Ajker Patrika

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি সাময়িক স্থগিতের প্রতিবাদে গণ-অনশন চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮: ৪১
Thumbnail image
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সামনে পাঠক ও লাইব্রেরীর কর্মীদের একাংশের গণঅনশন কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা

নতুন বছরের শুরুতেই সাময়িকভাবে স্থগিত হতে যাচ্ছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ২৫ বছর ধরে চলা ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম। এর প্রতিবাদে পাঠক ও লাইব্রেরির কর্মীদের একাংশ কেন্দ্রের সামনে গণ-অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। গতকাল শনিবার থেকে তাঁদের এই কর্মসূচি চলছে।

পাঠক ও লাইব্রেরির কর্মীরা বলছেন, সাময়িক হলেও ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না। তাঁরা কর্তৃপক্ষকে সারা বাংলাদেশের পাঠকদের কথা বিবেচনা করতে বলেছেন।

কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুনের স্বাক্ষর করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ২৫ বছর ধরে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তবে গত ছয় বছর ধরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কার্যক্রমটিকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। ওই মন্ত্রণালয় এই সহযোগিতা দেয় প্রতি পর্বে দুই বছরের জন্য। প্রথম পর্বটি শেষ হলে মন্ত্রণালয় আরও দুই বছর করে দুই বার এই সহযোগিতা দিয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গত সরকারের শেষ দিনগুলোতে আমরা জানতে পারি যে, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এই প্রকল্পে আর অর্থায়ন করা হবে না। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময় নতুন করে আভাস মেলে যে, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আরও দুই বছরের জন্য প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করতে আগ্রহী। এসব দোটানার মধ্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পক্ষে নতুন প্রকল্পের প্রক্রিয়াকরণে সংগত কারণেই কিছুটা সময় লেগেছে। তাই ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পের তৃতীয় পর্ব শেষ হলেও যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে প্রকল্পের নতুন পর্বের অনুমোদন পেতে কিছুটা সময় লেগে যাবে। এই কারণে ৩১ ডিসেম্বরের পর এই কার্যক্রমটি কিছুকালের জন্য স্থগিত থাকবে।

সুতরাং, ৩১ ডিসেম্বর এই প্রকল্পের তৃতীয় পর্ব শেষ হচ্ছে। এই কার্যক্রমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ দেওয়া হয় প্রকল্প মেয়াদের ভিত্তিতে। তাই এর আগের প্রতি পর্বের মতোই ওই ৩১ ডিসেম্বর তারিখে তাদের চাকরির মেয়াদও এবারে শেষ হয়ে যাবে। চিরচারিত নিয়ম অনুযায়ী এবারও তাদের সমস্ত প্রাপ্য (চার মাসের অতিরিক্ত বেতনসহ) অর্থ পরিপূর্ণভাবে পরিশোধ করার ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে।

কেন্দ্র জানিয়েছে, কর্মীদের আগেই এ কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই মর্মে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, প্রকল্পটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাস করিয়ে আনতে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হবে।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি সাময়িক স্থগিতের প্রতিবাদে গণঅনশন কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি সাময়িক স্থগিতের প্রতিবাদে গণঅনশন কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা

এদিকে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কর্মীরা বলছেন, প্রকল্পের কর্মকাণ্ড একদিনও স্থগিত না রেখে এটিকে অব্যাহতভাবে চালিয়ে যেতে হবে। এ কারণে তাঁরা কেন্দ্রের সামনে অনশন কর্মসূচী পালন করছেন। তবে কেন্দ্রের কথা, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্পের সহযোগিতায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই কার্যক্রমটি পরিচালিত হচ্ছে। এটি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত কোনো কর্মসূচি নয়। তা ছাড়া এতো বড় কর্মসূচি দেশব্যাপী চালিয়ে যাওয়ার আর্থিক সঙ্গতিও কেন্দ্রের নেই।

অনশন করা কর্মীরা বলছেন, কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে পাঠকদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। তারা এক একজন কর্মী ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। সুতরাং, এটি সাময়িক বন্ধ না করে চালিয়ে নেওয়ার দাবি তাঁদের। এমনকি করোনাকালেও তাঁরা কার্যক্রম চালিয়েছেন।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের লাইব্রেরি অফিসার শেখর আজাদ বলেন, নতুন প্রকল্প শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত কেন্দ্রের আর্থিক সংগতি আছে কার্যক্রমটি চলমান রাখার। সুতরাং স্থগিত করার বিষয়টি তাঁরা মানতে পারছেন না।

এ ছাড়া কেন্দ্রের কিছু কর্মকর্তাদের অনিয়ম তদন্ত করে তাদের অপসারণের দাবি করেছেন অনশনকারীরা। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ও অনশনকারী কর্মীদের মধ্যে দাবি আদায় নিয়ে দর কষাকষি চলছে।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ২৫ বছর ধরে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি গাড়ির সংখ্যা ৭৬। এই গাড়িগুলো দেশের ৩ হাজার দুই শটি এলাকায় বই দেওয়া-নেওয়া করে। এই লাইব্রেরির পাঠক সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত