Ajker Patrika

অপকর্ম থেকে ফেরাতে না পেরে ছেলেকে ত্যাজ্য করলেন ইউপি সদস্য

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৪, ১৫: ৫৯
অপকর্ম থেকে ফেরাতে না পেরে ছেলেকে ত্যাজ্য করলেন ইউপি সদস্য

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের লরেন্স ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম তাঁর বড় ছেলে মো. সাগরকে (২২) ত্যাজ্য করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে লক্ষ্মীপুর জজকোর্টে নোটারি পাবলিক করে তিনি ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করেন।

এ সময় ঘোষিত হলফনামায় সিরাজুল ইসলাম উল্লেখ করেন, মো. সাগর তাঁর ঔরসজাত ও স্ত্রী শারমিন আক্তারের গর্ভজাত সন্তান। সে বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে সমাজের অসৎ চরিত্রের লোকজনের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে নিজের চরিত্রের অধঃপতন ঘটিয়েছে। চাল-চলন আচার-ব্যবহার, কথাবার্তা ও পরিবারের লোকজনকে হত্যার হুমকিসহ নানা কর্মকাণ্ডের কারণে সিরাজ দম্পতি তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট। ইতিমধ্যে সাগর অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ও দুই সন্তানের মাসহ চারটি বিয়ে করেছে। কিশোর গ্যাং দলের সদস্যদের সঙ্গে আড্ডায় লিপ্ত থাকে। তাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে পরিবারের।

হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, সাগরের এসব কাজের কারণে সিরাজকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে। এসব ছাড়াও হত্যার হুমকির কারণে লক্ষ্মীপুর কোর্টে সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে সাগরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত তাঁকে জেলে পাঠায়। পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিলে ছেলেকে তিনি জমিনে মুক্ত করেন। কিন্তু জেল থেকে বের হয়ে আগের মতোই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সে।

সিরাজুল ইসলাম হলফনামায় বলেন, ছেলের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে ত্যাজ্য ঘোষণা করেন তিনি। এ ঘোষণার পর সাগরের কর্মকাণ্ডের জন্য সিরাজ বা তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য দায়ী থাকবে না। তা ছাড়া তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের আর কোনো সম্পর্ক থাকল না।

মো. সিরাজুল ইসলাম ও মো. সাগর। ছবি: সংগৃহীতএ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পড়ালেখা করানো, ব্যবসাসহ সব রকম চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে সবকিছু নষ্ট করে বিপথগামী হয়েছে। পরিবারের কেউ তার কাছে নিরাপদ নয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক ও দুই সন্তানের মা বয়স্ক নারীসহ চারটি বিয়ে করেছে সে। সমাজে আমার সম্মান ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে তাকে ত্যাজ্য করেছি। আজ থেকে সে আমার সন্তান নয়।’

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আইনে এ ধরনের কোনো বিধান নেই। তবে যেহেতু সিরাজুল ইসলাম ছেলের অপকর্মের কারণে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন, তাই অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে তিনি এটি করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মৌসুমি রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে ব্রাহ্মণপাড়ায়, ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জটিলতায় রোগীর ভিড়

মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) 
চিকিৎসা নেওয়ার অপেক্ষায় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে রোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চিকিৎসা নেওয়ার অপেক্ষায় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে রোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মৌসুমি রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। উপজেলাজুড়ে শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, পেটব্যথা, শ্বাসকষ্টসহ নানা উপসর্গে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে রোগীর চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ।

এই সময়ে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বিদ্যমান থাকায় চিকিৎসা বিভ্রান্তি ও জটিলতা তৈরি হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকের উপসর্গ এক রকম হওয়ায় সঠিক ডায়াগনসিস না হলে রোগ নির্ণয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই রোগী ও স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। অধিকাংশ রোগী জ্বর, সর্দি-কাশি, শরীর ব্যথা, গিঁটে ব্যথা, পেটব্যথা ও ডায়রিয়ায় ভুগছে। কেউ কেউ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলেও কারও কারও সেরে উঠতে সময় লাগছে বেশি। চিকিৎসকদের মতে, এসব রোগীর ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকায় সুস্থ হতে দেরি হচ্ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, এই সময়ে মৌসুমি জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রভাব দেখা দিচ্ছে। এ জন্য রোগীদের সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। এতে অল্প সময়ে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা কামাল হোসেন বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসছে। ফার্মেসি থেকে ওষুধ খেয়েও কাজ হয়নি, তাই হাসপাতালে এসেছি।’

এক রোগীর মা শিরিনা বেগম জানান, তাঁর সাড়ে চার বছরের মেয়ে খাদিজা এক সপ্তাহ ধরে জ্বর ও সর্দি-কাশিতে ভুগছে। স্থানীয় পল্লিচিকিৎসকের ওষুধে কাজ না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।

লিপি আক্তার নামের এক রোগী বলেন, ‘দুই দিন ধরে জ্বর, মাথাব্যথা আর ডায়রিয়ায় ভুগছি। আজ খুব দুর্বল লাগছে। ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়ে বলেছেন, নিয়ম মেনে খেলেই সুস্থ হয়ে যাব।’

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শেখ হাসিবুর রেজা বলেন, ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে মৌসুমি রোগের প্রকোপ স্বাভাবিকভাবে বাড়ে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। জ্বর, কাশি, সর্দি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া এখন বেশি দেখা যাচ্ছে। যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল, তারা দ্রুত আক্রান্ত হচ্ছে।

শেখ হাসিবুর রেজা আরও বলেন, ‘এই সময়ে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রভাবও রয়েছে। তাই অসুস্থ হলে দেরি না করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অথবা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আমরা হাসপাতালে আসা রোগীদের পরামর্শ দিচ্ছি এবং বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নালিতাবাড়ীতে কম মুনাফায় ওষুধ বিক্রি করায় ফার্মেসিকে জরিমানা ও দোকান বন্ধ

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি 
পৌর শহরের নালিতাবাড়ী বাজার এলাকায় সততা ড্রাগ হাউস। ছবি: আজকের পত্রিকা
পৌর শহরের নালিতাবাড়ী বাজার এলাকায় সততা ড্রাগ হাউস। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে কম মুনাফায় ওষুধ বিক্রির অভিযোগে ‘সততা ড্রাগ হাউস’ নামে একটি ফার্মেসিকে ১ হাজার টাকা জরিমানা ও ৬ ঘণ্টার জন্য দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি। সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে পৌর শহরের নালিতাবাড়ী বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় রাতে উপজেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি আবু সিনা তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দোকান বন্ধের ছবি দিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লেখেন, ‘সমিতির আইন লঙ্ঘনের দায়ে সততা ড্রাগ হাউসকে ১ হাজার টাকা জরিমানা ও ৬ ঘণ্টা দোকান বন্ধ করে দিল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি।’ পোস্টটি ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ওই দিন বিকেলে একজন ক্রেতার কাছে কম মুনাফায় পাইকারি দরে ওষুধ বিক্রি করেন দোকানের মালিক মিজানুর রহমান। পরে বিষয়টি সমিতির নেতাদের কানে গেলে তাঁরা দোকানে এসে জরিমানা করেন ও ৬ ঘণ্টা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এ সময় কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন না।

সততা ড্রাগ হাউসের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, ‘একজন ব্যবসায়ীর কাছে একটু কম দামে ওষুধ বিক্রি করেছিলাম। এ জন্য সমিতি আমার দোকান বন্ধ ও জরিমানা করেছে। অথচ আমিও ওই সমিতির সদস্য।’

এ বিষয়ে উপজেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি আবু সিনা বলেন, ‘এটা আমাদের সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে জেলা কমিটির সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’

শেরপুরের ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ওষুধ কম বা বেশি দামে বিক্রি করা ব্যবসায়ীর নিজস্ব বিষয়। এ জন্য কোনো সমিতি দোকান বন্ধ বা জরিমানা করতে পারে না। সরকার কোনো সমিতিকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়নি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি বলেন, ‘বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুমকীতে কোটি টাকার ফেরি অযত্নে নষ্ট, যন্ত্রাংশ হচ্ছে চুরি

দুমকী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৪৯
দুমকীর বাহেরচর এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে প্রায় কোটি টাকার ফেরি। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুমকীর বাহেরচর এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে প্রায় কোটি টাকার ফেরি। ছবি: আজকের পত্রিকা

পটুয়াখালীর দুমকীতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে থাকা ফেরি বিভাগের প্রায় কোটি টাকার সম্পদ অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। পায়রা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে নদীর তীরে ফেলে রাখা দুটি ফেরি বর্তমানে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। নিরাপত্তার অভাবে রাতের আঁধারে এর মূল্যবান যন্ত্রাংশও চুরি হয়ে যাচ্ছে।

রোদ-বৃষ্টি, পানি ও কাদার আস্তরণে এখন অচল দুটি ফেরি। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক-কর্মচারীদের পদচারণ না থাকায় ও ফেরিটি চলাচল না করায় পুরো এলাকা আগাছায় ছেয়ে গেছে। এই অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা কোটি টাকার নৌযান দুটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সূত্র মতে, ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর পায়রা সেতু চালু হওয়ার পর ফেরি দুটি দুমকীর বাহেরচর এলাকায় পায়রা নদীর তীরে রাখা হয়। বর্তমানে এগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে এবং বেশির ভাগ মালপত্র চুরি হয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় ফেরি দুটির বেশির ভাগ মূল্যবান যন্ত্রপাতি উধাও। ভেতরের অংশে আবর্জনার স্তূপ জমেছে। পানি ও মাটির আস্তরণে ঢেকে গেছে ফেরি দুটির অধিকাংশ অংশ। সরকারি কোটি টাকার সম্পত্তি রক্ষায় কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

ঝাটারা এলাকার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সরকারি সম্পদ এভাবে নষ্ট হচ্ছে। এগুলো নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা বা অন্য কোথাও কাজে লাগানো উচিত ছিল।

পার্শ্ববর্তী জলিশা এলাকার মো. শাহিন মনে করেন, ফেরিগুলো নিলামে বিক্রি করলেও সরকারি কোষাগারে কিছু টাকা আসত। তা ছাড়া সংস্কার করে জনগণের সেবায় কাজে লাগালে আরও বেশি উপকার হতো। দেশের সম্পদ রক্ষা হতো, মানুষ সেবা পেত।

ফেরিচালকের সহকারী মো. কায়েস জানান, দীর্ঘদিন ধরে ফেরি দুটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ না হওয়ায় নিলামে উঠানো হয়নি। তবে কবে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে, তা তিনি বলতে পারেননি।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জামিল আক্তার বলেন, ‘বাহেরচর এলাকায় পায়রা নদীর তীরে থাকা ফেরি সম্পর্কে আমার জানা আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুর্ঘটনা ছাড়া নিষ্ক্রিয় থাকে প্রশাসন: যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এলপিজিসহ জ্বালানি

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, চাঁদপুর
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৩০
চাঁদপুর সদরের চান্দ্রা চৌরাস্তা মোড়ে রোদে রেখেই বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। ছবি: আজকের পত্রিকা।
চাঁদপুর সদরের চান্দ্রা চৌরাস্তা মোড়ে রোদে রেখেই বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। ছবি: আজকের পত্রিকা।

চাঁদপুর জেলা সদরসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার। ক্রেতার সহজলভ্যতার জন্য এই বিক্রির অনুমোদন থাকলেও মানা হচ্ছে না বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কোনো নিয়মনীতি। অধিকাংশ দোকানে একই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে শহরে বঙ্গবন্ধু সড়কে একই দোকানে এলপিজি ও জ্বালানি তেল বিক্রির অনিয়মের কারণে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে চারজন দগ্ধ হয়ে মারা যায়। ওই ঘটনার পর প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে বসলেও বর্তমানে তাদের ভূমিকা নীরব। তবে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে সদর উপজেলা প্রশাসন।

চাঁদপুর সদরের ফরক্কাবাদ বাজারে একই দোকানে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল। ছবি: আজকের পত্রিকা।
চাঁদপুর সদরের ফরক্কাবাদ বাজারে একই দোকানে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল। ছবি: আজকের পত্রিকা।

সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুর জেলার আঞ্চলিক, উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক এবং বাজারগুলোতে মুদি, ফোন, চায়ের দোকান, সার-কীটনাশক এমনকি টেইলারিং দোকানেও গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। গুরুতর বিষয় হলো, এসব দোকানে পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেলও। ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা সিলিন্ডার বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন বা বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নিয়মকানুন সম্পর্কে অবগত নন। তাঁরা রাস্তার পাশে বা দোকানের সামনে প্রচণ্ড তাপমাত্রায় সিলিন্ডার সাজিয়ে রাখেন, যাতে ক্রেতাদের চোখে পড়ে। একটি দোকানে কী পরিমাণ সিলিন্ডার রাখা যাবে—এসব নিয়মের কিছুই জানেন না ব্যবসায়ীরা।

এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির বিষয়ে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নিয়ম হচ্ছে, একটি দোকানে ১২ লিটারের সর্বোচ্চ ৮টি এবং বড় আকারের হলে ৩টি সিলিন্ডার লাইসেন্স ছাড়া বিক্রি করা যায়। তবে সিলিন্ডার অবশ্যই রোদে না রেখে ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে। অতিরিক্ত মজুত করলে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক।

সদর উপজেলার চান্দ্রা চৌরাস্তার স্যানিটারি মালপত্র বিক্রি করেন ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম। তিনি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারও বিক্রি করেন। তবে বিক্রির জন্য অনুমোদনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি বলেন, ‘এলাকার অনেক দোকানে বিক্রি হয়। আমিও তাদের মতো বিক্রি করি। কী পরিমাণ সিলিন্ডার মজুত রাখা যাবে—এমন প্রশ্নের জবাবে জানান, এই বিষয়ে তিনি অবগত নন।

চাঁদপুর শহরের রঘুনাথপুর ওয়াপদা এলাকায় একই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল। ছবি: আজকের পত্রিকা
চাঁদপুর শহরের রঘুনাথপুর ওয়াপদা এলাকায় একই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল। ছবি: আজকের পত্রিকা

সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ বাজারের মোটর গ্যারেজে বিক্রি হয় গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল। দোকানের মালিক সুমন দাস বলেন, কোনো নিয়ম জানা নেই বিক্রির জন্য। দুর্ঘটনা হলে কী করণীয়, সেটাও বলতে পারেননি এই ব্যবসায়ী।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া বাজার, ভাটিয়ালপুর, নয়ারহাট, রামপুর, গোয়ালভাওর এলাকার দোকানগুলোতে দেখা গেছে প্রায় দোকানে ২০ থেকে ২৫টি করে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার মজুত। অনেক দোকানি রোদের মধ্যে রেখেছেন সিলিন্ডার।

রামপুর বাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, সিলিন্ডার দোকানের সামনে না রাখলে ক্রেতারা জানবে কীভাবে। এ জন্য রোদে রাখা হায়।

সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট মেয়াদের বিষয়ে জানতে চাইলে শহরের বাসিন্দা আল-ইমরান শোভন, মাইনুল ইসলাম, শাহজাহান বলেন, ‘এ বিষয়টি জানতাম না। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহারে আগামীতে সতর্ক থাকব।’

ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই গ্যাস সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট মেয়াদ সম্পর্কে অজ্ঞ। শহরের নিউ ট্রাক রোডের ব্যবসায়ী শামীম, সেলিম খান ও সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করি। কিন্তু এটির মেয়াদ থাকে জানা ছিল না। এখন থেকে মাল ক্রয়ের সময় মেয়াদ দেখে নিতে হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডারের ওপরের অংশে একটি কোড থাকে (যেমন A-২০২৫)। ‘A’ মানে জানুয়ারি-মার্চ, ‘B’ মানে এপ্রিল-জুন, ‘C’ মানে জুলাই-সেপ্টেম্বর এবং ‘D’ মানে অক্টোবর-ডিসেম্বর। এই অক্ষর এবং তার পরের সালটি সিলিন্ডারের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নির্দেশ করে। সিলিন্ডারের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ হিসেবে লেখা থাকবে ‘এ’-২০২৫, অর্থাৎ এটির মেয়াদ শেষ ২০২৫ সালের মার্চ মাসে।

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম এন জামিউল হিকমা বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানির বিক্রির বিষয়টি অবগত হলাম। শিগগির অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

বিস্ফোরক পরিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ভোক্তার সহজলভ্যতার কারণে স্থানীয় দোকানগুলোয় বিক্রির জন্য অনুমোদন লাগে না। তবে যেকোনো দোকানে ১২ লিটারের ৮-১০টির বেশি সিলিন্ডার রাখতে পারবে না। ১২ লিটারের বেশি ওজনের হলে ৩ থেকে ৪টি রেখে বিক্রি করতে পারবে। অতিরিক্ত মজুত করলে অবশ্যই বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স লাগবে। রাস্তার ওপর রেখে বিক্রি করতে পারবে না। ঠান্ডা জায়গায় সিলিন্ডার রাখতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত