Ajker Patrika

ফরিদপুরে সুটকেসে লাশ: শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় মিলনকে, যৌনকর্মী গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরে সুটকেসে লাশ: শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় মিলনকে, যৌনকর্মী গ্রেপ্তার

গত ২৭ জানুয়ারি ফরিদপুর শহরের পৌর বাস টার্মিনাল এলাকায় সুটকেস থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় মিলন প্রামাণিকের (৪৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকার জুরাইন এলাকা থেকে এক যৌনকর্মীকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। মিলনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়, পরে মরদেহ ফরিদপুরের বাস টার্মিনালে রাখা হয়।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম বলেন, মরদেহ সুটকেসে ভরে রিকশা ও মাহিন্দ্রা গাড়িযোগে ফরিদপুর নতুন বাস টার্মিনাল এলাকায় ফেলে যান ওই নারী। সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার নারী দৌলতদিয়া পতিতাপল্লিতে এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়াটিয়া ছিলেন।

ওই নারী প্রায় ১২ বছর ধরে পতিতাপল্লিতে বসবাস করে আসছিলেন। যখন তাঁর বয়স ১৪ বছর তখন তাঁর বাবা মা তাঁকে বিয়ে দেয়। বিয়ের কিছুদিন পর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লিতে এক চায়ের দোকানদারের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। পরে তিনি আরেকটি বিয়ে করেন।

নিহত মিলন প্রামাণিক পাবনা জেলা সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নের নতুন গোহাইল বাড়ি এলাকার। তিনি রাজবাড়ীতে বিভিন্ন ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন। পতিতাপল্লিতে যাওয়া আসা থাকায় ওই নারীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হয়।

গত শনিবার বেলা ১১টায় ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট নতুন বাস টার্মিনালে গোল্ডেন লাইন বাস কাউন্টারের সামনে তালাবদ্ধ একটি সুটকেসের ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন সকালে একটি মাহিন্দ্রযোগে বোরকা পরিহিত অজ্ঞাত এক নারী সুটকেসটি রেখে যায়। সেখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা সুটকেসটি পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে সুটকেসের তালা ভেঙে লাশ দেখতে পায়। এ ঘটনার পর আলোচনার সৃষ্টি হয় এবং লাশের পরিচয় শনাক্তে ও রহস্য উদ্‌ঘাটনে মাঠে নামে কোতোয়ালি থানা-পুলিশের একটি বিশেষ টিম, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

ঘটনার পর কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন উপপরিদর্শক শামীম হাসান। দুদিন পর লাশে পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। পরে সোমবার দুপুরে পরিবারের কাছে লাশটি হস্তান্তর করে।

গ্রেপ্তার আসামির বরাতে পুলিশ সুপার বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি মিলন প্রামাণিক আসামির ভাড়া বাসায় যান এবং রাতে তাঁদের মধ্যে পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে আসামির মাকে তুলে অশ্লীল ভাষায় গালি দিলে আসামি ক্ষিপ্ত হয়ে তার পরিহিত ওড়না দ্বারা গলায় পেঁচিয়ে হত্যা করে। পরে লাশটি একটি লাগেজে মুড়িয়ে রাখে। পরে সকালে ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে লাশ ভর্তি লাগেজটি নিয়ে রিকশাযোগে গোয়ালন্দ বাজারে যায়। সেখান থেকে ফরিদপুর যাওয়ার জন্য ৬০০ টাকা দিয়ে একটি মাহেন্দ্র গাড়িযোগে লাশ ভর্তি লাগেজসহ ফরিদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড বিকাশ পরিবহনে সাড়ে ৮টার গাড়িতে টিকিট কাটে এবং লাশ ভর্তি লাগেজটি গাড়ির হেলপারের সহায়তায় গাড়ির বক্সে রাখে। গাড়ি ছাড়তে কিছুটা বিলম্ব হলে কৌশলে নাশতা খাওয়ার কথা বলে সে দ্রুত পালিয়ে যায়।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে এ ঘটনায় ওই নারী একাই জড়িত এবং তিনি প্রফেশনাল কিলার নন। এছাড়া রিকশা ও মাহিন্দ্রা ড্রাইভার লাশের বিষয়টি জানতেন না। আমরা আসামিকে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করব।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন—অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামাসহ ফরিদপুর জেলা পুলিশের কর্মকর্তা বৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, বিভিন্ন সময় মিলনকে তিন থেকে চার লাখ টাকা ধার দেন ওই যৌনকর্মী। এ টাকা নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।

পাশে পদ্মা নদী রেখে ফরিদপুর কেন লাশ নিয়ে আনা প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, রোজিনা কোনো প্রফেশনাল কিলার নন। এ জন্য লাশটি ফেলার জন্য এই অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করেন। এ ঘটনায় রিকশা ও মাহিন্দ্রা চালককে আটক করা হয়েছে। তাদের এই হত্যা মামলা সাক্ষী করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিলেট চেম্বারের নির্বাচন স্থগিত করল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

সিলেট প্রতিনিধি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন স্থগিত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আজ রোববার মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন-১ শাখার উপসচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে নির্বাচন স্থগিতের বিষয়টি জানানো হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রশাসক সাঈদা পারভীন জানান, কয়েকজনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য এটি স্থগিত করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও পুনঃতফসিলের মাধ্যমে দুই বছর মেয়াদি (২০২৫-২৬) পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে আগামী ১ নভেম্বর সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে প্রার্থী বাছাইসহ নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বরিশালে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ১৩
বরিশাল নগরীতে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল নগরীতে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল নগরীতে এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে ৪ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রাকিবুল ইসলাম আজ রোববার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাসেল গাজী (৪৫), মো. রোকন খান (৩৩), রাজিব জমাদ্দার (৩৫) ও জাহিদ হাওলাদার (৩৬)।

ট্রাইব্যুনালের পেশকার অজিবর রহমান জানান, রায় ঘোষণার সময় রাসেল, রাজিব ও জাহিদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামি রোকন খান মামলার বিচার চলাকালে জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক রয়েছেন।

অজিবর রহমান আরও জানান, ধর্ষণের ঘটনার পর গ্রেপ্তার এই চার আসামি অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছিল। তবে পুলিশ তদন্ত শেষে এজাহারভুক্ত ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

মামলার অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে নগরের একটি এলাকায় এই দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তখন গৃহবধূর বয়স ছিল ১৮ বছর। প্রথমে ৯ নভেম্বর ঘরে ঢুকে রাসেল গাজী তাঁকে ধর্ষণচেষ্টা করেন। এর পরদিন ওই নারী বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় ওঠেন। চালক তাঁকে নিয়ে ভুল পথে রওনা দেন। একপর্যায়ে আসামিরা মোটরসাইকেলে তাঁর পিছু নেন এবং নির্জন স্থানে পৌঁছে গৃহবধূকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করে পালিয়ে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টেকনাফের গহিন পাহাড় থেকে উদ্ধার ৫ নারী ও শিশু, মানব পাচারকারী আটক

 টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
অভিযানে আটক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে আটক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের টেকনাফের হাবিরছড়াসংলগ্ন গহিন পাহাড়ি এলাকা থেকে চার নারী ও এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় মানব পাচারকারী অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে কোস্ট গার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সালাউদ্দিন রশিদ তানভীর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আটক পাচারকারী টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাবিবছড়া ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে মোহাম্মদ হাসান (৫৫)।

কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা সালাউদ্দিন রশিদ বলেন, আটক পাচারকারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর উদ্দেশ্যে নারী-শিশুসহ কয়েকজনকে হাবিরছড়ার পাহাড়ি এলাকায় বন্দী করে রাখা হয়েছিল। গতকাল দিবাগত রাত ২টার দিকে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর একটি বিশেষ দল যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে পাচারকারীদের গোপন আস্তানা থেকে চার নারী, এক শিশুসহ পাঁচজন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্র উন্নত জীবনের স্বপ্ন, উচ্চ বেতনের চাকরি ও অল্প খরচে বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের মালয়েশিয়া পাচারের ফাঁদে ফেলে। পাচারের আগে তাদের পাহাড়ি এলাকায় বন্দী রেখে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করা হতো।

উদ্ধার ব্যক্তিদের ও আটক মানব পাচারকারীর বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপি-যুবদলের তিন নেতার বিরুদ্ধে সাংবাদিক লাঞ্ছনার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ভুক্তভোগী সাংবাদিক লুৎফর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
ভুক্তভোগী সাংবাদিক লুৎফর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত এক নেতাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শনিবার দিবাগত রাতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক লুৎফর রহমান তানোর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি দৈনিক কালবেলা ও স্থানীয় দৈনিক সোনার দেশে পত্রিকার তানোর উপজেলা প্রতিনিধি। পুলিশ তাঁর অভিযোগ তদন্ত করছে।

লুৎফর রহমান যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তাঁরা হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বহিষ্কৃত সদস্য ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান (৫০), জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম কুসুম (৪০) ও তানোর পৌর বিএনপির নেতা মো. ইয়াসিন (৫২)।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা অভিযোগটা পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা আছে। ফুটেজ সংগ্রহ করে আমরা দেখব। সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগে লুৎফর রহমান উল্লেখ করেন, ২৩ অক্টোবর তানোরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া এসেছিলেন। তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে সেখানে যান। এ সময় পূর্বশত্রুতার জেরে মিজানুর রহমান তাঁকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগাল শুরু করেন। পরে অন্য আসামিদের হুকুম দিয়ে বলেন, ‘...জনমের মতো সাংবাদিকতা শিখিয়ে দে।’ হুকুম পেয়ে রবিউল ইসলাম কুসুম তাঁর গালে সজোরে থাপ্পড় মারেন।’

অভিযোগে সাংবাদিক লুৎফর লেখেন, ‘আমি অতর্কিত হামলায় হতভম্ব হয়ে পড়ি এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইয়াসিন আমাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিলা, ফোলা ও কালশিরা জখম করেন। একপর্যায়ে কুসুম হুমকি দিয়ে বলেন, গাড়ি থেকে অস্ত্র নিয়ে এসে চিরদিনের মতো শেষ করে দে। যা হয় পরে দেখা যাবে।’ ইয়াসিন গলা চেয়ে ধরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। তখন মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখানে সিসি ক্যামেরা আছে, ধরা পড়ে যাবি।’ প্রায় ১০ মিনিট ধরে আসামিরা আমাকে কিল, ঘুষি ও থাপ্পড় মারার পর মিজানুর রহমান আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং বলেন, ‘এ মুহূর্তে এলাকা ছেড়ে যাবি, নতুবা এখানেই তোর লাশ পড়ে যাবে।’ পরে অনেকে ছুটে এসে আমাকে আসামিদের হাত থেকে রক্ষা করেন।’

অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘চড়-থাপ্পড়ের কারণে আমি বাম কানের শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলি।’ পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন সাংবাদিক লুৎফর রহমান।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম কুসুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। জেলা যুবদলের সদস্যসচিব রেজাউল করিম টুটুল বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমিও অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিও বিষয়টি জেনে আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তদন্ত করে দেখব।’

অভিযোগের বিষয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান বলেন, ‘সেদিন কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনার কার্ড দেওয়া হচ্ছিল। লুৎফর রহমান বিএনপির লোক পরিচয়ে কার্ড নিতে এসেছিলেন। তখন আমাদের লোকজন জিজ্ঞেস করেন, তিনি কীসের বিএনপি। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। দলের লোকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। আমি সেখানে ছিলাম বলে তাঁকে বাঁচিয়েছি। তা না হলে তো তাঁকে মেরেই ফেলত।’

উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিল ছিল। সেদিন প্রধান অতিথি হিসেবে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনকে বরণ করা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত হন। এ ঘটনায় সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমানসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করা হয়। পরে মিজানুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত