক্রমে ৪ ও ২ বছর। তাদের নিয়ে পাঠানটুলী এলাকায় মনোয়ার ভিলায় থাকতেন।
গতকাল সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, আবুল কালামের শাশুড়ি রিনা আক্তার বিলাপ করছেন। আর স্বামীর লাশের পাশে আর্তনাদ করছেন প্রিয়া।
প্রিয়ার বোন নুসরাত বলেন, ‘কালাম ভাই ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করতেন। এখন আমার বড় বোন অসহায় হয়ে গেল। ছেলেমেয়েদের নিয়ে কীভাবে থাকবে? আমার বাবা ইতালি থাকেন। আমাদের কোনো ভাই নেই। উনিই আমাদের ভাইয়ের অভাব পূরণ করেছিলেন।’
নিহত কালামের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের জলিল চোকদার ও হনুফা বেগম দম্পতির ছেলে আবুল কালাম চোকদার। চার ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে কালাম ভাইদের মধ্যে ছোট। প্রায় ১৫ বছর আগে তাঁর বাবা ও মা মারা যান।
কালামের চার ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই ইলিয়াস চোকদার চাঁদপুরে সিলভারের ব্যবসা করেন এবং পরিবার নিয়ে সেখানেই থাকেন। বাড়িতে তাঁর একটি ঘর রয়েছে এবং মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়ি আসেন।
মেজ ভাই খোকন চোকদার বাড়িতেই থাকেন এবং কৃষিকাজ করে সংসার চালান। তাঁকে মাঝেমধ্যে আর্থিক সহযোগিতা করতেন আবুল কালাম।
আবুল কালাম ছয়-সাত বছর আগে মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসেন। এরপর তিনি আর বিদেশে যাননি। ঢাকাতেই জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ফার্মগেট এলাকায় তিনি একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করতেন। স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে বসবাস করতেন নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায়। গ্রামে থাকা মেজ ভাইয়ের সংসারের জন্যও নিয়মিত টাকা পাঠাতেন তিনি।
কালামের ভাবি আসমা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সকালে ফোনে কথা হইছিল। আমি বলছিলাম, ভাইয়ের সাথে কথা বলো, বাড়িতে চলে আসো। সে বলেছিল, কয়েক দিনের মধ্যেই আসব। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর শুনি—মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে মারা গেছে।’
সরকারের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আসমা বলেন, ‘আমাদের সংসারের হাল ও-ই ধরেছিল। এখন ওর সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।’
ছোটবেলা থেকে কালাম পরিশ্রমী ছিলেন বলে জানান তাঁর চাচাতো ভাই আব্দুল গণি মিয়া চোকদার। তিনি বলেন, ‘সংসারের বোঝা একা কাঁধে নিয়েছিল সে। হঠাৎ এমন মৃত্যুকে মেনে নেওয়া কঠিন।’
গতকাল রাত ১০টায় পাঠানটুলীর বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদে কালামের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর তাঁর মরদেহ শরীয়তপুরে নিজ গ্রামে নেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আজ সোমবার সকাল ৯টায় নড়িয়া পৌর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।

রাত পোহালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক নগরী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) নির্বাচন। সদ্য সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী কি জয়ের হ্যাটট্রিক করবেন নাকি নগরবাসী
১৫ জানুয়ারি ২০২২
আবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে খুলে পড়ল ভারী বিয়ারিং প্যাড। এবার রাবার ও ইস্পাতের তৈরি শক্ত এ বস্তুর আঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ গেছে এক পথচারীর। এতে দুজন আহত হয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগে
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদের তীর দখল করে কারখানা গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ কবির মোস্তাক আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গ্রামটির সেতুর পাশে কংস নদের জায়গায় মাটি ভরাট, দেয়াল ও পিলার স্থাপন করে শিল্পকারখানা নির্মাণ করছেন তিনি।
৪ ঘণ্টা আগে
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভার এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাত্র তিনজন চিকিৎসকের ওপর। চিকিৎসক ও জনবল স্বল্পতায় বেহাল অবস্থায় চলছে ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
৪ ঘণ্টা আগেসাইফুল আরিফ জুয়েল, নেত্রকোনা

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদের তীর দখল করে কারখানা গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ কবির মোস্তাক আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গ্রামটির সেতুর পাশে কংস নদের জায়গায় মাটি ভরাট, দেয়াল ও পিলার স্থাপন করে শিল্পকারখানা নির্মাণ করছেন তিনি। এতে নদের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোস্তাক আহম্মেদ একজন শিল্পপতি। তিনি মল্লিকপুর গ্রামের মৃত রেহান উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। বর্তমানে সপরিবারে ঢাকায় থাকেন।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের (দক্ষিণ পাড়া) সেতুর পাশে নদের পাড়ঘেঁষে প্রায় দুই একরের বেশি জায়গাজুড়ে কারখানা স্থাপন করছেন কবির মোস্তাক আহমেদ। কয়েক মাস আগে নিজের জায়গার পাশে নদের ৫৫ শতাংশ জায়গা দখল করে দেয়াল তোলেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ জানালেও মোস্তাকের অনুসারীরা তাদের হুমকিধমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, এ নদী শুধু কৃষির জন্যই নয়, বরং হাজারো মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কেউ মাছ ধরে, কেউ গোসল বা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করে নদের পানি। পানির এই প্রবাহ রুদ্ধ হলে কংস একদিন মরে যাবে—এমন আশঙ্কা স্থানীয়দের।
স্থানীয় বাসিন্দা রিপন মিয়া বলেন, ‘এ নদ ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনা করা যায় না। এখন দেয়াল তুলছে, পিলার (প্রাচীর) বসাচ্ছে; আমরা ভয় পাচ্ছি, আর কিছুদিন পর হয়তো নদটাই থাকবে না। বিষয়টি নিয়ে কথা বললেও কবির মোস্তাকের অনুসারীরা হুমকিধমকি দেন। আমরা চাই প্রশাসন যেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়।’ আরেক বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, কারখানা করবে ভালো কথা, সেটা নিজের জায়গায় করুক। নদের অর্ধেক অংশ দখল করে দেয়াল তোলা হয়েছে। এতে চিরকালের জন্য কংস নদ হারিয়ে যাবে।
শফিক মিয়া বলেন, ‘দখল বন্ধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে কংস নদ হারিয়ে যাবে’এ বিষয়ে কথা বলতে পরপর তিন দিন একাধিকবার কল করা হলেও মোস্তাক আহম্মেদ রিসিভ করেননি।
অভিযোগ রয়েছে, চার মাস আগে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীমা আফরোজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এত দিনেও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।
সিংধা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা উজ্জ্বল দত্ত বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীমা আফরোজ মহোদয়। সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যাচাই করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই জায়গার নকশাসহ প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জায়গাটি পরিমাপ করে নিশ্চিত হতে হবে। পরে উচ্ছেদ নোটিশ পাঠানো হবে। কাগজপত্র দেখে যতটুকু জেনেছি নদের বেশ অনেকটা অংশ ওই দেয়ালের ভেতর পড়েছে। ওখানে ৫৫ শতক জায়গা রয়েছে। সম্প্রতি সহকারী কমিশনার (ভূমি) বদলি হয়েছেন। নতুন একজন যোগদান করলে আবার এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে।’
বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খবিরুল আহসান বলেন, কংস নদের জায়গা দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ নথি তৈরি করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। যেকোনো সময় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হবে।

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদের তীর দখল করে কারখানা গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ কবির মোস্তাক আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গ্রামটির সেতুর পাশে কংস নদের জায়গায় মাটি ভরাট, দেয়াল ও পিলার স্থাপন করে শিল্পকারখানা নির্মাণ করছেন তিনি। এতে নদের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোস্তাক আহম্মেদ একজন শিল্পপতি। তিনি মল্লিকপুর গ্রামের মৃত রেহান উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। বর্তমানে সপরিবারে ঢাকায় থাকেন।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের (দক্ষিণ পাড়া) সেতুর পাশে নদের পাড়ঘেঁষে প্রায় দুই একরের বেশি জায়গাজুড়ে কারখানা স্থাপন করছেন কবির মোস্তাক আহমেদ। কয়েক মাস আগে নিজের জায়গার পাশে নদের ৫৫ শতাংশ জায়গা দখল করে দেয়াল তোলেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ জানালেও মোস্তাকের অনুসারীরা তাদের হুমকিধমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, এ নদী শুধু কৃষির জন্যই নয়, বরং হাজারো মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কেউ মাছ ধরে, কেউ গোসল বা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করে নদের পানি। পানির এই প্রবাহ রুদ্ধ হলে কংস একদিন মরে যাবে—এমন আশঙ্কা স্থানীয়দের।
স্থানীয় বাসিন্দা রিপন মিয়া বলেন, ‘এ নদ ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনা করা যায় না। এখন দেয়াল তুলছে, পিলার (প্রাচীর) বসাচ্ছে; আমরা ভয় পাচ্ছি, আর কিছুদিন পর হয়তো নদটাই থাকবে না। বিষয়টি নিয়ে কথা বললেও কবির মোস্তাকের অনুসারীরা হুমকিধমকি দেন। আমরা চাই প্রশাসন যেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়।’ আরেক বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, কারখানা করবে ভালো কথা, সেটা নিজের জায়গায় করুক। নদের অর্ধেক অংশ দখল করে দেয়াল তোলা হয়েছে। এতে চিরকালের জন্য কংস নদ হারিয়ে যাবে।
শফিক মিয়া বলেন, ‘দখল বন্ধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে কংস নদ হারিয়ে যাবে’এ বিষয়ে কথা বলতে পরপর তিন দিন একাধিকবার কল করা হলেও মোস্তাক আহম্মেদ রিসিভ করেননি।
অভিযোগ রয়েছে, চার মাস আগে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীমা আফরোজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এত দিনেও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।
সিংধা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা উজ্জ্বল দত্ত বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীমা আফরোজ মহোদয়। সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যাচাই করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই জায়গার নকশাসহ প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জায়গাটি পরিমাপ করে নিশ্চিত হতে হবে। পরে উচ্ছেদ নোটিশ পাঠানো হবে। কাগজপত্র দেখে যতটুকু জেনেছি নদের বেশ অনেকটা অংশ ওই দেয়ালের ভেতর পড়েছে। ওখানে ৫৫ শতক জায়গা রয়েছে। সম্প্রতি সহকারী কমিশনার (ভূমি) বদলি হয়েছেন। নতুন একজন যোগদান করলে আবার এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে।’
বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খবিরুল আহসান বলেন, কংস নদের জায়গা দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ নথি তৈরি করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। যেকোনো সময় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হবে।

রাত পোহালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক নগরী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) নির্বাচন। সদ্য সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী কি জয়ের হ্যাটট্রিক করবেন নাকি নগরবাসী
১৫ জানুয়ারি ২০২২
আবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে খুলে পড়ল ভারী বিয়ারিং প্যাড। এবার রাবার ও ইস্পাতের তৈরি শক্ত এ বস্তুর আঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ গেছে এক পথচারীর। এতে দুজন আহত হয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগে
একসময় প্রবাস জীবনযাপন করেছেন, এরপর দেশে ফিরে ঘর বেঁধেছেন বছর পাঁচেক আগে। ঘরে আছে দুই সন্তান ও স্ত্রী। নিজে ভালো থাকা, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা আবুল কালাম চোকদারের জীবন থেমে গেল। গতকাল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে যে বিয়ারিং প্যাড খুলে
৪ ঘণ্টা আগে
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভার এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাত্র তিনজন চিকিৎসকের ওপর। চিকিৎসক ও জনবল স্বল্পতায় বেহাল অবস্থায় চলছে ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
৪ ঘণ্টা আগেমো. মাহমুদুল হক মানিক

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভার এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাত্র তিনজন চিকিৎসকের ওপর। চিকিৎসক ও জনবল স্বল্পতায় বেহাল অবস্থায় চলছে ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
জানা গেছে, জেলার বিরামপুর উপজেলাটি পার্শ্ববর্তী কয়েকটি উপজেলার কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিবেচিত। ভালো যোগাযোগব্যবস্থার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিরামপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ ও হাকিমপুর উপজেলার অসংখ্য রোগী প্রতিনিয়ত চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক ও জনবলসংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে, ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে মেডিকেল কর্মকর্তা, কনসালট্যান্ট, সহকারী সার্জনসহ মোট ২৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাড়া মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের আউটডোর ও ইনডোরে প্রতিদিন রোগীদের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম কর্তব্যরতরা।
এ দিকে গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে সিজারিয়ান অপারেশন। এ ছাড়া হাসপাতালের নার্স, ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কয়েকটি পদও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।
চিকিৎসা নিতে আসা আতিকুর রহমানসহ কয়েকজন রোগী বলেন, সামর্থ্যবানরা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা করালেও গরিব রোগীদের ভরসা এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু এখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় ৫৬ কিলোমিটার দূরে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের পাঠানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) শাহরিয়ার পারভেজ বলেন, ‘চিকিৎসক ও জনবলসংকটে দিনরাত রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিরামপুর উপজেলার একটি পৌরসভা, সাতটি ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার ৫০০-৬০০ রোগীকে প্রতিদিন আউটডোরে এবং প্রায় ৬০ জন ভর্তি রোগীকে ইনডোরে চিকিৎসা দিতে হয়। মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে এত রোগীকে সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
মেডিকেল কর্মকর্তা আরও বলেন, চিকিৎসক ও জনবলসংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল সংযুক্ত করা হলে রোগীরা ভোগান্তিহীনভাবে চিকিৎসাসেবা পাবেন।

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভার এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাত্র তিনজন চিকিৎসকের ওপর। চিকিৎসক ও জনবল স্বল্পতায় বেহাল অবস্থায় চলছে ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
জানা গেছে, জেলার বিরামপুর উপজেলাটি পার্শ্ববর্তী কয়েকটি উপজেলার কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিবেচিত। ভালো যোগাযোগব্যবস্থার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিরামপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ ও হাকিমপুর উপজেলার অসংখ্য রোগী প্রতিনিয়ত চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক ও জনবলসংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে, ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে মেডিকেল কর্মকর্তা, কনসালট্যান্ট, সহকারী সার্জনসহ মোট ২৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ছাড়া মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের আউটডোর ও ইনডোরে প্রতিদিন রোগীদের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম কর্তব্যরতরা।
এ দিকে গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে সিজারিয়ান অপারেশন। এ ছাড়া হাসপাতালের নার্স, ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কয়েকটি পদও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।
চিকিৎসা নিতে আসা আতিকুর রহমানসহ কয়েকজন রোগী বলেন, সামর্থ্যবানরা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা করালেও গরিব রোগীদের ভরসা এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু এখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় ৫৬ কিলোমিটার দূরে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের পাঠানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) শাহরিয়ার পারভেজ বলেন, ‘চিকিৎসক ও জনবলসংকটে দিনরাত রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিরামপুর উপজেলার একটি পৌরসভা, সাতটি ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার ৫০০-৬০০ রোগীকে প্রতিদিন আউটডোরে এবং প্রায় ৬০ জন ভর্তি রোগীকে ইনডোরে চিকিৎসা দিতে হয়। মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে এত রোগীকে সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
মেডিকেল কর্মকর্তা আরও বলেন, চিকিৎসক ও জনবলসংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল সংযুক্ত করা হলে রোগীরা ভোগান্তিহীনভাবে চিকিৎসাসেবা পাবেন।

রাত পোহালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক নগরী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) নির্বাচন। সদ্য সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী কি জয়ের হ্যাটট্রিক করবেন নাকি নগরবাসী
১৫ জানুয়ারি ২০২২
আবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে খুলে পড়ল ভারী বিয়ারিং প্যাড। এবার রাবার ও ইস্পাতের তৈরি শক্ত এ বস্তুর আঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ গেছে এক পথচারীর। এতে দুজন আহত হয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগে
একসময় প্রবাস জীবনযাপন করেছেন, এরপর দেশে ফিরে ঘর বেঁধেছেন বছর পাঁচেক আগে। ঘরে আছে দুই সন্তান ও স্ত্রী। নিজে ভালো থাকা, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা আবুল কালাম চোকদারের জীবন থেমে গেল। গতকাল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে যে বিয়ারিং প্যাড খুলে
৪ ঘণ্টা আগে
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদের তীর দখল করে কারখানা গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ কবির মোস্তাক আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গ্রামটির সেতুর পাশে কংস নদের জায়গায় মাটি ভরাট, দেয়াল ও পিলার স্থাপন করে শিল্পকারখানা নির্মাণ করছেন তিনি।
৪ ঘণ্টা আগে