Ajker Patrika

ক্ষুদ্র ঋণের নামে চলছে প্রতারণা, গ্রাহকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা পিডো

জিয়াউল হক, যশোর
ক্ষুদ্র ঋণের নামে চলছে প্রতারণা, গ্রাহকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা পিডো

`চার বছর আগে সন্তান পেটে থাকতে আমি তিন লাখ টাকা সঞ্চয় করি পিডোতে (পল্লী অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থায়)। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তখন জমি ও গরু বিক্রি করে টাকা দিয়েছিলাম তাদের কাছে। স্ট্যাম্পে লিখিত দিয়েছিল তারা, দ্বিগুণ লাভ দিবে। কিন্তু তারা এখন নেই। অফিসে তালা ঝোলানো। আমি কি করব এখন? ' অশ্রুসিক্ত চোখে কথাগুলো বলছিলেন যশোর সদরের রুপদিয়া এলাকার গৃহবধূ সালমা বেগম। 

সালমা বেগম বলেন, `সরকারতো তাদের অনুমোদন দিয়েছে। সব কাগজপত্রও দেখিয়েছেন তাঁরা। এরপরও আমরা বুঝব কীভাবে তাঁরা প্রতারক? ' 

শুধু সালমা বেগমই নন পল্লী অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থার (পিডো) প্রতারণার শিকার হয়েছেন সালমা বেগম, মজিবর রহমান, মালতী দেবীসহ সহস্রাধিক গ্রাহক। লাভ তো দূরের কথা তাদের কেউই মূল টাকাও পাননি। তার আগেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন সংস্থাটির সভাপতি মাছুদুর রহমান। অথচ এ সংস্থাটিকে ঋণ কার্যক্রম চালানোর অনুমোদন দিয়েছিল মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি। অনুমোদন ছিল সমাজসেবা অধিদপ্তর ও এনজিও ব্যুরোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোরও। কিন্তু তাদের সকলেই এখন এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে গড়িমসি করছেন। নির্বিকার রয়েছে প্রশাসনও। 

সূত্রমতে, ১৯৯৯ সালে স্বেচ্ছামূলক সমাজ কল্যাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধনভুক্ত হয়ে কার্যক্রম শুরু করে পিডো পল্লী অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থা। যার নিবন্ধন নম্বর ৬২০ / ৯৯। সদর উপজেলার রুপদিয়ায় স্থাপন করা হয় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়। সে সময় শুধু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবেই কাজ করে তারা। এরপর ২০১২ সালে এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধনভুক্ত হয় সংস্থাটি। যার নিবন্ধন নম্বর ২৬৯৩। 

জানা যায়, এ দুটি নিবন্ধনের পরপরই ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে সীমিত পরিসরে কাজ শুরু করে মাছুদুর রহমান। তখন স্থানীয়রা বাধা দিলে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটিকে কাছে আবেদন করে কিছুদিনের জন্য কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিলেন তিনি। এরপর ২০১৫ সালে ৫৩.০১. ০০০০.০১০. ০১.০০১. ২০১৫-৭৭৮ (৮) নম্বর স্মারকের মাধ্যমে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি ক্ষুদ্র ঋণ পরিচালনার জন্য পিডো কর্তৃপক্ষকে সাময়িক অনুমোদন দেয়। সেখান থেকেই মাছুদুর রহমানের প্রতারণা জেঁকে বসতে শুরু করে বলে জানান স্থানীয়রা। 

ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম জানান, গত বছরের জুন মাসে তাঁর সঞ্চয় পত্রের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর তিনি অফিসে গেলে টাকা নিয়ে টালবাহানা করতে থাকে কর্মকর্তারা। ইতি সেন, পল্লবী রায়, মুজিবর রহমানদেরকেও টাকা দেওয়ার বিভিন্ন তারিখ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মাসের পর মাস অতিবাহিত হলেও টাকা পাননি তাঁরা। অবশ্য রেজাউল করিম দুই কিস্তিতে মাত্র ৬ হাজার টাকা পেলেও সুদে-আসলে তার পাওয়ার কথা রয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্থাটির সহস্রাধিক গ্রাহকের কেউই আসল টাকাই ফেরত পাননি। তার আগেই গা ঢাকা দিয়েছেন মাছুদুর রহমান। এমনকি এরপর থেকে তাঁর মোবাইল নম্বরগুলোও বন্ধ রয়েছে। 

নরেন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোদাচ্ছের আলী জানান, মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে মাসুদুর রহমান নরেন্দ্রপুর ও বসুন্দিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পিডো এর কয়েকটি শাখা খোলেন। সেখানে নিয়োগ দেন অর্ধশতাধিক নারী কর্মীকে। এরপর তাদের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে গিয়ে গ্রাহক জোগাড় করেন। তিনটি সরকারি দপ্তরের অনুমোদন থাকায় আমরাও তখন বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলাম। কিন্তু দু’তিন বছর না যেতেই গ্রাহকদের হয়রানির অভিযোগ আসতে শুরু করে আমাদের কাছে। আশ্বাসের ভিত্তিতে তখন কয়েকটি অভিযোগের সমাধানও করেছি আমরা। কিন্তু এরপর হঠাৎ করেই গত বছর গা ঢাকা দেয় মাছুদুর রহমান। তখন বেরিয়ে আসতে শুরু করে তার সীমাহীন প্রতারণার বিষয়টি। 

এ ব্যাপারে আলাপকালে যশোর সমাজসেবা অধিদপ্তরের সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সাঈদুর রহমান বলেন, পিডো এর প্রতারণার বিষয়ে আমাদের কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি আমরা দেখছি। যদি অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে। 

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান খানের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, `আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করি। ওই কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী পিডোর কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরও কর্তৃপক্ষ আবার অনুমোদন চেয়েছিল। কিন্তু আমরা এখনো কোনো অনুমোদন দেইনি। এক প্রশ্নের জবাবে মিজানুর বলেন, `আমরা কেবলই অনুমোদন স্থগিত কিংবা বাতিল করতে পারি। আমরা ইতিমধ্যেই পিডোর কার্যক্রম বন্ধের জন্য যশোরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। তবে এর বেশি আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই।' 

যশোরে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি, সমবায় সমিতি, সমাজসেবা অধিদপ্তর, এনজিও ব্যুরোসহ বিভিন্ন দপ্তরের নিবন্ধনকৃত সহস্রাধিক সমিতি বা সংস্থা রয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কাজ করা এসব সংস্থার এক-তৃতীয়াংশের বিরুদ্ধেই গ্রাহকের অর্থ নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। আর সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মাঝে সমন্বয়হীনতার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। 

যশোর জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শেখ তাজ হোসেন তাজু জানান, বাংলাদেশের আইনানুযায়ী যে কেউই ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কাজ করতে পারে না। এ জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেসব নীতিমালা না মেনেই অনেক প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কাজ করছে। তারা কীভাবে এর অনুমোদন পায় এটি যেমন প্রশ্নবিদ্ধ, তেমনি অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। 

আইনজীবী তাজ হোসেন তাজু বিভিন্ন মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, যখন মানুষ প্রতারণার শিকার হয়, ঘটনার নায়ক গা ঢাকা দেয় কিংবা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। তখনই কেবল বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হতে দেখি। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর ফলাফল শূন্য হয়। তত দিনে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হন সাধারণ মানুষ বা গ্রাহকেরা। এবং তাদের অনেকেই তত দিনে নিঃস্ব হয়ে যান। সুতরাং এসব ঘটনা এড়াতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটিসহ সকল দপ্তরগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে সকল দপ্তরকেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাহলেই কেবলমাত্র এ সমস্যা থেকে উত্তরণ করা সম্ভব। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিলেট চেম্বারের নির্বাচন স্থগিত করল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

সিলেট প্রতিনিধি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন স্থগিত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আজ রোববার মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন-১ শাখার উপসচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে নির্বাচন স্থগিতের বিষয়টি জানানো হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রশাসক সাঈদা পারভীন জানান, কয়েকজনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য এটি স্থগিত করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও পুনঃতফসিলের মাধ্যমে দুই বছর মেয়াদি (২০২৫-২৬) পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে আগামী ১ নভেম্বর সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে প্রার্থী বাছাইসহ নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বরিশালে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ১৩
বরিশাল নগরীতে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল নগরীতে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল নগরীতে এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে ৪ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রাকিবুল ইসলাম আজ রোববার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাসেল গাজী (৪৫), মো. রোকন খান (৩৩), রাজিব জমাদ্দার (৩৫) ও জাহিদ হাওলাদার (৩৬)।

ট্রাইব্যুনালের পেশকার অজিবর রহমান জানান, রায় ঘোষণার সময় রাসেল, রাজিব ও জাহিদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামি রোকন খান মামলার বিচার চলাকালে জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক রয়েছেন।

অজিবর রহমান আরও জানান, ধর্ষণের ঘটনার পর গ্রেপ্তার এই চার আসামি অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছিল। তবে পুলিশ তদন্ত শেষে এজাহারভুক্ত ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

মামলার অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে নগরের একটি এলাকায় এই দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তখন গৃহবধূর বয়স ছিল ১৮ বছর। প্রথমে ৯ নভেম্বর ঘরে ঢুকে রাসেল গাজী তাঁকে ধর্ষণচেষ্টা করেন। এর পরদিন ওই নারী বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় ওঠেন। চালক তাঁকে নিয়ে ভুল পথে রওনা দেন। একপর্যায়ে আসামিরা মোটরসাইকেলে তাঁর পিছু নেন এবং নির্জন স্থানে পৌঁছে গৃহবধূকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করে পালিয়ে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টেকনাফের গহিন পাহাড় থেকে উদ্ধার ৫ নারী ও শিশু, মানব পাচারকারী আটক

 টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
অভিযানে আটক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে আটক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের টেকনাফের হাবিরছড়াসংলগ্ন গহিন পাহাড়ি এলাকা থেকে চার নারী ও এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় মানব পাচারকারী অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে কোস্ট গার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সালাউদ্দিন রশিদ তানভীর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আটক পাচারকারী টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাবিবছড়া ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে মোহাম্মদ হাসান (৫৫)।

কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা সালাউদ্দিন রশিদ বলেন, আটক পাচারকারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর উদ্দেশ্যে নারী-শিশুসহ কয়েকজনকে হাবিরছড়ার পাহাড়ি এলাকায় বন্দী করে রাখা হয়েছিল। গতকাল দিবাগত রাত ২টার দিকে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর একটি বিশেষ দল যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে পাচারকারীদের গোপন আস্তানা থেকে চার নারী, এক শিশুসহ পাঁচজন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্র উন্নত জীবনের স্বপ্ন, উচ্চ বেতনের চাকরি ও অল্প খরচে বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের মালয়েশিয়া পাচারের ফাঁদে ফেলে। পাচারের আগে তাদের পাহাড়ি এলাকায় বন্দী রেখে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করা হতো।

উদ্ধার ব্যক্তিদের ও আটক মানব পাচারকারীর বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপি-যুবদলের তিন নেতার বিরুদ্ধে সাংবাদিক লাঞ্ছনার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ভুক্তভোগী সাংবাদিক লুৎফর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
ভুক্তভোগী সাংবাদিক লুৎফর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত এক নেতাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শনিবার দিবাগত রাতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক লুৎফর রহমান তানোর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি দৈনিক কালবেলা ও স্থানীয় দৈনিক সোনার দেশে পত্রিকার তানোর উপজেলা প্রতিনিধি। পুলিশ তাঁর অভিযোগ তদন্ত করছে।

লুৎফর রহমান যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তাঁরা হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বহিষ্কৃত সদস্য ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান (৫০), জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম কুসুম (৪০) ও তানোর পৌর বিএনপির নেতা মো. ইয়াসিন (৫২)।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা অভিযোগটা পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা আছে। ফুটেজ সংগ্রহ করে আমরা দেখব। সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগে লুৎফর রহমান উল্লেখ করেন, ২৩ অক্টোবর তানোরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া এসেছিলেন। তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে সেখানে যান। এ সময় পূর্বশত্রুতার জেরে মিজানুর রহমান তাঁকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগাল শুরু করেন। পরে অন্য আসামিদের হুকুম দিয়ে বলেন, ‘...জনমের মতো সাংবাদিকতা শিখিয়ে দে।’ হুকুম পেয়ে রবিউল ইসলাম কুসুম তাঁর গালে সজোরে থাপ্পড় মারেন।’

অভিযোগে সাংবাদিক লুৎফর লেখেন, ‘আমি অতর্কিত হামলায় হতভম্ব হয়ে পড়ি এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইয়াসিন আমাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিলা, ফোলা ও কালশিরা জখম করেন। একপর্যায়ে কুসুম হুমকি দিয়ে বলেন, গাড়ি থেকে অস্ত্র নিয়ে এসে চিরদিনের মতো শেষ করে দে। যা হয় পরে দেখা যাবে।’ ইয়াসিন গলা চেয়ে ধরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। তখন মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখানে সিসি ক্যামেরা আছে, ধরা পড়ে যাবি।’ প্রায় ১০ মিনিট ধরে আসামিরা আমাকে কিল, ঘুষি ও থাপ্পড় মারার পর মিজানুর রহমান আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং বলেন, ‘এ মুহূর্তে এলাকা ছেড়ে যাবি, নতুবা এখানেই তোর লাশ পড়ে যাবে।’ পরে অনেকে ছুটে এসে আমাকে আসামিদের হাত থেকে রক্ষা করেন।’

অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘চড়-থাপ্পড়ের কারণে আমি বাম কানের শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলি।’ পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন সাংবাদিক লুৎফর রহমান।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম কুসুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। জেলা যুবদলের সদস্যসচিব রেজাউল করিম টুটুল বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমিও অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিও বিষয়টি জেনে আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তদন্ত করে দেখব।’

অভিযোগের বিষয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান বলেন, ‘সেদিন কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনার কার্ড দেওয়া হচ্ছিল। লুৎফর রহমান বিএনপির লোক পরিচয়ে কার্ড নিতে এসেছিলেন। তখন আমাদের লোকজন জিজ্ঞেস করেন, তিনি কীসের বিএনপি। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। দলের লোকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। আমি সেখানে ছিলাম বলে তাঁকে বাঁচিয়েছি। তা না হলে তো তাঁকে মেরেই ফেলত।’

উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিল ছিল। সেদিন প্রধান অতিথি হিসেবে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনকে বরণ করা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত হন। এ ঘটনায় সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমানসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করা হয়। পরে মিজানুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত