Ajker Patrika

শরীরে ৪ গুলি নিয়ে বিনা চিকিৎসায় যন্ত্রণায় ছটফট করছেন অভিক

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১: ১১
শরীরে ৪ গুলি নিয়ে বিনা চিকিৎসায় যন্ত্রণায় ছটফট করছেন অভিক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে বাঁ চোখ হারানোর পথে ঝিনাইদহের হাসিব রহমান অভিকের। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বর্তমানে বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় চোখের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তিনি। 

বাঁ চোখে একটি এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে থাকা আরও তিনটি গুলি বের করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারিসহ সবার কাছে আর্থিক সহযোগিতা চায় অভিকের পরিবার। 

গত ৫ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা মহেশপুর শহরের শাপলা চত্বরে (পুরাতন পৌরসভা মোড়) আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে গুরুতর আহত হন মহেশপুর পৌর শহরের হামিদপুর গোডাউনপাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ছেলে। খুলনা নর্দান ইউনিভার্সিটির বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হাসিব রহমান অভিক। 

অভিকের বাঁ চোখে একটি, নাকে, মুখে ও গোলায় মোট পাঁচটি ছররা গুলি বিদ্ধ হয়। ওই সময় দ্রুত তাঁকে মহেশপুর ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক দিন চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করা হয় বাংলাদেশ চক্ষু হাসপাতালে। 

সেখানে চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়াজ আবদুর রহমানে কাছে চিকিৎসা করান। সেখানে পরপর দুবার অপারেশন করেও চোখের রেটিনায় আটকে থাকা গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকেরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে বলেছেন। তবে টাকার অভাবে দেশের বাইরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় চোখের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন এই শিক্ষার্থী। 

পৌর শহরের হামিদপুর গোডাউনপাড়া বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে আছেন অভিক। তাঁর বাঁ চোখে ব্যান্ডেজ। 

অভিক বলেন, ‘ওই দিন পুলিশের ছোড়া প্রথম গুলির শিকার আমি। পাঁচটি ছররা গুলি লাগে চোখে, নাকে মুখে ও গোলায়। একটা গুলি বের হলেও বাকি চারটা গুলি এখনো রয়েছে। দেশের চিকিৎসা প্রায় শেষ। অনেক টাকা ব্যয় করে আমার পরিবার আমাকে ঢাকায় চিকিৎসা করান। তারপরও চোখটাও ভালো হলো না। বাঁ চোখে তেমন কিছুই দেখতে পারি না, চোখের ব্যথা ও মাথা যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারি না। ডাক্তাররা বলেছে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে।’ এ কথা বলতে বলতেই কেঁদে ওঠেন তিনি। 

অভিকের বাবা মোজাফ্ফর রহমান বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য তাঁরা দেশে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য অভিককে সিঙ্গাপুর বা চেন্নাই নিয়ে যেতে বলছেন চিকিৎসক। বিদেশে চিকিৎসার জন্য ৪০-৫০ লাখ টাকা লাগতে পারে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। 

বাঁ চোখ ব্যান্ডেজ করে বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় দিন কাটাচ্ছেন অভিক। ছবি: সংগৃহীত তিনি বলেন, ‘বিশাল অঙ্কের এই টাকা কোথায় পাব, কে দেবে?’ এমন পরিস্থিতিতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। 

অভিকের মা হোসনে আরা বেগম জানান, অভিক সেদিন সবাইকে ফাঁকি দিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনে গেছে। পরে জানতে পারেন তাঁর বাঁ চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লেগেছে। চোখের গুলি বের করাসহ পরিপূর্ণ সুচিকিৎসার প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। যা তাঁদের পক্ষে ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সবার সহযোগিতা চান বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহেশপুর উপজেলার অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী হাসান বাপ্পি বলেন, ‘অভিক আমাদের আন্দোলনের অন্যতম সহযোদ্ধা। আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হয় অভিক। তার বাঁ চোখসহ শরীরে এখনো চারটি গুলি রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যেতে বলেছে চিকিৎসকেরা। এতে প্রায় ৪০-৫০ লাখ টাকা লাগতে পারে।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের অভিকের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিষিদ্ধ গাছ বিক্রি টেন্ডার ছাড়াই

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
কাটা গাছ ট্রাকে করে সরিয়ে নিচ্ছেন শ্রমিকেরা। গত শুক্রবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের কামদিয়া-পানিতলা সড়কে। ছবি: আজকের পত্রিকা
কাটা গাছ ট্রাকে করে সরিয়ে নিচ্ছেন শ্রমিকেরা। গত শুক্রবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের কামদিয়া-পানিতলা সড়কে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে টেন্ডার ছাড়াই সরকারি রাস্তার ছয় শতাধিক নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাসগাছ কাটা হচ্ছে প্রকাশ্যে। গাছ কাটার খবর পেয়েও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। তিন দিন ধরে উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের শালপাড়া থেকে মিরিপুকুর পর্যন্ত এবং কামদিয়া-পানিতলা রাস্তা থেকে শালপাড়া পর্যন্ত এলাকায় এসব গাছ কাটা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শালপাড়া যুব উন্নয়ন ক্লাব ও শালপাড়া এম এ মান্নান ক্লাবের সদস্যদের না জানিয়ে সভাপতি মাহমুদ হাসান ইউএনওর কথিত ‘মৌখিক অনুমতি’ দেখিয়ে স্থানীয় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ঠিকাদারের কাছে গাছগুলো বিক্রি করেন ২৮ লাখ টাকায়। অথচ বন বিভাগের তালিকায় এসব গাছের দাম ধরা হয়েছে মাত্র সাড়ে ১২ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে শালপাড়া যুব উন্নয়ন ক্লাব ও শালপাড়া এম এ মান্নান ক্লাবের সদস্যরা প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় ৬০০টির বেশি ইউক্যালিপটাসগাছ রোপণ করেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, গাছ বিক্রির সময় বিক্রয়মূল্যের ২০ শতাংশ ইউপি ও ১০ শতাংশ জমির মালিক পাবেন। এর মধ্যে সমিতির সভাপতি মাহমুদ ও বেলাল নামের দুজনে গোপনে চেয়ারম্যানের কাছে গাছ কাটার আবেদন করলে চেয়ারম্যান বিষয়টি ইউএনওকে জানান।

নিয়ম অনুযায়ী, মূল্য নির্ধারণের পর গাছগুলো বিক্রির জন্য টেন্ডারের সব ব্যবস্থা করবেন ইউপির চেয়ারম্যান। কিন্তু এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘সব কাজ ক্লাবের সভাপতি করেছেন।’

গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রমিকেরা ট্রাক ও ট্রলিতে করে দ্রুতগতিতে কাটা গাছ সরিয়ে নিচ্ছেন। সকাল থেকে বেলা ৩টার মধ্যে তিন শতাধিক গাছ কাটা হয়। ক্লাবের সভাপতি মাহমুদ ও তাঁর সহযোগী বেলাল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ক্লাবের সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল গাছ ১২ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন দাম ২৮ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। আমরা টাকা পাইনি, তিনি আমাদের সঙ্গে জালিয়াতি করেছেন। আমরা এর শাস্তি চাই।’

জানতে চাইলে গাছ বিক্রির সঙ্গে জড়িত বেলাল হোসেন বলেন, ‘যেখানে কাগজপত্র দেখানোর, সেখানে দেখানো হবে। না হলে মামলা করুক।’ গাছ ক্রেতা এমরান জানান, ‘সব কাগজপত্র সভাপতির কাছে আছে। আমি তাদের কাছ থেকেই গাছ কিনেছি। দাম প্রায় ১৮ লাখ টাকার মতো।’

অন্য ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি ২৫ লাখ টাকা অফার করেছিলাম। কিন্তু সভাপতি আরও বেশি দাম আশা করায় বিক্রি করেননি।’ ক্লাবের সদস্য মুনছুর আলী বলেন, নিয়ম না মেনে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও জমির মালিক কেউই টাকার অংশ পায়নি। টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হলে দাম আরও বেশি পাওয়া যেত।

সভাপতি মাহমুদ হাসান বলেন, ‘ইউএনওর মৌখিক নির্দেশে গাছ বিক্রি করেছি। বন বিভাগের মূল্য অনুযায়ী দাম ১২ লাখ টাকা। ২৮ লাখ টাকায় বিক্রির অভিযোগ সঠিক নয়।’ এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ সামাজিক বনায়ন বিভাগের ফরেস্টার মিজানুর রহমান বলেন, দাম কমবেশি হতে পারে; কিন্তু সরকারি জায়গার গাছ টেন্ডারের বাইরে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।

গোবিন্দগঞ্জ ইউএনও ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘উপজেলা সমন্বয় সভায় গাছ বিক্রির অনুমোদনের কথা বলা হয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে তাঁরা কীভাবে গাছ কাটছেন, তা আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমদ বলেন, ‘সরকারি জায়গার গাছ বিক্রি করতে হলে অবশ্যই টেন্ডারের মাধ্যমে করতে হবে। এ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ইউএনওকে বলে দিচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শুঁটকি উৎপাদনে দস্যু-আতঙ্ক

  • সুন্দরবনের দুবলাসহ বিভিন্ন চরে আজ থেকে ৪ মাস শুঁটকি তৈরি শুরু
  • সুন্দরবনে ১৪টি জলদস্যু বাহিনী সক্রিয়, ৬ মাসে অস্ত্রসহ আটক ১৮
সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট) কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
সুন্দরবনের দুবলারচরে শুঁটকি তৈরি করতে যাওয়ার জন্য জাল, খাদ্য ও নির্মাণসামগ্রী নিয়ে নৌকায় জেলেদের অপেক্ষা। গতকাল বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার পশুর নদে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সুন্দরবনের দুবলারচরে শুঁটকি তৈরি করতে যাওয়ার জন্য জাল, খাদ্য ও নির্মাণসামগ্রী নিয়ে নৌকায় জেলেদের অপেক্ষা। গতকাল বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার পশুর নদে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সুন্দরবনের দুবলারচরে আজ রোববার থেকে শুঁটকি উৎপাদনের মৌসুম শুরু হচ্ছে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় বিভিন্ন চরের উদ্দেশে গতকাল শনিবার মধ্যরাত থেকে শত শত ট্রলারে যাত্রা করেন জেলেরা। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাস সামুদ্রিক মাছ আহরণ করে সেগুলো দিয়ে শুঁটকি তৈরি করবেন জেলে ও শ্রমিকেরা। তবে কয়েক মাস ধরে সুন্দরবনকেন্দ্রিক জলদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে ওঠায় জেলেরা আতঙ্কে রয়েছেন। শুঁটকি মৌসুম ঘিরে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতে কোস্ট গার্ডের কাছে চিঠিও দিয়েছে বন বিভাগ।

কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে বর্তমানে ১৪টি জলদস্যু বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে দুলাভাই বাহিনী, মজনু বাহিনী, অয়ন কোম্পানি, আবু সালেহ কোম্পানি, হোসেন কোম্পানি, শহিদুল কোম্পানি, কামরুল কোম্পানি, বিপুল কোম্পানি, মিন্টু কোম্পানি, রিয়াসাদ কোম্পানি, খোকন কোম্পানি ও শাহীন কোম্পানি বেপরোয়া।

বিকাশ কোম্পানি মজনু ডাকাতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে বেশ আলোচিত। বিকাশ মারা যাওয়ার পর কোম্পানিটির ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এখন তাঁর স্বজনদের হাতে। এ ছাড়া ইলিয়াস বাহিনীর প্রধান ইলিয়াস মারা যাওয়ার পর দলের দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁর বোনের স্বামী রবিউল; যিনি দুলাভাই নামে পরিচিত।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকায় চিহ্নিত মজনু, করিম শরীফ, দয়াল, রবিউল, আবদুল্লাহ, মামা-ভাগনে, আসাবুর, দুলাভাই, আল-আমীন, জাহাঙ্গীর, আফজাল, কাজল-মুন্না, রাঙ্গা ও ছোট সুমন বাহিনী জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে। এর মধ্যে সাতটি বাহিনী নতুন।

কোস্ট গার্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, বনদস্যু আল-আমীন আত্মসমর্পণ করেছিলেন। কিন্তু গত ১৮ এপ্রিল তিনি অস্ত্রসহ কোস্ট গার্ডের হাতে ধরা পড়েন। এরপর জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার দস্যুতায় নামেন। একইভাবে ২০১৮ সালে আত্মসমর্পণ করা করিম শরীফও আবার বনে সক্রিয় হয়েছেন। সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জের আত্মসমর্পণকারী মিলন পাটোয়ারী মজনু বাহিনীর সঙ্গে দস্যুতায় ফিরেছেন। শ্যামনগরের গাবুরার খোকাবাবুও আবার দস্যুতায় নেমেছেন।

দস্যুতায় ফেরা আসাবুর বাহিনীর প্রধান আসাবুর সানাসহ দুই ডাকাতকে গত বছরের ১২ নভেম্বর সুন্দরবনের ঠাকুরবাড়ি ঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে কোস্ট গার্ড। তবে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও অস্ত্র হাতে বনে নেমেছেন তাঁরা। গত ৪ আগস্ট সুন্দরবনের শিবসা নদীর শরবতখালী এলাকা থেকে আসাবুরের দুই সহযোগীকে আটক করা হয়। তবে তিনি পালিয়ে যান।

কোস্ট গার্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ মাসে সুন্দরবনে অভিযান চালিয়ে ১৮ দস্যুকে গ্রেপ্তার এবং ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২২৮টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। মামলা করা হয়েছে ১২টি।

ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গতকাল শনিবার দুপুরে নৌকা নিয়ে জেলে ও শ্রমিকদের সুন্দরবনসংলগ্ন বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মোংলা নদী ও পশুর নদে এসে জড়ো হতে দেখা যায়।

এ সময় বাগেরহাটের রায়েন্দার জেলে মহাজন আবুল হোসেন বলেন, ‘২০১৮ সালে সুন্দরবনের দস্যুরা আত্মসমর্পণ করার পর কয়েক বছর সুন্দরবন ও সাগরে খুব একটা জলদস্যুর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে আবার জলদস্যুতা বেড়ে গেছে। গত বছরও আমার জেলেদের জিম্মি করে পৌনে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়েছে। আমাদের ভয় এসব জলদুস্যকে নিয়ে।’

জেলে আবদুর জব্বার বলেন, ‘আগামী চার-পাঁচ মাস মাছ ধরে যে আয় হবে, তা দিয়ে আমাদের পুরো বছরের সংসার চলবে। কিন্তু এখন বনে বাঘের উপদ্রব বেড়েছে। বেড়েছে দস্যুতা। তাই আমরা আতঙ্কে আছি। জানি না, আমাদের ভাগ্যে কী আছে।’

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘শুধু জলদস্যুতা নয়, রাজনৈতিক পরিচয়ে কতিপয় ব্যক্তি অবৈধ সুবিধা নিতে দুবলারচরে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে সুন্দরবনে দস্যুতা বেড়েছে। তাই আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কোস্ট গার্ডের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ২৬ অক্টোবর থেকে দুবলারচরে শুঁটকি মৌসুম শুরু হচ্ছ, শেষ হবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। এ মৌসুমের চার মাস ধরে জেলেরা দুবলারচর, আলোরকোল, অফিসকেল্লা, নারকেলবাড়িয়া ও শেলারচরে অবস্থান করবেন। চরগুলোতে জেলেদের থাকার জন্য ৯০০টি ঘর ও ৮০টি দোকান তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মাছ বেচাকেনার জন্য ডিপোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১০০টি। তবে এ সবের জন্য কোনোভাবেই বনের গাছ কাটা ও ব্যবহার করা যাবে না।

রেজাউল করিম চৌধুরী, গত মৌসুমে শুঁটকি থেকে বন বিভাগের ৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল। এবার ৭ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কোস্ট গার্ডের গণমাধ্যম কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, বর্তমানে সুন্দরবনের ভেতরে সক্রিয় দস্যুদের রুখে দেওয়ার পাশাপাশি দস্যু নির্মূলে ধারাবাহিক ও নিয়মিত অভিযান চলছে। এরই মধ্যে অপহৃত বহু জেলে ও বাওয়ালিকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘গত বছর শুঁটকি মৌসুম ঘিরে সাগরে জলদস্যুদের উপদ্রব বেশি ছিল। বিষয়টি মাথায় রেখে বন বিভাগের প্রস্তুতির পাশাপাশি আমরা কোস্ট গার্ডকে চিঠি দিয়েছি; তারা যেন নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়। এ ছাড়া মৌখিকভাবে র‍্যাবেরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আবু বাকেরকে লক্ষ্য করে ককটেল হামলার অভিযোগ, এনসিপির বিক্ষোভ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আবু বাকের মজুমদার। ফাইল ছবি
আবু বাকের মজুমদার। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস—রূপান্তরিত জাতীয় ছাত্রশক্তি) আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার তাঁর মোটরসাইকেল লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাত ৮টার পর রাজধানীর শাহবাগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি।

রাত ৮টা ৩৪ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে আবু বাকের মজুমদার লিখেছেন, ‘কিছুক্ষণ আগে ৮টা ২৩-২৪ মিনিটের সময় ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে আমার বাইকের সামনে ককটেল মারা হয়েছে। রূপায়ণ টাওয়ারে সাংগঠনিক মিটিংয়ের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলাম। রাজনৈতিক কারণে এক্সটার্নাল এবং ইন্টারনাল অনেকের শত্রু হয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ, এখনো সুস্থ আছি, দোয়া করবেন।’

হামলার প্রতিবাদে রাত ১০টার দিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মহাসড়কে কোনো অবৈধ যানবাহন চলতে পারবে না: বিআরটিএ চেয়ারম্যান

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
বিআরটিএর চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
বিআরটিএর চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

বিআরটিএর চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, মহাসড়কে কোনো অবৈধ যানবাহন চলতে পারবে না। এ বিষয়ে পুলিশ, বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাতে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ যৌথ আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কোনো লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি আমরা মহাসড়কে চলতে দেব না। এ জন্য বিআরটিএ, প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর একসঙ্গে কাজ করছে। সরকারি গাড়িগুলোও ছাড় পাবে না, এমনকি আমি নিজেই বিআরটিএর গাড়ি ডাম্প করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

ভারতের ইন্দোরে শ্লীলতাহানির শিকার অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত