Ajker Patrika

মেট্রোরেলের টিকিট

মেট্রোর কিউআর কোড টিকিট নিয়ে ঠেলাঠেলি

  • ২,৪০,০০০ টিকিট হারিয়ে একক যাত্রার টিকিট সংকট।
  • সরকারি অর্থে তৈরি ব্যবস্থা ‘উপেক্ষা করে’ নতুন টেন্ডার।
  • ডিটিসিএর প্রস্তাব কার্যকর নয়, দাবি ডিএমটিসিএলের।
  • র‍্যাপিড পাস সরবরাহ এখন অনেকটা স্বাভাবিক।
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, ০৭: ৫৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মেট্রোরেলের একক যাত্রার টিকিটের সংকট কাটাতে কিউআর কোডভিত্তিক টিকিট চালুর কথা ভাবা হয়েছিল। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ধারণাটি সামনে আনার পর প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার তৈরি করে মেট্রোরেলের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিএমটিসিএলকে এটি চালুর পরামর্শও দিয়েছে। কিন্তু ডিএমটিসিএল এ নিয়ে আগ্রহ না দেখিয়ে নিজেরা বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি অর্থ ব্যয় করে একটা ব্যবস্থা এগিয়ে নেওয়ার পর ডিএমটিসিএলের বিকল্প ব্যবস্থা চালুর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

মেট্রোরেলের লাইন ৬ চালু হওয়ার সময় ৩ লাখ ২০ হাজার একক যাত্রার টিকিট সরবরাহ করা হয়েছিল। পুনর্ব্যবহারযোগ্য এই টিকিটগুলোর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টিকিট হারিয়ে গেছে। অর্থাৎ যাত্রীরা যাত্রা শেষে বের হওয়ার সময় গেটের যন্ত্রে জমা দেননি।

একক যাত্রার টিকিটের অভাবে মেট্রোর যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, টিকিটের অভাবে স্টেশনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে, যা যাতায়াতের সময় বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যস্ত সময়ে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। কুখ্যাত যানজটের শহরে মেট্রোরেল দ্রুতগতির নির্বিঘ্ন সফরের যে সুবিধা বয়ে এনেছে, তা কিছুটা ম্লান হয়ে যাচ্ছে টিকিটের এই সমস্যার কারণে।

ডিটিসিএর উদ্যোগ

সংস্থাটির সূত্রে জানা গেছে, কিউআর কোডভিত্তিক একক যাত্রার টিকিটিং চালুর জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার তৈরি করেছে ডিটিসিএ। ডিএমটিসিএলের কাছে এটার পরীক্ষামূলক সংস্করণ দেখানো (ডেমো) হয়েছে। মেট্রোরেল কোম্পানিকে ব্যবস্থাটি চালুর জন্য আনুষ্ঠানিক চিঠিও দিয়েছে ডিটিসিএ। কিন্তু ডিটিসিএর প্রস্তাবিত ব্যবস্থা চালু না করে ডিএমটিসিএল বিকল্পের দিকে ঝুঁকেছে। তারা একক যাত্রার টিকিটের জন্য গত ২৮ মে ইউনিভার্সাল টিকিটিং সিস্টেম (ইউটিএস) নামের ব্যবস্থা চালু করতে দরপত্র আহ্বান করেছে।

কোডভিত্তিক টিকিট কেনার দুই পদ্ধতি

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মেট্রোর কিউআর কোডভিত্তিক টিকিট একটি আধুনিক ডিজিটাল টিকেটিং ব্যবস্থা, যা যাত্রীরা মোবাইল অ্যাপ অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কিনে মোবাইল ফোনে সংরক্ষণ করতে পারেন। কিউআর কোড টিকিট দুইভাবে কেনা যেতে পারে। অ্যাপ দিয়ে এবং পয়েন্ট অব সেল (POS) বা পজ মেশিন দিয়ে। যাত্রীরা বিশেষ অফিশিয়াল অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে গন্তব্য ও সময় নির্বাচন করে অনলাইনে টাকা দিয়ে টিকিট কিনবেন। অর্থ পরিশোধের পর যাত্রীর মোবাইলে একটি কিউআর কোড আসবে। স্টেশনে ঢোকার সময় মোবাইলে আসা কিউআর কোডটি বাস ভ্যালিডেটর স্ক্যানারের সামনে ধরতে হবে। কিউআর কোড স্ক্যান হলেই গেট খুলে যাবে এবং যাত্রী প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে পারবেন।

আর পজ মেশিন দিয়ে কিউআর কোড টিকিট কাটার প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে মেট্রো স্টেশনে একজন কর্মচারীর মাধ্যমে। যাঁদের স্মার্টফোন নেই, তাঁরা স্টেশনে এসে এই সেবা নিতে পারবেন। পজ মেশিন দিয়ে টিকিট কাটার জন্য যাত্রীকে স্টেশনে আসতে হবে। স্টেশনের কাউন্টারে গিয়ে গন্তব্য জানালে অপারেটর পজ মেশিনে তথ্য দিয়ে কিউআর কোডওয়ালা কাগজের টিকিট তৈরি করে দেবেন। এ ব্যবস্থায় নগদ অর্থ দিয়ে টিকিটের দাম দেওয়া যাবে।

ডিটিসিএর কর্মকর্তারা বলছেন, কিউআর কোডভিত্তিক টিকিট চালু হলে লাইনে দাঁড়াতে হবে না। দ্রুত প্রবেশ ও বের হওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। অ্যাপ থেকে যাত্রীরা চাইলে যাত্রার ২৪ ঘণ্টা আগে টিকিট কেটে রাখতে পারবেন।

চালু না করায় ডিএমটিসিএলের যুক্তি

ডিটিসিএর প্রস্তাবিত টিকেটিং সিস্টেমকে মেট্রোর উপযোগী মনে করছে না ডিএমটিসিএল। মেট্রোরেল লাইন-৬ এর প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো. জাকারিয়া আজকের পত্রিকাকে এ বিষয়ে বলেন, ডিটিসিএ যা করেছে, তা মূলত বাসের জন্য কার্যকর। সুপারশপে ব্যবহৃত পজ মেশিনের মতো এই প্রযুক্তি মেট্রোর নিয়ন্ত্রিত গেট সিস্টেমে কার্যকর হবে না।

মো. জাকারিয়া বলেন, ‘ডিটিসিএর প্রস্তাবিত ব্যবস্থা চালু করতে হলে প্রতিটি গেটে নতুন যন্ত্র বসাতে হবে, যা পুরো নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। এতে বাড়তি লোকবল ও খরচের বিষয় জড়িত। তা ছাড়া এতে স্বয়ংক্রিয় গেট না থাকায় যাত্রীরা অবৈধভাবে প্রবেশ করতে পারবে।’

প্রকল্প পরিচালক জানান, ডিএমটিসিএল বর্তমানে ইউটিএস (ইউনিফায়েড টিকেটিং সিস্টেম) নামে একটি ব্যবস্থা চালুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এতে কিউআর কোড ও ডেবিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা থাকবে। একটি নির্ধারিত ঠিকাদার প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করছে।

বিশেষজ্ঞ যা বললেন

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি অর্থে ডিটিসিএ যখন একটি কার্যকর কিউআর কোড টিকেটিং সিস্টেম তৈরি করেছে, তখন তা ব্যবহার না করে নতুন আরেকটি ব্যবস্থা চালু করাটা জনগণের সম্পদ ও সময়ের অপচয়। একই শহরে ভিন্ন ভিন্ন টিকেটিং সিস্টেম থাকলে যাত্রীরা বিভ্রান্ত হবে এবং একীভূত পরিবহন ব্যবস্থার লক্ষ্যও ব্যাহত হবে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ শুরুতেই কেন কিউআর কোড টিকিটের ব্যবস্থা রাখেনি? আমাদের কোনো কিছুরই সঠিক পরিকল্পনা নেই, যখন যেটা মনে হয় সেটা করা হয়।’

সংকট কেটেছে স্থায়ী টিকিটের

এদিকে ঢাকা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ র‍্যাপিড পাসের (স্থায়ী টিকিট) সংকট কাটিয়ে উঠেছে। ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্টেশনগুলোতে সরাসরি র‍্যাপিড পাস বিক্রি শুরু হয়েছে। কয়েকটি মেট্রো স্টেশনে সরেজমিনে ঘুরে এই কথার সত্যতা পাওয়া গেছে। আগের চেয়ে র‍্যাপিড পাস বিক্রি কিছুটা স্বাভাবিক দেখা গেছে।

র‍্যাপিড পাসের দায়িত্বে থাকা ডিটিসিএর কর্মকর্তারা বলেছেন, গত মাসে তাঁরা আড়াই লাখ পাস হাতে পেয়েছেন। আরও আড়াই লাখ কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত