Ajker Patrika

নড়াইলে ভারী বর্ষণে মৎস্য-কৃষিতে ক্ষতি ৮০ কোটি টাকা

নড়াইল প্রতিনিধি 
নড়াইলের ভোয়াখালী-বাহিরডাঙ্গা এলাকার ফসলি খেত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নড়াইলের ভোয়াখালী-বাহিরডাঙ্গা এলাকার ফসলি খেত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নড়াইলে চলতি বছর কয়েক দফার বৃষ্টিতে তলিয়েছে তিন হাজারের বেশি ঘের ও পুকুর। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার মৎস্যখামারি ও কৃষকেরা। ভারী বৃষ্টিতে খেতের সবজিসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ঘের তলিয়ে ভেসে গেছে মাছ।

চলতি মৌসুমে শুধু বৃষ্টিতে মৎস্য ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। আর কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল জেলায় প্রায় ৮ লাখ মানুষের বসবাস। বিল ও ঘেরবেষ্টিত এই জনপদের মানুষের প্রধান জীবিকার উৎস কৃষি ও মৎস্য। এ জনপদের ৮২ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। ধান, পাট, গমসহ বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি এই জেলার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ মৎস্য চাষের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।

কৃষি বিভাগ ও মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় মোট ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ঘের রয়েছে ৫ হাজার ৩০০। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে ৩ হাজার ঘের ও পুকুর। ৬৬ শতাংশ ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এ জেলায় ঘের ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৫ হাজার। পুকুরের সংখ্যা ৮ হাজার। এ পেশায় সম্পৃক্ত আছেন অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। তাঁদের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার জন।

এদিকে আমন ধান, ঘেরের পাড়ে শিম, কুমড়া, শসা, পেঁপেসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষি খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। জেলার প্রায় ৮ লাখ মানুষের জন্য মাছের চাহিদা রয়েছে ১৬ হাজার টন। প্রতিবছর উৎপাদিত হয় অন্তত ১৮ হাজার টন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দুই হাজার টন মাছ এবং প্রতিবছর চাহিদা মিটিয়ে অন্তত এক লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে।

জেলা শহরের ঘের ব্যবসায়ী মো. মুরাদ হোসেন বলেন, ‘নড়াইল সদর উপজেলার বিভিন্ন বিলে আমার তিনটি ঘের আছে। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে এ বছরও বিভিন্ন প্রকার মাছ চাষ শুরু করেছিলাম। টানা বৃষ্টিতে তিনটি ঘেরই তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে ঘেরের পাড়ের বিভিন্ন সবজি।’

তিনি বলেন, ‘ছয় লাখ টাকা খরচ করেছিলাম। ভেবেছিলাম অন্তত ১০ লাখ টাকা লাভ হবে। সেই স্বপ্ন অতিবর্ষণে নিমেষে শেষ হয়ে গেছে।’

কালিয়া উপজেলার বড়নাল গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী মো. নাসির উদ্দিন জানান, ছোট কালিয়ায় তাঁর ১২ একরের একটি টানা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। এতে অন্তত ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আশেক পারভেজ বলেন, ‘ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হয়েছে। তাঁদের মাঝে সরকারিভাবে বিনা মূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করা হবে। আশা করছি সার ও বীজ বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হলে কিছুটা হলেও তাঁরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।’

নড়াইল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম বদরুজ্জামান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ঘের ব্যবসায়ীর তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে মৎস্য ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে আগামীতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, সে জন্য মাঠপর্যায়ে তাঁদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত