Ajker Patrika

পানছড়ি বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করলেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা

পানছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২১ জুলাই ২০২৫, ১০: ১৬
পানছড়ি বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করে একদল ক্ষুদ্ধ গ্রাহক। আজ রোববার সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পানছড়ি বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করে একদল ক্ষুদ্ধ গ্রাহক। আজ রোববার সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে আজ রোববার সকালে খাগড়াছড়ির সীমান্ত শহর পানছড়ির বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা। তাঁরা অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টাকা ছাড়া ট্রান্সফরমার ও বিদ্যুৎ-সংযোগ দেন না। মিটার রিডিংয়ের তুলনায় বেশি বিল করেন তাঁরা।

হিসাবমতে, পানছড়ি বিউবোর আওতায় সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্রশিল্প, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক বাড়িঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। পানছড়ি সদরসহ দুধক ছড়া, লোগাং, জগত মোহনপাড়া, তারাবন, চেঙ্গী, দমদম অক্ষয়পাড়া, লতিবান, পাইয়্যংপাড়া, মরাটিলা, মাটিরাঙ্গা উপজেলার যামিনীপাড়া, তাইন্দং, তানৈক্যপাড়া, নোয়াপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এসব এলাকার গ্রাহকেরা মিটার না দেখে রিডিংয়ের অতিরিক্ত বিল, নতুন সংযোগে অতিরিক্ত টাকা, অবৈধ সংযোগ, বিদ্যুৎ অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মীর চঞ্চল আলীর নিজস্ব বাহিনীর হুমকিসহ বিভিন্ন ভোগান্তির কথা জানান।

অস্থায়ী শ্রমিক মিটার রিডার উজ্জয়ন চাকমাসহ কয়েকজন বলেন, ‘আমরা সঠিক মিটার রিডিং অফিসে জমা দিলেও অফিস থেকে রিডিং বাড়িয়ে দেয়। তাতে আমাদের করার কিছু থাকে না।’

গ্রাহকদের অভিযোগের বিভিন্ন কাগজপত্র দেখালে অতিরিক্ত বিল করার বিষয়টি স্বীকার করেন পানছড়ির বিদুৎ অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মীর চঞ্চল আলী। তিনি জানান, সিস্টেম লস কমানোর জন্য এমনটি হয়েছে। সরকারি এমন কোনো নিয়ম রয়েছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এমন কোনো নিয়ম নেই।’

উল্টাছড়ি ইউনিয়নের মরাটিলা এলাকার প্রদীপ ত্রিপুরা আজকের পত্রিকাকে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের অনিয়মের সুরাহা হয়নি। অতিরিক্ত বিল আসায় কিছু দিন আগেও মরাটিলায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা পানছড়ি বিদ্যুৎ অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মীর চঞ্চল আলীসহ চারজনকে মারধর করেন।

তানৈক্যপাড়ায় নতুন বিদ্যুৎ-সংযোগ নেওয়া কবির আহাম্মদ, ছায়েদ আলী, এমরানসহ ছয় থেকে সাতজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, বৈদ্যুতিক তারসহ আনুষঙ্গিক মালামাল কিনে দেন তাঁরা। কাজের শ্রমিক খরচ ছাড়াও শুধু সরকারি প্রিপেইড কার্ড মিটার, সংযোগ আবেদন, এস্টিমেট জমা বাবদ নেওয়া হয়েছে ১২ হাজার টাকা। সিঙ্গেল ২৫-৫০ কেভি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বসিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। আর এসব কাজে সহকারী প্রকৌশলী চঞ্চল মীর আলীর মনোনীত ব্যক্তি আইনুল ইসলাম, আব্দুল কাদের, আবুল হোসেন, আব্বাস উদ্দিন বালুসহ বেশ কয়েকজন সহযোগিতা করেন বলে তাঁরা অভিযোগ তুলেন।

বৈদ্যুতিক নতুন সিঙ্গেল ট্রান্সফরমার লাগানো হয়েছে নোয়াপাড়া, মরাটিলা, পাইয়্যংপাড়া, লোগাং, চেঙ্গী এলাকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানকার কয়েকজন গ্রাহক বলেন, নিজ এলাকা দিয়ে ১১ হাজার ভোল্টের লাইন থাকলেও ২২০ ভোল্ট বিদ্যুৎ-সংযোগ ছিল না। বারবার আবাসিক ও নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আবেদন করেও ট্রান্সফরমার ও বিদ্যুৎ-সংযোগ পাননি তাঁরা। পরে এ কাজের জন্য ২ লাখ টাকা চান বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন। দর-কষাকষিতে লাখ টাকায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার লাগিয়ে দেন তাঁরা।

আজ সকালে বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাওকারী বিক্ষুব্ধ গ্রাহক সন্তোষ চাকমা, আব্দুল আলী, আব্দুল খালেক, জহর লাল চাকমা, চিজি মনি ত্রিপুরাসহ অনেকে বলেন, বিদ্যুৎ বিলের অনিয়মের সমাধান না হলে তাঁরা কঠোর কর্মসূচি দেবেন। তাঁরা দাবি করেন, উপজেলা পরিষদের আইনশৃঙ্খলা সভায় একাধিকবার সমস্যাটি তুলে ধরা হলেও কোনো সমাধান হয়নি। পরে পানছড়ি থানার এসআই রাকিব হোসেন ও তাঁর ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাওকারীদের সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ নিয়ে গ্রাহকদের ফেরত পাঠানো হয়।

পানছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ কর্মস্থলে ছিলেন না। গ্রাহকদের অভিযোগের ব্যাপারে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তিনি ট্রেনিংয়ে আছেন। কর্মস্থলে এসে একটা ব্যবস্থা করবেন। এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল আলেম আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি সব কথা শুনে মিটিংয়ে আছি বলে মোবাইল ফোনের কলটি কেটে দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লাইভ বেকারি: গরম গরম পাউরুটিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি চরমে

  • রাজধানীতে লাইভ বেকারির সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। তবে এর হিসাব নেই কারও কাছে।
  • টাটকা মনে করে ভোক্তা যেসব পণ্য কিনে খাচ্ছে, তা কতটা নিরাপদ তার কোনো তদারকি নেই।
রোকন উদ্দীন, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে লাইভ বেকারি নামের তাৎক্ষণিক খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রির দোকান। কিন্তু এগুলোতে মানের বালাই নেই। টাটকা মনে করে ভোক্তা পাউরুটি, বিস্কুট, টোস্ট, কেকসহ যেসব পণ্য কিনে খাচ্ছে, তা স্বাস্থ্যগতভাবে কতটা নিরাপদ, তার কোনো তদারকি নেই।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম (সার্টিফিকেশন মার্কস উইং) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লাইভ বেকারির সংখ্যা এত দ্রুত বাড়ছে যে আমরা এগুলোর হিসাব রাখতে পারছি না। কোনোরকম একটা ট্রেড লাইসেন্স জোগাড় করেই উৎপাদন শুরু করছে এগুলো। আমরা তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। এতগুলো প্রতিষ্ঠান তো বন্ধ করে দিতে পারি না। আমাদের লোকবলের সংকট থাকায় যতটা কাজ করার দরকার, তা করতে পারছি না।’

অল্প জায়গায় স্বল্প পুঁজিতে গড়া যায় বলে রাজধানীতে লাইভ বেকারির সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। মুগদা থানাধীন পূর্ব মানিকনগরে ঢোকার মুখ থেকে খালপাড় নতুন রাস্তার মোড় পর্যন্ত সাড়ে ৮০০ মিটারের মধ্যে ৫টি লাইভ বেকারি দেখা যায়। শুধু মানিকনগর নয়; রাজধানীর কমলাপুর, মতিঝিল, খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা, বনশ্রী, মোহাম্মদপুরসহ প্রায় সব এলাকার বাজার, পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠছে শত শত লাইভ বেকারি।

ছোট একটি দোকানে ওভেন, মিক্সচার মেশিন, ট্রে টেবিল ও কিছু আসবাব বসিয়ে এসব বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে কেক, বিস্কুট, পাউরুটি, পেটিস, টোস্ট, মিষ্টিসহ নানা খাদ্যপণ্য।

ঝিগাতলার সোনালী ব্যাংকসংলগ্ন ‘বেকার্স বে’ লাইভ বেকারি থেকে দুটি চিজ রোল ও একটি চিকেন রোল কিনে ফিরছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পলাশ মাহমুদ। কীভাবে মান যাচাই করবেন, তা জানা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় খাদ্যপণ্য কিনি স্বাদ দেখে। আর যে চিজ রোল আমি ৪০ টাকায় কিনলাম, এটি ভালো কোনো দোকানে গেলে ৭০-৮০ টাকা লাগবে।’

পূর্ব মানিকনগরের খালিস বেকারির স্বত্বাধিকারী মো. জুবায়ের বলেন, ‘ভালো লাভের আশা দিয়ে আরেক বেকারির মালিক আমারে এই ব্যবসায় নামিয়েছে। কিছু টাকা দিয়ে সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স করেছি। দেড় বছর আগে যখন শুরু করেছিলাম, তখন কিছু কিছু লাভ হতো। কয়েক মাসের মধ্যে আশপাশে বেকারির সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। এখন লোকসানে আছি।’

লাইসেন্স নেই অনেকেরই

প্রথমে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কারখানা স্থাপন করতে হয়। তারপর নমুনা পণ্য উৎপাদন করে মান সনদের জন্য বিএসটিআইতে জমা দিতে হয়। এর জন্য হাল নাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, শিল্প-নকশা বা ট্রেড মার্ক রেজিস্ট্রেশনের সত্যায়িত ফটোকপি, ভ্যাট সনদ, প্রিমিসেস লাইসেন্স, কর্মচারীর স্বাস্থ্য সনদ, পণ্যের মোড়কের নকশার কাগজসহ বেশ কিছু নথি দরকার হয়। জানাতে হয় কালার, ফ্লেভার, প্রিজারভেটিভ, আর্টিফিশিয়াল সুইটনারসহ পণ্যের উপকরণ। পরীক্ষণের যন্ত্রপাতির তালিকা, কারখানার যন্ত্রপাতির তালিকা, কারখানার লে-আউট ও প্রসেস ফ্লো-চার্ট। এরপর পরিদর্শকেরা কারখানা পরিদর্শন করে সন্তুষ্ট হলে মেলে মান সনদ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই প্রক্রিয়া মানা হচ্ছে না। অনেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই ব্যবসায় নেমে পড়েন। কারও কারও তা-ও নেই। মানসনদ নেই সিংহভাগের। কারিগরদের নেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ, স্যানিটেশন সনদ।

বুয়েটের উদ্যোগে ২০২১ সালে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরের ৬৭ শতাংশ পাউরুটির নমুনায় নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশি পটাশিয়াম ব্রোমেট রয়েছে। পাউরুটি ফোলাতে এই রাসায়নিকট ব্যবহার হয়। এ ছাড়া বেকারি পণ্যে কাঁচামাল আটার সঙ্গে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট, কৃত্রিম রং ও সোডিয়াম সাইক্লোমেট ব্যবহৃত হচ্ছে বলেও ওই গবেষণায় বলা হয়।

রাজধানীতে কতটি লাইভ বেকারি রয়েছে, তার কোনো তথ্য নেই সিটি করপোরেশন, বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছেই। বিএসটিআইয়ের তথ্য বলছে, শত শত বেকারির মধ্যে মাত্র ২৭টির মান সনদ রয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপসচিব) মুহাম্মদ হাবিবুল আলম বলেন, ‘এসব ট্রেড লাইসেন্স করপোরেশনের জোনগুলো থেকে দেওয়া হয়। কতটি লাইসেন্স হয়েছে, আমাদের কাছে সে তথ্য নেই।’

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি শফিকুজ্জামান বলেন, মানহীন এসব পণ্যে সাধারণের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। যারা আইন মেনে উৎপাদন করবে না, তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। দু-একটি বন্ধ করলে বাকিগুলো ঠিক হয়ে যেত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতের রোগে শয্যাসংকট

  • জ্বর-শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে শিশুরা।
  • তিন গুণ শিশু রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি।
  • শিশু হাসপাতালে ৫০ শয্যার একটিও খালি নেই।
­যশোর প্রতিনিধি
যশোর জেনারেল হাসপাতালে শিশু রোগী নিয়ে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষায় তাদের অভিভাবকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোর জেনারেল হাসপাতালে শিশু রোগী নিয়ে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষায় তাদের অভিভাবকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছে দুই মাস বয়সী শিশু আহনাফ। তাকে নিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগের শিশু চিকিৎসকের কাছে এসেছেন বাবা-মা। চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়ানো শিশুটির পিতা মোহাম্মদ রঞ্জু বললেন, ‘১৫-২০ দিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছে ছেলেটি। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি, সুস্থ হচ্ছে না। আজ সরকারি হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। অনেক ভিড় থাকায় লাইনে অপেক্ষায় আছি।’

লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক অভিভাবক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছয় বছর বয়সী ছেলে আরিয়ান সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত। এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও সুস্থ হয়নি। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে। কিন্তু সুস্থ হচ্ছে না। শীতের মধ্যে ঠান্ডাজনিত সমস্যায় খুবই কষ্ট পাচ্ছে। আজ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে এসেছি।’

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু আহনাফ কিংবা আরিয়ান নয়, জেলায় তাদের মতো অনেক শিশু আবহাওয়া পরিবর্তনে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও যশোর শিশু হাসপাতালে বেড়েছে শিশু রোগীদের ভিড়। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। চিকিৎসকেরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনজনিত ঠান্ডার কারণে অনেকে কাশি, গলাব্যথা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত জটিলতাসহ জ্বর ও ভাইরাল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।

গতকাল যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে জানা যায়, ২৪ সিটের বিপরীতে সেখানে চিকিৎসাধীন আছে ৬০ শিশু। এদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে চার শতাধিক শিশু। অপর দিকে যশোর শিশু হাসপাতালে ৫০ সিটের প্রত্যেকটিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। এখানে সিট বাদে কাউকে ভর্তি করা হয় না। একই হাসপাতালের বহির্বিভাগে সেবা নিয়েছে ৩ শতাধিক শিশু রোগী।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা বেনাপোলের শিশু তাকরিমের মা জুঁই সাথী বলেন, ‘ছেলেটি এক মাস ধরে জ্বরে আক্রান্ত। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়াচ্ছি, কিন্তু সুস্থ হচ্ছে না। রাতে রাতে জ্বর আসছে। সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বসবে শুনে এসেছি। এখানে অনেক রোগীর ভিড়। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি।’

সদর উপজেলার সতীঘাটা এলাকার রুমা খাতুন বলেন, ‘আমার ১৮ মাস বয়সী ছেলের ঠান্ডা লেগেছে। দুদিন ধরে ঠান্ডায় খুব কষ্ট পাচ্ছে। অল্প টাকায় ভালো ডাক্তার দেখানোর জন্য এখানে এসেছি।’

ঝিকরগাছার ছুটিপুর এলাকার বাসিন্দা তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘সর্দি, কাশিতে দুই মাস বয়সী নাতনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। প্রথমে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করেছিলাম। সেখানে সুস্থ না হওয়ায় চার দিন আগে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখন নাতনি অনেকটা সুস্থ।’

শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স সালমা খাতুন বলেন, ‘জনবলের তুলনায় রোগীর চাপ বেশি হলে সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। রোগীর বেশি হওয়ায় মেঝেতে রেখেও চিকিৎসা দেওয়া হয়।’

যশোর শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চার মাস বয়সী এক শিশুর পিতা কামরুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘জন্মের সময় আমার শিশুর ওজন কম ছিল। তাকে অনেক দিন এনআইসিইউতে রাখতে হয়েছিল। চার দিন হলো ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখানকার পরিবেশ ও চিকিৎসা ভালো। শিশু সুস্থতার দিকেই যাচ্ছে।’

যশোর শিশু হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৈয়দ নূর-ই-হামীম বলেন, শীতে ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। দুদিন হলো, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়েছে। হাসপাতালের ৫০ শয্যার একটিও খালি নেই। বহির্বিভাগেও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. হুসাইন সাফায়েত বলেন, শীত বাড়ছে। সেই সঙ্গে ঠান্ডাজনিত রোগীও বাড়ছে। শিশু ওয়ার্ডে ২৪ সিটের বিপরীতে তিন-চার গুণ বেশি রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। জনবল ও অবকাঠামোর সংকট থাকলেও সেবা অব্যাহত আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকে শতভাগ বই মাধ্যমিকে এল অর্ধেক

মিজান মাহী, দুর্গাপুর (রাজশাহী)
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার আগেই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সব নতুন বই এসে পৌঁছেছে। ফলে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনেই প্রাথমিকের ১৯ হাজার ২২৪ শিক্ষার্থী হাতে পাবে নতুন বই। গত বছরের তুলনায় এবার প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী বেড়েছে ১ হাজার ৬১৪ জন।

তবে মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে চিত্র একেবারে উল্টো। এখন পর্যন্ত চাহিদার অর্ধেকেরও কম বই পেয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিস।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য এবার বইয়ের চাহিদা ছিল ৭৫ হাজার ৩৭৬ কপি। ইতিমধ্যে শতভাগ বই পৌঁছে গেছে। গতবার যেখানে বছরের শুরুতে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ বই দেওয়া সম্ভব হয়েছিল, এবার সেই ঘাটতি কাটিয়ে প্রথম দিনেই সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন।

অন্যদিকে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪৫টি স্কুল ও ১৯টি মাদ্রাসাসহ মোট ৭৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য চাহিদা ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ কপি। এর বিপরীতে এসেছে মাত্র ৮২ হাজার ৯৮০ কপি, যা চাহিদার অর্ধেকেরও কম। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বই জেলা অফিস থেকে বিতরণ হওয়ায় উপজেলা পর্যায়ে তাদের চাহিদা ও সরবরাহের পৃথক হিসাব নেই।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বই নিতে ভিড় করেছেন। বস্তাভর্তি বই কাঁধে বা গাড়িতে নিয়ে তাঁরা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাচ্ছেন। সেখানে কথা হয় কালীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাহাবুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার আমাদের স্কুলের শতভাগ শিক্ষার্থী ১ জানুয়ারিতেই সব বই পাবে।

শিশুরা একসঙ্গে সব বই পেলে খুবই খুশি হয়। গতবার যে সংকট ছিল, এবার সেটা নেই।’

মাধ্যমিক পর্যায়ের এক মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘সব বই এখনো আসেনি। যতটুকু দেওয়া হচ্ছে, আমরা নিয়ে যাচ্ছি। আশা করি বাকি বই দ্রুত পাওয়া যাবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. দুলাল আলম বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বই পেয়েছি। প্রথম দিন থেকেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেব। বাকি বই কবে পাব, এটা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নোয়াখালীর হাতিয়া: চর দখলের মচ্ছব, গরুমহিষের খাদ্যসংকট

  • দখল হচ্ছে বনের জায়গা। সংকটে কেওড়াবন।
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনের সহযোগিতা পায় না স্থানীয়রা।
  • দখলদারদের চাঁদা দিয়ে গরু-মহিষ-ভেড়া পালন করতে হচ্ছে।
ইসমাইল হোসেন কিরন,  হাতিয়া (নোয়াখালী)  
দখলের এ দৃশ্য নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চর আতাউরের উত্তর পাশের। ছবি: আজকের পত্রিকা
দখলের এ দৃশ্য নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চর আতাউরের উত্তর পাশের। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিগন্তজোড়া চর। চারদিকে মহিষ ও গরুর বিচরণ। মাঝেমধ্যে রয়েছে ভেড়ার পালও। তবে মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে ছোট ছোট মাটির স্তূপ। সারিবদ্ধ এসব স্তূপ দখলের চিহ্ন বোঝানোর জন্য। দখলকারীরা ইতিমধ্যে এসব স্থানে গরু, মহিষ, ভেড়ার পাল না চরানোর নির্দেশ দিয়েছে। সরকার পতনের পর থেকেই চরে চলছে দখলের মচ্ছব। তবে প্রশাসন নীরব। এই দৃশ্য নোয়াখালীর হাতিয়ার চর আতাউর ও জাগলারচরের।

চর আতাউর ও জাগলারচরের অবস্থান হাতিয়ার তমরদ্দি ও চরকিং ইউনিয়নের পশ্চিম পাশে। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এই চর দুটি বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও স্বল্পসংখ্যক লোকবল নিয়ে দখল বন্ধ করতে পারছে না এই দপ্তর। ইতিমধ্যে লিখিতভাবে সহযোগিতা চাওয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কোস্ট গার্ডের কাছে।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, স্তূপ করে রাখা মাটিতে একটি করে গাছের ডাল পুঁতে দেওয়া হয়েছে। প্রতি একর জায়গার সীমানায় একটি করে স্তূপ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে কথা হয় আবু তাহের নামের একজনের সঙ্গে। মহিষের পাল নিয়ে সেখানে আছেন তিনি। তিনি বলেন, গত বর্ষা মৌসুম থেকে এই চরে দখলের কর্মকাণ্ড চলে আসছে। বর্ষায় হঠাৎ তাঁদের থাকার স্থানের চারপাশে দখল করে জমি চাষ শুরু হয়। বাধা দিলে নেমে আসে নির্যাতন। প্রশাসনকে জানিয়ে কোনো সহযোগিতা পাননি তাঁরা।

চর দখলের কারণে দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাদ্যসংকট। চারদিকের জমি চাষ হয়ে যাওয়ায় আটকা পড়ে এসব গরু-মহিষ। পরে উপায় না পেয়ে দখলদারদের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে হয় স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের মাধ্যমে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মহিষ-গরু পালনের অনুমতি মিলেছে।

এই দুই চরের রাখালদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দখলদারেরা একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখন স্থানীয় বিএনপির নেতা সাবেক ইউপি সদস্য মনির উদ্দিনের লোক হিসেবে কাজ করেন। তবে এই বিএনপি নেতা চরে যান না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমি হাতিয়ার বাহিরে অনেক দিন। চর দখলের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। যারা দখল করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।’

এই বিষয়ে চরকিং ইউনিয়ন বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, চর দখলের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এর সঙ্গে মনিরসহ কয়েকজন জড়িত থাকার কথা তিনি শুনেছেন।

স্থানীয়রা জানান, চরের উত্তর পাশে ও মাঝামাঝি দুটি জায়গায় রাখালেরা অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন। চরের একেবারে দক্ষিণে একটি আশ্রয়ণ ও দুটি গুচ্ছগ্রামে ৪০০ পরিবার বসবাস করে। নদী পার হয়ে হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কেউ সেখানে যায় না। বন বিভাগ বিশাল এই চরে কেওড়াবাগানের রক্ষণাবেক্ষণ করে। পাশাপাশি নতুন জেগে ওঠা চরে কেওড়ার বীজ বপন করে। তবে দখলদারেরা নতুন ও পুরোনো সব চরের অনেক জায়গা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

চর এলাকায় বন বিভাগের জায়গা দখলের বিষয়ে নলচিরা রেঞ্জের কর্মকর্তা আল আমিন গাজী জানান, একটি গ্রুপ বেশ কিছুদিন আগ থেকে চরের জায়গা দখলের চেষ্টা করে আসছে। ইতিমধ্যে চারজনকে আটক করে মামলা দেওয়া হয়েছে। তবে নদীবেষ্টিত এলাকা হওয়ায় সব সময় অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। এ ছাড়া সীমিতসংখ্যক জনবল নিয়ে অভিযান সফল হয় না।

এই চরে গরু-মহিষ দেখাশোনা করেন এমন একজন সৈকত। তিনি বলেন, ১০ বছর ধরে এই চরে মহিষ পালন করে আসছেন। কেউ কখনো চর দখলের চেষ্টা করেনি। সরকার বদলের পর থেকে বিভিন্ন গ্রুপ এসে চর দখল করছে। চরকিং ও হাতিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন এসে এই চর দখল করছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় চরে থাকা কেওড়াবন উজাড় হয়ে যাবে।

মহিষের মালিক কামরু মিয়া জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই চরে মহিষ ও গরু পালন করে আসছেন। ইতিমধ্যে মাটির কিল্লা, পুকুর তৈরি করে নিয়েছেন। যাতে অস্বাভাবিক জোয়ারে গরু-মহিষ আশ্রয় নেয়। তবে হঠাৎ করে একটি পক্ষ তাদের এই চর থেকে চলে যেতে বলছে। রাখালদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বলেন, চর দখলের বিষয়টি মহিষের মালিকেরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া বন বিভাগ থেকেও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করা হবে এসব চর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত