Ajker Patrika

‘ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে’ বাসে তুলে গৃহবধূকে ধর্ষণ

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ২১: ৪৮
Thumbnail image

ঢাকার বাসে না উঠে ভুল বাসে উঠে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট চলে আসেন এক গৃহবধূ। তাঁকে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে বাসে উঠিয়ে ধর্ষণ করেন চালক। পরে দুই দিন তাঁকে একটি ভাড়া বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় ওই বাসচালককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। আজ শুক্রবার প্রেস বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানান হালুয়াঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আহসান হাবিব।  

গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর আলম (৩১) হালুয়াঘাট উপজেলার গোবরাকুড়া এলাকার বাসিন্দা এবং হালুয়াঘাট-ঢাকা সড়কে চলাচলকারী ইমাম পরিবহনের বাসচালক।  

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত সোমবার ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থেকে ঢাকায় স্বামীর কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন ওই গৃহবধূ। নগরীর শমভুগঞ্জ এলাকায় তাঁর (গৃহবধূ) নানা একটি বাসে উঠিয়ে দিয়ে যান। বাসে ওঠার পর তাঁর স্বামী মোবাইল ফোনে কল দেন এবং লোকেশন না বলতে পারায় বাসের হেলপারকে ফোন দিতে বলেন। হেলপারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, সে ঢাকার বাসে না উঠে ভুল করে হালুয়াঘাটের বাসে উঠেছেন। হালুয়াঘাট পৌঁছালে ঢাকাগামী বাসে উঠিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন হেলপার। 

পরে হালুয়াঘাট পৌঁছালে বাসস্ট্যান্ডে এক বয়স্ক নারীর সঙ্গে ভুল করে চলে আসার বিষয়ে কথা হয় ওই গৃহবধূর। এ সময় পাশে থাকা জাহাঙ্গীর ঘটনা শুনে পিছু নেন। পরে হেলপার গৃহবধূকে ঢাকাগামী অন্য একটি বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসেন। একই সময় ওই বাসে ওঠেন বাসচালক জাহাঙ্গীর। তিনি গৃহবধূকে জানান, এ বাসে ঢাকা গেলে রাত ২-৩টা বেজে যাবে। সে রিজার্ভ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে যাবেন। তাঁর সঙ্গে গেলে রাত ৮টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাতে পারবেন। 

তাঁর বাস উপজেলার ধারা বাজারে রেখেছেন, সেখান থেকে তিনি রিজার্ভে যাবেন। ওই নারী সরল বিশ্বাসে তাঁর সঙ্গে ধারা বাজার মুরগি মহল এলাকায় নেমে যান। তারপর জাহাঙ্গীর আলম ওই নারীকে নিয়ে মুরগি মহলের পাশে নির্জন স্থানে দাঁড় করিয়ে রাখা ‘ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৯৬৫৮’ নম্বরের ইমাম পরিবহনের একটি বাসে ওঠে বসতে বলেন। পরে বিকেল ৫টার দিকে জাহাঙ্গীর বাসে ওঠে গেট বন্ধ করে তাঁকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। ওই নারী চিৎকার করতে চাইলে গলা চেপে ধরে তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। ধর্ষণের পর তিনি তাঁকে বাসে রেখে বাইর থেকে গেট বন্ধ করে চলে যান। এক ঘণ্টা পর জাহাঙ্গীর ফিরে এসে গৃহবধূকে বিয়ে করবে বলে প্রলোভন দেখান। পরে রাত ১০টার দিকে জাহাঙ্গীর ইটভাটার রিজার্ভ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন এবং ভোরে নারায়ণগঞ্জে পৌঁছান। সকালে মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) পুনরায় ওই নারীসহ বাস নিয়ে হালুয়াঘাটের উদ্দেশে আবার রওনা দেন।

বেলা ৩টার দিকে উপজেলার নাগলা বাজার পৌঁছে বাসের হেলপার ফয়সালকে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এই মহিলাকে বিয়ে করেছি, সে তোর নতুন ভাবি। তাকে বাড়িতে নিয়ে যা। আমি রাতে আসব।’ পরে জাহাঙ্গীর রাতে ফয়সালের বাড়িতে এসে একই পরিচয় দেন এবং ওই নারীর সঙ্গে রাত্রী যাপন করে দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করেন। পরদিন বুধবার (১৮ অক্টোবর) ওই নারীকে নিয়ে তিনি শহরের পাগলপাড়া এলাকায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নেন এবং তৃতীয়বার ধর্ষণ করেন। পরে তাঁকে বাসায় রেখে জাহাঙ্গীর বাইরে চলে যান।

ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না ধর্ষণের শিকার ওই নারী। পরে সুযোগ বুঝে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে ওই নারী তাঁর বাবাকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। তাঁর বাবা হালুয়াঘাট থানা-পুলিশকে ঘটনাটি জানালে, তাৎক্ষণিক পুলিশ ওই নারীকে পাগলপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পাশাপাশি অভিযান চালিয়ে জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় বাসটিও জব্দ করা হয়।

আজ শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে জাহাঙ্গীর আলমকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী। পরে আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে এবং ভুক্তভোগীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন চন্দ্র রায় আজকের পত্রিকাকে জানান, এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে জাহাঙ্গীর আলমকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন ওই নারী। আসামি আদালত ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত