Ajker Patrika

ফেসবুক লাইভে হুমকির পর কলেজছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 
নিহত কলেজছাত্র মারফত আলী। ছবি: সংগৃহীত
নিহত কলেজছাত্র মারফত আলী। ছবি: সংগৃহীত

কাকে কখন কুপিয়ে রক্তাক্ত করবেন, তা আগেই ফেসবুক লাইভে এসে জানিয়ে দিতেন ওয়াহিদুজ্জামান তানভীর নামে এক যুবক। শুধু জানান দিয়েই নীরব থাকেননি, এ পর্যন্ত সাত-আটজনকে কুপিয়ে পঙ্গু করার মতো ঘটনা ঘটিয়েন তিনি। তানভীরের ভয়ে দিনের পর দিন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের ধুরুয়া, চণ্ডীপাশা ও রসুলপুর গ্রামের মানুষ আতঙ্কে দিন পার করতেন।

এদিকে, এই আতঙ্কের মধ্যে গতকাল শুক্রবার তানভীর ফেসবুক লাইভে এসে কলেজছাত্র মারফত আলীসহ বেশ কয়েকজনকে হুমকি দেন। এরপর মারফত আলীকে (১৯) গৌরীপুর উপজেলার কলতাপাড়া এলাকায় কুপিয়ে জখম করেন। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৩টার দিকে তিনি মারা যান।

নিহত মারফত আলী চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের ধুরুয়া গ্রামের আবুল কাশেম ফকিরের পুত্র। তিনি খুররম খান চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে শিক্ষার্থী ছিল। এদিকে মারফত আলীকে কোপানোর পর ‘আবার শুরু’ এবং ‘অলরাউন্ডার মাঠ কাঁপাতে লোকের নয় বুকে সাহসের প্রয়োজন’ লিখে ফেসবুকে পোস্ট দেন ওয়াহিদুজ্জামান তানভীর। তবে মারফত আলীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ফেসবুক হুমকি দেওয়ার লাইভটি সরিয়ে ফেলেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মারফত আলী তাঁর ভাগনির বিয়েতে গৌরীপুর যান। সেখানে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে মোটরসাইকেল করে বাড়ি ফেরার পথে গৌরীপুর এলাকায় তানভীর, বরকত উল্লাহ্সহ তিন-চারজন মিলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কুপিয়ে জখম করেন। পরে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৩টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহতের চাচাতো ভাই নোমান তালুকদার বলেন, ‘তানভীর এত ঘটনা ঘটানোর পরেও পুলিশ প্রশাসন নীরব রয়েছে। যার কারণে নিরীহ কলেজছাত্রের প্রাণ দিতে হয়েছে। আমরা এর কঠিন বিচার চাই—যাতে এ রকম ঘটনায় আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।’

এ বিষয়ে গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা মাজহারুল আনোয়ার বলেন, খুনের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ দেয়নি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়াহিদুজ্জামান তানভীর একই এলাকার ওসমান গণির পুত্র। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম এমপির নৌকার মিছিলে দুই হাতে অস্ত্র উঠিয়ে মিছিল করে তানভীর। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে রাতেই দুই অস্ত্রসহ পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। সে থেকেই আলোচনায় আসে ওয়াহিদুজ্জামান তানভীর।

নিহত কলেজছাত্র মারফত আলীর ছবিসহ হুমকি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন ওয়াহিদুজ্জামান তানভীর। ছবি: সংগৃহীত
নিহত কলেজছাত্র মারফত আলীর ছবিসহ হুমকি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন ওয়াহিদুজ্জামান তানভীর। ছবি: সংগৃহীত

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাব দেখিয়ে এলাকায় বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে ধুরুয়া গ্রামের আরমান মিয়া, ফয়সাল মিয়া, মো. সাইফুল্লাহ, চণ্ডীপাশা গ্রামের জুয়েল মিয়া, রসুলপুর গ্রামের হেলাল মিয়া ও হেলিম এবং কাটলিপাড়া গ্রামের সুজন মিয়াকে বিভিন্ন সময় কুপিয়ে জখমের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। এঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পঙ্গু অবস্থায় জীবন যাপন করছে। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএনপির পরিচয়ে এলাকায় অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন।

জানতে চাইলে তানভীরের হামলার শিকার জুয়েল মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাকে বিনা অপরাধে রাতের আঁধারে কুপিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে। আমি অনেক কষ্টে দিন পার করতেছি। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ভয়ে মুখ খুলতে পারি না।’

এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, তানভীরের বিরুদ্ধে নান্দাইল মডেল থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। খুনের ঘটনা গৌরীপুর এলাকায় ঘটেছে, সে বিষয়ে তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

বৃদ্ধের চার বিয়ে, থানায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জেরার মুখে হাসির রোল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত