Ajker Patrika

সুবিধাবঞ্চিত জুলাই শহীদের স্ত্রী-সন্তান

আরিফ আহম্মেদ, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
শহীদ নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিবের স্ত্রী-সন্তান। ছবি: সংগৃহীত
শহীদ নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিবের স্ত্রী-সন্তান। ছবি: সংগৃহীত

যখন তাঁর স্বামী শহীদ হলেন, তখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা সাদিয়া খাতুন। বিয়ের মাত্র ছয় মাস পর স্বামীকে হারিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় তিনি। স্বামীর জন্য শোক পালন করবেন, সে সুযোগও দেয়নি তৎকালীন আওয়ামী সরকারের পুলিশ বাহিনী। সারাক্ষণ বাড়িতে পুলিশের আনাগোনা, হাজারো হুমকি-ধমকি আর নানা প্রশ্ন। শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেলেন তিনি। অন্তঃসত্ত্বা সাদিয়া দিশেহারা হয়ে গেলেন স্বামীর শেষ স্মৃতি গর্ভের সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় বাবা শাহাব উদ্দিন ওরফে আব্দুর রাজ্জাক এসে তাঁকে নিয়ে গেলেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পুনাইল গ্রামে নিজ বাড়িতে। এমন কঠিন দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াননি শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পাননি কোনো সান্ত্বনাও।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে গেলে নতুন স্বাধীন দেশে স্বস্তির নিশ্বাস নেন সাদিয়া খাতুন। কিন্তু তখন বুঝতে পারেননি, স্বামীর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে বঞ্চিত হবেন তিনি ও তাঁদের সন্তান। স্বামী শহীদ হওয়ার ছয় মাস পর ১৯ জানুয়ারি তিনি একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। নাম রাখেন সাবরিনা বিনতে সিদ্দিকী। সরকার শহীদ পরিবারের জন্য পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দিলেও আজও একটি টাকাও পাননি তিনি। শ্বশুর আব্দুল হালিম সব টাকা উত্তোলন করে নিজের নামে ব্যাংকে জমা করেছেন। অপর দিকে সরকার ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র দিলেও তাঁর নমিনি কে হবে, তা নিয়ে চলছে জটিলতা। বাবা ও স্ত্রী দুজনই নমিনি হওয়ার দাবি করছেন।

কোলের শিশুকে নিয়ে ইউএনও কার্যালয়সহ নানাজনের কাছে ঘোরাঘুরি করেছেন সাদিয়া, কেউ পাশে দাঁড়াননি তাঁর। শিশুসন্তানের লালন-পালনের ব্যয় কোথা থেকে আসবে, কেউ খোঁজ নেননি। স্বামীর শোক আর সন্তানের ভবিষ্যৎ ভাবনায়, এখন পাগল প্রায় তিনি। তবে এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ থেকে একজন সমন্বয়কের মাধ্যমে কিছু অনুদান পেয়েছেন সাদিয়া।

বর্তমানে সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই আছেন সাদিয়া খাতুন। ছোট্ট শিশুটি বাবার স্নেহ, আদর-ভালোবাসা কোনো দিন পাবে না, তার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন উদ্বিগ্ন তিনি। লালন-পালন আর ভবিষ্যতে লেখাপড়ার খরচ আসবে কোথায় থেকে, এমন হাজারো চিন্তায় দিশেহারা তিনি। সরকার থেকে প্রাপ্ত পাঁচ লাখ টাকা তাঁর শ্বশুর উত্তোলন করে নিজের নামে ব্যাংকে রেখে দিয়েছেন, অথচ শহীদ নূরে আলম সিদ্দিকীর শিশুসন্তানের লালন-পালনের খরচ কোথা থেকে আসবে, সে খবর কখনো নেন না তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে নূরে আলম সিদ্দিকীর বাবা আব্দুল হালিমকে একাধিকবার কল দিলেও ফোনটি বন্ধ পায় যায়।

গৌরীপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি বাহালুল মুন্সী বলেন, ‘শহীদ নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিবের সন্তানের লালন-পালন ও একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। নূরে আলম সিদ্দিকীর পরিবারের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর কিছু বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে, এগুলো সমাধানের জন্য চেষ্টাও হয়েছে একাধিকবার।’

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফিয়া আমীন পাপ্পা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিশুসন্তানকে নিয়ে শহীদ নূরে আলম সিদ্দিকীর স্ত্রী কষ্ট করছেন, বিষয়টি অমানবিক। দুই পরিবারের বিরোধ সমাধান করতে একাধিকবার উভয় পরিবারকে নিয়ে বসা হয়েছে, কিন্তু কোনো মীমাংসা হয়নি। আমরা আন্তরিকভাবেই সে চেষ্টা করছি। অনুদানের পাঁচ লাখ টাকা নূরে আলম সিদ্দিকীর বাবা আব্দুল হালিমের নামে সোনালী ব্যাংকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে জমা আছে। স্ত্রী-সন্তানের প্রাপ্য হিস্যা ডিসি স্যারের (জেলা প্রশাসক) সঙ্গে পরামর্শ করে দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২০ জুলাই সারা দেশে ১৪৪ ধারা জারি করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এদিন সকাল থেকেই ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার কলতাপাড়া বাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে জড়ো হতে থাকেন ছাত্র-জনতা।

একপর্যায়ে ১৪৪ ধারা ভেঙে তাঁরা ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে মিছিল করেন। খবর পেয়ে গৌরীপুর থানা-পুলিশের একটি দল গিয়ে প্রথমে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করে ও পরে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়। এতে উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের নন্দীগ্রাম গ্রামের নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিব, ডৌহাখলা ইউনিয়নের কলতাপাড়া গ্রামের বিপ্লব হাসান ও মইলাকান্দা ইউনিয়নের কাউরাট গ্রামের জুবায়ের শহীদ হয়েছেন। এদিন আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে বাংলাদেশ এলডিপির সেলিম, প্রার্থী হবেন ধানের শীষের

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

‘নারীশাসিত পুরুষ’: সাহস থাকলে সামনে এসে কথা বল—আসিফকে ওমর সানীর চ্যালেঞ্জ

২০০ আসনে জিতলেও জাতীয় সরকার গঠন করবে জামায়াত: শফিকুর রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শাজাহানপুরে পিস্তলসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত নেতা আটক

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি  
: উদ্ধারকৃত পিস্তল। ছবি: আজকের পত্রিকা
: উদ্ধারকৃত পিস্তল। ছবি: আজকের পত্রিকা

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বেজোড়া এলাকায় পিস্তলসহ স্থানীয় জনগণের হাতে আটক হয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত নেতা ফেরদৌস করিম সনি। একটি শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে দাওয়াত না পাওয়ার জেরে তিনি গুলি করার চেষ্টা করলে জনতা তাকে আটক করে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১১টার দিকে উপজেলার বেজোড়া দক্ষিণ পাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে ‘বেজোড়া যুবসংঘ’ শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিল।

আয়োজক কমিটির সদস্য রুবেল হোসেন বলেন, ‘দাওয়াত না পাওয়ায় রাত ১১টার দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত নেতা সনি এসে মোটরসাইকেল আমাদের সাউন্ড বক্সের উপরে তুলে দেন। তখন উপস্থিত লোকজন বাধা দিলে সনি পাশেই নিজের বাড়িতে গিয়ে পিস্তল হাতে ফিরে এসে আমাকে গুলি করার চেষ্টা করেন। এসময় স্থানীয় শত শত জনতা সনিকে পিস্তলসহ আটক করে পিটুনি দেয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়ার কৈগাড়ি ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পিস্তলসহ সনিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।’

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয়রা বলছেন, সনি এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং মাদক বিক্রিসহ নানা অপরাধে জড়িত।

ঘটনাস্থলে থাকা কৈগাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আবু সুফিয়ান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পিস্তলসহ সনিকে আটক করে থানায় নিয়ে এসেছি। পিস্তলটি সম্ভবত আসল না। পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে বাংলাদেশ এলডিপির সেলিম, প্রার্থী হবেন ধানের শীষের

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

‘নারীশাসিত পুরুষ’: সাহস থাকলে সামনে এসে কথা বল—আসিফকে ওমর সানীর চ্যালেঞ্জ

২০০ আসনে জিতলেও জাতীয় সরকার গঠন করবে জামায়াত: শফিকুর রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পৌরসভার বর্জ্যে নদী পরিণত হচ্ছে নর্দমায়

গুরুদাসপুর (নাটোর) সংবাদদাতা
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৪৮
পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নাটোরের গুরুদাসপুরের নন্দকুঁজা নদীতে। সম্প্রতি তোলা ছবি। 	আজকের পত্রিকা
পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নাটোরের গুরুদাসপুরের নন্দকুঁজা নদীতে। সম্প্রতি তোলা ছবি। আজকের পত্রিকা

নদী যেন দিন দিন মরে যাচ্ছে পৌরসভার ফেলে যাওয়া ময়লা-আবর্জনায়। যে নদীর পানিতে একসময় শিশুদের হাসি ও খেলাধুলার শব্দ ভেসে উঠত, সেই নদী আজ দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসা এক বিষাক্ত নর্দমায় পরিণত হচ্ছে পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অবহেলায়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা চাঁচকৈড় রসুনহাট, গরুর হাট ও গুরুদাসপুর বাজারঘাট এলাকার আবর্জনা গাড়িতে তুলে এনে নদীর তীরে বা সরাসরি পানিতে ফেলে দিচ্ছে। শুধু ঘরবাড়ির বর্জ্য নয়, বিভিন্ন কারখানা ও ক্লিনিক থেকে আসা রাসায়নিক বর্জ্য এবং পয়োনিষ্কাশনের নালা-পাইপের বর্জ্যও নন্দকুঁজা নদীতে পড়ছে। এতে নদীর পানি যেমন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী। তবু পরিস্থিতি মোকাবিলায় দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই।

রসুনহাটসংলগ্ন নদীপাড়ের ব্যবসায়ীরা বলেন, শহরজুড়ে ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের ফেলা নানান আবর্জনা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জমে থাকে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেসব বর্জ্য সংগ্রহ করে পৌরসভার গাড়িতে করে এনে নদীর ধারে ফেলে রাখেন। এতে এতটাই দুর্গন্ধ ছড়ায় যে আশপাশে বসবাস করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় কয়েকজন নদীপারের বাসিন্দা জানান, একসময় এই নদীতে দল বেঁধে গোসল করতেন তাঁরা, মাছ ধরতেন, শিশুদের খেলাধুলার জায়গা ছিল এটি। এখন নদীতে নামাই যায় না। দূষিত পানিতে শরীর চুলকায়, আগের মতো মাছও আর মেলে না। নদীর প্রতি মানুষের নির্ভরতা কমে যাচ্ছে, তারা চান, আগের সেই স্বাভাবিক নদী ফিরে আসুক।

জানতে চাইলে গুরুদাসপুর উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, ‘নদী রক্ষায় বহুবার আন্দোলন করেছি, পৌর মেয়রকেও অনুরোধ জানিয়েছিলাম; তবু নদীতে আবর্জনা ফেলা বন্ধ হয়নি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ আজকের পত্রিকাকে জানান, ব্যস্ততার কারণে বিষয়টি তাঁর নজরে আসেনি। এখন তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নির্দেশ দেবেন, যেন নদীতে আর আবর্জনা ফেলা না হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে বাংলাদেশ এলডিপির সেলিম, প্রার্থী হবেন ধানের শীষের

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

‘নারীশাসিত পুরুষ’: সাহস থাকলে সামনে এসে কথা বল—আসিফকে ওমর সানীর চ্যালেঞ্জ

২০০ আসনে জিতলেও জাতীয় সরকার গঠন করবে জামায়াত: শফিকুর রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঠান্ডাজনিত রোগে সাত দিনে পাঁচ শিশুর মৃত্যু

মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, সুবর্ণচর (নোয়াখালী) 
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৬
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায়ও ভর্তি রোগীর ভিড়। গতকাল তোলা ছবি। 	আজকের পত্রিকা
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায়ও ভর্তি রোগীর ভিড়। গতকাল তোলা ছবি। আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে কয়েক দিন ধরে তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। দিনের অধিকাংশ সময়েই রোদের দেখা মিলছে না। এই অবস্থায় বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। দেখা দিচ্ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যাজমার প্রকোপ। এসব রোগে আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ। এক সপ্তাহে এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েক শ শিশু জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহে উপজেলায় পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হঠাৎ করে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চলতি (ডিসেম্বর) মাসের প্রথম আট দিনে (১ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত) মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭৮৪ জনের মধ্যে শিশু ৬৭২ জন। এদের সবাই ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছে। এই আট দিনে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৬১৯টি শিশু। গতকাল সোমবার ভর্তি ছিল ৪৮ জন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের মেঝেতেও রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নার্সরা ব্যস্ত রোগীর চাপ সামলাতে। শিশু ওয়ার্ডে কথা হয় গৃহবধূ আসমা আক্তারের সঙ্গে। চার দিন ধরে তাঁর সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়ে মুনতাহা জ্বরে আক্রান্ত। প্রথমে বাড়িতে রেখে পল্লিচিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা দিলেও জ্বর কমেনি। নিরুপায় হয়ে হাসপাতালে আসেন। শয্যা না পেয়ে মেঝেতে রেখে মেয়ের চিকিৎসা করাচ্ছেন।

আসমা বলেন, ‘বাচ্চাটা চার দিনের জ্বরে কাহিল হয়ে গেছে। ঘাড় তুলতে পারছে না। চিকিৎসকেরা বলেছেন, ঠান্ডাজনিত রোগ (নিউমোনিয়া) প্রতিদিন অনেক শিশু ভর্তি হচ্ছে। এখন ইনজেকশন ও অন্যান্য ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা চলছে। শয্যা পাচ্ছি না। বলতে পারছি না কবে সন্তানকে সুস্থ করে বাড়িতে ফিরতে পারব।’

চর আলাউদ্দিনের বাসিন্দা শেফালী আক্তারের পাঁচ বছর বয়সী ছেলে সৈকত ছয় দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে জোসনার চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। তিনি জানান, ছেলের নিউমোনিয়া হয়েছে, আগে বুঝতে পারেননি। প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন সাধারণ জ্বর। কিন্তু হাসপাতালে দুই দফায় পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন, ছেলের নিউমোনিয়া হয়েছে। এখন চিকিৎসা চলছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিশেষজ্ঞ মো. সোহেল সারওয়ার জানান, সুবর্ণচরের চরাঞ্চল থেকে শিশুরা বেশি আসছে। প্রতিবছরের মতো এ বছর তীব্র ঠান্ডা পড়েছে। ফলে ঠান্ডাজনিত রোগও দেখা দিয়েছে। সাধারণ ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খেতে হয়। তিনি বলেন, ‘যে শিশুগুলো মারা যাচ্ছে, বেশির ভাগ নবজাতক ও পাঁচ বছরের মধ্যে। পল্লিচিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিয়ে তাদের অবস্থা যখন বেশি খারাপ হয়, তখন হাসপাতালে আসেন এতে আমাদেরও কিছু করার থাকে না। আমরা সাধ্য অনুযায়ী এ হাসপাতালে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করছি।’

এদিকে জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক রফিকুল ইসলামের কাছে তাপমাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আবহাওয়ার কোনো রেকর্ড আমাদের কাছে নেই। আগামীকাল (৯ ডিসেম্বর) জানাতে পারব।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালে অনেক শিশুকে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় নিয়ে আসে। আমরা সেসব শিশুকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠাই। অনেক রোগীর অভিভাবক আছেন, জেলা হাসপাতালে না গিয়ে বাড়ি ফিরে যান। তখন সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে বাড়িতে মারা যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে বাংলাদেশ এলডিপির সেলিম, প্রার্থী হবেন ধানের শীষের

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

‘নারীশাসিত পুরুষ’: সাহস থাকলে সামনে এসে কথা বল—আসিফকে ওমর সানীর চ্যালেঞ্জ

২০০ আসনে জিতলেও জাতীয় সরকার গঠন করবে জামায়াত: শফিকুর রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাওরের ফসল রক্ষা: বাঁধের কাজে কচ্ছপগতি

  • পিআইসি গঠনের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও তা হয়নি।
  • শেষ হয়নি জরিপ এবং প্রাক্কলনের কাজও।
  • কাজের এই গতি বিপদে ফেলতে পারে হাওরবাসীকে: বিশেষজ্ঞ
  • ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরুর কথা জানান পাউবো কর্মকর্তা।

বিশ্বজিত রায়, সুনামগঞ্জ
তাহিরপুরের সাহেবনগর গ্রামের পূর্ব দিকে শনির হাওরের ভয়ংকর একটি ক্লোজার (ভাঙন)। শুক্রবার তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
তাহিরপুরের সাহেবনগর গ্রামের পূর্ব দিকে শনির হাওরের ভয়ংকর একটি ক্লোজার (ভাঙন)। শুক্রবার তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সুনামগঞ্জের একমাত্র বোরো ফসল রক্ষা বাঁধের কার্যক্রম যেন চলছে কচ্ছপগতিতে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও তা হয়নি। শেষ হয়নি জরিপ এবং প্রাক্কলনের কাজও। হাওরের অনেক জায়গা বাঁধ করার উপযোগী মনে হলেও ধীরগতির কারণে যথাসময়ে শেষ না হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গত শুক্রবার তাহিরপুরের শনির হাওর এবং জামালগঞ্জের হালি হাওর ঘুরে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গা দিয়ে পানি নামছে নদীতে। অধিকাংশ বাঁধ এলাকায় কাজ শুরুর মতো উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। শনির হাওরের সাহেবনগর, জালালপুর, নয়ানগর, মারালা, ইগ্রামপুর, নিশ্চিন্তপুর, মুরাদনগর, শ্রীপুর হয়ে তাহিরপুর পর্যন্ত যেসব জায়গায় প্রতিবছর বাঁধের কাজ হয়, সেসব জায়গায় বাঁধের কাজ এগিয়ে নেওয়ার মতো কোনো আলামত চোখে পড়েনি। শুধু তা-ই নয়, হালি হাওরের একাংশ ঘুরে একই রকম পরিস্থিতি দেখা গেছে।

হাওর-সচেতন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাওরের রাজধানীখ্যাত সুনামগঞ্জ বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। ওই বোরো ফসল হাতছাড়া হলে দুঃখের সীমা থাকে না এখানকার মানুষের। টেকসই ঝুঁকিমুক্ত বাঁধই পারে এক ফসলি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ রাখতে। এর মধ্যে বাঁধের কাজে ব্যত্যয় ঘটলে গোটা হাওরাঞ্চল ঝুঁকিতে পড়বে।

কথা হয় তাহিরপুরের শনির হাওর পারের নয়ানগর গ্রামের কৃষক বাপ্পি মিয়ার সঙ্গে। বাঁধের প্রাক্কলন-জরিপের কাজ হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরার গেরামের আশপাশে প্রতিবছরই পিআইসিরা বাঁধের কাজ করে। এই বছর জরিপের কাজ এখনো হইছে না, কয়দিনের মধ্যে হয়তো করব। সময় তো চইল্যা যাইতাছে (চলে যাচ্ছে)। তাড়াতাড়ি (দ্রুত) কাজ না করলে তো পরে আমরার দৌড়াদৌড়ি করন (করা) লাগে।’

জানা যায়, ২০১৭ সালে সুনামগঞ্জে ভয়াবহ হাওর বিপর্যয়ের পর নড়েচড়ে বসে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। ওই বছর ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়। সেই দুর্নীতি ঠেকাতে নতুন কাবিটা নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। এই নীতিমালার আলোকে বিলুপ্ত হয় আগের ঠিকাদারি প্রথা। হাওরপারের কৃষিজীবী মানুষের সমন্বয়ে পিআইসি গঠন করে বাঁধের কাজ এগিয়ে নেওয়ার নতুন নির্দেশনা জারি করা হয় নীতিমালায়। কিন্তু পুরোনো প্রথাই বলবৎ আছে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে।

নীতিমালায় ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন; ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার কথা বলা আছে। কিন্তু পিআইসি গঠন দূরের কথা, এখন পর্যন্ত প্রাক্কলন ও জরিপের কাজই শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে কৃষক ও হাওর-সচেতন মানুষের মাঝে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার ও মেরামতে এ বছর ৬৯০টি পিআইসি গঠন করা হতে পারে। এ কাজে প্রাথমিক বরাদ্দ হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। জেলার ৯৫টি হাওরের মধ্যে বাঁধের কাজ হবে ৫৩টি হাওরে। চলতি বছরে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার বাঁধ এলাকায় সংস্কার ও মেরামতের কাজ হবে। ধর্মপাশা ও শাল্লায় বাঁধের কাজ সবচেয়ে বেশি।

শাল্লা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি তরুণ কান্তি দাস বলেন, ‘২০১৭ সালের প্রলয়ংকরী হাওর বিপর্যয়ের পর বড় ধরনের কোনো দুর্যোগ আসেনি। যে কারণে বাঁধ হওয়া না হওয়া নিয়ে তেমন প্রভাব পড়েনি। যদি অকালবন্যা পেয়ে বসে, তাহলে কৃষকের সর্বনাশ হবে। এখনো প্রাক্কলন-জরিপের কাজই চলছে। কাজের এই মন্থরগতি বিপদে ফেলতে পারে হাওরবাসীকে।’

পিআইসি গঠনপ্রক্রিয়া চলমান আছে জানিয়ে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, হাওরে এখন পর্যন্ত ৮৬টি ক্লোজার (বাঁধের বড় ভাঙা) শনাক্ত করা হয়েছে। এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জেলার ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার বাঁধে জরিপ কাজ শেষ হয়েছে। প্রাক্কলনের কাজও ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত হবে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে বাংলাদেশ এলডিপির সেলিম, প্রার্থী হবেন ধানের শীষের

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

‘নারীশাসিত পুরুষ’: সাহস থাকলে সামনে এসে কথা বল—আসিফকে ওমর সানীর চ্যালেঞ্জ

২০০ আসনে জিতলেও জাতীয় সরকার গঠন করবে জামায়াত: শফিকুর রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত