Ajker Patrika

বিশ্ব নদী দিবস আজ

বর্জ্য আর নিষিদ্ধ জালে ধুঁকছে কপোতাক্ষ

  • দখল-দূষণে ভরাট হচ্ছে একসময়ের স্বচ্ছ পানির নদ
  • নৌকা, স্টিমারের বদলে কচুরিপানা ও বাঁশের খুঁটির আধিক্য
  • ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা ইউএনওর
মাসুদুর রহমান মাসুদ, ঝিকরগাছা (যশোর)
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৯
একসময় স্বচ্ছ পানির স্রোতোধারা ছিল কপোতাক্ষ নদে। সেই স্রোত আজ অতীত। চলে না কোনো স্টিমার। আছে শুধু কচুরিপানা, ময়লার ভাগাড় আর পানিতে পোঁতা বাঁশের খুঁটি। সম্প্রতি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়ায় মাদ্রাসা মার্কেটের পেছনে। ছবি: আজকের পত্রিকা
একসময় স্বচ্ছ পানির স্রোতোধারা ছিল কপোতাক্ষ নদে। সেই স্রোত আজ অতীত। চলে না কোনো স্টিমার। আছে শুধু কচুরিপানা, ময়লার ভাগাড় আর পানিতে পোঁতা বাঁশের খুঁটি। সম্প্রতি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়ায় মাদ্রাসা মার্কেটের পেছনে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বর্জ্য, নিষিদ্ধ কারেন্ট, ভেসাল, চায়না দুয়ারি জালে ধুঁকছে কপোতাক্ষ নদ। অথচ, একসময় এই নদে ছিল স্বচ্ছ পানির স্রোতোধারা। ব্যবসায়িক কাজে নদের বুক চিরে সহজে পণ্য আনা-নেওয়া করতেন বণিকেরা। নৌকা ও স্টিমারে নিত্য যাতায়াত ছিল উপকূলের বাসিন্দাদের। তবে আজকের কপোতাক্ষে সেই স্রোত নেই। নেই কোনো স্টিমার। আছে শুধু কচুরিপানা, ময়লার ভাগাড় আর পানিতে পোঁতা বাঁশের খুঁটি।

যশোরের ঝিকরগাছা অংশের কপোতাক্ষের তীর ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে অসাধুদের দখলে। উচ্চ আদালত দেশের সব নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে রায় দিলেও বর্জ্য আর দখলদারদের কবলে পড়ে এখন মৃতপ্রায় কপোতাক্ষ। কোথাও কোথাও পরিণত হয়েছে মরা খালে। তবে এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই প্রশাসনের।

আজ রোববার বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে ঝিকরগাছায় সরেজমিনে কপোতাক্ষের বর্তমান অবস্থা ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। এ সময় দেখা যায়, ঝিকরগাছা বাজার, বাঁকড়া ও ছুটিপুর বাজারে সেতুর দুপাশে বর্জ্য ফেলতে ফেলতে ভরাট হতে চলেছে ঐতিহাসিক এই নদ। উপজেলার বাঁকড়া বাজারের অধিকাংশ বর্জ্য ফেলা হয় কপোতাক্ষে। বাঁকড়া বাজারের মাছপট্টির নিচে এবং সেতুর পশ্চিম পাশে বর্জ্যের ভাগাড় বানানো হয়েছে। বাঁকড়া বাজারের যাবতীয় বর্জ্য মাছপট্টির নিচে ফেলায় ওই পথ ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ে কারেন্ট ও ভেসাল জাল এবং চায়না দুয়ারি ব্যবহার নিষিদ্ধ। এই আইন অমান্যকারীর কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে। কিন্তু উপজেলার বেজিয়াতলা ব্রিজ এলাকা থেকে সাদিপুর পর্যন্ত এসব জাল ও চায়না দুয়ারি পেতে মাছ ধরা হয়। পানিতে পোঁতা হয়েছে বাঁশের খুঁটি। মাছ ধরার জন্য কচুরিপানা আটকে রাখা হয়েছে।

উপজেলার বল্লা গ্রামের মো. বাবলুর রহমান বলেন, ‘সাদিপুর ঘাট থেকে নওয়ালী মোড় পর্যন্ত নদীতে অন্তত ২০০ কারেন্ট জাল পাতা হয়।

ভেসাল ও চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মাছ মারা হচ্ছে।’ নওয়ালী গ্রামের মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মনিরামপুর উপজেলার কায়েমকোলা গ্রামের কিছু লোক মাছ ধরার জন্য জাল পাতে। পানিতে খুঁটি পুঁতে কচুরিপানা আটকে নদীটা শেষ করে দিয়েছে।’

নদের পুরন্দরপুর, কাটাখাল, মাগুরা, জামালপুর, গন্দানন্দপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় নিষিদ্ধ কারেন্ট ও ভেসাল জাল এবং চায়না দুয়ারি ব্যবহার করে মাছ ধরা হয়। বাঁকড়া বাজার পরিচালনা পর্ষদের আহ্বায়ক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাজারের বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোনো স্থান নেই। তাই কপোতাক্ষে ফেলা হয়। তবে নতুন জায়গা খোঁজা হচ্ছে। শিগগির নদে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে চাই।’

উপজেলার ছুটিপুর বাজারের সিরাজুল কমপ্লেক্সের নিচে, সেতুর গোড়ায় পূর্ব ও পশ্চিম পাশেও বর্জ্য ফেলার নিরাপদ স্থান গড়ে তোলা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বাজারের যাবতীয় বর্জ্য কপোতাক্ষ নদে ফেলা হলেও এ নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।

কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন কমিটির ঝিকরগাছা উপজেলা আহ্বায়ক মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। ফলে এতে বর্জ্য ফেলা ফৌজদারি অপরাধ। অথচ দীর্ঘদিন এভাবে বর্জ্য ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’

ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ভুপালী সরকার বলেন, ‘কোনো অবস্থায় নদে বর্জ্য ফেলা যাবে না। তারপরও কেউ ফেললে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে যেসব স্থানে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করার কাজ চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ