Ajker Patrika

সুমিত্রার বন্ধুর পথ সহজ করতে ঘর ও হুইলচেয়ার দিল প্রশাসন

আবদুর রাজ্জাক (মানিকগঞ্জ) ঘিওর 
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ২২: ০৮
সুমিত্রার বন্ধুর পথ সহজ করতে ঘর ও হুইলচেয়ার দিল প্রশাসন

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কেল্লাই বাজার থেকে দুই কিলোমিটার মেঠোপথ পেরোলে গাংডুবী গ্রাম। প্রবেশপথে বিশালাকৃতির বটগাছ। বটছায়ার তলে কোলাহলমুখর প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়েই পড়াশোনা করেছে সুমিত্রা। কৃতিত্বের সঙ্গে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে সে এখন স্থানীয় মুনসুর উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

তবে সুমিত্রার গল্প আর দশজনের মতো মসৃণ নয়, বড়ই বন্ধুর। জন্মের পর থেকেই সুমিত্রা বালো প্রতিবন্ধী। দুই পা অবশ। সমস্যা রয়েছে এক হাতেও। এসবের কিছুই দমাতে পারেনি দৃঢ়চেতা সুমিত্রাকে। বুকে ভর আর হামাগুড়ি দিয়ে ১০ বছর ধরে স্কুলে করেছে সে। বুদ্ধিদীপ্ত ও মেধাবী মেয়ে সুমিত্রার কথাবার্তা বেশ সুস্পষ্ট।

পৃথিবীতে আসার দুই বছরের মাথায় মারা যায় সুমিত্রার বাবা গোবিন্দ বালো। এরপর নদীভাঙনে চলে যায় তাদের ঘরবাড়িও। এরপর মা গীতা রানী ও মেয়ে সুমিত্রা আশ্রয় নেন নানা প্রফুল্ল মণ্ডলের বাড়ি গাংডুবী গ্রামে। প্রফুল্ল মণ্ডলেরও অভাবী সংসার। তিনি মেয়ে ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি নাতিনের ভরণ-পোষণ ও চিকিৎসা খরচ মেটাতে পারছিলেন না।

প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় শুরু হয় গীতার সংগ্রামী জীবন। হাঁস-মুরগি আর ছাগল পালন করে যে আয় হয়—তা দিয়েই চলে মা-মেয়ের জীবন। সুমিত্রা পড়াশোনা চালিয়ে যায়। পেরোতে থাকে একের পর এক শ্রেণি। স্বপ্ন দেখতে থাকে তার মতো প্রতিবন্ধকতার শিকার মেয়েদের এগিয়ে নেওয়ার। সমাজের সব মানুষের সেবা করার।

সংগ্রামী ও অসহায় এই পরিবারের সন্ধান পেয়ে ২০১৪ সালে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে সুমিত্রাকে দেওয়া হয় প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। এরপর কেটে গেছে বেশ কয়েক বছর। সুমিত্রা এখন বড় হয়েছে, সামনে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। নেই জমি, নেই ঘর।

মানিকগঞ্জের ঘিওরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের পাশে মেধাবী শিক্ষার্থী সুমিত্রা বালোএ অবস্থায় ঘিওর উপজেলা প্রশাসন পাশে দাঁড়িয়েছে অসহায় এই পরিবারের। গত মাসে সুমিত্রাকে দেওয়া হয়েছে উন্নতমানের হুইলচেয়ার। সরকারি বন্দোবস্তে ২ শতক জমি ও সুদৃশ্য পাকা ঘর। মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফের তত্ত্বাবধানে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হামিদুর রহমানের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন।

আজ বুধবার দুপুরে ওই বটবৃক্ষের পাশে দাঁড়িয়েই ঘর নির্মাণকাজ তদারকি করেছেন ইউএনও হামিদুর রহমান। চলতি মাসের মধ্যেই পরিপূর্ণ হবে নির্মাণকাজ। ইউএনও বলেন, ‘সুমিত্রা মেধাবী শিক্ষার্থী। তারা ভূমি ও গৃহহীন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরটি নির্মাণ করে দিতে পারায় আমি অনেক খুশি। পর্যায়ক্রমে তাদের স্বাবলম্বী করতে আরও কিছু করার পরিকল্পনা আছে।’

শারীরিক প্রতিবন্ধী সুমিত্রা বালো (১৫) বলে, ‘নতুন ঘর পেয়েছি। হুইলচেয়ারে এখন আমি সহজেই স্কুলে যাই। আপনারা আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন। কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে পড়ার আগ্রহ আমার। বড় হয়ে আমিও অসহায়দের পাশে দাঁড়াব।’

চলাচল সহায়ক হুইলচেয়ার, ভাতা, ২ শতাংশ জমি ও ১৯/২২ ফুটের পাকা ঘর পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জেলা প্রশাসক ও ইউএনওকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সুমিত্রা ও তার মা গীতা।

এ সময় ইউএনওর সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুল মান্নান, স্থানীয় নালী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস মধুসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত