Ajker Patrika

স্বজনেরা পেলেন ৪০ জনের লাশ, ৬ মরদেহ মর্গে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৪, ০১: ৪৭
স্বজনেরা পেলেন ৪০ জনের লাশ, ৬ মরদেহ মর্গে

রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একই পরিবারের পাঁচজনসহ ছয় পরিবারের ১৫ জন রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪০ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বাকি ছয় মরদেহের মধ্যে তিনজনকে শনাক্ত করা যায়নি। বাকি তিনজনের স্বজনেরা এখনো আসেননি। 

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন নিহত হন। আহত অন্তত ২২ জন। তাদের বেশির ভাগই শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। 

আজ শুক্রবার সকাল থেকে নিহতদের হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়। হস্তান্তর করা মরদেহের মধ্যে রয়েছে, রাজধানীর মগবাজারের সৈয়দ মোবারক হোসেন (৪৮), তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার (৪১), দুই মেয়ে সৈয়দা ফাতেমা তুজ জহুরা কাশপিয়া (১৬), আমেনা আক্তার নূর (১৩) ও ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ (৮)। 

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা লুৎফুর নাহার করিম লাকী (৪৭) ও তার মেয়ে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতি তাজরিন নিকিতা (২১)। 
শান্তিবাগ এলাকার পপি রায় (৩৩) এবং তার মেয়ে সম্পূর্ণা পোদ্দার (১২) ও ছেলে সংকল্প সান (৮)। মা পপি রায় দুই সন্তানকে নিয়ে বইমেলা থেকে ফেরার সময় ওই ভবনের একটি রেস্তোরাঁয় যান। এরপর রাত ১০টা পর্যন্ত তাঁরা মোবাইলে কথা বললেও এরপর আর কথা বলেননি। 

মতিঝিল আরামবাগের নাজিয়া আক্তার (৩১) তার দুই সন্তান আয়ান (৮) ও আয়াতকে (৬) নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন ওই ভবনে। দুই সন্তানকে নিয়ে মারা যান মা। তাঁদের মরদেহ নিয়ে গেছেন স্বজনেরা। 

এ ছাড়া একই পরিবারের মতিঝিল এজিবি কলোনির আইএফআইসি ব্যাংকের কর্মকর্তা মেহরান কবির দোলা (২৯) এবং তাঁর ছোট বোন মাইশা কবির মাহি (২১)। তাঁরা দুই বোন সেখানে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলেন। 

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বানেশ্বরপুর গ্রামের বাসিন্দা হোন্দাই কোম্পানির প্রকৌশলী পোল্যান্ড প্রবাসী উত্তম কুমার রায়ের স্ত্রী রুবি রায় (৪৮) ও মেয়ে প্রিয়াংকা রায় (১৮)। তাঁরা মালিবাগ এলাকায় বসবাস করতেন। 

এ ছাড়া কাকরাইলের ফৌজিয়া আফরিন রিয়া (২২) ও সাদিয়া আফরিন আলিশা (১৩)। তাঁরা দুই বোন। ফৌজিয়া আফরিন মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। আজ শুক্রবার তাঁর মালয়েশিয়া ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। সাদিয়া আফরিন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাঁদের বাবার নাম কোরবান আলী। তাঁদের সঙ্গে খালাতো বোন নুসরাত জাহান নিমু (১৯) ছিলেন। একসঙ্গে ভবনটিতে রাতের খাবার খেতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন তাঁরা। তাঁদের সবার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। আজ স্বজনেরা মরদেহ নিয়ে যান। 

অপরদিকে, বেইলি রোডে আগুনের প্রাণ হারানোর তালিকায় রয়েছেন দুই নারী দাবাড়ুর মা শম্পা সাহা (৪৫)। তাঁর দুই মেয়ে শ্রেয়া পোদ্দার ও প্রজ্ঞা পোদ্দার বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের রেটিং ও নারী দাবার অনেক টুর্নামেন্টে নিয়মিত অংশ নেন। মেয়েরা বর্তমানে কানাডায় থাকেন। শম্পার বাসা মৌচাকে। ঘটনার দিন তিনি একাই ওই ভবনের একটি রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন। তাঁর মরদেহ নিয়ে গেছেন স্বজনেরা। মেয়েরা দেশে এলে সৎকার করা হবে। 

খিলগাঁওয়ের আশরাফুল ইসলাম আসিফ (২৫) ও তুষার হাওলাদার (২৩), বংশালের নুরুল ইসলাম (৩২), নারায়ণগঞ্জের শান্ত হোসেন (২৪), মাদারীপুরের মোহাম্মদ জিহাদ (২২), যশোরের কামরুল হাসান রকি (২০), ভোলার দিদারুল হক (২৩), মৌলভীবাজারের আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীম (৬৫), টাঙ্গাইলের মেহেদী হাসান (২৭), মুন্সীগঞ্জের জারিন তাসনিম খান প্রিয়তি (২০) ও গুলশানের জুয়েল গাজীর (৩০) মরদেহ স্বজনেরা নিয়ে গেছেন। 

ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী পাবনা ফরিদপুরের সাগর হোসেন (২৪), পিরোজপুরের তানজিলা নওরিন এশা (৩৫) ও শেরপুরের শিপন (২১), বুয়েট শিক্ষার্থী নাহিয়ান আমিন (২০) ও লামিশা ইসলাম (২০)। লামিশার বাবা নাসিরুল ইসলাম পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি পদে কর্মরত। 

এ ছাড়া বরগুনার ছেলে নাঈম (১৮)। ভোলা সদরের সিরাজুল ইসলামে ছেলে নয়নের (১৭) লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়ে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ. কে. এম হেদায়েতুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিহতদের ৪৬ জনের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ৩০ জনের, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে ৯ জনের এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে একজনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ছয়জনের মরদেহ মর্গে রয়েছে।’ 

ব্রাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মো. নাজমুল ইসলাম ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কেএম মিনহাজ উদ্দিন নামে দুই তরুণকে স্বজনেরা খুঁজছেন। তাঁদের বাবা–মায়ের ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে। 

এ ছাড়া আজ বিকেলে সুফিয়া নামের এক নারী তাঁর বোন ও ভাগনের খোঁজ করতে আসেন। নিখোঁজেরা হলেন, রাজধানীর উত্তর বাড্ডার ফারহিন খান সাথী (২৮), তাঁর দুই ছেলে তাসিফ (১৪), নাহিয়ান (১২)। তারা দুজনই খিলগাঁও সরকারি স্কুলের ছাত্র। 

অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে একজন সংবাদকর্মীর মরদেহ শনাক্ত হলেও তাঁর অভিভাবক নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

এ ছাড়া বার্ন ইনস্টিটিউটে বর্তমানে ভর্তি আছেন—ফয়সাল আহমেদ (৩৮), সুজন মন্ডল (২৪) প্রহিত (২৫) আবিনা (২৩) রাকিব হাসান (২৮) কাজি নাওশাদ হাসান আনান (২০), আজাদ আবরার (২৪), মেহেদী হাসান (৩৫), রাকিব (২৫) ও সুমাইয়া (৩১), জহিরুল (২৬), এবং ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছেন ইকবাল হোসেন (২৪), ও যোবায়ের (২১)।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত