Ajker Patrika

বেদখল জমি উদ্ধারের মাধ্যমে শহীদ ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে চান মা

খোরশেদ আলম সাগর, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
শহীদ মিরাজুল ইসলাম মিরাজের বাড়িতে তাঁর মা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শহীদ মিরাজুল ইসলাম মিরাজের বাড়িতে তাঁর মা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেধাবী ছাত্র মিরাজুল ইসলাম মিরাজ বলেছিলেন, ‘মা, পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করব, তোমার জমি উদ্ধার করে একটা সুন্দর বাড়ি করব।’ কিন্তু সেই স্বপ্নের আগেই নিভে গেছে মিরাজের জীবনপ্রদীপ। এখন ছেলের রেখে যাওয়া সেই জমিটুকু দখলে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন মা মোহছেনা বেগম।

গত বছর ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামের মিরাজ। তিনি ছিলেন মৃত আব্দুস ছালামের বড় ছেলে। মাত্র ৫ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি করার ইচ্ছে ছিল তাঁদের। কিন্তু প্রতিবেশী দুলাল মণ্ডল দলিল থাকা সত্ত্বেও জমিটি দখলে নিতে দেননি। পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও কোনো ফল মেলেনি।

গত বছর জুলাই আন্দোলনে ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার সামনে মাছের আড়ত এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ৮ আগস্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিরাজের মৃত্যু হয়।

সরেজমিন শহীদ মেরাজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চাচা কালাম মিয়ার জমিতে একটা লম্বা টিনশেড ঘরের মাঝে পাটিশন দিয়ে তৈরি করা দুটি কক্ষ। সেই দুই কক্ষেই শহীদ পরিবারের বসবাস। ডোরা নদীর পারঘেঁষা বাড়ি তাঁদের। বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটি সাম্প্রতিক সময় সরকারিভাবে করে দেওয়া হয়েছে।

মিরাজের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, ২০২১ সালে এসএসসি পাস করে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক বাবার সঙ্গে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় পাড়ি জমান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ। সেখানে ভাড়া বাসায় থাকত মিরাজের পুরো পরিবার। ঢাকা দনিয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হন মিরাজ। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকানের কর্মচারী ছিলেন মিরাজ। অসুস্থ বাবার চিকিৎসা, ছোট দুই ভাইয়ের লেখাপড়াসহ পুরো সংসার চলত মিরাজের আয়ে।

গত বছর ৫ আগস্ট হাসিনা পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনে অন্যদের মতো যাত্রাবাড়ী থানার সামনে মাছের আড়ত এলাকায় আন্দোলনে যোগ দেন মিরাজ। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত মিরাজকে স্থানীয়রা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়। ৮ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

মিরাজের মৃত্যুতে নিভে যায় তাঁদের সংসারের আলো। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা পুরো পরিবার। কষ্টার্জিত টাকায় কেনা ৫ শতাংশ জমিতে বাড়ি করার স্বপ্নে ঢাকায় পাড়ি জমায় মিরাজের পরিবার। তা মাঝপথে নিভে যায়। জমিটুকুও হয়ে যায় বেদখল। দলিল দিলেও দখল দেননি দাতা প্রতিবেশী দুলাল। সে জমি দখলে নিতে থানা-পুলিশ করেও সুফল মেলেনি। হারতে হয়েছে টাকার কাছে। পড়ালেখা শেষে চাকরি করে বেদখলীয় জমি উদ্ধার করে বাড়ি করেই তবে ঢাকা থেকে ফেরার স্বপ্ন ছিল মিরাজের।

ছেলের মৃত্যুর শোকে অসুস্থ বাবা আব্দুস ছালাম বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে সরকারি পাঁচ লাখ টাকা পান। সে টাকায় মহিষখোঁচা বাজারে একটা খাসজমিতে দোকান করে ব্যবসা শুরু করেন আব্দুস ছালাম। হঠাৎ তিনিও স্ট্রোক করে মারা যান। আবারও অমানিশায় ডুবে যায় মিরাজের পরিবার।

বড় ছেলে আর স্বামীকে হারিয়ে নির্বিকার শহীদ জননী মোহছেনা বেগম। সংসারের খাদ্য জোগাতে বাধ্য হয়ে শহীদ মিরাজের স্কুলপড়ুয়া ছোট ভাই মেজবাউল ও সিরাজুল দোকান করছে। স্কুলে গেলে বন্ধ হয় দোকান, আর দোকান চালু রাখলে বন্ধ হয় স্কুলে যাওয়া।

শহীদ মিরাজের দাদি সালমা খাতুন বলেন, ‘আগে নাতি মিরাজ আমার ওষুধসহ চিকিৎসার দেখভাল করত। তার মৃত্যুর পরে ছেলে ছালাম ওষুধের ব্যবস্থা করত। এখন ছোট ছোট দুই নাতি স্কুলের ফাঁকে দোকান করে যা আয় করছে তা দিয়ে কোনো রকম খাবার জুটছে।’

শহীদ মিরাজের ছোট ভাই সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাইরে অনেক প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে শহীদ পরিবারকে কোটি কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। বাস্তবে পাঁচ লাখ টাকা আর বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটা ছাড়া কিছুই পাইনি। আমাদের ক্রয় করা জমি বেদখল থেকেও উদ্ধার করে দিতে পারেননি সরকারি কর্মকর্তারা। তাঁরা শুধু বুলি আওড়ায়। ভাইকে কারা গুলি করল? তার সঠিকটা জানতে চাই। চাই দ্রুত খুনিদের বিচার।’

মিরাজের মা মোহছেনা বেগম বলেন, ‘বাড়ির জন্য কেনা জমিটুকু দখল পেতে থানা-পুলিশ করেছিল মিরাজ আর তার বাবা। কিন্তু টাকার কাছে আমরা হেরে যাই। কথা শোনেনি হাসিনা সরকারের পুলিশ। তখন মিরাজ বলছিল, “মা চিন্তা কোরো না, আমি পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করে এ জমি উদ্ধার করে বাড়ি করে দেব।” আমার ছেলের এ স্বপ্ন আজও পূরণ করতে পারিনি। সরকারি লোকদের বলেছি, তাঁরাও আশ্বাস দিয়ে চলে যান। দ্বিতীয়বার আর আসেন না।’

তিনি বলেন, ‘বাজারের খাসজমিটুকু দখল করে দিয়েছে বিএনপি। সে জায়গায় দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা শুরু করতে সরকারিভাবে পাওয়া পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সরকারি জায়গা দখল দিয়ে বিএনপি প্রচার করল আমাদের দোকান সাজিয়ে দিয়েছে। মাঝেমধ্যে শুধু জামায়াত নেতারা ফোন করে খবর নেন। তা ছাড়া আর কেউ খবর নেয়নি। ছেলে ও স্বামীকে হারানো আমি কেমন আছি? স্বামী হারালে সন্তানকে নিয়ে শোক হালকা করা যায়। কিন্তু আমি তো ছেলে-স্বামী দুজনকেই হারাইছি। আমার মতো দুঃখী বুঝি কেউ নাই।’ এই বলেই কান্না শুরু করেন তিনি।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘কোনো নাগরিকের জমি জবর দখলের সুযোগ নেই। সেখানে জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবারের হলে তো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব পাবে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করবে এনসিপি।’

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিধান কান্তি হালদার বলেন, ‘শহীদ পরিবারের জমি বেদখলের বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন:

বাসা থেকে জিনিসপত্র চুরির সময় ধস্তাধস্তিকালে মা-মেয়েকে খুন করেন আয়েশা: পুলিশ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ০১
বাসা থেকে জিনিসপত্র চুরির সময় ধস্তাধস্তিকালে মা-মেয়েকে খুন করেন আয়েশা: পুলিশ

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার গৃহকর্মী আয়েশা আক্তার (২০) চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, বাসা থেকে জিনিসপত্র চুরির সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি গৃহকর্তার স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন।

আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের কয়ারচর এলাকা থেকে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ আয়েশাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি নরসিংদীর সলিমগঞ্জ এলাকার রবিউল ইসলামের মেয়ে। হত্যাকাণ্ডের পর নলছিটির দপদপিয়া ইউনিয়নের কয়ারচর এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন এই তরুণী।

নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের অভিযানে তাঁর স্বামী জামাল সিকদার রাব্বিকেও আটক করা হয়েছে। জামাল ওই এলাকার জাকির সিকদারের ছেলে। জামাল ও আয়েশা ঢাকায় থাকেন। মা-মেয়ের হত্যাকাণ্ডের পরে তাঁরা বাড়িতে আসেন।

অভিযানে অংশ নেওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সহিদুল ইসলাম মাসুম সাংবাদিকদের বলেন, গৃহকর্তার বাসা থেকে কিছু মালামাল চুরি করার পর সেখানে ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় আয়েশা আক্তার ছুরিকাঘাত করে গৃহকর্তার স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) হত্যা করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে আয়েশাকে গ্রেপ্তার করা হয়।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি এসব কথা বলেন।

অভিযানে তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুনও ছিলেন। পরে আয়েশাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন পুলিশ সদস্যরা।

এর আগে গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের ১৪ তলা একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় লায়লা আফরোজ ও তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার তাঁদের মরদেহ নাটোরে দাফন করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাসা থেকে মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিস খোয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভবনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর এক নারী স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চার দিন আগে আয়েশা পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেওয়া তরুণী এই জোড়া খুনে জড়িত বলে সন্দেহ হয় স্বজনদের। ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী পলাতক ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজনীতিবিদদের মধ্যে গুণগত পরিবর্তন না এলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নেতৃত্ব সংকটে পড়বে: লক্ষ্মীপুরে এ্যানি

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৮
আজ সকালে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা দলের উঠান বৈঠকে বক্তব্য দেন শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা দলের উঠান বৈঠকে বক্তব্য দেন শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে গুণগত পরিবর্তন না এলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নেতৃত্ব সংকটে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের গুণগত পরিবর্তন হয়নি, গুণগত পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে সমাজের মানুষ যাবে কোথায়? কে তাদের নেতা হবে? কে নেতৃত্ব দেবে? একটি অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে এবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।’ আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা দলের উঠান বৈঠকে বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

এ্যানি অভিযোগ করে বলেন, গত ১৭ বছরে ‘অত্যাচার–নির্যাতনের’ কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ মৃত্যুর মুখোমুখী। তাঁর দাবি, মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছিল এবং ‘যে খাবার তিনি খেতেন, তাতে বিষ মেশানো হয়েছিল’। তিনি আরও বলেন, সুস্থ মানুষ জেলে গিয়েছিলেন, অসুস্থ হয়ে বের হয়েছেন। এর জন্য শেখ হাসিনাই দায়ী।

শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। আল্লাহ জানেন কবে সুস্থ হয়ে তিনি ফিরে আসবেন। তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক, এটাই এখন সবার প্রত্যাশা। এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী দুই–চার দিন বা ১০ দিনের মধ্যে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন, নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং দেশের নেতৃত্ব দেবেন।

বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, এবারের নির্বাচন আগের মতো নয়। ‘একটি অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে নির্বাচন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বেঁচে থাকা মানে দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও শক্তিশালী থাকা। তিনি বিএনপির মনোবল ও সাহস।

এ্যানি মহিলা দলের নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্মের নারীরা দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেশ বদলে গেছে। দেশ এখন আর আগের জায়গায় নেই। বাসায় বসে আয় করার সুযোগ রয়েছে। তাই আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। তাই আপনাদের অধিকার বুঝে নেওয়ার সময় এসেছে। অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন অনেক সহজ হয়েছে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করে এ্যানি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনা, স্বাধীনতার নেতৃত্ব, যুদ্ধের মাঠে লড়াই—এসব কারণে জিয়াউর রহমান মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। একইভাবে বেগম জিয়াও মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সাহাবুদ্দিন সাবু, বাফুফের সহসভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপি, জেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান, লক্ষ্মীপুর পৌর বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম লিটন, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা আক্তার সুমি ভূঁইয়া প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শখের হাঁসটি ধরে নিয়ে গেলেন এনজিও কর্মীরা

 আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৯
টিএমএসএসের অফিসের মেঝেতে রাখা হাঁস। ছবি: আজকের পত্রিকা
টিএমএসএসের অফিসের মেঝেতে রাখা হাঁস। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় কিস্তির টাকা না পেয়ে এক নারীর বাড়ি থেকে একটি চিনাহাঁস ধরে নিয়ে গেছেন এনজিও কর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের ফুল্লশ্রী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। ওই নারী জানিয়েছেন, তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে শখ করে হাঁসটি পালত।

হাঁসটির মালিক ফুল্লশ্রী গ্রামের মো. মুরাদ হোসেনের স্ত্রী হাফিজা খানম। অভিযোগ উঠেছে, কিস্তির টাকা না পেয়ে ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) নামের একটি এনজিওর কর্মীরা তাঁর বাড়ি থেকে হাঁসটি নিয়ে যান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাফিজা টিএমএসএসের সদস্য। ওই এনজিও থেকে চলতি বছরের শুরুর দিকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন তিনি। প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার ২৫০ টাকা করে নিয়মিত কিস্তি দিয়ে আসছিলেন তিনি। গতকাল বিকেলে কিস্তির টাকা তুলতে হাফিজার বাড়িতে যান ওই এনজিওর মাঠকর্মী ফিরোজ খানসহ দুজন। হাফিজা আগামী সপ্তাহে কিস্তির টাকা পরিশোধ করে দেবেন বলে তাঁদের চলে যেতে অনুরোধ জানান। কিন্তু ফিরোজ খান কিস্তির টাকা না নিয়ে হাফিজার বাড়ি থেকে যাবেন না বলে অনড় থাকেন। এ সময় ফিরোজ খান হাফিজার উঠানে থাকা হাঁস-মুরগি দেখে টাকার পরিবর্তে হাঁস দাবি করেন। হাফিজা তাতে অসম্মতি জানিয়ে পাশের বাড়িতে চলে যান। এই ফাঁকে এনজিওর কর্মীরা হাফিজার বাড়ি থেকে একটি চিনাহাঁস ধরে নিয়ে যান।

এ ব্যাপারে হাফিজা খানম বলেন, ‘সর্বশেষ একটি কিস্তির টাকা আগামী সপ্তাহে পরিশোধ করার কথা বলছি। কিন্তু এনজিওর মাঠকর্মীরা আমার বাড়ির উঠান থেকে ধাওয়া করে বড় একটি চিনাহাঁস ধরে নিয়ে যায়। তখন আমি বাড়ি ছিলাম না। ওই হাঁসটির দাম পনেরো শ-ষোলো শ টাকার মতো হবে। আমার মেয়ের পালা শখের হাঁসটি ফেরত চাই।’

উপজেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল দাসগুপ্ত বলেন, কিস্তির টাকার পরিবর্তে ঋণগ্রহীতার বাড়ি থেকে কোনো জিনিস আনার বৈধতা নেই। সদস্যের বাড়ি থেকে হাঁস আনার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। টিএমএসএস এনজিও আগৈলঝাড়া উপজেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদের আওতাভুক্ত নয়।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তপন বিশ্বাস বলেন, ‘এই এনজিওটি আমার উপজেলার আওতাভুক্ত নয়। তারা কীভাবে এই উপজেলায় কাজ করে আমার জানা নেই। কিস্তির টাকার পরিবর্তে হাঁস আনার বিষয়টি অবৈধ।’

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে টিএমএসএস এনজিওর মাঠকর্মী ফিরোজ খান হাফিজা খানমের বাড়ি থেকে হাঁস ধরে আনার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কিস্তির টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা দাম ধরে হাঁস আনা হয়েছে।

এ ব্যাপারে টিএমএসএস এনজিওর ম্যানেজার মো. রাজেক ইসলাম বলেন, ‘ঋণগ্রহীতা হাফিজা খানম হাঁস বিক্রি করে পরে টাকা দেবে। আমার এনজিওর মাঠকর্মী দাম ধরে কিনে আনলে অপরাধের কিছু নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হজের খরচ ১০০ ডলার কমাতে বিমানকে চিঠি দিয়েছে সরকার: ধর্ম উপদেষ্টা

নাটোর প্রতিনিধি
আজ সকালে নাটোরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে নাটোরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘২০২৩ সালে হাজিদের আনা-নেওয়ার জন্য বিমানভাড়া ছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা। ২০২৪ সালে আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর বিমানভাড়া ২৭ হাজার টাকা কমানো হয়েছে। বর্তমানে ১ লাখ ৫৪ হাজার টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে আরও ১০০ ডলার কমানোর জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। আসন্ন হজ মৌসুমে কোনো সিন্ডিকেটকে পাত্তা দেওয়া হবে না।’

আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে নাটোর জেলা মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন শেষে এসব কথা বলেন খালিদ হোসেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘সৌদি সরকারের অনুরোধে গত বছরের তুলনায় এবার হজে গমন-ইচ্ছুকদের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। যারা ১০-১২টি রোগে আক্রান্ত তাঁদের হজে পাঠানো হবে না। আমরা চাচ্ছি, স্বচ্ছ এবং ট্রান্সপারেন্ট ব্যক্তিদের হজে পাঠাতে।’

এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন, পুলিশ সুপার আব্দুল ওয়াহাব প্রমুখ।

পরে উপদেষ্টা নাটোর সদর উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। প্রতিটি মডেল মসজিদ নির্মাণে জেলা পর্যায়ে ১৮ কোটি এবং উপজেলা পর্যায়ে ১৪ কোটি টাকা খরচ করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত