চা-বাগানের স্কুল
মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজার শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার এবং কমলগঞ্জের ঘনবসতি এলাকা থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ভারতের সীমান্ত এলাকায় সুনছড়া চা-বাগান। এর একটি টিলার ওপর টিনের জীর্ণ ঘর। বাইরে হেলে পড়া বাঁশে ঝুলে আছে জাতীয় পতাকা। ছোট্ট কক্ষে বাঁশের বেড়া দিয়ে দুটি কক্ষ তৈরি হয়েছে। ছোট ছোট খুপরি ঘরে চলছে পাঠদান। জীর্ণ ঘরের মতো শিশুদের পোশাকও জীর্ণ। এটাই সুনছড়া চা-বাগানের স্কুল।
সুনছড়া চা-বাগানটি দেবলছড়া চা-বাগান নামেও পরিচিত। এই বাগানে প্রায় ৩ হাজার মানুষের বাস। কথা বলে জানা গেল, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৪০ সাল; তবে নথিপত্রে উল্লেখ রয়েছে, স্কুলটি ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত। চা-শ্রমিকদের অভিযোগ, তাঁদের সন্তানেরা পড়ালেখা করে বলেই প্রতিষ্ঠার ৮৫ বছর পরও করুণ অবস্থা স্কুলের।
মৌলভীবাজারে ৬৯টি চা-বাগানে স্কুল আছে। এসব স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। সরকারের পক্ষ থেকে এসব বেসরকারি স্কুলে শুধু বই দেওয়া হয়। শিক্ষার্থী থাকলেও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, আসবাব, শিক্ষা উপকরণ, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন সুবিধা। বাগানমালিকপক্ষ শুধু বিদ্যালয় নামটা বাঁচিয়ে রেখেছে। শিক্ষা দপ্তরের তথ্য সূত্রে জানা যায়, মফস্বল বা এই এলাকার অন্য গ্রামগুলোর তুলনায় চা-বাগানের স্কুলে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি। উপস্থিতির হার তুলনামূলক ভালো।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘আমরা বারবার চা-বাগানের শিক্ষাব্যবস্থার করুণ পরিণতি নিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি, আন্দোলন করেছি। তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’
চা-বাগানের স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা বলছেন, তাঁরা এ দেশের নাগরিক অথচ সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আমরা হয়েছি, এখন আমাদের সন্তানেরা বঞ্চিত হচ্ছে। যুগের পর যুগ চলে যাচ্ছে অথচ আমাদের মৌলিক অধিকার পাচ্ছি না।’
সুনছড়া চা-বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক মিটুন কুর্মী আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘এই স্কুলে ১৯২ জন শিক্ষার্থী আছে। শিক্ষক মাত্র ৩ জন। একজন চা-শ্রমিক যে পরিমাণ মজুরি পান, একজন শিক্ষক সেই একই পরিমাণ সম্মানী পান। অর্থাৎ প্রতিদিন ১৭৮ টাকা মজুরি নিয়ে শিক্ষকতা করতে হচ্ছে। আবার অনেক শিক্ষকের সম্মানী সারা মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা মাত্র। একজন শিক্ষকের এর চেয়ে কষ্ট আর কিছু হতে পারে না।’
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম বলেন, চা-বাগানের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরকারীকরণ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। কেউ যদি লেগে থাকে, তাহলে একসময় হয়ে যাবে। পার্বত্য এলাকায় ২৫০টির বেশি স্কুল সরকারীকরণ করা হয়েছে। এই রকম চা-বাগানের স্কুলগুলো সরকারি করার সুযোগ আছে।
চা-শ্রমিকদের জীবন নিয়ে গবেষণা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আশ্রাফুল করিম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, চা-বাগানে ১৯৭৭ সালের আইন অনুযায়ী প্রতিটি বাগানে একটি স্কুল থাকার কথা। তবে বাস্তবে তা নেই। আর যে কয়টা বিদ্যালয় আছে, সেখানেও প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক নেই। প্রতিটি চা-বাগানে অন্তত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা দরকার। চা-শ্রমিকেরা তো স্বাধীন দেশের নাগরিক। তাদের মৌলিক অধিকার শিক্ষা, অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান—কোনোটাই ভালোভাবে পাচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকার অবশ্যই শুধু শিক্ষা নয়, তাদের স্বাস্থ্য ও মজুরির দিকে নজর রাখতে হবে। বর্তমান সরকারকে বলা হয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফসল। বাগানে যে বৈষম্য শতাধিক বছর ধরে চলে আসছে, এই বৈষম্য দূর করা বর্তমান সরকারের বেশি দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু এই সরকার এখন পর্যন্ত চা-বাগানের দিকে নজর দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।
মৌলভীবাজার শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার এবং কমলগঞ্জের ঘনবসতি এলাকা থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ভারতের সীমান্ত এলাকায় সুনছড়া চা-বাগান। এর একটি টিলার ওপর টিনের জীর্ণ ঘর। বাইরে হেলে পড়া বাঁশে ঝুলে আছে জাতীয় পতাকা। ছোট্ট কক্ষে বাঁশের বেড়া দিয়ে দুটি কক্ষ তৈরি হয়েছে। ছোট ছোট খুপরি ঘরে চলছে পাঠদান। জীর্ণ ঘরের মতো শিশুদের পোশাকও জীর্ণ। এটাই সুনছড়া চা-বাগানের স্কুল।
সুনছড়া চা-বাগানটি দেবলছড়া চা-বাগান নামেও পরিচিত। এই বাগানে প্রায় ৩ হাজার মানুষের বাস। কথা বলে জানা গেল, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৪০ সাল; তবে নথিপত্রে উল্লেখ রয়েছে, স্কুলটি ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত। চা-শ্রমিকদের অভিযোগ, তাঁদের সন্তানেরা পড়ালেখা করে বলেই প্রতিষ্ঠার ৮৫ বছর পরও করুণ অবস্থা স্কুলের।
মৌলভীবাজারে ৬৯টি চা-বাগানে স্কুল আছে। এসব স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। সরকারের পক্ষ থেকে এসব বেসরকারি স্কুলে শুধু বই দেওয়া হয়। শিক্ষার্থী থাকলেও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, আসবাব, শিক্ষা উপকরণ, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন সুবিধা। বাগানমালিকপক্ষ শুধু বিদ্যালয় নামটা বাঁচিয়ে রেখেছে। শিক্ষা দপ্তরের তথ্য সূত্রে জানা যায়, মফস্বল বা এই এলাকার অন্য গ্রামগুলোর তুলনায় চা-বাগানের স্কুলে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি। উপস্থিতির হার তুলনামূলক ভালো।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘আমরা বারবার চা-বাগানের শিক্ষাব্যবস্থার করুণ পরিণতি নিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি, আন্দোলন করেছি। তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’
চা-বাগানের স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা বলছেন, তাঁরা এ দেশের নাগরিক অথচ সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আমরা হয়েছি, এখন আমাদের সন্তানেরা বঞ্চিত হচ্ছে। যুগের পর যুগ চলে যাচ্ছে অথচ আমাদের মৌলিক অধিকার পাচ্ছি না।’
সুনছড়া চা-বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক মিটুন কুর্মী আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘এই স্কুলে ১৯২ জন শিক্ষার্থী আছে। শিক্ষক মাত্র ৩ জন। একজন চা-শ্রমিক যে পরিমাণ মজুরি পান, একজন শিক্ষক সেই একই পরিমাণ সম্মানী পান। অর্থাৎ প্রতিদিন ১৭৮ টাকা মজুরি নিয়ে শিক্ষকতা করতে হচ্ছে। আবার অনেক শিক্ষকের সম্মানী সারা মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা মাত্র। একজন শিক্ষকের এর চেয়ে কষ্ট আর কিছু হতে পারে না।’
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম বলেন, চা-বাগানের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরকারীকরণ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। কেউ যদি লেগে থাকে, তাহলে একসময় হয়ে যাবে। পার্বত্য এলাকায় ২৫০টির বেশি স্কুল সরকারীকরণ করা হয়েছে। এই রকম চা-বাগানের স্কুলগুলো সরকারি করার সুযোগ আছে।
চা-শ্রমিকদের জীবন নিয়ে গবেষণা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আশ্রাফুল করিম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, চা-বাগানে ১৯৭৭ সালের আইন অনুযায়ী প্রতিটি বাগানে একটি স্কুল থাকার কথা। তবে বাস্তবে তা নেই। আর যে কয়টা বিদ্যালয় আছে, সেখানেও প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক নেই। প্রতিটি চা-বাগানে অন্তত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা দরকার। চা-শ্রমিকেরা তো স্বাধীন দেশের নাগরিক। তাদের মৌলিক অধিকার শিক্ষা, অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান—কোনোটাই ভালোভাবে পাচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকার অবশ্যই শুধু শিক্ষা নয়, তাদের স্বাস্থ্য ও মজুরির দিকে নজর রাখতে হবে। বর্তমান সরকারকে বলা হয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফসল। বাগানে যে বৈষম্য শতাধিক বছর ধরে চলে আসছে, এই বৈষম্য দূর করা বর্তমান সরকারের বেশি দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু এই সরকার এখন পর্যন্ত চা-বাগানের দিকে নজর দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সদস্যদের প্রতিবেদনে আদিবাসী শব্দ ব্যবহারের অভিযোগ তুলে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাঙালিরা।
১৩ মিনিট আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দিনমজুর রিয়াজুল ফরাজি (৩৫) হত্যা মামলায় মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার সকালে মুন্সিগঞ্জ সদর আমলি আদালতে সাবেক সংসদ সদস্য বিপ্লবকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর
২১ মিনিট আগেনাটোরের বড়াইগ্রামে এক শিক্ষার্থীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সুমির কুমার মণ্ডল নামের এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার দাড়িকুশি উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদে মঙ্গলবার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা মানববন্ধন করেছেন।
২৭ মিনিট আগেকক্সবাজারের টেকনাফে এক নারীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে অপহরণের শিকার দুই যুবকসহ পাঁচজনকে হাত, পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের বড়ডেইলসংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয় বলে জানান টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত
৩৪ মিনিট আগে