Ajker Patrika

পুলিশের সামনেই হিরো আলমকে পেটায় নৌকার ব্যাজধারীরা, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৩, ১১: ১১
Thumbnail image

বেলা ৩টা ৩৫ মিনিট। বনানী বিদ্যানিকেতন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে ঢোকেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে অনুরোধ করা হয় তিন থেকে চার জন অনুসারী নিয়ে কেন্দ্র পরিদর্শন করার জন্য। 

পুলিশের সঙ্গে কথা বলার সময় নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী দুই যুবক তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তুই কোন যোগ্যতা রাহস, তুই গুলশান, বনানীতে ইলেকশন করতে আহস? তুই কোন যোগ্যতা রাহস? তুই ইউটিউবার হইছস, তুই ভাইরাল কনটেন্ট বানাস, তুই ওইডি নিয়াই থাক। তোর যোগ্যতা কী?’ 

এভাবে শ্লেষাত্মক কথা বলে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন কিছু যুবক। তখন হিরো আলম কিছুটা ঘাবড়ে যান। কিছুক্ষণের মধ্যে কেন্দ্র থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বেরিয়ে এসে সবাইকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানান। এ সময় পুলিশ দায়িত্ব নিয়ে হিরো আলমকে কেন্দ্রের বারান্দা থেকে বাইরে নেওয়ার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রের মাঠে নিয়ে যায়। মাঠেই পুলিশের সামনে একদফা কিল, ঘুষি ও চড়–থাপ্পড় মারা হয় তাঁকে।

পুলিশের সামনেই হিরো আলমকে কিল-ঘুষি-লাথি মারেন নৌকার ব্যাজধারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকাহিরো আলমের ওপর হামলার শুরুর দিকের ঘটনা আজকের পত্রিকার কাছে এভাবেই বর্ণনা করেন একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের চিত্র সাংবাদিক। তিনি সোমবার (১৭ জুলাই) দিনভর হিরো আলমকে অনুসরণ করেছেন। 

‘হিরো আলমের ওপর হামলার আগে বনানী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে ভোট দিয়ে যান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। এ কারণে ওই সময় সেখানে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। তবু পুলিশ বেশি কিছু করেনি। পুলিশ ইনঅ্যাক্টিভ ছিল।’ যোগ করেন প্রত্যক্ষদর্শী ওই চিত্র সাংবাদিক। 

তিনি দাবি করেন, মাঠে যখন প্রথমবার হিরো আলমের ওপর হামলা হয়, তখন পাশেই দাঁড়ানো ছিল বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) একটি গাড়ি। তাঁদের কাছেও সাহায্য চান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম। কিন্তু তাঁরা নির্বিকার ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জোবাইদুল ও শরীফ নিয়াজী নামে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা হিরো আলমকে নিয়ে বাঁশি বাজিয়ে কেন্দ্রের মাঠ থেকে গেটের বাইরে এনে ছেড়ে দেন। এর পরই জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে হিরো আলমকে দফায় দফায় পেটানো হয়। পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে। হিরো আলমের সঙ্গে থাকা সমর্থক ও বেশ কয়েকজন ইউটিউবারকে ব্যাপক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে হিরো আলমকে লাথি মারেন একজন। পেটে লাথি খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান তিনি। তাঁর পরনের কটি ছিঁড়ে ফেলা হয়। এরপর হিরো আলমকে ঘিরে ধরে আরও এক দফা পেটান নৌকার ব্যাজধারীরা। তাঁকে কিল-ঘুষি-লাথি মারতে মারতে ভোটকেন্দ্রের সামনের রাস্তা থেকে মূল সড়কের দিকে ধাওয়া দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ধাওয়া খেয়ে কয়েকবার পথচারী ও রিকশাচালকদের সাহায্য প্রার্থনা করলে কেউ সাড়া দননি। একটি রিকশায় উঠলে সেই রিকশার ওপরেও তাঁকে মারধর করা হয়। তখন কানে ও মাথায় হাত দিয়ে হিরো আলম প্রাণপণে ছুটতে থাকেন।

পুলিশের সামনেই হিরো আলমকে কিল-ঘুষি-লাথি মারেন নৌকার ব্যাজধারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকাযা বলছেন ডিএমপি কমিশনার
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হিরো আলম অনেক লোকজন নিয়ে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন। পুলিশ তখন তাঁকে এত লোক নিয়ে প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করে। আইনেও নাই এত লোক নিয়ে কেন্দ্র পরিদর্শন। তাই কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ তাঁকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। কেন্দ্রের সামনেই তাঁর গাড়ি ছিল। কেন্দ্রের দায়িত্বরত পুলিশ তো কেন্দ্র অনিরাপদ রেখে তাঁর সঙ্গে যেতে পারে না!’ 

এর আগে গত ৪ জুলাই নির্বাচন কমিশন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার বিষয় নিয়ে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকসহ অন্যদের সঙ্গে বসেছিল। আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমি ১০০ ভাগ গ্যারান্টি দিলাম। আপনারা ১৭ তারিখের নির্বাচন দেখেন, আমাদের নিরপেক্ষতার প্রমাণ পান কি না। যদি না পান, তখন আমাকে বইলেন। তখন আমি ডিএমপি কমিশনার হিসেবে নাকে খত দিয়ে চলে যাব।’

কতটা আঘাত পেয়েছেন হিরো আলম? 
হামলার পরপরই চিকিৎসার জন্য বেটার লাইফ হাসপাতালে যান আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন ডা. রাজীব। তিনি বলেন, ‘হিরো আলমের শরীরে কোনো কাটা-ছেঁড়া নেই। তাঁর বুকে, পেটে, পিঠে, মুখে কিল-ঘুষির জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আমরা তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

এই হাসপাতালে চিকিৎসাকালীন পুরো সময়টা হিরো আলমকে অনুসরণ করা এক গণমাধ্যমকর্মী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংবাদকর্মী ও ইউটিউবারদের ভিড়ে হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছিল। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিরো আলমকে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এ কারণে তাঁর কাছ থেকে কোনো বিলও রাখেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’

পুলিশের সামনেই হিরো আলমকে কিল ঘুষি লাথি মারে নৌকার ব্যাজধারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকাগ্রেপ্তার চার, অভিযান অব্যাহত
হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় চারজনকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখা। পুলিশ বলছে, ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে দ্রুততম সময়ে ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। 

বিদেশিদের চিঠি দেবেন হিরো আলম
হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে সেখান থেকে ফেসবুক লাইভে এসে কথা বলেছেন হিরো আলম। হামলার ঘটনা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় চিঠি দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করছি। ইসি আমার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকাসহ সব দূতাবাসে চিঠি দিব।’ 

পুলিশের সামনেই হিরো আলমকে কিল ঘুষি লাথি মারে নৌকার ব্যাজধারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকাঢাকার গুলশান, বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়েছে সোমবার। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোহাম্মদ এ আরাফাত। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপরীতে কোনো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, আরাফাতের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন হিরো আলম।

বগুড়ার কাহালুর ছেলে আশরাফুল হোসেন আলম এখন হিরো আলম নামেই পরিচিত। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন কনটেন্ট বানিয়ে সারা দেশে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠা হিরো আলম গত ফেব্রুয়ারিতে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সেখানে মহাজোটের প্রার্থী জাসদ নেতা এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে মাত্র ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত