Ajker Patrika

পাওনা টাকা চাওয়ায় কনস্টেবল মনিরুলকে গুলি করেন কাওছার, দাবি ভগ্নিপতির 

সাইফুল আরিফ জুয়েল, নেত্রকোনা
আপডেট : ১০ জুন ২০২৪, ০১: ৫০
Thumbnail image

রাজধানীতে সহকর্মীর গুলিতে নিহত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল হকের (২৭) গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বিষ্ণুপুরে চলছে শোকের মাতম। 

মনিরুলের স্ত্রী তানিয়া আক্তার তন্বী দুই বছরের শিশুসন্তান তাকিকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করে বলছেন, ‘আর কিছু চাই না, আমার স্বামীরে ফিরিয়ে দাও।’ 

মনিরুলের ভগ্নিপতি আনিছুর রহমান বলেন, ‘কাওছার নামে যে পুলিশ সদস্য মনিরুলকে গুলি করেছে, তার কাছে হাওলাতের (ধার) টাকা পাওনা ছিল মনিরুলের। টাকা চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে এ কাজ করে কাওছার।’

এ কথা বলার পরই উপস্থিত লোকজন আনিছুরকে থামিয়ে দেন। ‘প্রমাণ ছাড়া এসব বলা ঠিক হবে না’ বলে আনিছুরকে আর কিছু বলতে নিষেধ করেন তাঁরা। পরে আনিছুর আর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি।

আজ রোববার সন্ধ্যায় মনিরুল হকের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বিষ্ণুপুরে গেলে মনিরুলের ভগ্নিপতি আনিছুর রহমান একথা বলেন। 

এ মনিরুলের বৃদ্ধা মা দেলোয়ারা হক ছেলের শোকে কান্নায় বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। দিনভর কেঁদে চোখের জল ফুরিয়ে গেছে। আর কান্নার শক্তি নেই, হাত–পা নাড়াচাড়া করার শক্তিও শেষ হয়ে গেছে! এখন বিছানায় শুয়ে শুধু নীরবে চেয়ে রয়েছেন। তাঁর মুখে কোনো ভাষা নেই। বিছানায় বসে কাঁদছেন মনিরুলের বড় ভাই আমিনুল হক মিঠু। 

প্রতিবেশী ও স্বজনেরা এসে ভিড় করেছেন মনিরুলের শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে। কারও মুখে কোনো ভাষা নেই।

আর মনিরুলের দুই বছর বয়সী ছেলে তাকি বাড়িতে একসঙ্গে এত মানুষ দেখে একজনের কোল থেকে অন্যজনের কোলে ঘুরছে।

মনিরুল বিষ্ণুপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত শামসুল হকের ছেলে। মনিরুলরা তিন ভাই তিন বোন। সবার ছোট মনিরুল। 

মনিরুলের বড় ভাই আমিনুল হক মিঠু আজকের পত্রিকাকে বলন, ‘লাশ কখন আসবে জানি না। মনিরুল আমাদের সবার ছোট। সে আমাদের সবার আদরের। গত রোজায় বাড়ি এসেছিল। ছুটি বেশি না থাকায় এসে দ্রুত চলে গেছে। আগামীকাল সোমবার (১০ জুন) ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসার কথা ছিল। একসঙ্গে সবাই মিলে ঈদ করার কথা ছিল। কিন্তু আসবে লাশ হয়ে। এ দুঃখ সইবার মতো নয়।’ 

পরিবারের লোকজন জানায়, ২০১৪ সালে নেত্রকোনার আঞ্জুমান সরকারি উচ্চ থেকে এসএসসি পাস করেন মনিরুল। পরে ময়মনসিংহে একটি বেসরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে ৪র্থ সেমিস্টার পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরমধ্যে ২০১৬ সালের শেষের দিকে পুলিশে যোগ দেন। 

তিন বছর আগে জেলার পূর্বধলা উপজেলায় বিয়ে করেন মনিরুল। তাঁর স্ত্রীর নাম তানিয়া আক্তার তন্বী। তাকি নামে তাঁদের দুই বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। 

মনিরুলের বড় ভাই মাহবুব আলম টিটু পুলিশের একজন সদস্য। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত। 

মনিরুলের স্কুলের সহপাঠী ও প্রতিবেশী ইবাদ হোসেন বলেন, ‘মনিরুলদের ছয় ভাই–বোনের মধ্যে এক ভাই ছাড়া বাকি পাঁচজনই চাকরিজীবী। মনিরুল খুবই মিশুক ধরনের ছিল। পরিচিত ও বন্ধু–বান্ধবসহ সবার সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত