Ajker Patrika

গোবর থেকে প্রতি মাসে আয় লাখ টাকা 

রাশিদুজ্জামান রাশেদ, মিরপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২২, ১৬: ২৮
গোবর থেকে প্রতি মাসে আয় লাখ টাকা 

ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুরের সফর মল্লিক। জৈব এই সার যেমন মাটিকে উর্বর করে, তেমনি নেই কোনো ক্ষতিকর দিক। দামেও সস্তা, তাই কৃষকেরও পছন্দ এই সার। কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার আমলায় ইউনিয়নের চর পাড়া, কুশাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা সফর মল্লিক। গরুর গোবর থেকে সার বানিয়ে প্রতি মাসে প্রায় লাখ টাকা আয় করেন তিনি। 

কেঁচো দিয়ে গরুর গোবর থেকে উৎকৃষ্ট মানের ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করেন তিনি। তাঁর খামার থেকে প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ১২ হাজার কেজি ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদিত হয়। খামারে তাঁর সঙ্গে নিয়মিত কাজ করেন দুজন শ্রমিক। এক সময়কার বেকার সফর মল্লিক খামারের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাঁর দেখাদেখি অনেকেই গড়ে তুলেছেন ভার্মি কম্পোস্টের খামার। 

সফর মল্লিক জানালেন, ২০১৬ সালে ১৬টি শেড করে চার লাখ টাকার কেঁচো দিয়ে প্রথম শুরু করেন ভার্মি কম্পোস্টের খামার। শুরুর দিকে এ সারের প্রচলন না থাকার কারণে বাজারে চাহিদা ছিল না। সাধারণ কৃষকদের বিনা মূল্যে সার দিয়েও এর প্রচলন করতে হয়েছে। তখন কেঁচো দিয়ে সার তৈরির কারণে লোকজন তাঁকে পাগল বলত, বিভিন্ন কটূক্তিও করত অনেকে। 

সফর মল্লিক বলেন, ‘এক সময় সার দিতে গেলে লোকজন বকা দিত। এখন সার চাহিদা মতো দিতে না পারায় কথা শুনতে হয়।’ 

ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) সম্পর্কে সফর মল্লিক বলেন, ‘এটি একটি উৎকৃষ্ট মানের সার। যার মধ্যে ফসলের জন্য উপকারী ২২টি উপাদান রয়েছে। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে চাষাবাদের জন্য উপযোগী করার ক্ষেত্রে এ সার অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এই সার সহজেই মাটিতে মিশে যায়। শাক-সবজিসহ যে কোনো ফসলের জমিতেই এটি ব্যবহার করা যায়। ফলে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় কম।’ 

খামার সম্পর্কে সফর মল্লিক বলেন, ‘বর্তমানে প্রতিটি শেডে চার লাখ করে কেঁচো রয়েছে। যা থেকে দ্রুত সময়ে আমি সার উৎপাদন করতে পারি। খামারের কাঁচামাল হিসেবে শুধু গোবর ব্যবহার করি। কেঁচো গুলো গোবর খেয়ে মল ত্যাগ করে। সেই মলই মূলত ভার্মি কম্পোস্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দুই রঙের ভার্মি কম্পোস্ট বাজারে পাওয়া যায়। একটা বাদামি আর আরেকটা কালো। চাহিদা মতো আমরা দুই রঙের সারই উৎপাদন করি।’ 

সফর মল্লিক আরও বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে আমি চেষ্টা করি, সবচেয়ে ভালো মানের ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের। সার যত ঝরঝরে ও গন্ধমুক্ত হবে, তত মান ভালো হবে। এ খামারে উৎপাদিত সারের চাহিদা অনেক বেশি। কারণ, আমরা সবচেয়ে ভালোমানের সার উৎপাদন করি। যা হাতের মুঠোয় চাপ দিলেই ঝরঝরে হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ সার বিক্রির পাশাপাশি বিদেশেও এ সার রপ্তানি করা হয়েছে। এরই মধ্যে কানাডায় এ সার রপ্তানি করে বেশ সুনাম অর্জন করেছি।’ 

এ সারের কাঁচামাল হিসেবে গোবর ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন খামার থেকে এবং কৃষকদের বাড়ি থেকে কাঁচা গোবর কিনে আনতে হয়। বর্তমানে মানুষ গরু পোষা কমিয়ে দেওয়ায় গোবরের স্বল্পতা রয়েছে। এ কারণে দাম বেশি দিয়ে কিনতে হয়। ফলে সারে কেজি প্রতি সীমিত লাভ হয়। 

সার প্রস্তুত সম্পর্কে সফর মল্লিক বলেন, ‘গরুর কাঁচা গোবর নিয়ে এসে একেকটি শেডে দিই। এরপর শেডগুলোতে কেঁচো দেওয়া হয়। ২০-২৫ দিনের মধ্যে কেঁচো গুলো পুরো শেডের গোবর খেয়ে ফেলে। গরমে যাতে কেঁচোর যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য বাতাস ও পানির ব্যবস্থা করি। অনেক সময় দেখা যায়, সার প্রায় হয়ে গেছে, তখন কেঁচো  ডিম পেড়েছে। তখন বাচ্চা বের হওয়ার জন্য সার সংগ্রহ করতে দেরি হয়। সার সংগ্রহের পরে সেটাকে চালনি দিয়ে চেলে আলাদা করি। পরে সেটার মান পরীক্ষার জন্য ঢাকার ল্যাবে পাঠাই। ‘অ্যাগ্রো অ্যালকামি’ নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ সারটি আমরা বাজারজাত করছি।’ 

কৃষক পর্যায়ে পর্যাপ্ত এ সারের প্রচলন না থাকা এবং সঠিক দাম নির্ধারিত না হওয়ায় উৎপাদন করেও অনেক খামারি এ সার বিক্রি করতে পারেন না। ফলে তাকে লোকসান গুনতে হয়। এ প্রসঙ্গে সফর মল্লিক বলেন, ‘১২ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় সার। স্থানীয় কৃষকদের কাছে বা বাজারে ১২ টাকা কেজি বিক্রি হয়। আর বাইরে বিক্রি করলে প্রতি কেজিতে ১৫ টাকা পাওয়া যায়। মাসে দেড় লাখ থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকার মতো সার বিক্রি হয়। আর খরচ বলতে গোবর কিনতে হয় বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন দামে। খামার থেকে গোবর বস্তা প্রতি ৪০ টাকায় কিনি বর্তমানে। এ ছাড়া নিয়মিত দু’জন শ্রমিক কাজ করেন। গোবর কেনা, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বাবদ মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি মাসে একবার সার উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করতে পারলে সব খরচ বাদ দিয়ে লাখ টাকার মতো থাকে। বর্তমানে আমার খামারে যে কেঁচো আছে, সেগুলোর মূল্য কয়েক কোটি টাকা।’ 

রোকোনুজ্জামান নামে এক কৃষক বলেন, ‘ভার্মি কম্পোস্টটা যদি কৃষকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলন করা যেত, তাহলে খামারিরা লাভবান হতেন। সেই সঙ্গে মাটির জৈব পদার্থ বাড়ত এবং ফসলের উৎপাদন বাড়ত।’ আমলা এলাকার এলাকার কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘সবজি চাষের ক্ষেত্রে ভার্মি কম্পোস্ট খুবই কার্যকর। ফলন ও সবজির মান বৃদ্ধি করে। আমি কয়েক বছর ধরে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ভার্মি ও জৈব সার ব্যবহারের কারণে আমার সবজির স্বাদ ও উৎপাদন বেশি হয়। সেই সঙ্গে এ সবজি স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ।’ 

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলায় ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষক পর্যায়ে ৩৮৩৬ মেট্রিক টন, বাণিজ্যিকভাবে ২০ মেট্রিক টন, এনজিওর মাধ্যমে ২৫ মেট্রিক টন ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদিত হচ্ছে।   

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘ভার্মি কম্পোস্ট সার ফসল উৎপাদনে খুবই উপযোগী একটি সার। এ ছাড়া, বাণিজ্যিকভাবে এ সার উৎপাদন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমরা কৃষক পর্যায়ে এ সারের ব্যবহার বাড়াতে কাজ করছি। সেই সঙ্গে উৎকৃষ্ট মানের ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রস্তুতে খামারিদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। আশা করি, নিরাপদ উপায়ে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারে আগ্রহী হবেন কৃষকেরা।’ 

উদ্যোক্তা হওয়ার উপায় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

কুষ্টিয়া প্রতি‌নিধি
লালনশিল্পী রতন। ছবি: সংগৃহীত
লালনশিল্পী রতন। ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় রতন (৪২) নামের এক লালনশিল্পীকে ছুরিকাঘাত করেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে সদর উপজেলার মিললাইন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত শিল্পী রতন কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের মৃত আফসার আলীর ছেলে। তিনি ‘শিল্পী সমাজ’ নামক কুষ্টিয়ার একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহসভাপতি।

পুলিশ ও আহত শিল্পীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে গানের অনুষ্ঠান শেষ করে রতন কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া লালন মাজার এলাকা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সদর উপজেলার মিললাইন এলাকায় পৌঁছালে চলন্ত অবস্থায় দুর্বৃত্তরা তাঁর পিঠে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলটি অন্ধকার থাকায় তিনি কাউকে চিনতে পারেননি। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, রাত ২টার দিকে রতনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত।

লালন একাডেমির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও ভবের হাট সংগীত একাডেমির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু বলেন, ‘রতন লালন একাডেমির একজন নিয়মিত শিল্পী। তার ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদসহ অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন বলেন, রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ বিষয়ে কুমারখালী ও মডেল থানা যৌথভাবে কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দৌলতপুরে অস্ত্র ও মাদকসহ যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার যুবদল নেতা জামিল মালিথা। ছবি: আজকের পত্রিকা
অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার যুবদল নেতা জামিল মালিথা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের আবেদের ঘাট এলাকা থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ পদ্মার চরের শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিল মালিথাকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গ্রেপ্তার জামিল কুখ্যাত ‘চল্লিশ বাহিনী’র প্রধান রাখিবুল ইসলাম রাখির ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং ফিলিপনগর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্যসচিব। এ সময় জামিল মালিথার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, একটি গুলি এবং ৪৮ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার জামিল মালিথা ফিলিপনগর গ্রামের মৃত জালাল মালিথার ছেলে।

জামিলের ফিলিপনগর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্যসচিব পদে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক বেনজির আহমেদ বাচ্চু।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, জামিল একজন চিহ্নিত অস্ত্র ও মাদক কারবারি। ভারত থেকে অবৈধভাবে বিপুল সংখ্যক আধুনিক অস্ত্র, বিশেষ করে অটোমেটিক পিস্তল পাচারের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক জাকিরুল ইসলাম।

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ বলেন, ‘জামিলের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। রাতেই বিজিবি তাঁকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। আজ তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেরপুরে গণসংযোগে হামলার অভিযোগ জামায়াতের, অস্বীকার বিএনপির

শেরপুর প্রতিনিধি
হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার রাতে বিক্ষোভ করে শেরপুর জেলা জামায়াতে ইসলামী। ছবি: আজকের পত্রিকা
হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার রাতে বিক্ষোভ করে শেরপুর জেলা জামায়াতে ইসলামী। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুর-১ (সদর) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলামের গণসংযোগে হামলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ডাকপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এতে জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতিসহ জামায়াতের অন্তত ২০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে এই ঘটনার জেরে শুক্রবার রাতে শহরজুড়ে জামায়াত ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করেছে।

জামায়াত নেতাদের অভিযোগ, শুক্রবার জুমার নামাজের পর শেরপুর-১ আসনের মনোনীত প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম ডাকপাড়া গ্রামে গণসংযোগে বের হলে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাতে বাধা দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমে বাগ্‌বিতণ্ডা হয় এবং পরে বিএনপির সমর্থকেরা জামায়াত নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে। এ সময় জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম স্বপনসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।

জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে শুক্রবার রাতে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি। ছবি: আজকের পত্রিকা
জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে শুক্রবার রাতে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি। ছবি: আজকের পত্রিকা

জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীর গণসংযোগে অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। ৫ আগস্টের বিপ্লবের পর এসব হামলার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ইতিমধ্যে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে প্রশাসনের প্রতি আলটিমেটাম দিচ্ছি।’

জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম বলেন, বিএনপি যদি জনগণের পালস বুঝতে না পারে, তাহলে আগামী দিনে তারাও বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে হারিয়ে যেতে বাধ্য হবে।

অন্যদিকে জামায়াতের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে শুক্রবার রাতে শেরপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জামায়াতের লোকজন পূর্বপরিকল্পিতভাবে ডাকপাড়া গ্রামে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে গিয়েছিল। সেখানে কয়েকটি মসজিদে মিটিং-মিছিল করে তারা গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এলাকাবাসী এর তীব্র প্রতিবাদ করলে তারা এলাকা ছেড়ে চলে আসে।’

সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে তারা থানায় গিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। তারা মিথ্যা কথা বলছে এবং উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। আমরা তাদের এই প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা জানাই এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আদিতমারীতে অটোরিকশা উল্টে নিহত ২, আহত ১

লালমনিরহাট প্রতিনিধি 
খাদে পড়ে যাওয়া অটোরিকশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
খাদে পড়ে যাওয়া অটোরিকশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় অটোরিকশা উল্টে খাদে পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন। শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে উপজেলার মহিষখোচা বাজার আদিতমারী বাইপাস সড়কের আনছার খাঁর পুকুরপাড় এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের দক্ষিণ বালাপাড়া ব্রমত্তর গ্রামের মৃত তালেব্বর রহমানের ছেলে বকুল মিয়া (৬০) ও একই ইউনিয়নের কচুড়ুমা বারহাত কালী এলাকার মেছের আলীর জামাতা আতিকুল ইসলাম আতিক (৩৫)।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মহিষখোচা বাজার থেকে কয়েকজন যাত্রী নিয়ে একটি অটোরিকশা আদিতমারী যাচ্ছিল। আনছার পুকুরপাড়ে ওই অটোরিকশায় ওঠেন আতিকুল ইসলাম আতিক। একটু এগিয়ে যাওয়ার পরই খাদে পড়ে উল্টে গিয়ে নিচের গর্তে পড়ে যায় অটোরিকশা। এতে ঘটনাস্থলে আতিকুল মারা যান। আহত হন বকুল মিয়াসহ একজন নারী।

স্থানীয় বাসিন্দারা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে প্রথমে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে আশঙ্কাজনক বকুল মিয়াকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রংপুর যাওয়ার পথেই মারা যান বকুল মিয়া।

আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আকবর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত