Ajker Patrika

জীবন থাকতে কবর থেকে ছেলের লাশ তুলতে দেব না: হাফেজ আজিজুলের বাবা-মা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি 
আজিজুল ইসলামের বাবা আব্দুর রহিম ও মা রেজিয়া বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজিজুল ইসলামের বাবা আব্দুর রহিম ও মা রেজিয়া বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘আমাদের ছেলে শহীদ আজিজুল ইসলাম ৩০ পারা কোরআনের হাফেজ। তার লাশ তুললে তিনটা কবর খুঁড়তে হবে। একটায় থাকব ছেলে। বাকি দুইটায় আমরা স্বামী-স্ত্রী। জীবন থাকতে কবর থেকে হাফেজ ছেলের লাশ তুলতে দেব না।’ জুলাই আন্দোলনে শহীদ আজিজুল ইসলামের বাবা আব্দুর রহিম ও মা রেজিয়া বেগম এমন কথা জানান।

তাঁদের বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালঙ্গী গ্রামে। জুলাই শহীদ ছেলের লাশ না তুলতে কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত আবেদনও করেছেন তাঁরা।

শহীদ আজিজুলের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, আজিজুল ইসলাম বরিশালের চরমোনাই মাদ্রাসা থেকে কোরআনের হাফেজ হয়ে ফিরে আসে। পরে স্থানীয় আউলিয়ার হাট আলিম মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। গত দাখিল পরীক্ষায় তার অংশ নেওয়ার কথা ছিল। এরই মাঝে দেশে জুলাই আন্দোলন শুরু হলে বাড়িতে ফাঁকি দিয়ে আন্দোলনে যায় আজিজুল ইসলাম।

গত বছরের ৫ আগস্ট বিকেলে বিজয় মিছিল বের হলে সবার সঙ্গে কাউয়ামারী বাজারে বিজয় মিছিলে অংশ নেয় আজিজুল। সেখানে মোশারফ হোসেন প্রধান কলেজের মূল ফটকের ডিজিটাল সাইনবোর্ড খুলে ফেলেছিল আজিজুল ইসলাম। দুর্ভাগ্যবশত সেখানে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।

পরদিন তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জুলাই আন্দোলনের বিজয় মিছিলে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলেও আজিজুল ইসলাম শহীদ হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছে। এরপর চলতি বছরের ৩০ জুন ঘটনার প্রায় ১০ মাস পরে পাটগ্রাম থানায় আজিজুল হত্যায় মামলা করেন পার্শ্ববর্তী উপজেলার সিংগিমারী এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে মোশারফ হোসেন।

অপরিচিত ব্যক্তির করা হত্যা মামলার খবর শুনে আট দিন পরে তা প্রত্যাহার করতে স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ ঊর্ধ্বতন বিভিন্ন মহলে আবেদন করেন শহীদ আজিজুলের বাবা আব্দুর রহিম।

সেই মামলায় শহীদ আজিজুলের লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহাজাহান আলী। এটা শুনে ক্ষিপ্ত হয় শহীদ পরিবারসহ পুরো এলাকাবাসী।

তাদের দাবি, কোরআনের হাফেজের লাশ এক বছর পরে কবর থেকে তুলতে দেওয়া হবে না। শহীদ আজিজুলের লাশ কবর থেকে না তুলতে আদালতসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেন শহীদ আজিজুলের বাবা আব্দুর রহিম।

শহীদ আজিজুলের দাদি রুপজান বেওয়া বলেন, ‘আমার নাতির রক্তে দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীন দেশে নিরপরাধ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করলে শহীদের আত্মা কষ্ট পাবে। আমার নাতি বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে। আমাদের কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। এখন নাতির লাশ তুললে আমি বাঁচব না।’

আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমার ছেলে শহীদ আজিজুল ইসলাম কোরআনের একজন হাফেজ। সে জুলাই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল এবং বিজয় মিছিলে গিয়ে কলেজের সাইনবোর্ড ভাঙতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায়। আমরা তাকে দাফন করেছি। রাষ্ট্র তাকে শহীদের মর্যাদা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে। তার মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনামাত্র।

‘কারও প্রতি কোনো ক্ষোভ বা অভিযোগ ছিল না এবং নেই। মৃত্যুর ১০ মাস পরে বর্তমান ওসি মিজানুর রহমান আমাদের মামলা করার চাপ দিয়েছিল। আমরা মামলা করিনি। পরে মোশারফ নামে অপরিচিত একজন বাদী হয়ে মামলা করেছে।

‘শহীদের বাবা ও একজন সাক্ষী হিসেবে সে মামলা প্রত্যাহার করতে আবেদন করেছি। মিথ্যা মামলায় মানুষকে হয়রানি করলে আমার হাফেজ ছেলের কবরে আজাব হবে, আমরা তা চাই না।’

আজিজুলের মা রেজিয়া বেগম বলেন, ‘আমার কলিজা আজিজুল ৩০ পারা কোরআন মুখস্থ করেছে। তার লাশ কবর থেকে তুলতে দেব না। কেউ জোর করে তুললে তিনটা কবর খুঁড়তে হবে। একটা ছেলের, অপর দুইটাতে আমরা স্বামী-স্ত্রী থাকব। এক বছর পর কোরআনের হাফেজের লাশ দেখলে আমরা মরে যাব। আমরা মামলা চাই না। আমার ছেলের লাশকে পুঁজি করে কেউ কেউ মামলা-বাণিজ্য করবে। আমরা বেঁচে থাকতে তা হতে দেব না। ওসি বারবার ডেকেছিল মামলা করতে। আমরা বলেছি, ছেলে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে। আমরা মামলা করব না। অপরিচিতদের দিয়ে মামলা করেছে পুলিশ।’

এ মামলার বাদী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘শহীদ আজিজুল আমার সহযোদ্ধা ছিল। তার পরিবার মামলা করতে সাহস করেনি এবং তাদের নির্দেশে আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। তবে মামলা-বাণিজ্যের প্রমাণ দিতে পারলে সব শাস্তি মেনে নেব। বাণিজ্যের অভিযোগটি ভিত্তিহীন।’

গত বছরের ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে গিয়ে পাটগ্রামের দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একজন শহীদ আজিজুল ইসলাম (১৯), অপরজন শহীদ নুরুজ্জামান (৪৫)। তাদের বাড়িও পাশাপাশি এলাকায়। নুরুজ্জামান আউলিয়ারহাট এলাকায় বিজয় মিছিলে গিয়ে হোঁচট খেয়ে সড়কে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। পরে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ৬ আগস্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ৮ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নুরুজ্জামানের মৃত্যুর ঘটনায়ও ১০ মাস পরে চলতি বছরের ৩০ জুন পাটগ্রাম থানায় ৪১ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহত ব্যক্তির পরিবারের অপরিচিত আলী হোসেন। যিনি মামলার ৮ দিনপর তা প্রত্যাহারের আবেদন করেন।

জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় পাটগ্রাম থানায় চলতি বছরের ৩০ জুন করা দুই মামলায় (২১ ও ২২ নম্বর) বিএনপিরও পাঁচ থেকে সাতজন নেতাকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দুটি প্রত্যাহার করতে বাদী ও দুই শহীদ পরিবার একই দিনে পৃথক পৃথক প্রত্যাহারেরও আবেদন করেছে। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল। মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপি নেতারাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মামলা দুটিতে ব্যাপক বাণিজ্য হয়েছে বলেও দাবি বাদী ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের।

নুরুজ্জামান হত্যা মামলায় ২৭ থেকে ৩১ নম্বর আসামির তালিকায় শ্রীরামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদল, কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবক দলের পদধারী নেতাদের নাম দেওয়া হয়েছে। রয়েছেন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সম্পাদক, কৃষক দলের সহসভাপতি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব ও যুগ্ম আহ্বায়ক।

নুরুজ্জামান হত্যা মামলার ২৭ নম্বর আসামি শ্রীরামপুর ইউনিয়ন কৃষক দলের সহসভাপতি হিটলার বলেন, ‘জুলাই আন্দোলন করেছি, এখন সেই আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামিও হলাম আমরা পাঁচজন। আমার ছেলে, শ্যালক, চাচাত ভাই, বন্ধুর ছেলে সবাই বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতা। দলীয় কোন্দল থেকে আমাদের আসামি করা হয়েছে। যা দলীয় উচ্চপর্যায়ে বলা হয়েছে।’

নুরুজ্জামানের স্ত্রী সুফিয়া বলেন, ‘আমার স্বামী মিছিলে গিয়ে আহত হয়ে পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আমরা মামলা করিনি। মামলার বাদীকে চিনি না। তাকে মামলা করতে বলিওনি। আমার স্বামীর লাশ না তুলতে আদালতে আমি আবেদন করেছি। শহীদ স্বামীর লাশ তুললে আমি বাঁচব না।’

শহীদ নুরুজ্জামান হত্যা মামলার বাদী আলী হোসেন বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনেরর সময় আমি ঢাকায় ছিলাম। পরে চলতি বছরের জুন মাসে ভাইদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের কারণে গ্রামে আসি। ৩০ জুন ভাইদের বিরুদ্ধে জমি নিয়ে মামলা দিতে পাটগ্রাম থানায় গেলে ফক্কর আলী নামে একজন ওসি স্যার তাঁর রুমে নিয়ে যান।

‘তখন ওসি স্যার মামলা নেবেন বলে জানান। এরপর ফক্কর আলী ও একজন পুলিশ একটা কাগজ লিখে এনে আমাকে স্বাক্ষর করতে বললে আমি তা পড়ে দেখতে চাই। কিন্তু ওসি স্যার তা পড়তে দেননি। ওসি স্যার বলেন, আপনার মামলা স্বাক্ষর করেন। কী লেখা আছে, তা স্বাক্ষরের পরে দেখতে পাবেন। আমি স্বাক্ষর করার পর স্যার (ওসি) কাগজটা রেখে দেন।

‘এর তিন দিন পর বিএনপির তিনজন লোক বাড়ি এসে বলেন, আমি কেন তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছি। তখন আমি বুঝতে পারি, ওসি স্যার ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা না নিয়ে নুরুজ্জামান হত্যা মামলার বাদী আমাকে বানিয়েছেন। এখন জীবনের ভয়ে আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। মামলার আট দিন পর তা প্রত্যাহার করতে বিভিন্ন মহলে আবেদনও করেছি। আমি শহীদ নুরুজ্জামানের কেউ না, তাকে চিনিও না। ঘটনাও জানি না, আসামিদেরও চিনি না।’ মিথ্যে মামলায় তাকে কৌশলে বাদী করা হয়েছে বলেও দাবি করেন আলী হোসেন।

জুলাই আন্দোলনের পাটগ্রাম উপজেলা সমন্বয়ক ও এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী কবির আহমেদ রাব্বী বলেন, ৫ আগস্ট পাটগ্রামে আন্দোলন হয়নি, বিজয় মিছিল হয়েছিল। সেখানে পৃথক দুর্ঘটনায় দুজন শহীদ হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবার কোনো মামলা করেনি। বাণিজ্য করতে অপরিচিত ব্যক্তিদের দিয়ে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এর তীব্র প্রতিবাদসহ নিন্দা জানিয়ে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন তিনি।

দুই হত্যা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দাবি করে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, কাউকে জোর করে মামলা নেওয়া হয়নি। বাদীরা সশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত দেওয়ায় মামলা নেওয়া হয়েছে। তাঁরা হয়তো কোনো ভয়ে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি
কারওয়ান বাজারের বিএফডিসি রেলগেট এলাকা থেকে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার মো. আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে কালা সিদ্দিক এবং মো. মিলন। ছবি: উত্তরা আর্মি ক্যাম্প
কারওয়ান বাজারের বিএফডিসি রেলগেট এলাকা থেকে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার মো. আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে কালা সিদ্দিক এবং মো. মিলন। ছবি: উত্তরা আর্মি ক্যাম্প

রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে বিদেশি পিস্তল, গুলিসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। এরা হলেন— মো. আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে কালা সিদ্দিক এবং মো. মিলন।

সেনাবাহিনী জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িত ছিলেন।

গতকাল মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) কারওয়ান বাজারের বিএফডিসি রেলগেট এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে এই দু’জনকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনীর ৬ স্বতন্ত্র এডি ব্রিগেডের অধীনস্থ উত্তরা আর্মি ক্যাম্প।

উত্তরা আর্মি ক্যাম্প থেকে আজ বুধবার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে কারওয়ান বাজারের বিএফডিসি রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক সেবনরত অবস্থায় শীর্ষ সন্ত্রাসী আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে কালা সিদ্দিক এবং মিলনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই স্থানে তল্লাশি চালিয়ে তাদের কাছ থেকে একটি স্প্যানিশ পিস্তল ও তিনটি গুলি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এই দু’জনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫ দিন ধরে পঞ্চগড়ে তাপমাত্রার পারদ ১০ ডিগ্রির ঘরে

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০১
পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামাড়া এলাকা থেকে আজ সকাল ৮টার দিকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামাড়া এলাকা থেকে আজ সকাল ৮টার দিকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

টানা পাঁচ দিন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকায় পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ, যা শীতের অনুভূতিকে আরও বাড়িয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা ছিল বুধবার ১০ দশমিক ৭, মঙ্গলবার ১০ দশমিক ৭, সোমবার ১০ দশমিক ৬, রোববার ১০ দশমিক ৫, শনিবার ১০ দশমিক ৫, শুক্রবার ১২, বৃহস্পতিবার ১২ দশমিক ৫ এবং গত বুধবার ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সকালে সূর্য ওঠার পর কিছুটা উষ্ণতা ফিরে আসে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকলেও দিনের বেলা তেমন শীত অনুভূত হয় না বললে চলে। তবে সন্ধ্যার পর নেমে আসে শীতের তীব্রতা, আর তা চলতে থাকে পরদিন সকালে সূর্য উঁকি না দেওয়া পর্যন্ত।

সদর উপজেলার ভ্যানচালক আবুল হোসেন বলেন, ‘ভাই, এই শীতটা একদম সওয়া যায় না। ভোরে ভ্যান লইয়া বের হইলেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। কুয়াশার মধ্যে রাস্তা দেখা যায় না ঠিকমতো। বেলা বাড়লে তহন একটু আরাম লাগে, কিন্তু সন্ধ্যার লগে লগে আবার জমাট শীত। কাম-কাজ না করলেও চলে না।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, আজ তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ, যা শীতের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সেতু যেন মৃত্যুফাঁদ

বান্দরবান প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৬
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে ১৩ বছর ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে সেতুটি। ছবি: আজকের পত্রিকা
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে ১৩ বছর ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে সেতুটি। ছবি: আজকের পত্রিকা

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে ১৩ বছর ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু। পাহাড়ি ছড়া বেয়ে নেমে আসা বন্যার পানির তোড়ে ২০১২ সালে গর্জনিয়া উত্তর বড়বিল-দক্ষিণ বাইশারী সংযোগ সেতুটি ভেঙে যায়। এর পর থেকে কাঠ-বাঁশের অস্থায়ী সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে দুই ইউনিয়নের মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি পুনর্নির্মাণ না হওয়ায় ভোগান্তির শেষ নেই।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যাতায়াতের সময় অস্থায়ী সাঁকোটি প্রায়ই কেঁপে ওঠে। বৃষ্টি বা পাহাড়ি স্রোত এলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এই সাঁকো দিয়েই প্রতিদিন দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা চলাচল করে। বাজার, চিকিৎসা, স্কুল—সবকিছুর জন্য এটি তাঁদের একমাত্র পথ। ২০২৩ সালে এই সাঁকো থেকে পড়ে এক স্কুলছাত্র আহত হয়েছিল।

বাইশারী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. জমির বলেন, ‘১৩ বছর ধরে একটি ব্রিজ কীভাবে পড়ে থাকে, তা আমাদের জানা ছিল না। মানুষের জীবন নিয়ে যেন কারও কোনো ভাবনাই নেই!’

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইউসুফ বলেন, ‘ব্রিজটির দুরবস্থা নিয়ে আমরা বারবার বলেছি, লিখেছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ব্রিজ না থাকায় আমাদের কৃষিপণ্য বাজারে নিতে সমস্যা হচ্ছে।’

জানা যায়, ১৯৯৬ সালে নির্মিত সেতুটি ধসে যাওয়ার পর একাধিকবার বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন-নিবেদন করলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ১৩ বছর ধরে তাঁরা চলাচল করছেন ঝুঁকি নিয়ে, কিন্তু এটি পুনর্নির্মাণে এলজিইডি বা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

অন্যদিকে গর্জনিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দা মো. সিরাজ বলেন, ‘গর্জনিয়া থেকে উৎপাদিত শাকসবজি ও তরিতরকারি বাইশারী বাজারে আনতে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়। মাঝেমধ্যে ভাঙা ব্রিজের ওপরের সাঁকো ভেঙে গেলে কয়েক দিনের জন্য আমাদের যাতায়াত বন্ধ থাকে।’

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে ১৩ বছর ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে সেতুটি। ছবি: আজকের পত্রিকা
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে ১৩ বছর ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে সেতুটি। ছবি: আজকের পত্রিকা

নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. নুরুল কবির বলেন, ‘দুই ইউনিয়নের হাজারো মানুষের যাতায়াতের কী দুর্ভোগ তা আমি জানি। শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। দ্রুত এই ব্রিজ পুনর্নির্মাণ করতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

গর্জনিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ফিরোজ আহমদ বলেন, ‘অনেকবার বিভিন্ন কর্মকর্তা এসে দেখে গেছেন। সাংবাদিকেরা লেখালেখি করেছেন, কিন্তু ফল হয়নি।’

বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলম বলেন, ‘ব্রিজটি পুনর্নির্মাণের জন্য আমি বান্দরবান জেলা পরিষদে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি।’

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রিজটি ঠিক কোন উপজেলার আওতাধীন তা নিশ্চিত নই। যে উপজেলার অধীনে পড়বে, তাদেরই কাজটি করতে হবে। যদি নাইক্ষ্যংছড়ির অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে আমরা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেতুটি দুই জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়ায় দায়িত্বের প্রশ্নে প্রশাসনের গাফিলতি চলছে। ফলে বছরের পর বছর অবহেলায় পড়ে আছে সেতুটি; আর মানুষকে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই উপজেলা প্রশাসন বসে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে এটি পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বরগুনায় মধ্যরাতে ফেসবুকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা

বরগুনা প্রতিনিধি
জেলা ছাত্রলীগের প্যাডে করা একটি বিজ্ঞপ্তি। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
জেলা ছাত্রলীগের প্যাডে করা একটি বিজ্ঞপ্তি। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বরগুনার বেতাগী উপজেলা শাখার নবগঠিত কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের প্যাডে করা একটি বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার পর সংগঠনটির বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা নিজেদের ফেসবুকে নবঘোষিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে পোস্ট দেন।

জেলা ছাত্রলীগের প্যাডে প্রকাশিত সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, বেতাগী উপজেলা ছাত্রলীগের চারটি পদে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী এক বছরের জন্য অনুমোদিত এই কমিটিতে স্বাক্ষর করেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা ও সাধারণ সম্পাদক তৌশিকুর রহমান ইমরান।

নবঘোষিত কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন সোহেল আমিন হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক শিফাত সিকদার এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শাওন মৃধা। সহসভাপতি পদে রয়েছেন ১৭ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একজন এবং সহসাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন ৮ জন।

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হঠাৎ করে গভীর রাতে নতুন কমিটি ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের নেতারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত