Ajker Patrika

মাঘের ভোরে যশোরে বর্ষণ, ২১ মিলিমিটার রেকর্ড বৃষ্টিপাত

যশোর প্রতিনিধি
মাঘের ভোরে যশোরে বর্ষণ, ২১ মিলিমিটার রেকর্ড বৃষ্টিপাত

গত কয়েক দিন ধরে যশোরে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। উষ্ণতার চাদর মুড়িয়ে মানুষ যখন ঘুমে মগ্ন, ঠিক এ সময় শুরু হয় বৃষ্টি। যা পরে মাঝারি বৃষ্টিতে রূপ নেয়।

আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে থেকে এ বৃষ্টি চলে প্রায় ঘণ্টা দু-এক। মৃদ শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে একপশলা বৃষ্টি যেন শীতের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিয়েছে দ্বিগুণ। এ দিন তাপমাত্রা খুব একটা নিচে না নামলেও কনকনে ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে জানাচ্ছেন এই এলাকার। দুপুর একটা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের।

এ দিন সীমান্তবর্তী এই জেলাটিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন শীত আরও কয়েক দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

যশোর বিমানবাহিনীর আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার যশোরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহ থেকে দুই দফা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায় যশোরের ওপর দিয়ে। দুই দিন পর গত পরশু মঙ্গলবার রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া থাকাতে খানিকটা হলেও স্বস্তি ফেরে জীবন যাপনে। কিন্তু আবারও গত দুই দিন ধরে মেঘে লুকিয়ে যায় সূর্য।

বৃহস্পতিবার বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। দিনভর কোথাও সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। মাঝে মধ্যে ঠান্ডা বাতাস কাঁপিয়ে তুলছে জেলার ছিন্নমূল মানুষগুলোকে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে পথে-ঘাটে থাকা এই মানুষগুলো আজ দুর্বিষহ দিন পার করছেন। যশোরে রেলস্টেশন ও ফুটপাত গুলোতে ছিন্নমূল মানুষকে কম্বল মুড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড়, হাত-পায়ের মোজা, টুপি, মাফলার, জ্যাকেটের চাহিদা বেড়েছে।

শামসুর রহমান নামে এক এনজিও কর্মকর্তা বলেন, ‘একে তো তীব্র শীত, তার ওপর আবার বৃষ্টি। দুইয়ে মিলে স্বাভাবিক কাজকর্ম যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে আনা দুর্ভোগ, অফিস যাতায়াতে দুর্ভোগ।’

শহরের মুজিব সড়কে কথা হয় ইজিবাইক চালক নজরুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোরে শীতের সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। তার সঙ্গে বাতাস তো আছে। বৃষ্টি ও শীতে কারণে ইজিবাইক চালাতে কষ্ট হচ্ছে।’

মিজানুর রহমান নামে এক পথচারী বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরেই বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। এর মধ্যে বৃষ্টিতে আজ শীতের তীব্রতা একটু বেশি। হাত পা শীতল হয়ে গেছে। গরম কাপড়ের সঙ্গে হাত মোজা, পায়ের মোজা পড়লেও স্বস্তি মিলছে না।’

আক্কাস আলী নামে এক রিকশাচালক বলেন, ‘তিনটি শার্ট, দুটি প্যান্ট, মোজা পড়ছি। সেই সঙ্গে মাফলার ও মাথায় টুপি দিয়ে কান মুখ ঢেকে রেখেছি। এরপরও শীতে কাবু হয়ে যাচ্ছি। একটি ট্রিপ দিলে হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। পেটের দায়ে এত শীতের মধ্যেও বের হতে হয়েছে।’

কাদের আলী নামে এক রিকশাচালক বলেন, ‘গ্যালোবারের চাইতি এবেড্ডা শীতটা বেশি মনে হচ্ছে। তার মদ্দি (মধ্যে) বৃষ্টিতি আবার শীত আট্টু বাড়ায়ে দি গেল, ভাড়া মারবানি কিয়েকরে আজকে, তা কবেন কিডা।’

বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।শহরের রেল স্টেশন এলাকার মাছ বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পানি বরপের মতো ঠান্ডা। ঘেরে লাবলিই জমে যাওয়ার মতন অবস্তা। তাই এক-দু দিন পরপর মাছ ধরতি যাচ্চি। ডেলি ঘেরে লাবলি ঠান্ডায় মইরে যাতি হবে।’

এ দিকে, শীতের প্রকোপে রোগীর চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। বেশি রোগাক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে অসুস্থ শিশুদের চাপও বেড়েছে। বর্তমানে এই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ৭০-৮০ ভাগই শীতজনিত কারণে অসুস্থ। তাদের বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আবার শীতজনিত কারণে মারা গেলেও পরিসংখ্যান ওইভাবে করা সম্ভব হয় না। কারণ, শীতের কারণেই রোগীর অ্যাজমা সমস্যা বাড়ে, কাশি বাড়ে, জ্বর থেকে নিউমোনিয়া হয়। কিন্তু মারা গেলে এসব রোগই শনাক্ত করা হয়। তখন তা শীতজনিত কারণে বলা সম্ভব হয় না।’

এই বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রিজিবুল ইসলাম জানান, জেলার অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য ৬১ হাজার কম্বল বরাদ্দ ছিল তার মধ্যে ৫৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরও ৭৫ হাজার কম্বলের চাহিদার কথা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। সরকারি কম্বল ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কম্বল বিতরণ করছে। তবে সেটা অনেক কম। তাই সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনকে শীতার্ত মানুষের মাঝে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, দেশের চার বিভাগে বৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যশোরে ২১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বৃষ্টির ফলে কুয়াশা কমে সূর্যের দেখা মিলবে। সেই সঙ্গে আগামীকাল শুক্রবার থেকে সারা দেশের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে। তবে আজকেও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রংপুর বিভাগের সব জেলায়, ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ এবং রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে। মূলত এই মাসজুড়েই শীত বিরাজ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে স্থানান্তর করা বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শনে কর্মকর্তারা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত