Ajker Patrika

যেসব গুণের কারণে হামিদুল ও শাহজাহান আদর্শ শিক্ষক

জাহিদ হাসান, যশোর
যেসব গুণের কারণে হামিদুল ও শাহজাহান আদর্শ শিক্ষক

দেশের অন্যতম বড় বিদ্যাপীঠ যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজে শিক্ষকতা করছেন হামিদুল হক শাহীন ও শাহজাহান কবীর। হামিদুল সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আর শাহজাহান ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। শিক্ষকতার গণ্ডির বাইরে তরুণ এই দুই শিক্ষক নিজ গুণে হাজারো শিক্ষার্থীর কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছেন।

হামিদুল হক শাহীন ১৯৯৯ সালে প্রথম শ্রেণিতে যশোর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০১ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম শ্রেণি ও সম্মিলিত মেধাতালিকায় নবম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান স্নাতক (প্রথম শ্রেণি) ও স্নাতকোত্তর (প্রথম শ্রেণি) সম্পন্ন করেন। এমএ ইন এডুকেশন উইথ মেরিট (ইউনিভার্সিটি অন নটিংহ্যাম, মালয়েশিয়া ক্যাম্পাস); বাংলাদেশ ডিজাস্টার প্রিপেয়ার্ডনেস সেন্টারে (বিডিপিসি) ট্রেনিং অফিসার হিসেবে যোগদান; এরপর গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতার পর ৩১তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে প্রথম স্থান অর্জন করেন।

তরুণ এই শিক্ষক ২০১৩ সালে যশোর এমএম কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। যে সময়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসবিমুখ হয়ে যাচ্ছেন, হামিদুল হক শাহীনের সৃজনশীল পাঠদান প্রক্রিয়ার কারণে আবারও ক্লাসমুখী হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এই শিক্ষকের ভাষ্য, ‘একজন শিক্ষকের কাজ যতটুকু না পড়ানো, তার চেয়ে বেশি হলো কীভাবে পড়তে হয় তা শেখানো। যতটা না পিটিয়ে মানুষ করা, তার চেয়ে মানুষ কীভাবে হতে হয় সেই মূল্যবোধ জাগ্রত করা। পাঠদান প্রক্রিয়াকে আনন্দদান করে তুলতে পারা। পাঠদানকে গল্পের ভেতরে নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ানো। আর এই তিনটা শিখন প্রক্রিয়ার কারণেই শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হন বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন।

শ্রেণিকক্ষে একাডেমিক পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পর চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের মতো কিছু করার অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ জোগান হামিদুল হক শাহীন। শুধু শ্রেণিকক্ষে অনুপ্রেরণা নয়, তাঁর কল্যাণে তরুণেরা গড়ে তুলেছেন ‘আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই সংস্থার মাধ্যমে উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন তাঁরা। তাতে নিজেদের উপার্জনের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নেও তাঁরা ভূমিকা রাখছেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, হামিদুল হক শাহীন শিক্ষকতা জীবনের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কিছু করার অনুমতি পাননি। পরে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে ২০১৩ সালে তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে আইডিয়া নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গত এক দশকে শত শত সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মধ্যে খাবার ও পোশাক বিতরণ করেছেন। এ ছাড়া রোজার মাসে তাঁরা শীতল পানি সরবরাহ, মসজিদে অজুখানা বানিয়ে দেওয়াসহ নানারকম সমাজসেবামূলক কাজ করেন।

হামিদুল হক শাহিনের বিনামূল্যে স্পোকেন ইংলিশ ক্লাস। ছবি: সংগৃহীতএ ছাড়া প্রতি শুক্রবার অসহায় ভবঘুরেদের জন্য মিডডে মিলের ব্যবস্থা করছেন। প্রকল্পটি সম্প্রতি এই কাজের শততম পর্ব পার করেছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের দিয়ে তৈরি আইডিয়া পিঠা পার্কের পণ্য এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পিঠার কারখানা স্থাপন ও কাজের জন্য শিক্ষক শাহীন যশোর শহরের খড়কী শাহ আব্দুল করিম রোডে নিজের একটি জায়গা (৫ দশমিক ৮ শতাংশ) ছেলেমেয়েদের দিয়ে দিয়েছেন। ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর ওই বাড়িতেই পিঠা পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। পিঠা পার্কে পাটিসাপটা, পাকান, পুলি, ভাপা, চিতইসহ দেশীয় দেড় শতাধিক রকমের পিঠা তৈরি করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, পিঠা পার্ক থেকে অর্জিত লভ্যাংশ শুধু সদস্যরাই নেন না, এর একটা অংশ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য ব্যয় করা হয়। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শিক্ষা, বিসিএস শিক্ষা দেওয়ারও ব্যবস্থা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নামমাত্র টাকা নেওয়া হয়, সেটাও নেন না হামিদুল। এসব টাকা ব্যয় করা হয় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে।

মল্লিকা আফরোজ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্যার শিক্ষার্থীদের শুধু একাডেমিক শিক্ষাই দেন না, কর্মমুখী শিক্ষাও দেন।’

হামিদুল হক বলেন, ‘আমার শিক্ষক হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমার শিক্ষকেরাই জুগিয়েছেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এমন কয়েকজন শিক্ষককে আমি পেয়েছি, যাঁরা আমাকে সব সময় সমৃদ্ধির পথে, ভালো একজন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে উৎসাহী করেছেন। সেসব শিক্ষকের অনুপ্রেরণাতেই আমি আজ শিক্ষক। কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশ্বাস করি বলেই পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পর চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের মতো কিছু করার অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দিই।’

অপর শিক্ষক শাহজাহান কবীর ২০০৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক ও ২০০৯ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ২০১৯ সালে নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া ক্যাম্পাস থেকে মাস্টার্স ইন এডুকেশন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ইতিহাস বিভাগে যোগদান করেন। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে শিক্ষার্থীদের তিনি আনন্দ দেন সৃজনশীল পাঠদান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। পাঠদানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বৃদ্ধি করতে তিনি বিভিন্ন কুইজ ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করেন। ইতিহাস বিষয়টি সবার কাছে পৌঁছে দিতে কলেজে গড়ে তুলেছেন ‘ইতিহাস ক্লাব’। গ্রুপভিত্তিক গল্পের মধ্য দিয়ে পাঠদানকে শিক্ষার্থীদের উপভোগ করান তিনি।

শাহজাহান কবীরের পাঠচক্র। ছবি: সংগৃহীততথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত বিকাশমান এই যুগে বই পড়ার প্রবণতা আমাদের সমাজে কমে আসছে। কিশোর ও তরুণেরা ডিজিটাল মাধ্যমে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পরীক্ষা ও পাসনির্ভর হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইয়ের বাইরে তেমন কোনো বই পড়ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে শাহজাহান শিক্ষকতার পাশাপাশি বই পড়ার আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে ‘সপ্তাহে একটি বই পড়ি’ নামে সংগঠন গড়ে তুলেছেন। নিজ কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও শহরের বিভিন্ন কলেজ, স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই সংগঠনের সদস্য।

‘সপ্তাহে একটি বই পড়ি’ কার্যক্রমের সদস্যরা নিজেরা বই পড়ার পাশাপাশি মূলত এখানে নিখাদ বন্ধুত্ব, নির্মল আনন্দ, সৌন্দর্য সৃজনের চর্চা করে থাকেন। এ ছাড়া নিজেদের পাশাপাশি অন্যকে বই পড়ানোর জন্য ‘বইয়ের বন্ধু’ নামে ‘ফ্রি বুক হোম ডেলিভারি সার্ভিস’ চালু করেছেন শাহজাহান। নিয়মিত পাঠচক্রে বই আলোচনার পাশাপাশি থাকে গান, কবিতা আবৃত্তি, স্বরচিত কবিতা পাঠসহ নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। উপস্থিত সবাই পাঠচক্রে পূর্বনির্ধারিত বইয়ের ওপর পাঠ প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ পান। কোনো কোনো বইয়ের জন্য প্রধান আলোচকও রাখা হয়। বইটির ওপর বিশদ আলোচনার পাশাপাশি প্রধান আলোচক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

পাঠচক্রের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন, জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন, রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী উদ্‌যাপনের মতো নানা আয়োজন করে ‘সপ্তাহে একটি বই পড়ি’। প্রতি আসরে চা-নাশতার ব্যবস্থা রাখা হয়। সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে কোনো চাঁদা নেওয়া হয় না। চাকরির বেতনের টাকা বাঁচিয়েই বই কেনা ও নাশতার খরচ জোগান শাহজাহান কবীর। সদস্যরা এক বছরে বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বই থেকে নির্বাচিত ৪৮ থেকে ৫২টি বই পড়ার সুযোগ পান। শুরু থেকেই পাঠচক্রের গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন শাহজাহান কবীর।

পারিবারিকভাবে শিক্ষক পরিবারে বেড়ে ওঠার অনুপ্রেরণাতেই তিনি শিক্ষক পেশায় এসেছেন। ২০০৯ সাল থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। পাঠচক্রটি গড়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়ে শাহজাহান কবীর বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার একটি সুস্থ-সুন্দর পাঠকসমাজ গড়ে তোলা। একটা সুস্থ, মানবিক ও মননশীল সমাজ গঠনের জন্য বই পড়ার অভ্যাস অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’

শিক্ষাঙ্গনের পাশাপাশি সামাজিক অঙ্গনেও সমান পরিচিত এই দুই শিক্ষক। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ জোগানোর সব শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন তাঁরা। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁদের কথা শোনেন।

এই দুই গুণী শিক্ষকের বিষয়ে যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি হামিদুল হক শাহীন ও শাহজাহান কবীরের কার্যক্রম বেশ প্রশংসিত। তাঁরা দুজনই শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় তাদের কর্মপরিধির কারণে। তাঁরা দুজনই শিক্ষকদের মডেল।

এ বিষয়ে যশোরের প্রবীণ শিক্ষাবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন পাঠক কমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রেণিকক্ষের বাইরে শাহজাহান কবীর মানুষকে বই পড়ানোর চেষ্টা করছেন। ক্লাসেও পড়ার বাইরে নতুন নতুন বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি করছেন। অন্যদিকে হামিদুল হক ছেলেমেয়েদের আত্মনির্ভর করতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছেন। তাঁরা আধুনিক শিক্ষকদের মডেল। তাঁরা কোচিংয়ের দিকে অগ্রসর হননি। তাঁরা মানুষকে আলোকিত করা, ভালো পথের দিশা দেওয়ার ব্রত নিয়েছেন। তাঁরা অর্থের পেছনে ঘোরেন না। তাঁদের কারণে শিক্ষার্থীরা আলোকিত হচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বরিশালে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ১৩
বরিশাল নগরীতে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল নগরীতে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল নগরীতে এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে ৪ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রাকিবুল ইসলাম আজ রোববার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাসেল গাজী (৪৫), মো. রোকন খান (৩৩), রাজিব জমাদ্দার (৩৫) ও জাহিদ হাওলাদার (৩৬)।

ট্রাইব্যুনালের পেশকার অজিবর রহমান জানান, রায় ঘোষণার সময় রাসেল, রাজিব ও জাহিদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামি রোকন খান মামলার বিচার চলাকালে জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক রয়েছেন।

অজিবর রহমান আরও জানান, ধর্ষণের ঘটনার পর গ্রেপ্তার এই চার আসামি অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছিল। তবে পুলিশ তদন্ত শেষে এজাহারভুক্ত ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

মামলার অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে নগরের একটি এলাকায় এই দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তখন গৃহবধূর বয়স ছিল ১৮ বছর। প্রথমে ৯ নভেম্বর ঘরে ঢুকে রাসেল গাজী তাঁকে ধর্ষণচেষ্টা করেন। এর পরদিন ওই নারী বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় ওঠেন। চালক তাঁকে নিয়ে ভুল পথে রওনা দেন। একপর্যায়ে আসামিরা মোটরসাইকেলে তাঁর পিছু নেন এবং নির্জন স্থানে পৌঁছে গৃহবধূকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করে পালিয়ে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টেকনাফের গহিন পাহাড় থেকে উদ্ধার ৫ নারী ও শিশু, মানব পাচারকারী আটক

 টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
অভিযানে আটক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে আটক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের টেকনাফের হাবিরছড়াসংলগ্ন গহিন পাহাড়ি এলাকা থেকে চার নারী ও এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় মানব পাচারকারী অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে কোস্ট গার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সালাউদ্দিন রশিদ তানভীর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আটক পাচারকারী টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাবিবছড়া ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে মোহাম্মদ হাসান (৫৫)।

কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা সালাউদ্দিন রশিদ বলেন, আটক পাচারকারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর উদ্দেশ্যে নারী-শিশুসহ কয়েকজনকে হাবিরছড়ার পাহাড়ি এলাকায় বন্দী করে রাখা হয়েছিল। গতকাল দিবাগত রাত ২টার দিকে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর একটি বিশেষ দল যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে পাচারকারীদের গোপন আস্তানা থেকে চার নারী, এক শিশুসহ পাঁচজন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্র উন্নত জীবনের স্বপ্ন, উচ্চ বেতনের চাকরি ও অল্প খরচে বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের মালয়েশিয়া পাচারের ফাঁদে ফেলে। পাচারের আগে তাদের পাহাড়ি এলাকায় বন্দী রেখে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করা হতো।

উদ্ধার ব্যক্তিদের ও আটক মানব পাচারকারীর বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপি-যুবদলের তিন নেতার বিরুদ্ধে সাংবাদিক লাঞ্ছনার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ভুক্তভোগী সাংবাদিক লুৎফর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
ভুক্তভোগী সাংবাদিক লুৎফর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত এক নেতাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শনিবার দিবাগত রাতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক লুৎফর রহমান তানোর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি দৈনিক কালবেলা ও স্থানীয় দৈনিক সোনার দেশে পত্রিকার তানোর উপজেলা প্রতিনিধি। পুলিশ তাঁর অভিযোগ তদন্ত করছে।

লুৎফর রহমান যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তাঁরা হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বহিষ্কৃত সদস্য ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান (৫০), জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম কুসুম (৪০) ও তানোর পৌর বিএনপির নেতা মো. ইয়াসিন (৫২)।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা অভিযোগটা পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা আছে। ফুটেজ সংগ্রহ করে আমরা দেখব। সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগে লুৎফর রহমান উল্লেখ করেন, ২৩ অক্টোবর তানোরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া এসেছিলেন। তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে সেখানে যান। এ সময় পূর্বশত্রুতার জেরে মিজানুর রহমান তাঁকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগাল শুরু করেন। পরে অন্য আসামিদের হুকুম দিয়ে বলেন, ‘...জনমের মতো সাংবাদিকতা শিখিয়ে দে।’ হুকুম পেয়ে রবিউল ইসলাম কুসুম তাঁর গালে সজোরে থাপ্পড় মারেন।’

অভিযোগে সাংবাদিক লুৎফর লেখেন, ‘আমি অতর্কিত হামলায় হতভম্ব হয়ে পড়ি এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইয়াসিন আমাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিলা, ফোলা ও কালশিরা জখম করেন। একপর্যায়ে কুসুম হুমকি দিয়ে বলেন, গাড়ি থেকে অস্ত্র নিয়ে এসে চিরদিনের মতো শেষ করে দে। যা হয় পরে দেখা যাবে।’ ইয়াসিন গলা চেয়ে ধরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। তখন মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখানে সিসি ক্যামেরা আছে, ধরা পড়ে যাবি।’ প্রায় ১০ মিনিট ধরে আসামিরা আমাকে কিল, ঘুষি ও থাপ্পড় মারার পর মিজানুর রহমান আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং বলেন, ‘এ মুহূর্তে এলাকা ছেড়ে যাবি, নতুবা এখানেই তোর লাশ পড়ে যাবে।’ পরে অনেকে ছুটে এসে আমাকে আসামিদের হাত থেকে রক্ষা করেন।’

অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘চড়-থাপ্পড়ের কারণে আমি বাম কানের শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলি।’ পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন সাংবাদিক লুৎফর রহমান।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম কুসুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। জেলা যুবদলের সদস্যসচিব রেজাউল করিম টুটুল বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমিও অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিও বিষয়টি জেনে আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তদন্ত করে দেখব।’

অভিযোগের বিষয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান বলেন, ‘সেদিন কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনার কার্ড দেওয়া হচ্ছিল। লুৎফর রহমান বিএনপির লোক পরিচয়ে কার্ড নিতে এসেছিলেন। তখন আমাদের লোকজন জিজ্ঞেস করেন, তিনি কীসের বিএনপি। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। দলের লোকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। আমি সেখানে ছিলাম বলে তাঁকে বাঁচিয়েছি। তা না হলে তো তাঁকে মেরেই ফেলত।’

উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিল ছিল। সেদিন প্রধান অতিথি হিসেবে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনকে বরণ করা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত হন। এ ঘটনায় সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমানসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করা হয়। পরে মিজানুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ত্রীকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, ক্ষোভে হত্যা করে পালিয়ে যান স্বামী: র‍্যাব

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরের মধুখালীতে হত্যা মামলায় যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। ছবি: সংগৃহীত
ফরিদপুরের মধুখালীতে হত্যা মামলায় যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় বন্যা রানী নামের এক নারীকে হত্যা মামলায় তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। তাঁর নাম সৌরভ কুমার দাস (২২)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানিয়েছে, বন্যাকে তাঁর মা আটকে রেখে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সৌরভ তাঁর স্ত্রীকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যান।

আজ রোববার দুপুরে ফরিদপুর র‍্যাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানি কমান্ডার ও স্কোয়াড্রন লিডার তারিকুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

এর আগে সকালে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া এলাকা থেকে মামলার একমাত্র আসামি সৌরভ কুমার দাসকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তিনি ফরিদপুর সদরের বঙ্গেশ্বরদি গ্রামের বাসুদেব দাসের ছেলে এবং পেশায় গ্যারেজের মিস্ত্রি।

তারিকুল ইসলাম জানান, ২০ অক্টোবর সকালে মধুখালী পৌরসভার গাড়াখোলা এলাকায় শাশুড়ির ভাড়াবাসায় ঢুকে বন্যাকে শ্বাস রোধ করে পালিয়ে যান সৌরভ। পরদিন ২১ অক্টোবর মধুখালী থানায় সৌরভকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা করেন বন্যার মা শেফালী রানী।

হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের তথ্য তুলে ধরে তারিকুল ইসলাম বলেন, চার বছর আগে পালিয়ে বিয়ে করেন সৌরভ ও বন্যা। বিষয়টি তখন বন্যার মা মেনে নেননি। সৌরভ ও বন্যা দুই বছর ধরে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তাঁদের একটি পুত্রসন্তান হয়, যার বয়স দুই বছর। সম্প্রতি তাঁরা এলাকায় ফিরে আসেন। বিভিন্ন সময় বন্যা তাঁর মায়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে তাঁকে আটকে রাখা হয়। সর্বশেষ দুর্গাপূজার আগে বন্যা তাঁর মায়ের বাড়িতে যাওয়ার পর সৌরভের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। একপর্যায়ে সৌরভ জানতে পারেন, তাঁর স্ত্রীকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন শাশুড়ি।

র‍্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পেরে ২০ অক্টোবর শাশুড়ির বাসায় যান সৌরভ। এ সময় বাইরে থেকে বন্যাকে অশ্লীল ভঙ্গিতে কথা বলতে দেখে তিনি ঘরে ঢুকে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে সন্তানকে নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। ওই সময় তাঁকে পেছন থেকে কিল-ঘুষি দিতে থাকেন স্ত্রী। এ নিয়ে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে বন্যাকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যান সৌরভ। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে মধুখালী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনার পর নিহতের মা শেফালী রানী অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, বিয়ের পর থেকে সৌরভ অন্য নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে কলহের জের ধরে বন্যাকে হত্যা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত