Ajker Patrika

 ‘মৌসুম শেষ হলেও এ বছর ইলিশ খাওয়ার সামর্থ্য হয়নি’

জাহিদ হাসান, যশোর
 ‘মৌসুম শেষ হলেও এ বছর ইলিশ খাওয়ার সামর্থ্য হয়নি’

‘ইলিশ মাছের মৌসুমে ইলিশ মাছ খাইতে পারি নাই। কিনব কি করে; এবার ইলিশের যে দাম। সামর্থ্য হয়নি কেনার। গেল কয়েক বছরের তুলনায় এবার ইলিশের দামও ছিল ডাবল তাই ইলিশ কিনি নাই, কিনার ইচ্ছাও করেনি’। 

এভাবেই আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন আলমগীর হোসেন। যশোর শহরের বেজপাড়াতে তাঁর বাড়ি। পেশায় তিনি জুয়েলারির শ্যাকরা (কারিগর)। 

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের বড় বাজার মাছ বাজারে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাজারে এলে কিছুই কিনে শান্তি পাই না। সবকিছুতেই আগুন জ্বলা দাম। যে জিনিস কিনতে যাই, সেটারই দাম বেড়ে যায়। যে বাজেট নিয়ে বের হই, তা দিয়ে আর সবকিছু কেনা হয় না। ইলিশ কিনব কি করে? বাজারে এলেই তো ঘাম ছুটে যায়। এভাবে কী চলা যায়?’ 

প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির মধ্যে চড়া দামে জাতীয় মাছ ইলিশ না খাওয়ার অভিযোগ শুধু আলমগীরের নয়; শহরের বিভিন্ন ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীসহ নিম্ন-মধ্যম আয়ের বেতনের চাকরিজীবীদেরও। 

শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার ড্রিম হাউস ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী সেলিম হোসেন ও আলামিন হোসেন বাজার করতে এসেছেন বড় বাজারে। তাঁরা জানান, মূলত ছাত্রাবাসে নির্ধারিত টাকার মধ্যে বাজার করতে হয়। তিন দিনের বাজারে ম্যানেজার টাকা দেয় তিন হাজার টাকা। ২২ জনের সদস্যের এই টাকাতে তিন দিনের মাছ-সবজি, এক বেলার মাংস, আর তেল মসলা কিনতে হয়। বর্তমানে সবজি এবং অন্য মাছের যে দাম তাতে খাবারের তালিকাতে ব্যতিক্রম কিছু রাখার ইচ্ছা থাকলেও রাখা যায় না। 

তারা বললেন, এ বছর এক পিছও ইলিশ মাছ খেতে পারেননি তাঁরা। ছাত্রাবাসে নিয়মিত তেলাপিয়া আর পাঙাশ মাছ খাওয়া হয়। সেটার দামও দিনকে দিন বাড়ছে। 

নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইলিশ মাছ বিক্রেতারা দোকান বন্ধ রেখেছেন। ছবি: আজকের পত্রিকাবড় বাজারের মিম ফিস সাপ্লাই হাউসের সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘এবারের ইলিশের মৌসুম শেষ। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার যশোরে ইলিশের সাপ্লাইও কম ছিল; দামও ছিল ডাবল। তেমন একটা বেচাকেনা হয়নি। গত বছরের তুলনায় এবার ইলিশ বেচাকেনা কম হয়েছে।’ 

এই বাজারে সবচেয়ে প্রবীণ মাছ বিক্রেতা ধলু শেখ। চার দশক ধরে বিভিন্ন মাছ বিক্রি করেন তিনি। ইলিশের মৌসুমে ইলিশ বিক্রি করেছেন তিনি। 

এই বিক্রেতার ভাষ্য, ‘ইলিশের দাম আমার জীবনে এমন হতে দেখেনি। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। ৪০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৭০০ থেকে হাজার টাকায়। আবার ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার টাকা কেজি দরে। আর ১ কেজি কিংবা তার বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে।’ 

সত্যরঞ্জন দাস নামের আরেক মাছ বিক্রেতা বলেন, ‘এবার জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়েছে অনেক কম। এ কারণে বাজারগুলোয় আগের মতো ইলিশ পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায়, দাম বেশি।’ তিনি জানান, শুধু যে এবার ইলিশের দাম বেশি ছিল তা নয়; অন্য মাছের দামও বেশি। 

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গত বুধবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ইলিশ মাছ ধরা, পরিবহন, বিক্রি, বিপণন ও সংরক্ষণ বন্ধ রাখার আদেশ কার্যকর হয়েছে। 

এ অবস্থায় কিছু ইলিশ মাছ বিক্রেতাদেরও দোকান বন্ধ পাওয়া গেছে। আবার আগে যারা ইলিশ বিক্রি করছিলেন; নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা এখন অন্যান্য দেশি মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে। 

যশোর রেলস্টেশন কাঁচা বাজার। ছবি: আজকের পত্রিকাএদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এই তিনটি খাদ্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। বরং সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নানা অজুহাত দেখিয়ে বেশি দামে এই পণ্য তিনটি বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। 

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযান শেষ হলে ব্যবসায়ীরা আগের দামেই পণ্য বেচাকেনা করছে। তবে ক্রেতারা বলছেন, সরকারি নির্দেশনা শুধু কাগজে-কলমেই। তাদের বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা নেই। 

অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার দাম ঘোষণা করলেও পাইকারি বাজারে সেই দামে তারা কিনতে পারছেন না এই তিন পণ্য। 

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ডিম, আলু ও পেঁয়াজ-এই তিনটি খাদ্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের আলোকে আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৫-৩৬ টাকা, দেশি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৪-৬৫ টাকা আর ডিমের পিস সর্বোচ্চ ১২ টাকা নির্ধারণ করে। এই তিন পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে এগুলো। 

আজ শুক্রবার সরেজমিনে যশোরের বড় বাজার ও রেল বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৬ টাকা, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকা, প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা থেকে ১২ টাকা ৫০ পয়সা করে। রেল বাজার

বড় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আকতার বলেন, ‘পাইকারি বাজারে আগে যে দাম ছিল এখনো সেই দামই আছে। আমরা কমে কিনতে পারলেই তো কম দামে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারব। প্রতি কেজি আলু-পেঁয়াজ থেকে দুই-তিন টাকা লাভ করতে পারলে তো আর কিছু লাগে না। কিন্তু পাইকারি বাজারে দাম বেশি।’ 

ক্রেতা শওকত হোসেন বলেন, ‘প্রত্যেকটা পণ্যের দাম বাড়তি। সবাই কোনো না কোনোভাবে কষ্টে আছে। তবে কেউ বলতে পারছে না। রাজনৈতিক লোকেরা বাজার করতে এসে হিমশিম খায় না। তাদের চতুরদিক থেকে ইনকাম। আমাদের মতো অল্প আয়ের মানুষ, বাঁধা ইনকামের মানুষেরা কষ্টে আছে।’ 

সরকার প্রধানের কাছে দাবি তাঁর, নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে এনে দেওয়া হোক। 

জানতে চাইলে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস এম শাহীন বলেন, সংশ্লিষ্টদের বাজার মনিটরিং করতে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। তাঁরা নিয়মিত মনিটরিং করছে। বাজারে অভিযান চালিয়ে এক প্রকার ক্লান্ত হয়ে গেছে। বাজারে অভিযান চালিয়ে চোখের আড়াল হলেই আবারও আগের অবস্থানে ফেরে ব্যবসায়ীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ওপর হামলাকারীরা সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছে কি না—তা শতভাগ নিশ্চিত নয় বিজিবি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা

বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ঢাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণকারী ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়েছে কি না—তা এখনো শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর বিজিবি ক্যাম্পে তিনি আরও জানান, শুক্রবার ৯টার মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় সম্ভাব্য পাচারের রুটগুলো চিহ্নিত করে টহল এবং চেকপোস্ট বসানো হয় সীমান্তের অধিকাংশ স্থানে। পরদিন অর্থাৎ শনিবারে পুলিশ এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। ঢাকা থেকে আগত পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টর কমান্ডারের নিয়মিত যোগাযোগ এবং অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলোচনায় দুটি স্থানে একসঙ্গে অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অবস্থানরত ফিলিপ স্নালকে আটকের পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশের আরেকটি টিম হালুয়াঘাট এলাকায় অপারেশনের প্ল্যান করে। হালুয়াঘাটে অপারেশনের বিষয়ে বিজিবির সোর্স এবং অন্যান্য বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করেছে। অপর দিকে নালিতাবাড়ীর বারোমারি এলাকায় অপারেশন পরিচালিত হয় বিজিবির নেতৃত্বে এবং ঢাকা হতে আগত ও হালুয়াঘাট থানার পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে। কিন্তু ফিলিপকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী ডেলটা চিরান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং মানব পাচারকারী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়।’

তাঁদের পরিবারের তিনজনসহ এ পর্যন্ত বিজিবি চারজনকে আটক করেছে। এঁদের মধ্যে সোমবার সকালে মানব পাচারকারী বেঞ্জামিন চিরামকে আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরগুনায় স্বামীকে গলা টিপে হত্যা, স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক আটক

বরগুনা প্রতিনিধি
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার বামনা উপজেলায় পরকীয়া প্রেমের জেরে এক প্রবাসফেরত স্বামীকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আব্দুল জলিল (৪৫)। তিনি উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোপখালী গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক আলামিনকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে আব্দুল জলিলের নিজ বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর ধরে একই এলাকার আবু খতিবের ছেলে আলামিন নিহতের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নাজমা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ১৫ দিন আগে প্রবাস থেকে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন আব্দুল জলিল।

অভিযোগ রয়েছে, রোববার বিকেলে স্ত্রী ও ওই গৃহকর্মী মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় আব্দুল জলিলকে গলা টিপে হত্যা করেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে বামনা থানায় নিয়ে যায়। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিককে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মহান বিজয় দিবসে মেট্রোরেল সাময়িক বন্ধ থাকবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় প্যারাজাম্প অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে প্যারাট্রুপারদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএমটিসিএল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১১টা ৫০ মিনিট হতে ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ৪০ মিনিটের জন্য মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

ডিএমটিসিএল সাময়িক অসুবিধার জন্য যাত্রীসাধারণের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। যাত্রীদের এই সময়সূচি মেনে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয়মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত

বাসায় আটকে রেখে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর ডেমরা থানার উপপরিদর্শক এসআই মুরাদ হোসেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ইলামনি আজ সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আগামী ২৮ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্রটি উপস্থাপন করা হবে। পরে এ সংক্রান্ত মামলা বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।

নোবেলের আইনজীবী মোসতাক আহমেদ জানান, এই ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করেছেন নোবেল। তাঁরা সংসার করছেন।

গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন ইডেন কলেজের ওই ছাত্রী। নোবেলকে গ্রেপ্তার করার পর কারাগারে পাঠানো হলে বিয়ের শর্তে তিনি জামিন পান। ১৯ জুন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে নোবেল ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন।

এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় নোবেলের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নোবেল তাঁর স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ছাত্রীকে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নেন। এরপর ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেন। কথামতো না চললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখান।

অভিযোগে বলা হয়, ওই তরুণীকে ছয় মাস ধরে ডেমরার ওই বাসায় আটকে রাখা হয়, মারধর করা হতো প্রায়ই। দু-তিন জনের সহায়তায় বাদীকে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখেন নোবেল। ওই ঘটনার ভিডিও ছড়ালে বাদীর বাবা-মা তাঁকে চিনতে পারেন। এরপর পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাঁকে ১৯ মে উদ্ধার করে এবং পুলিশ নোবেলকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নোবেল বাদীকে আটক রেখে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। বাসায় না থাকলে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে তাঁকে মারপিট করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, বাদীর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি নোবেল জামিনে আছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও বলেছেন, বাদীকে মারধর ও ধর্ষণে আসামিকে আরও কয়েকজন সহযোগিতা করেছেন। তবে তাঁদের নাম-ঠিকানা উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব হলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এখন কী হবে:

নোবেলের আইনজীবী বলেছেন, নোবেল মামলার বাদীকে বিয়ে করে সংসার করছেন। তাই এই অভিযোগপত্রে নোবেলের কোনো সমস্যা হবে না। বিচারিক ট্রাইব্যুনালে বাদী আপসনামা দেওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি হবে। খালাস পাবেন নোবেল।

উল্লেখ্য, ভারতের সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ‘সা রে গা মা’ দিয়ে পরিচিতি পান এই গায়ক। এর আগে মাদকে আসক্ত হয়ে সংগীত ছেড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও শ্রোতাদের সামনে হাজির হন। সেবার নোবেল জানিয়েছিলেন, তিনি আর কখনো দর্শকদের হতাশ করবেন না। সব অতীত পেছনে ফেলে নিয়মিত গান উপহার দেবেন।

কিন্তু ২০২৩ সালে অগ্রিম টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ায় প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জানা যায়, ওই বছর ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়ার প্রতারণায় অভিযোগে আটক হয়েছিলেন। সে সময় একদিন রিমান্ডেও ছিলেন এই গায়ক। পরে আপসের মাধ্যমে ওই মামলা থেকে অব্যাহতিও পান নোবেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত