Ajker Patrika

যুবদল থেকে যুবলীগে, এবার সদলবলে হাজির বিএনপির সম্মেলনে

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি  
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৪৫
নজরুল ইসলাম সওদাগর। ছবি: সংগৃহীত
নজরুল ইসলাম সওদাগর। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সম্মেলনে সদলবলে উপস্থিত হয়েছিলেন স্থানীয় যুবলীগের নেতা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা সম্মেলনে অবস্থানের পর বিএনপির নেতা–কর্মীদের তোপের মুখে তিনি সম্মেলনস্থল থেকে চলে যান।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বকশীগঞ্জ খয়ের উদ্দিন মাদ্রাসা মাঠে উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে এ ঘটনা ঘটে।

উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন বকশীগঞ্জ পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক ও বকশীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর। তিনি বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগরের ছোট ভাই।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগরের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম সওদাগর একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। ২০১৫ সালের ১২ জুন উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনকালে তৎকালীন স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি বকশীগঞ্জ পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক পদ পান।

গতকাল বিএনপির সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগর। পৌর বিএনপির আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম প্রিন্সের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক এমপি এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। সম্মেলনে বকশীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মী অংশ নেন।

সম্মেলনে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম, সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম খান সজীব এবং বকশীগঞ্জ পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম শাকিল তালুকদার।

বেলা আড়াইটার দিকে কয়েকজন সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির সম্মেলনস্থলে হাজির হন যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম সওদাগর। তাঁর পরনে ছিল পাজামা–পাঞ্জাবি। সম্মেলনস্থলের একেবারে পশ্চিম পাশে প্রায় আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অতিথিদের বক্তব্য শোনেন তিনি। এ সময় সম্মেলনে আসা লোকজন তাঁকে ঘিরে ধরলে সহযোগীরা তাদের সরিয়ে দেয়। সম্মেলনে যুবলীগ নেতার উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। একপর্যায়ে সম্মেলনস্থলের উত্তর পাশে শামিয়ানার বাইরে চলে যান নজরুল ইসলাম সওদাগর। সেখানে সহযোগীদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় খোশগল্পে মেতে থাকেন। পরে ভিন্ন পথে সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন নজরুল ইসলাম সওদাগর।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করায় যুবলীগ নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগরের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন। নজরুল ইসলাম সওদাগরকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এখানকার এক নেতা একসময় যুবদলের রাজনীতি করেছেন। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বকশীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হয়েছিলেন। বিএনপি নেতা–কর্মীদের নির্যাতন করেছেন। নেতা–কর্মীদের গায়েবি মামলা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করেছেন। এরপরও তিনি এখন কীভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আগামী তিন দিনের মধ্যে আওয়ামী লীগের দোসরদের গ্রেপ্তার করতে হবে। যদি গ্রেপ্তার না করা হয়, এর দায়ভার প্রশাসনকে নিতে হবে। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী দোসরদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

দলবল নিয়ে বিএনপির সম্মেলনে হাজির নজরুল ইসলাম সওদাগর। ছবি: সংগৃহীত
দলবল নিয়ে বিএনপির সম্মেলনে হাজির নজরুল ইসলাম সওদাগর। ছবি: সংগৃহীত

প্রত্যক্ষদর্শী বিএনপি সমর্থক হাবিব মিয়া, মঞ্জু আহমেদ, সোহেল রানা, মিজান, আকবর আলীসহ অনেকে বলেন, ১০–১৫ জন সহযোগী নিয়ে যুবলীগ নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর দুপুরে বিএনপির সম্মেলনে আসেন। সম্মেলনস্থলের পশ্চিম পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে শামিয়ানার বাইরে চেয়ারে বসে দীর্ঘ সময় অবস্থান করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য দেওয়ায় তিনি সম্মেলনস্থল থেকে চলে যান।

বিএনপির সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার বিষয়ে জানতে নজরুল ইসলাম সওদাগরের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগরের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানায় কোনো মামলা নেই। তদন্তে যদি তাঁর নাম আসে, তখন তো তাঁকে গ্রেপ্তার করতেই হবে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত