Ajker Patrika

ছাত্রাবাসে গাঁজাগাছ: ইসলামপুরে ছাত্রলীগ নেতার রোষানল থেকে বাঁচতে দুই শিক্ষার্থীর আবেদন

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ জুন ২০২৩, ১৪: ০৫
ছাত্রাবাসে গাঁজাগাছ: ইসলামপুরে ছাত্রলীগ নেতার রোষানল থেকে বাঁচতে দুই শিক্ষার্থীর আবেদন

জামালপুরের ইসলামপুরে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) ছাত্রাবাস থেকে গত শুক্রবার গভীর রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযানে চালিয়ে মাদক গ্রহণের বিভিন্ন সরঞ্জাম, মদের বেশ কিছু খালি বোতলসহ টবে রোপণকৃত একটি গাঁজার গাছ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলহাজ মিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগ নেতা আলহাজ মিয়ার রোষানল থেকে রেহাই পেতে আইএইচটির মো. দায়েমূল ইসলাম জীবন মিয়া এবং রিদোয়ান আল রাফি নামে দুই শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ, জেলা ছাত্রলীগ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর আলাদা লিখিত অভিযোগ করেন। এতেই উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তুলে ধরেন তাঁরা। 

গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মাহমুদুল্লাহ।  এর আগে গত রোববার রাতে আইএইচটির অধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগ করেন ওই দুই শিক্ষার্থী। অবশ্য এখনো এটি হাতে পাননি বলে জানান অধ্যক্ষ। অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে। তবে আনীত অভিযোগ ‘ষড়যন্ত্রের অংশ’ বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগ নেতা মো. আলহাজ মিয়া।  

আইএইচটির তৃতীয় ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ভুক্তভোগী মো. দায়েমূল ইসলাম জীবন মিয়া তাঁর আবেদনে উল্লেখ করেন, আলহাজ মিয়া তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান পাকাপোক্ত করতে কখনো কখনো আইএইচটির ছাত্রাবাসে ঢুকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালান। প্রায়ই বহিরাগত লোকজন নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে দলীয় প্রভাব বিস্তার করেন। উদ্দেশ্য হাসিল করতে দলীয় সভা-সেমিনারে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করিয়ে তাঁর পক্ষে সমর্থন আদায় করেন। লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটায় দলীয় সভা-সেমিনারে না যেতে চাইলে শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি দেন। এ ছাড়া তিনি কিছু ছাত্রকে মাদকে আসক্তি করিয়েছেন। 

মো. দায়েমূল ইসলাম জীবন মিয়া আরও জানান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে কিছু করার সাহস পায় না। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা আলহাজ মিয়ার দাপটে আতঙ্কে থাকে। গত ২ জুন সন্ধ্যায় ছাত্রাবাসের ২১৪, ২১৭ ও ৩২০ নম্বর কক্ষে ঢুকে আলহাজ মিয়ার অনুসারী পঞ্চম ব্যাচের প্রথম বর্ষের ছাত্র উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য রিফাত আহমেদ ফারাজি এবং তৃতীয় ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইসলামপুর পৌর ছাত্রলীগের ৭ নম্বর ওয়ার্ড শাখার সভাপতি আহসান রায়হান মাদক সেবন করেন। এতে বাধা দেওয়ায় তাঁরা জীবন মিয়াকে বেধড়ক মারধর করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। কিন্তু জরুরি বিভাগে ঢুকে আলহাজ মিয়াকে সমর্থন দিতে রাজি না হলে চিকিৎসা নিতে দেওয়া হবে বলে সতর্ক করে আবারও জীবন মিয়াকে মারধরের চেষ্টা করেন তাঁরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ফোন পেয়ে পুলিশ উপস্থিত হলে তাদের রোষানল থেকে সাময়িক মুক্তি পান জীবন মিয়া। 

তিনি আবেদনে আরও উল্লেখ করেন, পরে ২ জুন রাত ১১টার দিকে থানার পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একদল সদস্য অভিযান চালিয়ে ছাত্রাবাসের ২১৪ নম্বর কক্ষে রিফাত ফারাজি ও রায়হানের টবে রোপণকৃত একটি গাঁজা গাছ, ইয়াবা সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জামসহ মদের বেশ কিছু খালি বোতল উদ্ধার করেন। 

অন্যদিকে, তৃতীয় ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিদোয়ান আল রাফি তাঁর আবেদনে উল্লেখ করেন, ছাত্রাবাসের ২১৪ নম্বর কক্ষে তিনি থাকেন। আলহাজ মিয়ার মদদে রিফাত ফারাজি এবং রায়হান জোর করে টবে গাঁজার গাছ রোপণ করে। বিষয়টি কাউকে বললে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন তারা। এ ঘটনার পর থেকে আলহাজ মিয়ার সঙ্গীরা জীবন মিয়া এবং আল রাফিকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। এতে তাঁরা দুজনই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

ইসলামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলহাজ মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। যারা অভিযোগ করেছে, তাঁদের চিনিও না। আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। পুরো বিষয়টি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ।’ 

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাফিউল করিম রাব্বী বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতা আলহাজ মিয়ার রোষানলে পড়ে হয়রানির হওয়ার বিষয়ে ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের কাছে জমা দিতে বলব। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সাংগঠনিক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।’ 

ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মিয়ার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলে দুই শিক্ষার্থীর লিখিত আবেদন পেয়েছি। সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আনীত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’ 

আইএইচটির অধ্যক্ষ ডা. প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, ‘ছাত্রাবাসের কক্ষ থেকে মাদক গ্রহণের সরঞ্জামসহ মদের খালি বোতল এবং টবের মধ্যে রোপণকৃত একটি ছোট্ট গাঁজা গাছ উদ্ধার করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। ছাত্রদের অভিযোগ হাতে পাইনি। কিন্তু এ ঘটনায় ইতিমধ্যে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিতাসে অস্ত্র-গুলিসহ ৪ নারী গ্রেপ্তার

হোমনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
উদ্ধার হওয়া গুলি ও অস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
উদ্ধার হওয়া গুলি ও অস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার তিতাসে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র-গুলিসহ চার নারীকে গ্রেপ্তার হয়েছে। গতকাল শনিবার (২৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত থেকে আজ রোববার ভোর পর্যন্ত উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নের শাহপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তিতাস-অস্ত্র২
তিতাস-অস্ত্র২

গ্রেপ্তার নারীরা হলেন শাহপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের স্ত্রী ফারজানা (২৯), জসিমের স্ত্রী আমিনা (৩৭), জহিরের স্ত্রী জুবেদা (৩৩) ও আব্দুল কাদিরের স্ত্রী শান্তি বেগম (৬০)।

থানা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিতাস থানা-পুলিশের একাধিক টিম শাহপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় সেখান থেকে ১টি বিদেশি রিভলবার, ৬টি গুলি, ১টি এলজি বন্দুক, ২টি পাইপগান উদ্ধারসহ তিন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় একই রাতে একই এলাকার আব্দুল কাদিরের বাড়িতে পৃথক অভিযান চালিয়ে ১০টি সিসা কার্তুজ ও ৫টি ধারালো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার এবং আরও এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। আজ দুপুরে তাঁদের কুমিল্লা আদালতে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডিমলায় টিকা নিতে গিয়ে পিকআপের ধাক্কায় নানি-নাতনি নিহত

ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি 
উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন ঘোড়ামারা রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন ঘোড়ামারা রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর ডিমলায় টিকা নিতে যাওয়ার পথে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় নানি তাঁর ১৪ দিনের নবজাতক নাতনিসহ নিহত হয়েছেন। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন ঘোড়ামারা রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের শুটিবাড়ি বাজারসংলগ্ন এলাকার আব্দুস ছাত্তার খানের স্ত্রী মোছা. সূর্য খাতুন (৫৫) এবং তাঁর নাতনি সামিয়া আক্তার (১৪ দিন) একই এলাকার বাসিন্দা বাবুল হোসেনের মেয়ে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকালে সূর্য খাতুন নাতনি সামিয়াকে নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি মালবাহী পিকআপ তাঁদের ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই নবজাতক সামিয়া মারা যায়। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় সূর্য খাতুনকে উদ্ধার করে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুর্ঘটনার পর পিকআপের চালক পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

নিহত নবজাতকের স্বজনেরা বলেন, নানি তাঁর নাতনিকে নিয়ে টিকা দিতে গিয়েছিল। সকালবেলায় হাসিখুশি ছিল সবাই। কিন্তু মুহূর্তেই সব শেষ হয়ে গেল।

স্থানীয়রা জানান, ওই সড়কে বেপরোয়া গতির কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছে। পিকআপের চালককে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্টেশনমাস্টারের দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি 
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করা হয়েছে। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে আক্কেলপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ‘আক্কেলপুরবাসী’র ব্যানারে এই মানববন্ধন হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অর্ধশতাধিক মানুষ অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, খাদিজা খাতুন ২০ বছরের বেশি সময় ধরে আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সান্তাহার জংশনের দায়িত্বেও আছেন। স্থানীয় যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া এবং তাঁর মনগড়া প্রতিবেদনের কারণে চিলাহাটী এক্সপ্রেস ট্রেনের আক্কেলপুরে যাত্রাবিরতি বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা। তাঁকে দ্রুত এখান থেকে অপসারণের দাবি জানান তাঁরা।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আক্কেলপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও চিলাহাটী এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতির সমন্বয়ক আব্দুর রউফ মাজেদ। বক্তব্য দেন পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম চপল, তিলকপুর ইউপির সদস্য মামুনুর রশিদ পিন্টু, কলেজশিক্ষক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম তুহিন, মাসুদ চৌধুরী, ছাত্রদল নেতা আরমান হোসেন কানন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, আক্কেলপুর, ক্ষেতলাল, নওগাঁর বদলগাছী-পত্নীতলা এবং বগুড়ার দুপচাঁচিয়া এলাকার যাত্রীরা এই স্টেশন ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে। চিলাহাটী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি পেলে মানুষের ভোগান্তি অনেকটা কমবে। কিন্তু স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুনের মনগড়া প্রতিবেদনের কারণে তা বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুন বলেন, ‘আমি চিলাহাটী এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতির বিরোধিতা করে কোনো মৌখিক বা লিখিত প্রতিবেদন দিইনি। ২০২৪ সাল থেকে সান্তাহার জংশনের অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করছি। এক বছর তিন মাসে কোনো যাত্রী আমার দ্বারা হয়রানির শিকার হয়নি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্য প্রাণী সংরক্ষণের নতুন আইনে জামিনের সুযোগ না রাখার প্রস্তাব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।  ফাইল ছবি
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ফাইল ছবি

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণে নতুন করে যে আইন করা হচ্ছে, তার খসড়ায় জামিনের সুযোগ না রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন যেটা নতুন ড্রাফট করেছি, সেখানে কগনিজেবল (পুলিশ যেখানে আদালতের অনুমতি ছাড়াই গ্রেপ্তার ও তদন্ত শুরু করতে পারে) এবং নন-বেইলেবল (জামিন অযোগ্য) অপরাধ যুক্ত করেছি, যা এখনো খসড়া আকারে রয়েছে এবং ক্যাবিনেটে যায়নি।’

আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন ভবনে ‘আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবস ২০২৫’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘বন্য প্রাণী রক্ষায় শুধু আইন নয়, মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণগত পরিবর্তন জরুরি। যদি মানুষ নিরীহ প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর হয়, তা সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রতিফলন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর মেছো বিড়াল নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করলাম। মেছো বিড়ালকে শুধু শুধুই আমরা মেছো বাঘ বলি। বাঘ বলে একটা ভীতি সঞ্চার করি। নিরীহ একটা প্রাণীকে মেরে ফেলি। মারি যে, লজ্জাও পাই না। মেরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা প্রকাশ করি। বন্য প্রাণী আইন বলেন, বিধিমালা বলেন, বন বিভাগ বলেন, সব যদি সক্রিয় হয়; কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন যদি না আসে, তাহলে এই প্রাণীগুলোকে বাঁচানো যাবে না। এই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে সমাজকে দাঁড়াতে হবে।’

অনুষ্ঠানে ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির কান্ট্রি ডিরেক্টর ও ডলফিন বিশেষজ্ঞ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দেশের ৪৫টি বড় নদীতে জরিপ করে ৩৯টি নদীতে ২ হাজার ৮২টি ডলফিনের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে। আমাদের প্রায় ২৫০টি ডলফিন মারা যাওয়ার তথ্য আছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ আমরা দেখেছি কারেন্ট জাল অথবা ফাঁস জালে আটকে মারা গেছে।’

এ বিষয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘ডলফিনগুলোকে বাঁচানোর জন্য বা বংশবৃদ্ধি করার জন্য যা প্রয়োজন, তা একটা সভ্য সমাজের মানদণ্ডের নির্ণায়ক। আপনি যদি বলেন, শুশুক বা আমাদের ডলফিন থাকবে পরিষ্কার পানিতে, তাহলে যেকোনো সভ্য জাতিও থাকবে পরিষ্কার পানির পাশেই। যে জাতি নিজেকে সভ্য দাবি করবে, সে জাতি তার নদীগুলোকে আবার দূষিত করবে—দুটো একসঙ্গে হতে পারে না। দুটো সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যখন ডলফিনের সংখ্যা বাড়বে, তখন বুঝতে হবে, নদীদূষণ আমরা নিয়ন্ত্রণ করছি। যখন আমার ডলফিনের সংখ্যা কমবে, তখন আমি বুঝব, নদীগুলোকে আমি ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলছি। নদী মানুষের জন্য যখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তখন তা ডলফিনের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। নদী যখন ডলফিনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তখন তা মানুষের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।’

ডলফিন নদীর ‘সুস্থতার প্রতীক’ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, যেখানে ডলফিন টিকে থাকে, সেখানে নদীও টিকে থাকে। আর নদী টিকে থাকলেই মানুষ বাঁচে। ডলফিন নিয়ে কথা বলা মানে আমাদের বেঁচে থাকার কথাই বলা। কারণ নদীর পানি যদি দূষিত হয়, তাহলে তা যেমন ডলফিনের জন্য বিপদ, তেমনি মানুষের জন্যও। নদী পরিষ্কার রাখাই মানুষের ও ডলফিনের জীবনের অন্যতম শর্ত।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আশা করি, দেশের প্রতিটি জেলায় বন বিভাগকে সহায়তা করার জন্য স্বেচ্ছাসেবী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। এতে প্রাণী উদ্ধার ও সুরক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে। বন্য প্রাণী রক্ষায় যাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছেন, তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত