Ajker Patrika

স্কুলে না গিয়েও ১৩ বছর বেতন তুলেছেন বীরেন শিকদারের এপিএস শিশির

মাগুরা প্রতিনিধি
স্কুলে না গিয়েও ১৩ বছর বেতন তুলেছেন বীরেন শিকদারের এপিএস শিশির

১৩ বছর আগে মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়ার বরইচরায় অভয়াচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন শিশির সরকার। বিদ্যালয়টিতে ক্লাস নেননি একদিনও। শিক্ষার্থীরাও চেনে না তাকে। কিন্তু মাসশেষে বেতন তুলেছেন ঠিকই। আবার বিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়েও করেছেন অবৈধ বাণিজ্য। এমন বিস্তর অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। 

একযুগেরও বেশি সময় ধরে এমন অনিয়ম চললেও শিশির সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস করেননি কেউ। কারণ তিনি মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস)। 

 ২০১১ সালের ১২ মার্চ বিদ্যালয়টিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই এমপি বীরেন শিকদারের এপিএস হিসেবে কাজ শুরু করেন শিশির। ২০১৪ সালে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান বীরেন শিকদার। তখন থেকে শিশির সরকারের ক্ষমতার দাপট বাড়তে থাকে বলে স্থানীয়রা জানায়। 

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় সই দেখা যায় শিশির সরকারের। সেসময় অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে দুই মাসের ছুটি নেন তিনি। তারপর থেকে অনুপস্থিত এই শিক্ষক।

টানা ১৩ বছর এপিএসের ক্ষমতাবলে বিদ্যালয়ে যাননি শিশির সরকার। প্রতি মাসে একবার বিদ্যালয়ে গিয়ে উপস্থিতির খাতায় হাজিরা সই দিয়ে এসেছেন। আর বেতন তুলেছেন নিয়মিত। এসবে সাহায্য করার অভিযোগ এসেছে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নারায়ণ বরের বিরুদ্ধে।
 
এ বিষয়ে নারায়ণ বরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টায় বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি তাকে। কয়েকদিন আগে চিকিৎসার জন্য তিনি ভারতে গিয়েছেন বলে স্বজনরা জানায়। তবে বিদ্যালয়ের অনেকের অভিযোগ, সব অনিয়মের হোতা এই সভাপতি। শিশির সরকারের টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। এখন তিনি পালিয়ে দেশেই আছেন বলে দাবি অনেকের। 

গত বৃহস্পতিবার শিশির সরকারের বিষয়ে জানতে চাইরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, শিশির সরকার কোনোদিন ক্লাস নেননি। ক্লাস সিক্স থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই তাকে শ্রেণিকক্ষে পায়নি।
 
আড়পাড়া ডিগ্রি কলেজে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী জানায়, তিনি ওই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছেন। এখন কলেজে পড়ছেন। তিনি কখনো বিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে শিশির সরকারকে দেখেননি। 

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মমতা মজুমদার বলেন, শিশির সরকার সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে নিয়োগ পেলেও ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পান। বিদ্যালয়ের সভাপতি নারায়ণ বরকে সঙ্গে নিয়ে মাঝেমাঝে স্কুলে আসতেন তিনি। তারপর এক মাসের হাজিরা সই করে চলে যেতেন। 

তিনি আরও বলেন, ‘এমপির এপিএস বলে কখনো কিছু বলতে সাহস পাইনি। ম্যানেজিং কমিটিকে জানালে তারা বলেছে, কোনো সমস্যা হবে না। গত আগস্টের বেতনও তিনি পেয়েছেন। তার কোনো মাসের বেতন আটকে থাকেনি।’
 
তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক মমতা মজুমদারও এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। তার নিয়োগও এই শিশির সরকারের প্রভাবে হয়েছে। এই নিয়োগে মোটা অংকের অর্থ বিনিময় হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়টির এক শিক্ষক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মমতা মজুমদার প্রধান শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। তাকে নিজ ক্ষমতাবলে নিয়োগ দিয়েছে শিশির সরকার। যেখানে মোটা অংকের অর্থ লেনদেন হয় বলে দাবি করেন এই শিক্ষক।’ 

মাগুরা জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর কবীর মুঠোফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিশির সরকার ক্লাস না করিয়ে বেতন তুলেছেন। বিষয়টিতে প্রধান শিক্ষক দায় এড়াতে পারেন না। গত বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষক মমতা মজুমদার লিখিত আকারে আমার কাছে স্বীকার করেছেন।’

তিনি আরও জানান, এই বিষয়ে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এরকম অনিয়মের তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে এ সপ্তাহে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এসব বিষয়ে অভিযুক্ত শিশির সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ফার্মগেটে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারী নিহতের পর বন্ধ থাকা মেট্রোরেল সেবা আজ সোমবার সকাল ১১টা থেকে পুনরায় চালু হয়েছে। উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল এখন নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাচল করছে।

আজ ঢাকা ম্যাস টারজেট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

ডিএমটিসিএল এক বিবৃতিতে জানায়, ‘মেট্রোরেলের সম্মানিত যাত্রী সাধারণের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, সকাল ১১টা থেকে উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল সেবা নিরবচ্ছিন্নভাবে পুনরায় চালু করা হয়েছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

এর আগে রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের ৪৩৩ নম্বর পিয়ার থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে আবুল কালাম (৩৫) নামের এক পথচারীর মৃত্যু হয় এবং দু’জন আহত হন। এ ঘটনার পর নিরাপত্তার স্বার্থে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

দীর্ঘ প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বিকেল ৩টার দিকে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সীমিত পরিসরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। পরে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে মতিঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা হয়।

তবে বিজয় সরণি থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত অংশে মেরামত কাজ চলমান থাকায় গতকাল দুপুর থেকে ওই অংশে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। আজ সকালেই মেরামত কাজ শেষ হওয়ার পর পুরো রুটে সেবা স্বাভাবিক করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নেছারাবাদের ৩টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু এখন ‘মৃত্যুফাঁদ’

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
সাগরকান্দা, শশিদ ও জিনুহার তিনটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে এই পুল দিয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাগরকান্দা, শশিদ ও জিনুহার তিনটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে এই পুল দিয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের সাগরকান্দা বাজার হয়ে নাথপাড়া থেকে জিনুহার এবং দুর্গাকাঠি রাস্তার খালের ওপর থাকা লোহার ভিমের স্লিপারের তিনটি সেতু (পুল) বর্তমানে ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর ওপর সুপারিগাছ ও বাঁশের হাতল দিয়ে কোনোভাবে পারাপার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এমন ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলে বিদ্যালয়ের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরাও। ছবি: আজকের পত্রিকা
এমন ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলে বিদ্যালয়ের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরাও। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন তিনটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে সাগরকান্দা স্কুলের পরের নাথপাড়ার প্রথম সেতুটি। তবে এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের কোনো মাথাব্যথা নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় যুগ আগে এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত এই তিনটি সেতু সাগরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের তিন গ্রামের মানুষের প্রধান যোগাযোগমাধ্যম। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেতুগুলো নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল। কয়েক বছর আগে বন্যায় গাছ পড়ে নাথপাড়া প্রথম সেতুটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এম কে সবুর তালুকদার সেতুটি মেরামতের কথা বলে এর লোহার ভিম, অ্যাঙ্গেল ও স্লিপারগুলো খুলে নিয়ে যান। কিন্তু এরপর আর মেরামতের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। একই কারণে বাকি দুটি সেতুও সংস্কারের অভাবে বেওয়ারিশ অবস্থায় পড়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মজিবুর রহমান মৃধা বলেন, ‘এই রাস্তার সবচেয়ে ভয়াবহ পুল নাথপাড়ার প্রথমটি। পুলের অবস্থা এত খারাপ যে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, অসুস্থ মানুষ হাসপাতালে নিতে পারি না। চেয়ারম্যানরা মেরামতের নামে লোহার ভিম খুলে নিয়ে গেছে, তারপর আর কেউ খোঁজ নেয়নি। একই অবস্থায় বাকি দুটি পুল রয়েছে।’

আরেক বাসিন্দা মো. জিয়া উদ্দিন তৌহিদ বলেন, ‘এই রাস্তাটি তিনটি গ্রামের মানুষের একমাত্র যোগাযোগ পথ। এখানে তিনটি মন্দির ও একটি স্কুল আছে। পুল না থাকায় আমরা প্রতিদিন মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করি।’

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সাগরকান্দা বাজার থেকে এক কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক এবং এ তিনটি সেতু নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছিল। কাজটি মেসার্স ইফতি ইটিসিএল নামের প্রতিষ্ঠানের নামে টেন্ডার হয়, যার মালিক সাবেক সংসদ সদস্যের ভাই মিরাজুল ইসলাম। কিন্তু দুর্নীতির মামলায় ঠিকাদারের লাইসেন্স জটিলতা দেখা দিলে প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন ব্যাপারী বলেন, ‘টেন্ডার হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু মামলার কারণে কাজ হয়নি। পুলের লোহার ভিম ও অ্যাঙ্গেল কারা খুলে নিয়ে গেছে, তা আমার জানা নেই।’

সাবেক চেয়ারম্যান এম কে সবুর তালুকদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী বিকাশ চন্দ বলেন, ‘কোটি টাকার ওপরে টেন্ডার হয়েছিল। পরে ঠিকাদারি লাইসেন্সের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে পুনরায় বিবেচনা করা হবে।’

স্থানীয়দের জোর দাবি, দ্রুত সেতুগুলো পুনর্নির্মাণ না হলে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং তিনটি গ্রামের যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাজারের কোলাহল ছাপিয়ে দোকানির সঙ্গে বকের বন্ধুত্ব

মো. আশিকুর রহমান তুষার, বাউফল (পটুয়াখালী)
বাউফল উপজেলার নুরাইনপুর বাজারে দোকানদার হেমায়েত উদ্দিনের সঙ্গে বকের বন্ধুত্ব। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাউফল উপজেলার নুরাইনপুর বাজারে দোকানদার হেমায়েত উদ্দিনের সঙ্গে বকের বন্ধুত্ব। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাজারের কোলাহল, মানুষের ভিড়—সবকিছু উপেক্ষা করে একটি সাদা বক নিশ্চিন্তে দাঁড়িয়ে থাকে দোকানের সামনে। কিছুক্ষণ পর সে ঢুকে পড়ে দোকানের ভেতরে, গিয়ে বসে দোকানদারের পাশে—যেন বহুদিনের আপন সঙ্গী। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নুরাইনপুর বাজারে সম্প্রতি এমন অদ্ভুত, কিন্তু হৃদয়ছোঁয়া এক দৃশ্যের দেখা মিলছে।

নুরাইনপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. হেমায়েত উদ্দিন (৩৮) প্রায় চার বছর ধরে বাজারের মসজিদের পাশে একটি স্টেশনারির দোকান পরিচালনা করছেন। চার মাস ধরে তাঁর এই দোকানেই বসবাস করছে এই সাদা বকটি।

সরেজমিন দেখা গেছে, বকটি কখনো দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, কখনো ছাউনিতে গিয়ে বসে। আবার অনেক সময় দোকানদার হেমায়েত উদ্দিনের চেয়ারের হাতলে এসে নির্ভয়ে বসে পড়ে। বাজারে প্রচুর ভিড়ভাট্টা থাকলেও বকটির মধ্যে কোনো ভয়ের ছাপ নেই। শুধু তা-ই নয়, সে দোকানের জিনিসপত্র নষ্ট করে না, এমনকি নির্দিষ্ট স্থানে মলত্যাগ করে—যেন সে নিয়ম মেনে চলা পরিবারেরই একজন সদস্য।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. জলিল বলেন, ‘মানুষ ও বকের এমন বন্ধুত্ব আগে কখনো দেখিনি। প্রতিদিন বাজারে এলেই দেখা যায়, বকটি হেমায়েতের দোকানে বসে আছে। সে যেভাবে এর যত্ন নেয়, তা সত্যিই বিস্ময়কর।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নুরাইনপুর বাজারসংলগ্ন খানবাড়ির একটি বকের বাসা থেকে প্রায় চার মাস আগে ঝড়ে পড়ে গিয়েছিল বকটির একটি ছানা। তখন একটি গুইসাপ সেটিকে আক্রমণ করলে ব্যবসায়ী হেমায়েত উদ্দিন এগিয়ে এসে ছানাটিকে উদ্ধার করেন।

উদ্ধারের পর তিনি অত্যন্ত যত্নসহকারে ছানাটির পরিচর্যা করে নিজের সন্তানের মতো লালন করেন। সেই থেকেই বকটি দোকানদারের সঙ্গে এক অদ্ভুত মায়া ও বন্ধনে জড়িয়ে গেছে।

স্থানীয়দের মতে, হেমায়েত উদ্দিন ও বকের এই অনন্য সম্পর্ক শুধু নুরাইনপুর বাজারেই নয়, এখন পুরো বাউফল উপজেলাতেই আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ১৪
সিটি ইউনিভার্সিটির প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে ভাঙচুর করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
সিটি ইউনিভার্সিটির প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে ভাঙচুর করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

তুচ্ছ ঘটনায় মধ্যরাতে সাভারের আশুলিয়ার খাগান এলাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তবে তাঁদের মধ্যে একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রোববার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় সিটি ইউনিভার্সিটির। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো প্রকার সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যায় ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেলের সামনে সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী মোটরসাইকেল থেকে থুতু ফেললে তা ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীর গায়ে লাগে। এ নিয়ে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থী দেশীয় অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের ওই বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।

এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে গেলে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়।

আগুনের ছাপ সিটি ইউনিভার্সিটির মূল ফটকে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগুনের ছাপ সিটি ইউনিভার্সিটির মূল ফটকে। ছবি: আজকের পত্রিকা

একপর্যায়ে রাত ১২টার পর ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটির ভেতরে ঢুকে শিক্ষার্থীদের অবরোধ করে ভাঙচুর শুরু করেন। এ সময় তাঁরা প্রশাসনিক ভবন ভাঙচুরসহ লুট করে কম্পিউটারসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল। পুড়িয়ে ফেলে তিনটি বাসসহ একটি প্রাইভেট কার। ভাঙচুর চালানো হয় আরও পাঁচ যানবাহনে। ভোররাতে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে ফোটানো হয় ককটেল। এতে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু জায়গায় আগুন দেখা গেছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উত্তেজনার একপর্যায়ে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।

সিটি ইউনিভার্সিটির আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
সিটি ইউনিভার্সিটির আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে একজন সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে ফোন দিলে সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাউকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।

সাভার থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত