Ajker Patrika

গাংনীতে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চার মাস ধরে জলাবদ্ধতা, পাঠদান ব্যাহত

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৪৫
বামন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়ে রয়েছে চার মাস ধরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বামন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়ে রয়েছে চার মাস ধরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বামন্দী নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং বামন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ টানা চার মাস জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিনের এই জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থীর পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি খেলাধুলা বন্ধ থাকায় উঠতি বয়সের ছেলেরা মাদকাসক্তে জড়িয়ে পড়ার দুশ্চিন্তা করছেন অভিভাবকেরা।

দীর্ঘ চার মাস জলাবদ্ধতা থাকায় এই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠে পানি জমে যায় এবং নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়। জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে উঠেছে। অভিভাবক এবং প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এই পানি থেকে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কায় চরম দুশ্চিন্তা করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক সোহেল রানা বাবু বলেন, বামন্দীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে অতিদ্রুত পানি নিষ্কাশন করা উচিত।

সোহেল রানা আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই দুটি প্রতিষ্ঠানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। আমি আমার ছোট সন্তানকে এই প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় পাই কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে বলে। তা ছাড়া এই পানি এত নোংরা যে এখান থেকে বড় ধরনের কোনো রোগ ছড়াতে পারে।’

জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক লেখাপড়ার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজিম হোসেনের ভাষ্য, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই জলাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসছি। এতে আমাদের জামাকাপড় নোংরা হয়ে যায়। লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। খেলাধুলা করতে পারছি না। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করে লেখাপড়ার পরিবেশ ও খেলার মাঠের উপযোগী করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম আহমেদ বলে, ‘স্কুলে এসে এই নোংরা পানিতে পড়ে গিয়ে অনেকের বই ও পোশাক ভিজে যায়। দীর্ঘদিন ধরে খেলাধুলা করতে না পারায় আমাদের খুব খারাপ লাগছে। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, তারা যেন স্কুলমাঠের পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।’

দীর্ঘদিনের এই জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থীর পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
দীর্ঘদিনের এই জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থীর পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বামন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা চার মাস ধরে এই জলাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছি। জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের একটি ক্লাসরুম বন্ধ রয়েছে। এখানে বাচ্চাদের নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে এর কোনো সমাধান পাইনি। আদৌ এর সমাধান পাব কি না, জানি না। তবে আমাদের কষ্টের শেষ নেই।’

বামন্দী নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাজ্জাদুল আলম বলেন, ‘বামন্দী নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ আঙিনায় জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। তাই গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকের কাছে আকুল আবেদন, অতিদ্রুত পানি নিষ্কাশন করে লেখাপড়ার পরিবেশ করে দিন। আর জেলা পরিষদের যে ২ লাখ টাকার কাজ হওয়ার কথা, তা এখনো হয়নি। তাই এটা দেখার জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

বামন্দী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘বামন্দী নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বামন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে মাঠ রয়েছে, তা এখন কেউ স্কুলের মাঠ বলবে না। ওটাকে এখন ডোবা বা পুকুর বলবে। ছোট শিশুরা স্কুলে আসে। তারা যদি কোনো দুর্ঘটনায় পড়ে তাহলে এর দায়িত্ব কে নেবে। আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে অনেক চিন্তিত। তাই উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করব এই পানি নিষ্কাশন করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার। তা ছাড়া যুবসমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খেলাধুল। তারা খেলাধুলা করতে পারছে না। এ কারণে মাদকাসক্ত হওয়ার ভয়ও বেশি থাকে। ছেলেদের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয়, সেই কথা বিবেচনা করে অতিদ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তাই প্রশাসনের নিকট জোরালো দাবি জানাচ্ছি দ্রুত ড্রেনেজের ব্যবস্থা করে এই পানি নিষ্কাশন করার।’

গাংনী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এস এম জয়নুল ইসলাম বলেন, বামন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ যেসব বিদ্যালয়ে জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থীর পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে, তা দ্রুত নিরসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জলাবদ্ধতার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। আর জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যাপারে তারা যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেভাবে কাজ করব।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বামন্দী নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিজস্ব গভর্নিং বডি রয়েছে। তা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কিছু আয় রয়েছে। আমরা তাদের নির্দেশনা দিয়েছি জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। তা ছাড়া কোনো সহযোগিতা লাগলে সে বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শসহ সহযোগিতা করা হবে। আর বামন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, আমরা সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে জলাবদ্ধতা দূর করা যায়, সে বিষয়টিও দেখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কোটা তুলে দিলে নারীদের খুঁজেও পাওয়া যাবে না: সামান্তা শারমিন

গ্রাহকের ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ, জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার জেলহাজতে

আন্দোলনের মধ্যেই ফের বাড়ল এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা

৫ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা প্রত্যাখ্যান, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষকদের

মেট্রোরেলের সময় বাড়ল: আজ থেকে নতুন সূচি, ট্রিপ বাড়ল ৭টি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত