Ajker Patrika

নয়াচরে ৫৬ বছর ধরে আলো ছড়াচ্ছে মাওলানা অছিউদ্দীনের পাঠাগার

হারুনূর রশিদ, রায়পুরা (নরসিংদী) 
আপডেট : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫: ২৩
নয়াচরে ৫৬ বছর ধরে আলো ছড়াচ্ছে মাওলানা অছিউদ্দীনের পাঠাগার

নরসিংদীর রায়পুরার আড়িয়াল খাঁ নদের তীরের এক অজপাড়াগাঁয়ে গড়ে উঠেছে ‘জাগরণী পাঠাগার’। দুর্লভ বইয়ের এই সংগ্রহশালার মাধ্যমে অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন মাওলানা অছিউদ্দীন। পাঠাগারটিতে রয়েছে প্রায় ২০ হাজার বই। বর্তমানে মাওলানা অছিউদ্দীনের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান উম্মুল কুরা ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার একটি অব্যবহৃত কক্ষে চলছে ১৯৫৬ সালের এই পাঠাগার। 

আদিয়াবাদে আড়িয়াল খাঁ নদের তীরের সিরাজনগর নয়াচর গ্রামের শিক্ষক মৃত হাজী মোহাম্মদ ইলিয়াছ মাস্টারের ছেলে অছিউদ্দীন আহমদ। জন্ম ১৯৪৬ সালে। কওমি মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) করেন । ১৯৭৩-৭৪ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে বিএ পাস করেন। 

এবার বরং এই পাঠাগার গড়ে তোলার গল্পটি জানা যাক। ছেলেবেলায় বাবার বই পড়া দেখে বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তাঁর। পড়াশোনার খরচ বাঁচিয়ে টিফিনের এক-দুই পয়সা বাঁচিয়ে জমাতে থাকেন টিনের বাক্সে। জমানো টাকায় কিনতেন পছন্দের বই। বইগুলো বাড়িতে রাখতেন বাক্সে ভরে। সহপাঠীরা বেড়াতে এলেই উঠোনে মেলে ধরতেন সেই বাক্স। বন্ধুরা বই দেখে রীতিমতো অবাক হতো! তাঁর জমানো বইয়ের অনুপ্রেরণায় বন্ধুদের নিয়ে ১৯৬৪ সালে গড়লেন পাঠাগার। নাম দিলেন ‘কিশোর সমিতি’। এ নামে চার বছর চলার পর যৌবনের পদচারণায় নতুন জাগরণে উজ্জীবিত হয়ে পাঠাগারটির নাম রাখেন ‘জাগরণী সমিতি’। ১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে পাঠাগারটি রেজিস্ট্রেশন পায়। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা পাঠাগারটি ২০১১ সালে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর থেকে নরসিংদী জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের মাধ্যমে ‘জাগরণী পাঠাগার’ নামে সনদ পায়। 

সিরাজনগর উম্মুল কুরা ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার একটি অব্যবহৃত কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, জাগরণী পাঠাগারের টেবিলে বসে বই পড়া, সম্পাদনা, লেখালেখিতে ব্যস্ত ডা. অছিউদ্দীন। পাশের চেয়ারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী পাঠক জ্ঞানচর্চায় মগ্ন। 

পাঠাগারটিতে উপন্যাস, গল্প, কবিতাসহ ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভ্রমণ, রম্যরচনা, বিজ্ঞানসহ নানা বিষয়ের বই আলমারিতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর রচনাবলিসহ পাঠাগারে আছে হাজার বিশেক বই। এ ছাড়া ‘তত্ত্ববোধিনী’, ‘প্রবাসী’, ‘শনিবারের চিঠি’, ‘মোহাম্মদী’, ‘সওগাত’ ইত্যাদি পত্রিকার সংখ্যা আছে। ৫৬ বছর ধরে বিভিন্ন পত্রিকার দুর্লভ কাটিং ১০টি বইয়ের আকরে আলাদা আলাদা বিষয় ধরে সংরক্ষণ করেছেন। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলোয় খোলা রাখেন পাঠাগার। দূরদূরান্ত থেকে আসা পাঠক মুগ্ধ হন একজন মানুষের অসাধারণ এক কাজ দেখে। 

পাঠাগারটিতে যারা এসেছেন তাঁদের মধ্যে আছেন ১৯৯০ সালে লন্ডন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও জীবনানন্দ গবেষক উইলিয়াম রাদিচে, ২০০৮ সালে তৎকালীন নরসিংদী জেলার অ্যাডিশনাল ডিসি বিজয় কান্তিসহ বহু গুণীজন। সবাই পাঠাগারটি দেখে মুগ্ধ হয়ে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেছেন। 

ডা. অছিউদ্দীন আহমদ পাঠাগার পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা করেছেন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করছেন এখনো। এ জন্য মানুষের কাছে ডা. অছিউদ্দীন নামেও পরিচিত তিনি। পাশাপাশি লেখালেখিও চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্পাদনা করেছেন মাসিক পত্রিকা ও সাময়িকী। তাঁর সম্পাদিত বই জাগরণ, অগ্রদূত, লাব্বাইক, নাজাত, নওরোজ পেয়েছে পাঠকপ্রিয়তা। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আটটি। অমুদ্রিত পাণ্ডুলিপি ২২টি। 

রায়পুরা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও দীর্ঘকাল সহসভাপতি তিনি। ছিলেন ‘সাপ্তাহিক বার্তা’র স্টাফ রিপোর্টার। ১৯৭০ সাল থেকে দুই যুগ সিরাজনগর হাইস্কুল ও সিরাজনগর উম্মুল কুরা সিনিয়র মাদ্রাসায় বাংলা সাহিত্যে পাঠদান করান।
 
পাঠাগারে আসা আদিয়াবাদ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিম বলেন, ‘আমার বাড়ি স্যারের বাড়ির পাশেই। একটা মানুষ বইয়ের জন্য এত পাগল হতে পারে, স্যারকে না দেখলে বুঝতামই না। আমি সময় পেলে পাঠাগারে পড়তে আসি।’ 

মুফতি মুহাম্মদ রাকিব বলেন, ‘তাঁকে দেখেই বই পড়ার আগ্রহ জন্মে। কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়িতে এলে বারবার পাঠাগারে ছুটে আসি।’ 

স্থানীয় শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, উমর আলী মোল্লা, মুর্শিদা আক্তার বলেন, পাঠাগারটি আদর্শ মানুষ তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। অজপাড়াগাঁয়ে পাঠাগারটি থাকায় গ্রামের এবং গ্রামের বাইরে যারা সবাই উপকৃত হচ্ছেন। 

সিরাজনগর উম্মুর কুরা ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমর ফারুক বলেন, ‘পাঠাগারটি ৫৬ বছর ধরে জ্ঞানের আলো বিতরণ করছে। এতে সমাজ উপকৃত হচ্ছে, মানুষ জ্ঞান অর্জন করে ব্যক্তিজীবনে কাজে লাগাতে পারছেন। যুবসমাজ মাদকসহ বিভিন্ন অন্যায় থেকে বিরত থাকছে। ’

খুবই সাধাসাধি জীবনযাপন মাওলানা অছিউদ্দীনের। বহু বছরের পুরোনো টিনের ভাঙা ঘরেই পরিবার নিয়ে বাস তাঁর। ছয় সন্তানের জনক তিনি। বর্তমানে শরীরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগ বাসা বাঁধলেও পাঠাগারে সময় দেন।

ডা. অছিউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘বই পড়াতে আনন্দ পাই, সে জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে জাগরণী পাঠাগারকে দেশের শীর্ষস্থানীয় গ্রামীণ পাঠাগারে পরিণত করার স্বপ্ন দেখি। ১৯৬৪ সালে পড়াশোনা করতে পুরান ঢাকায় ছিলাম। ফুটপাতে দোকানিরা বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসত। হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা কিংবা এক টাকায় বই কিনতাম। দীর্ঘদিন ধরে আমি খেয়ে না-খেয়ে বইয়ের পাহাড়ই গড়েছি।’ 

নিজের পাঠাগারে কাজ করছেন মাওলানা অছিউদ্দীন। ছবি: আজকের পত্রিকাতিনি আরও বলেন, ‘যান্ত্রিক ও প্রযুক্তির যুগে আমাদের তরুণ সমাজের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ কমে গেছে। নতুন প্রজন্ম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রযুক্তি ব্যবহারে মাত্রাতিরিক্ত আসক্ত হয়ে পড়েছে। এগুলো যত কম ব্যবহার হবে, ততই মঙ্গল। তাই নতুন প্রজন্মকে বইমুখী করা অতি জরুরি। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও গ্রামের মানুষের মধ্যে আলো ছড়াতে তিল তিল করে পাঠাগারটি গড়েছি। পাঠাগারের স্থায়ী কোনো স্থাপনা নেই। টাকার অভাবে বইয়ের যত্ন নিতে পারছি না। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে বড় উপকার হতো। আমার ছেলে মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহকে অসিয়ত করেছি, সে এই পাঠাগার দেখাশোনা করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ০৩
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত

‎রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‎গ্রেপ্তারের বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

‎মামুন বলেন, গৃহকর্মী আয়েশাকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের ১৪ তলা একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিয়াকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

গতকাল তাঁদের মরদেহ নাটোরে দাফন করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাসা থেকে মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভবনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর এক নারী স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চার দিন আগে আয়েশা পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেওয়া তরুণী (২০) এই জোড়া খুনে জড়িত বলে সন্দেহ স্বজনদের। ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী পলাতক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি 
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জীবন আছে যার, তার মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুর পর মানুষের শেষ ঠিকানা কবর। মৃতদেহ গোসল করিয়ে কাফন পরানো হয়, জানাজা শেষে তাকে শায়িত করা হয় চিরনিদ্রার ঘরে। এই কবর খোঁড়ার দায়িত্বটি গ্রামের কিছু মানুষ বহু বছর ধরে স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে পালন করে আসছেন, যাঁরা সবার কাছে ‘গোরখোদক’ নামে পরিচিত। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাঁরা করে থাকেন এই কাজ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোরখোদকেরা কোনো পারিশ্রমিক নেন না। গ্রামের যে কেউ মারা যাক, নিজেদের ব্যস্ততা ফেলে তাঁরা ছুটে আসেন কবর খুঁড়তে। তাঁদের এই মানবিক কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গ্রামের লোকেরা দোয়া করেন—আল্লাহ যেন তাদের সুস্থ ও ভালো রাখেন।

দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা গোরখোদক মজিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৫৫ বছর ধরে কবর খুঁড়ছি। যত দিন সুস্থ থাকব, এই কাজ চালিয়ে যাব। আমাদের গ্রাম ছাড়াও অন্য গ্রাম থেকে কেউ ডাকলে সেখানেও যাই। ছোটবেলায় ওস্তাদের কাছে ডালি ধরেই শিখেছি। গরিব মানুষ, মাঠে কাজ করি; কিন্তু কেউ মারা গেলে দ্বিধা করি না—এই কাজ আমার নেশায় পরিণত হয়েছে।’

মজিরুল আরও জানান, এখন তিনি তরুণদেরও এই কাজ শেখাচ্ছেন।

গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোরখোদক শাকের আলী বলেন, ‘আমরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করি। কখনো কোনো টাকা নিই না। যেখানেই থাকি, গ্রামের কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে দ্রুত কবর খুঁড়তে চলে আসি।’

গোরখোদক ফুয়াদ হোসেন বলেন, ‘অন্য গ্রাম থেকে ডাক এলেও আমরা যাই। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করি এই কাজ। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান আলী বলেন, ‘কবর খোঁড়া বড় দায়িত্বের কাজ। গ্রামের এসব মানুষ খবর পেলেই দৌড়ে আসে। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি।’

মাওলানা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খোঁড়া নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ। হাদিসে এসেছে—যাঁরা কবর খোঁড়েন, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানার ফটকের সামনে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে সটকে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিল্প ও থানা-পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসেছেন। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের সাইটালিয়া গ্রামে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানায় এই ঘটনা ঘটে।

কারখানার নারী শ্রমিক মিনারা আক্তার বলেন, ‘অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করে নাই। এক মাসের বেতন না পেলে আমাদের চলা খুবই কঠিন হয়। আমাদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়। আর সেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষ দুই মাসের বেতনভাতা বকেয়া রেখেছে। আজ সকালে শ্রমিকেরা জড়ো হলে তারা পালিয়ে যায়।’

মিন্টু নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘এই কারখানায় আমরা তিন বছর ধরে চাকরি করছি। আমাদের বেতনের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না। তবু পেটের দায়ে চাকরি করি। দুই মাসের বেতন বকেয়া। আমাদের তো পেট আছে, সন্তান-সংসার আছে। এক মাস দোকান বাকি পরিশোধ করতে না পারলে পরের মাসে আর দোকানি বাকি দেয় না। আমরা কী অবস্থায় আছি, একবার ভাবুন। বেতন পরিশোধ না করে তারা পালিয়ে গেছে।’

আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেদী হাসান বলেন, ‘এত দিন ধরে ঋণ করে বলে-কয়ে দোকান থেকে বাকি নিয়ে চলছি। আর পারছি না। এখন দোকান বাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন নিয়ে কমপক্ষে ১০টি তারিখ দিছে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করেনি। শেষে আজ বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তারা কারখানা ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে।’

কারখানার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. বুলবুল হাসান বলেন, ‘ব্যাংকের সমস্যার কারণে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আশা করি, আজকের মধ্যে নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারব।’ বিনা নোটিশে কারখানার ফটক কেন তালাবদ্ধ? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি বলতে পারব না।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাছ ধরতে গিয়ে ভারতে আটক ৬ জেলে, ১৩ মাস পর হস্তান্তর

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি 
১৩ মাস সাজা ভোগের পর হস্তান্তর হওয়া বাংলাদেশি ছয় জেলে। ছবি: আজকের পত্রিকা
১৩ মাস সাজা ভোগের পর হস্তান্তর হওয়া বাংলাদেশি ছয় জেলে। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও সীমান্ত দিয়ে ছয় বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের হস্তান্তর করা হয়।

হস্তান্তর হওয়া মৎস্যজীবীরা কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার বাসিন্দা। তাঁরা হলেন আবুল হোসেনের ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫), বাহাদুর মিয়ার ছেলে বিপ্লব মিয়া (৪৫), ইসহাক আলীর ছেলে মীর জাফর আলী (৪৫), ইছাক আলীর ছেলে বকুল মিয়া (৩২), ফকির আলীর ছেলে আমের আলী (৩৫), সলিমুদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে চাঁন মিয়া (৬০)।

বিজিবি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ নভেম্বর জিঞ্জিরাম নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ভুলক্রমে সীমান্ত অতিক্রম করে তাঁরা ভারতের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় স্থানীয় পুলিশ ও বিএসএফ সদস্যরা তাঁদের আটক করে। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাঁরা সেখানে প্রায় ১৩ মাস সাজা ভোগ করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সন্ধ্যায় শেরপুর ৩৯ বিজিবির দায়িত্বে থাকা এলাকার হাতিপাগার বিজিবি কোয়ার্টার মাস্টার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ভারতের কিল্লাপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের সঙ্গে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিএসএফ ছয় বাংলাদেশি নাগরিককে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। এ সময় নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর তাঁদেরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত