Ajker Patrika

বিদেশযাত্রার অর্থ জোগাতে ঢাকায় এসে চাচার কাঁধে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন সাগর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৪, ১৭: ৩১
Thumbnail image

রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোটি কটেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে এক হতভাগ্য পাবনার ফরিদপুর উপজেলার হাদল ইউনিয়নের ধানুয়াঘাটা গ্রামের কৃষক হাসান আলীর ছেলে সাগর হোসেন (২২)। তিনি বেইলি রোডের ওই ভবনটিতে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। 

কৃষক বাবার সংসারে দারিদ্র্যের কারণে উচ্চমাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা চালাতে পারেননি সাগর। ইচ্ছে ছিল, ভাগ্যোন্নয়নের বিদেশে যাবেন কিন্তু অর্থাভাবে সেটিও হয়নি। তাই বিদেশযাত্রার অর্থ জোগাতে ঢাকায় এসে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন সাগর। মাকে গতকাল বৃহস্পতিবারও ফোনে জানিয়েছিলেন, দ্রুতই বাড়ি ফিরবেন। তবে হতভাগ্য মা বুঝতে পারেননি, পরের দিনই নিথর দেহে তাঁর কোলে ফিরবেন সাগর। 

আগুনে পুড়ে ভাতিজার মৃত্যুর খবর পেয়ে আজ শুক্রবার সকালে ঢাকায় আসেন সাগরের চাচা আবু তালেব। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আমতলায় বসে বিলাপ করছিলেন আবু তালেব আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। 

আবু তালেবের বড় ভাই হাসান আলী। সাগর তাঁর ছোট ছেলে। আবু তালেব বিলাপ করে বলেন, ‘দুই সন্তানের মধ্যে সাগর বড়। সংসারে অভাবের কারণে উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর আর পড়াশোনা করতে পারেনি। বিদেশে যাওয়ার টাকা দিতে পারিনি। তাই ছেলে গত বছরের জুলাইয়ে ঢাকায় এসেছে কাজ করে বিদেশে যাওয়ার টাকা জমাতে। আমার বড় ভাইয়ের ছেলে মালয়েশিয়া থাকে, সেখানেই যাওয়ার কথা ছিল। আমিও চেয়েছিলাম, ফসল বিক্রির টাকা দিয়ে ছেলেকে বিদেশে পাঠাব। তবে ঢাকায় কোন কোম্পানিতে কাজ করত সেটিও জানি না।’ 

আবু তালেব আরও বলেন, ‘গতকাল রাতেও ছেলে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছে। কয়েক দিন পর বাড়িতে ফেরার কথা ছিল। এরই মধ্যে রাতে বিদেশ থেকে আমার ভাতিজা জানায় যে, সাগর যেখানে চাকরি করত সেখানে আগুন লেগে সে আহত হয়েছে। সকালে জানতে পারি সে আর বেঁচে নেই। ভোরে রওনা দিয়ে মাত্র ঢাকায় এলাম।’ 

ছেলের মরদেহ শনাক্ত করার আবু তালেব বলেন, ‘আমার ভাতিজার চেহারা ছাড়া পুরো শরীর পুড়ে গেছে। তবে চেহারাটা দেখে চেনা গেছে। এ ছাড়া হাতে থাকা ব্রেসলেট দেখে ছেলেকে শনাক্ত করেছি।’ 

সাগর পাবনার ফরিদপুরের ইউনুস আলী ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ঢাকায় এসে একটি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন। সর্বশেষ বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনের নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব ছিলেন ছিলেন। বাবা হাসান আলী অসুস্থ। ছেলের লাশ নিতে তিনি ঢাকায় আসতে পারেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত