Ajker Patrika

কেরু শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ

জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি 
Thumbnail image
তৈয়ব আলী। ছবি: সংগৃহীত

দেশের বৃহত্তম চিনিকল কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি তৈয়ব আলীর বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা ছাড়া বিদেশে থাকা তাঁর ছোট ছেলের স্বাক্ষর জাল করে কোম্পানি থেকে বেতন তোলারও অভিযোগ উঠেছে। তাঁর ছোট ছেলে গত রোজা থেকে সৌদি আরবে আছেন।

সনদ জালিয়াতির কথা স্বীকার করে তৈয়ব আলী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে জন্মনিবন্ধন সংশোধন করার সময় বয়স কমিয়েছিলাম। কেরুতে চাকরির সময় আমার বয়স বেশি হওয়ায় বয়স কমিয়ে চাকরিতে ঢুকি। তখন শুধু আমি না, আরও ২০০ লোক এভাবেই চাকরিতে ঢোকে। এটা নিয়ে কোর্ট-কাচারি হয়েছে আগেও। আমি লেবার শ্রেণিতে চাকরি করি, কোর্ট আমার পক্ষে রায় দেন। প্রতিপক্ষের লোকজন ১০ বছর আগে থেকে হয়রানি করছে আমাকে। সামনে শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন, আবারও তারা হয়রানি করতে উঠেপড়ে লেগেছে।’

ছেলের বিষয়ে তৈয়ব আলী বলেন, ‘গত রমজানের আগে জুনায়েদ সৌদি আরবে গেছে। বিমানের টিকিট পাচ্ছে না বলে তার আসতে দেরি হচ্ছে। দুই-এক দিনের মধ্যে দেশে এসে কাজে যোগ দেবে। সে তো স্থায়ী শ্রমিক না। কাজ করলে হাজিরা পাবে, না করলে হাজিরা পাবে না। আবার যখন কাজে যোগ দেবে তখন তার হাজিরা শুরু হবে। স্বাক্ষর জাল করে বেতনের টাকা তোলার বিষয় জানতে চাইলে পিয়ন বাদলের কাছে জুনায়েদ বলেন, সেই টাকা প্রতিষ্ঠানে ফেরত দেওয়া হয়েছে।’

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেটের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৯৮২ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় দর্শনা মেমনগর বিডি উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন তৈয়ব আলী। পরীক্ষার আবেদন অনুযায়ী ১৯৬৫ সালের ৫ জুন তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

মেমনগর স্কুলে গিয়ে মাধ্যমিকের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিনি ১৯৮১ সালে বিজ্ঞান শাখা থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরের বছর (১৯৮২ সালে) আবারও তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেন। সেই সালে তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন।

আর ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রত্যয়নপত্রের তথ্য অনুযায়ী, তৈয়ব আলীর জন্ম একই সালে। তবে ২০০৬ সালের ৩১ অক্টোবর ইস্যু করা দক্ষিণ চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আরেকটি ছাড়পত্রের তথ্য অনুযায়ী, তিনি ১৯৮৩ সালের ৩০ মে জন্ম গ্রহণ করেন। দক্ষিণ চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাড়পত্র নেওয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল ২৩ বছর ৫ মাস। যাচাই করা দুটি সনদে তৈয়ব আলীর বয়সের ফারাক অন্তত ১৮ বছর।

তৈয়ব আলীর কেরু অ্যান্ড কোম্পানির যোগদানপত্রে দেখা যায়, তিনি ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ইস্যু পত্রে একই বছরের ২৫ জানুয়ারি চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরিবিধি অনুযায়ী দক্ষিণ চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাড়পত্র মোতাবেক তিনি নিয়ম মেনেই চাকরিতে যোগদান করেন। তবে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট অনুযায়ী তৈয়ব আলীর চাকরিতে যোগদানের বয়স ৪১ বছরের বেশি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিকনেতা বলেন, তৈয়ব আলী ভুয়া সনদ দাখিল করে চাকরি করছেন কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে। নিয়মিত বেতন ভাতা তুলছেন। যা সম্পূর্ণ নীতিবহির্ভূত ও অপরাধমূলক কাজ। তাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ লোকসান গুনতে হচ্ছে কেরুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত