Ajker Patrika

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপরে, রেড অ্যালার্ট জারি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ৫৫
তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপরে, রেড অ্যালার্ট জারি

কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নীলফামারী, লালমনিরহাটসহ তিস্তার তীরবর্তী জেলা–উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আজ রোববার সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ১৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রাত ৮টায় সেখানে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

ওই পয়েন্টে নদীর পানির বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। দ্রুত পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা ব্যারাজের উজানে জিরো পয়েন্টে ডান তীর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁধ রক্ষায় বাঁশের পাইলিং ও বালুর বস্তা ফেলা অব্যাহত রয়েছে। সন্ধ্যা ৭টায় ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড মাইকিং করে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলে জরুরি অবস্থা বা রেড অ্যালার্ট জারি করেছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ। আজ বেলা ৩টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচে রেকর্ড করা হয়েছে। রাত ৮টায় সেখানে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে।

আগামী ১২ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ উত্তরের বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানি আরও বাড়তে পারে। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামে বন্যার ঝুঁকি রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। অব্যাহত পানি বাড়ায় আজ সন্ধ্যা ৬টায় ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা নদীর জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি কালীগঞ্জ নামের স্থানে তিস্তা ডান তীর প্রধান বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেটি মেরামতে কাজ চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।

লালমনিরহাট

তিস্তার বাম তীরের জেলা লালমনিরহাটের দুটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলসহ মুন্সিপাড়া, ক্লিনিকপাড়া, কাদেরের চর, মহিমপাড়া, চরপাড়া, কাতিপাড়া ও সৈয়দপাড়া এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

অপর দিকে হাতীবান্ধা উপজেলার ৬ ইউনিয়নের অন্তত ১০টি চর ও নিম্নাঞ্চল এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে পুকুর, আমন ধানখেতসহ আগাম শীতকালীন নানা জাতের সবজির খেত। নদীর চরাঞ্চলের মানুষেরা নৌকায় চলাচল করছে।

সিন্দুর্না এলাকার রইচ উদ্দিন বলেন, ‘দুপুরের পর থেকে পানি বাড়ছে নদীতে। ইতিমধ্যে নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু বাড়ি পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ক্রমে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। বন্যার আশঙ্কায় রয়েছি।’

গোবর্ধন গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, ‘নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। অনেকের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, ডুবে গেছে আমন ধানের খেত। সময় যত যাচ্ছে, ততই বাড়ছে পানি। বন্যার আতঙ্কে রয়েছি।’

জানতে চাইলে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম মিঞা বলেন, ‘আমরা তিস্তা নদীর তীরে অবস্থান করছি। নদীর পানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকেছে। এতে প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি রোধে কাজ করছে।’

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তার পানি বাড়ছে। আগামী ১২ ঘণ্টা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এতে নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। পরিস্থিতি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’ এ সময় নদীপাড়ের বাসিন্দাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে আহ্বান জানান তিনি।

নীলফামারী

তিস্তার নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশাচাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম ও চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে বলে জানান জনপ্রতিনিধিরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত দুই দিনের ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। ফলে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে মৎস্য খামার, আমন ধানসহ নানান জাতের সবজির খেত। ডুবে গেছে চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট। নৌকায় যোগাযোগ করছে চরাঞ্চলের মানুষ।

ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খাঁন জানান, আজ দুপুরের পর থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। পানি বাড়ার ফলে ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেরশ্বর ও পূর্ব ছাতনাই গ্রামের বোল্ডারের চর, খোকার চর, খাড়াপাড়া, ফ্লাটপাড়াসহ তিস্তাপাড়ের বিভিন্ন চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে।

টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. রবিউল ইসলাম বলেন, দুপুরের পর থেকে তিস্তা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বাড়তে শুরু করে। পানি বাড়ার ফলে এলাকার রোপা আমন খেত তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন গ্রামের বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণকেন্দ্র জানায়, আজ সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি ৫১ দশমিক ৪৩ মিটার, সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৪৮ মিটার, দুপুর ১২টায় ৫২ দশমিক ০০ মিটার, বেলা ৩টায় ৫২ দশমিক ১৪ মিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় ৫২ দশমিক ২৮ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

(তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নীলফামারী, লালমনিরহাট, পাটগ্রাম ও ডিমলা প্রতিনিধি)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পানিতে ডুবে প্রাণ গেল মামা-ভাগনের

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পুকুরে ডুবে শাহবাব মন্ডল (আড়াই বছর) ও আবু তোহা মন্ডল (৩) নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের যাদুরচর নতুন গ্রাম এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

শাহবাব মন্ডল উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর নতুন গ্রামের শাহজাহান মন্ডলের ছেলে এবং আবু তোহা মন্ডল একই গ্রা‌মের আবু তালেবের ছেলে। এই দুই শিশু সম্পর্কে মামা-ভাগনে।

পরিবারের বরাত দিয়ে যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান, বুধবার সকালে ওই দুই শিশু তালেব মন্ডলের বাড়িতে খেলা করছিল। এ সময় সবার অজান্তে তারা বাড়ির পা‌শে পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। স্বজনেরা পুকুর থে‌কে দুই শিশু‌কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নি‌য়ে যান। দা‌য়িত্বরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক একই এলাকার বাসিন্দা ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনের বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস‌্য প্রার্থী আজিজুর রহমান ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তি‌নি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

রৌমারী থানার উপপ‌রিদর্শক শাহ‌নেওয়াজ হো‌সেন ব‌লেন, খবর পে‌য়ে ঘটনাস্থ‌লে পু‌লিশ পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে। সহকারী ক‌মিশনার (ভূ‌মি) ঘটনাস্থ‌লে গি‌য়ে‌ছেন। দুই শিশুর মৃত‌্যুর ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি ব‌্যবস্থা নেওয়া হ‌বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৩
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত

‎রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‎গ্রেপ্তারের বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

‎মামুন বলেন, গৃহকর্মী আয়েশাকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের ১৪ তলা একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গতকাল তাঁদের মরদেহ নাটোরে দাফন করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাসা থেকে মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভবনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর এক নারী স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চার দিন আগে আয়েশা পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেওয়া তরুণী (২০) এই জোড়া খুনে জড়িত বলে সন্দেহ স্বজনদের। ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী পলাতক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি 
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জীবন আছে যার, তার মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুর পর মানুষের শেষ ঠিকানা কবর। মৃতদেহ গোসল করিয়ে কাফন পরানো হয়, জানাজা শেষে তাকে শায়িত করা হয় চিরনিদ্রার ঘরে। এই কবর খোঁড়ার দায়িত্বটি গ্রামের কিছু মানুষ বহু বছর ধরে স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে পালন করে আসছেন, যাঁরা সবার কাছে ‘গোরখোদক’ নামে পরিচিত। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাঁরা করে থাকেন এই কাজ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোরখোদকেরা কোনো পারিশ্রমিক নেন না। গ্রামের যে কেউ মারা যাক, নিজেদের ব্যস্ততা ফেলে তাঁরা ছুটে আসেন কবর খুঁড়তে। তাঁদের এই মানবিক কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গ্রামের লোকেরা দোয়া করেন—আল্লাহ যেন তাদের সুস্থ ও ভালো রাখেন।

দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা গোরখোদক মজিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৫৫ বছর ধরে কবর খুঁড়ছি। যত দিন সুস্থ থাকব, এই কাজ চালিয়ে যাব। আমাদের গ্রাম ছাড়াও অন্য গ্রাম থেকে কেউ ডাকলে সেখানেও যাই। ছোটবেলায় ওস্তাদের কাছে ডালি ধরেই শিখেছি। গরিব মানুষ, মাঠে কাজ করি; কিন্তু কেউ মারা গেলে দ্বিধা করি না—এই কাজ আমার নেশায় পরিণত হয়েছে।’

মজিরুল আরও জানান, এখন তিনি তরুণদেরও এই কাজ শেখাচ্ছেন।

গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোরখোদক শাকের আলী বলেন, ‘আমরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করি। কখনো কোনো টাকা নিই না। যেখানেই থাকি, গ্রামের কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে দ্রুত কবর খুঁড়তে চলে আসি।’

গোরখোদক ফুয়াদ হোসেন বলেন, ‘অন্য গ্রাম থেকে ডাক এলেও আমরা যাই। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করি এই কাজ। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান আলী বলেন, ‘কবর খোঁড়া বড় দায়িত্বের কাজ। গ্রামের এসব মানুষ খবর পেলেই দৌড়ে আসে। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি।’

মাওলানা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খোঁড়া নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ। হাদিসে এসেছে—যাঁরা কবর খোঁড়েন, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানার ফটকের সামনে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে সটকে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিল্প ও থানা-পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসেছেন। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের সাইটালিয়া গ্রামে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানায় এই ঘটনা ঘটে।

কারখানার নারী শ্রমিক মিনারা আক্তার বলেন, ‘অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করে নাই। এক মাসের বেতন না পেলে আমাদের চলা খুবই কঠিন হয়। আমাদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়। আর সেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষ দুই মাসের বেতনভাতা বকেয়া রেখেছে। আজ সকালে শ্রমিকেরা জড়ো হলে তারা পালিয়ে যায়।’

মিন্টু নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘এই কারখানায় আমরা তিন বছর ধরে চাকরি করছি। আমাদের বেতনের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না। তবু পেটের দায়ে চাকরি করি। দুই মাসের বেতন বকেয়া। আমাদের তো পেট আছে, সন্তান-সংসার আছে। এক মাস দোকান বাকি পরিশোধ করতে না পারলে পরের মাসে আর দোকানি বাকি দেয় না। আমরা কী অবস্থায় আছি, একবার ভাবুন। বেতন পরিশোধ না করে তারা পালিয়ে গেছে।’

আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেদী হাসান বলেন, ‘এত দিন ধরে ঋণ করে বলে-কয়ে দোকান থেকে বাকি নিয়ে চলছি। আর পারছি না। এখন দোকান বাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন নিয়ে কমপক্ষে ১০টি তারিখ দিছে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করেনি। শেষে আজ বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তারা কারখানা ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে।’

কারখানার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. বুলবুল হাসান বলেন, ‘ব্যাংকের সমস্যার কারণে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আশা করি, আজকের মধ্যে নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারব।’ বিনা নোটিশে কারখানার ফটক কেন তালাবদ্ধ? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি বলতে পারব না।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত