Ajker Patrika

পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জের বিরুদ্ধে ঘুষ আদায়সহ হয়রানির অভিযোগ

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ মে ২০২৪, ১৯: ০৪
Thumbnail image

জামালপুরের বকশীগঞ্জে একটি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জের বিরুদ্ধে ঘুষ আদায়সহ সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গতকাল সোমবার বকশীগঞ্জের কামালের বার্ত্তী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ঘুষ নিয়েও আইনি সেবা দেননি পুলিশের এসআই খাইরুল ইসলাম। উল্টো হয়রানি করছেন তিনি। এ নিয়ে আইনি প্রতিকার পেতে ইতিমধ্যে ভুক্তভোগী মোশারফ হোসেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে ওই এসআই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলছেন, তাঁর বিরুদ্ধে অযথা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তিনি আইন মেনেই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

অভিযোগ দেওয়া মোশারফ হোসেন বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের ঠান্ডারবন্দ গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। জামালপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর দাখিল করা অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০২৩ সালের ৩০ জুন গভীর রাতে কামালের বার্ত্তী বাজারে তাঁর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আগুনে পুড়ে যায়। তাতে অন্তত দেড় কোটি টাকা সমমূল্যের ক্ষতি হয়। ওই আগুনে ঠান্ডারবন্দ গ্রামের বাবু মিয়া, আব্দুল মজিদ মিয়া, আরফান আলী, সাধুরপাড়া ইউপির সাবেক সদস্য আব্দুল হালিম, ঠনকারবন গ্রামের আলমাছ আলীর দোকানও পুড়ে যায়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঘটনার পর বাজারে উপস্থিত লোকজনের মাধ্যমে মোশারফ জানতে পারেন, পাশের মনিরুল ইসলামের দোকানের বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের উৎপত্তি হয়। মোশারফের দোকান ছাড়া অন্য কোনো অর্থসম্পদ নেই। দোকান পুড়ে যাওয়ায় তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েন। এ নিয়ে ওই রাতেই আইনি প্রতিকার পেতে বকশীগঞ্জ কামালের বার্ত্তী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মোশারফ। এরপর মোশারফকে পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই খাইরুল ইসলাম বলেন, জিডি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হলে টাকা লাগবে। টাকা দিলে দোকানদার মনিরুল ইসলামের কাছ থেকে ৫-৬ লাখ টাকা আদায় করে মোশারফসহ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত অপর ছয় দোকানিকে দেবেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, বাধ্য হয়ে মোশারফসহ আগুনে পুড়ে যাওয়া অন্য দোকানদারদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে দুই দফায় এসআই খাইরুলকে ১৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এরপর তাঁরা যোগাযোগ করলে খাইরুল তাঁদের সঙ্গে টালবাহানা করতে থাকেন। কিছুদিন পর তিনি জানান, আইনি প্রতিকার পেতে হলে জামালপুর আদালতে যেতে হবে। এ সময় একটি লিখিত কাগজ ধরিয়ে দিয়ে মোশারফকে জামালপুর আদালতের বকশীগঞ্জ থানার জিআরওর কাছে পাঠান খাইরুল। সেখানে গেলে তাঁর কাছে ৪০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। বিষয়টি তিনি এসআইকে জানালে তিনি ৪০ হাজার টাকা তাঁর কাছে জমা রাখতে বলেন। টাকা দিলে কাজ হবে বলে তিনি মোশারফকে আশ্বস্ত করেন। এরপর এসআইকে ৪০ হাজার টাকা দিতে না পারায় আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকেরা আইনি প্রতিকার পাননি।

অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, আগুনের ঘটনার মাসখানেক পর এলাকাবাসীর অনুদানের কিছু টাকায় আবার দোকান চালু করলে এসআই খাইরুল বাকিতে ২৫ কেজির দুই বস্তা চাল নেন। চালের দাম ও দোকানদারদের দেওয়া ১৬ হাজার টাকা ফেরত চাইলে উল্টো মাদক দিয়ে মামলা করার হুমকি দেন এসআই খাইরুল। এ ছাড়া মোশারফের পক্ষ নেওয়ায় জাহিদুল ইসলাম নভেল ও সোবহান মিয়া নামের দূরসম্পর্কের তাঁর ভাতিজাকে থানায় নিয়ে হয়রানি করেছেন খাইরুল।

এসপি বরাবর ভুক্তভোগী মোশারফ হোসেনের লিখিত অভিযোগ। ছবি: সংগৃহীতমোশারফের ভাতিজা জাহিদুল ইসলাম নভেল বলেন, ‘মোশারফের পক্ষে কথা বলার দায়ে আমিসহ আমার ছোট ভাই সোবহান মিয়াকে থানায় আটকে রেখে এসআই খাইরুল হয়রানি করেছেন।’

ভুক্তভোগী সোবহান মিয়া বলেন, ‘চাচা মোশারফের সঙ্গে চলাফেরা করায় এসআই খায়রুল আমাকে এবং আমার ভাই নভেলকে থানায় আটকে রেখে হয়রানি করেছেন।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গেলে অভিযুক্ত কামালের বার্ত্তী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ ও এসআই মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তবে অভিযোগকারী মোশারফের দোকানঘর আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ নিয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। মূলত আমি আইন অনুসারেই সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামালপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কামরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিযোগ এসেছে। যদি ঘটনার সত্যতা থাকে, অবশ্যই অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত