Ajker Patrika

নির্যাতনে চারটি দাঁত হারায় শিশু গৃহকর্মী, মেয়েটি উদ্ধার হয় যেভাবে 

ঢামেক প্রতিনিধি
নির্যাতনে চারটি দাঁত হারায় শিশু গৃহকর্মী, মেয়েটি উদ্ধার হয় যেভাবে 

ঢাকা মেডিকেলের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে শরীরে দগদগে ঘা নিয়ে শুয়ে আছে সাড়ে পাঁচ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার কল্পনা (১৩)। মাথা থেকে পা পর্যন্ত কোথাও নির্যাতন করা বাকি নেই। বাম পায়ে দগদগে ঘা। মুখে আঘাত। সামনের চারটি দাঁত নেই। শরীরেও আঘাতের শেষ নাই।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই ব্লকে দিনাত জাহান আদরের বাসায় পাঁচ বছর ধরে গৃহপরিচারিকার কাজ করে আসছে কল্পনা। নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা দিয়ে মেয়েটি জানায়, ‘কাজে ভুল হলেই হেয়ার স্টেট মেশিন দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। ঘর পরিষ্কার করার কাঠের ব্রাশ দিয়ে মেরে ভেঙে ফেলা হয় সামনের চারটি দাঁত।’

কল্পনা আরও জানায়, ওই ম্যাডাম বাসায় রান্না করত না। বাইরে খেত। আমি কোনো রকম একটু রান্না করে খাইতাম। বাইরে বের হওয়াতো দূরের কথা, বাড়িতে কথা বলতে গেলে সামনে বসে থাকত। নির্যাতনের কথা বলতে পারতাম না। শুধু মাসে মাসে পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিত। আর পাঁচ হাজার জমিয়ে রাখত পরে দেবে বলে। এমনকি ম্যাডামের ভাই আনার মাঝে মাঝে বাসায় আসত। সেও মারধর করত। একবার আমার সঙ্গে খারাপ কাজ (ধর্ষণ) করতে চাইছিল, তবে পারে নাই।

কল্পনা আরও জানায়, ওই বাসায় একটি বিড়াল পোষা হতো। বিড়ালটি অসুস্থ হওয়ায় শনিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে একজন ডাক্তার আসেন। এ সময় কল্পনা বাঁচার আকুতি জানান ডাক্তারের কাছে। তখন ডাক্তার একটি ভিডিও করেন। 

জানা যায়, ডাক্তারের করা ভিডিও একটি বেসরকারি টেলিভিশনের রিপোর্টারকে দেন। ওই রিপোর্টার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সহযোগিতায় ভাটারা থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বসুন্ধরার বাসায় যান। এরপর তাকে উদ্ধার করে শনিবার রাত সোয়া ২টার দিকে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার মেয়েটিকে আমাদের হাসপাতাল থেকে যতটুকু সাপোর্ট দরকার, তার সবটুকুই দেওয়া হবে। বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসকেরা তাকে দেখছেন। এ ছাড়া অন্য চিকিৎসকেরাও তাকে দেখবে।’ 

ভুক্তভোগী গৃহকর্মীর বিষয়ে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পোড়া ক্ষত আছে। মেটাল জাতীয় কোনো জিনিস দিয়ে বিভিন্ন সময় তাকে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে। যখন তার চিকিৎসার দরকার ছিল, তা পায়নি। নিজে নিজে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যার ফলে ইনফেকশন হয়ে গেছে। মেয়েটির মুখ থেকে শুরু করে হাত, পা, বুক, পিঠসহ বিভিন্ন জায়গায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা একদিনে করা হয় নাই। বিভিন্ন সময় এই কাজ করা হয়েছে। যেটা এখন বিকৃত হয়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গা শুকিয়ে গেছে, কিছু জায়গায় শুকায়নি। তার চারটা দাঁত পড়ে গেছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমানে মেয়েটি মানসিকভাবেও দুর্বল হয়ে পরেছে। তার শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক চিকিৎসাও দরকার। মেয়েটির যে ক্ষত হয়েছে, তার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দরকার। তার শরীরে রক্ত কম আছে। আজকের মধ্যেই রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। মেয়েটি সর্বনিম্ন সাত থেকে আটটি অস্ত্রোপচার লাগবে। তিন থেকে চার মাস হাসপাতালে থাকতে হবে।’ 

এ বিষয়ে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘গত রাতে খবর পেয়ে বসুন্ধরার বাসা থেকে ওই গৃহকর্মীকে উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার সারা শরীরে পোড়া ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। গত রাতেই গৃহকর্মীর মা আফিয়া বেগম বাদী হয়ে নারী শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন। মামলায় গৃহকর্ত্রী দিনাত জাহান আদরকে (২১) গ্রেপ্তার করা হয়। আজ (রোববার) তাঁকে আদলতে পাঠানো হয়েছে।’ 

গৃহকর্মী কল্পনার মা আফিয়া বেগম বলেন, ‘ওই বাসায় পাঁচ বছর ধরে কাজ করে আসছে কল্পনা। শুরুর দিক থেকেই নির্যাতন শুরু হয় তার ওপর। কাজের ভুল ধরে তাকে বিভিন্ন সময় চুল সোজা করার মেশিন দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। রড দিয়ে মারধর করত।’ 

তিনি আরও জানান, এই পাঁচ বছর পরিবারের সঙ্গে তার দেখা করতে দেওয়া হয়নি। শুধু বিকাশের মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা পাঠাত। গতকাল রাতে পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে মেয়েকে দেখতে পেয়েছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ব্যানারে বিমানবন্দর এলাকায় আ.লীগের মিছিল

ইটনায় এবার ডিলার নিয়োগে ঘুষ চাওয়ার কল রেকর্ড ফাঁস

‘ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির’, কারখানার ভেতর আত্মহত্যার আগে শ্রমিকের ফেসবুক পোস্ট

কুষ্টিয়ায় গভীর রাতে বিএনপি নেতার বাড়িতে গুলি, দেখে নেওয়ার হুমকি

মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনে প্রক্রিয়া মানা হয়নি: ইউনেসকো

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত