Ajker Patrika

শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন অটোরিকশাচালক পাপ্পু, পথে গুলি করেন বাপ্পারাজ: র‍্যাব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গ্রেপ্তার মো. ইউসুফ সরদার (৪৫) ও মো. উজ্জল ওরফে কাঞ্চি (৩০)। ছবি: র‍্যাব-১০
গ্রেপ্তার মো. ইউসুফ সরদার (৪৫) ও মো. উজ্জল ওরফে কাঞ্চি (৩০)। ছবি: র‍্যাব-১০

রাজধানীর জুরাইনে কবি নজরুল লেন কানা জব্বারের গলিতে পাপ্পু শেখ (২৬) নামের এক সিএনজি অটোরিকশাচালককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার জুরাইন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-১০।

এর আগে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় পাপ্পু শেখকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আজ ডিএমপির কদমতলী থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন নিহত পাপ্পুর বাবা মিন্টু শেখ।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন মো. ইউসুফ সরদার (৪৫) ও মো. উজ্জল ওরফে কাঞ্চি (৩০)।

র‍্যাব-১০ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সিএনজি অটোরিকশাচালক মো. পাপ্পু শেখের (২৬) সঙ্গে স্থানীয় মাদক কারবারি বাপ্পারাজ ওরফে বাপ্পা গ্রুপের সঙ্গে মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে বিরোধ তৈরি হয়। এতে বাপ্পা গ্রুপের সদস্যরা তাঁকে মারার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গতকাল সন্ধ্যায় তাঁকে টার্গেট করা হয়।

র‍্যাব-১০ আরও জানায়, ঘটনাস্থলে বাপ্পারাজ ওরফে বাপ্পা (৪০) আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে পরপর তিনটি গুলি করেন এবং তাঁর মধ্যে একটি গুলি পাপ্পুর শরীরে লাগে। এতে তিনি লুটিয়ে পড়েন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আজ ময়নাতদন্ত শেষে নিহত পাপ্পুর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আইয়ুব আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ ঘটনার পর আজ নিহত পাপ্পু শেখের বাবা মন্টু শেখ বাদী হয়ে বাপ্পারাজসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। প্রাথমিকভাবে পূর্বশত্রুতার জেরে হত্যার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে জানা গেছে। হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে হত্যার ঘটনায় করা মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১০। আজ সকালে জুরাইনের আলমবাগ এলাকা থেকে মো. ইউসুফ সরদারকে এবং দুপুরে জুরাইন রেলগেট এলাকা থেকে মো. উজ্জল ওরফে কাঞ্চিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার মো. ইউসুফের বিরুদ্ধে মাদক আইনের মামলাসহ তিনটি মামলা রয়েছে এবং মো. উজ্জলের বিরুদ্ধে মাদক আইনে দুটি মামলা রয়েছে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যায় পাপ্পু শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য নিজ ভাড়া বাসা থেকে বের হন। পথে দেশীয় অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্রসহ আসামিরা তাঁর ওপর হামলা চালান। নিহত পাপ্পুর বাড়ি মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার বাসাবাড়ী গ্রামে। পাপ্পু সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন। স্ত্রী মোছা. জান্নাত ও এক ছেলেকে নিয়ে পূর্ব জুরাইনের মিষ্টির দোকান এলাকায় থাকতেন।

নিহত পাপ্পুর বাবা মন্টু শেখ বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় পাপ্পু বাসা থেকে বের হয়। এর ১০ মিনিট পরই খবর আসে, তাকে গুলি করা হয়েছে। গিয়ে শুনি, তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

মন্টু শেখ আরও বলেন, ‘আমার দুইটা ছেলে, পাপ্পু বড়। তার আড়াই বছরের একটা ছেলে আছে। তারা আমার নাতিটাকে এতিম করে দিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ রাখার হুমকি দেওয়া যুবশক্তির দুই নেতাকে অব্যাহতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
জাতীয় যুবশক্তির দুই নেতা গত সোমবার সাংবাদিকদের হুমকি দিচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাতীয় যুবশক্তির দুই নেতা গত সোমবার সাংবাদিকদের হুমকি দিচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীতে সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ করে রাখার হুমকি দেওয়া জাতীয় যুবশক্তির দুই নেতাকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দিনগত রাতে সংগঠনের যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) আসাদুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, গুরুতর সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় যুবশক্তির রাজশাহী মহানগর শাখার মূখ্য সংগঠক মেহেদী হাসান ফারাবি এবং যুগ্ম সদস্য সচিব সোয়াইব আহমেদকে কমিটির সকল দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

একই সঙ্গে শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত কর্মকাণ্ডের দায়ে এ দুজনকে কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না, সে বিষয়ে আগামী দুই দিনের মধ্যে লিখিত এবং স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম নির্দেশ প্রদান করেছেন।

আসাদুর রহমান আরও জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা প্রদান না করা হলে সংগঠনের নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, সোমবার রাজশাহী পর্যটন মোটেলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নতুন জেলা কমিটির পরিচিতি সভা ছিল। সে সভা পণ্ড করতে যান মেহেদী হাসান ফারাবি ও সোয়াইব আহমেদসহ এনসিপির গুটি কয়েক নেতাকর্মী। তারা অভিযোগ তোলেন, এনসিপির জেলা কমিটির নতুন আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের দোসর। তারা তার পদত্যাগ চান।

এ অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকরা মোটেলের সম্মেলন কক্ষে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলছিলেন। প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালে সম্মেলনকক্ষের ভেতরে প্রবেশ করেন সোয়েব আহমেদ ও মেহেদী হাসান ফারাবি।

ঢুকেই সোয়েব বলেন, ‘ভাই, সাংবাদিক যারা আছেন, এইটা যদি এখনই বন্ধ না করেন, আপনাদেরসহ আমরা তালা মেরে দেব। আপনারা পায়খানা-প্রস্রাব সব এইখানে করতে হবে।’

পাশ থেকে ফারাবি বলেন, ‘এত লোক সব বাইরে বসে আছে। আপনারা ফাইজলামি করছেন এখানে, নাকি?’ সাংবাদিকরা কিছু না বললে ফারাবি আবার বলেন, ‘ভাই, চিল্লাচ্ছি কানে যাচ্ছে না কথা?’

এরপর সোয়েব তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এখনই যদি বন্ধ না করেন এটা, আপনাদের সাংবাদিকদেরসহ কিন্তু আমরা তালা মেরে দেব।’

এরপরই সাংবাদিকরা এসে এর প্রতিবাদ করেন। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু দেয়।

সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রাতেই বিবৃতি দেয় রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখা। এছাড়া মঙ্গলবার রাজশাহী এডিটরস ফোরাম বিবৃতি দিয়ে এর নিন্দা জানায়।

সাংবাদিক সংগঠনগুলো এ ঘটনাকে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি এবং জুলাইয়ের চেতনাবিরোধী উল্লেখ করে অবিলম্বে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বনের টিলা কেটে ভবন নির্মাণ

  • সংরক্ষিত বনের মধ্যে বসবাসের জন্য অবৈধভাবে চলছে পাকা স্থাপনা নির্মাণকাজ।
  • রাজকান্দি বন রেঞ্জের সংরক্ষিত এলাকায় এমন বেশ কয়েকটি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়।
মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কালেঞ্জি গ্রামে বন রেঞ্জের সংরক্ষিত এলাকায় টিলা কেটে চলছে ভবন নির্মাণকাজ। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কালেঞ্জি গ্রামে বন রেঞ্জের সংরক্ষিত এলাকায় টিলা কেটে চলছে ভবন নির্মাণকাজ। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় সংরক্ষিত বনের মধ্যে বসবাসের জন্য অবৈধভাবে চলছে পাকা স্থাপনা নির্মাণকাজ। এ জন্য কাটা হয়েছে টিলা। রাজকান্দি বন রেঞ্জের সংরক্ষিত এলাকায় এমন বেশ কয়েকটি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবৈধভাবে এই স্থাপনা নির্মাণকাজ চলে।

সম্প্রতি রাজকান্দি বন রেঞ্জে আদমপুর ইউনিয়নের কালেঞ্জি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, টিলার একটি অংশ কেটে বসবাসের জন্য ভবন নির্মাণকাজ করছেন শ্রমিকেরা। তবে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তাঁরা ভয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আদমপুর ইউনিয়নের কালেঞ্জি গ্রামে সংরক্ষিত বনের জমিতে শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা ঘরবাড়ি তৈরি করে বাস করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি সেখানে নুরনবী, আব্দুল নবী, মহেব উল্যাহ নামের তিনজন ব্যক্তি পাশাপাশি তিনটি বাড়িতে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন। তাঁদের এই ভবন নির্মাণে বন বিভাগ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। ঘর নির্মাণের বিষয়টি জানার জন্য এসব বাড়িতে গিয়েও তাঁদের পাওয়া যায়নি। গত কয়েক বছরে এমন আরও কয়েকটি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয় সংরক্ষিত এই বনের জমিতে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বনের এই গ্রামে রাস্তার পাশেই বাড়িঘর। বন বিভাগের লোকজন প্রতিদিন কয়েক দফা এদিকে আসা-যাওয়া করেন। তাঁদের অনুমতি ছাড়া পাকা ঘর নির্মাণের সাহস কেউ করবে না।

এদিকে সংরক্ষিত এলাকায় ভবন নির্মাণের ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। কাটা পড়ছে টিলা ও গাছপালা।

জানা গেছে, ২০ হাজার ২৭০ একর এলাকা নিয়ে রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। আদমপুর, কুরমা ও কামারছড়া বন বিটের আওতায় রয়েছে এই বন। সীমান্তঘেঁষা এই বনে ২০১৮ সালে ‘বাংলাদেশ জার্নাল অব প্ল্যান্ট ট্যাক্সোনমি’তে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, বনটিতে ১২৩ উদ্ভিদ পরিবারের প্রায় ৫৪৯ প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ শনাক্ত হয়েছে। প্রায় ১২ প্রজাতির বটগাছ এবং ১০ প্রজাতির কাষ্ঠল লতার বৈচিত্র্য খুব কম বনেই আছে।

বনটিতে সোনালি বিড়াল, এশীয় কালো ভালুক, বনছাগল, খুদে নখের ভোঁদড়, বনরুইও রয়েছে। প্রায় ৩০০ প্রজাতির পাখির বিচরণও এই বনে। ১৯৭৩ সালে গৃহীত বিপন্ন বন্য প্রাণী এবং উদ্ভিদ প্রজাতির বাণিজ্যসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ বা সাইট্রাসভুক্ত বহু উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিচরণস্থল এই বন। বনটিতে বানর, হরিণ, উল্লুক, হনুমান, শূকরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও পাখির এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। নানা প্রজাতির পাখি, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ বনটিতে শুরু হয়েছে অবক্ষয়। বনের মধ্যে অবৈধভাবে পাকা স্থাপনা তৈরি করা গুরুতর অপরাধ। এটি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর অধীনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।

কমলগঞ্জের রাজকান্দি বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ বলেন, শুধু রাজকান্দি রেঞ্জ নয়, কোনো সংরক্ষিত বনের মধ্যে পাকা স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি নেই। পাকা ঘর যারা নির্মাণ করেছে, তাদের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।

মৌলভীবাজার বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) নাজমুল আলম বলেন, ‘সংরক্ষিত বনে পাকা ঘর নির্মাণ করা যাবে না। আমি বিষয়টি এখন জানলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক তৌহিদুজ্জামান পাভেল বলেন, ‘বিষয়টি আমি এখন জানতে পারলাম। সংরক্ষিত বনের মধ্যে কেউ অবৈধভাবে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজীপুরের শ্রীপুর: দখলের কবলে সুতিয়া মোহনা-চরে প্রাচীর

  • নদীর চরে চলছে উঁচু সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কর্মযজ্ঞ।
  • একই সঙ্গে হুমকিতে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র আর শীতলক্ষ্যা।
রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর)  
গাজীপুরের শ্রীপুরে তিন নদীর মোহনায় চর দখল করে নির্মিত প্রাচীর।	ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুরের শ্রীপুরে তিন নদীর মোহনায় চর দখল করে নির্মিত প্রাচীর। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে তিন নদীর মোহনায় উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করে সুতিয়া নদীর বিরাট অংশ দখলের ঘটনা ঘটেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর চরে চলছে উঁচু সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। এতে করে মারাত্মক দখলের কবলে পড়ছে স্বচ্ছ জলের নদী সুতিয়া। একই সঙ্গে হুমকিতে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র আর শীতলক্ষ্যা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসন ও নদী রক্ষা সংশ্লিষ্টদের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নদীর চর জবরদখলের হিড়িক চালাচ্ছেন এক প্রভাবশালী। মাদ্রাসার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নদীর চরে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছেন। প্রভাবশালীর ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পান না স্থানীয়রা। নদীর মোহনায় উঁচু প্রাচীরে প্রতিবন্ধকতা তৈরির ফলে নদীভাঙনের শঙ্কা করছেন জনপদের বাসিন্দারা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামে ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা ও সুতিয়া—তিনটি নদী মিলিত হয়েছে। সুতিয়া নদীটি নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রাম ঘেঁষে বয়ে গেছে। ঠিক তিন নদীর মোহনায় সুতিয়ার শুরুতেই উঁচু সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে জবরদখলে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নদীর বিরাট অংশ দখলে নিয়ে সীমানাপ্রাচীরের এক অংশের কাজ শেষ করেছে। অপর অংশের নির্মাণকাজ চলমান। নদীর অনেক অংশ ইতিমধ্যে দখলে নিয়েছে। স্থানীয় ওয়াহিদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি মাদ্রাসার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নদীর চর দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, সীমানাপ্রাচীরের ভেতর কমপক্ষে এক বিঘা জমি জবরদখলে নিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ নদীর জায়গা।

স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, যেখানে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটি সম্পূর্ণ নদীর জায়গা। একসময় এখানেই নদী ছিল। কয়েক বছর যাবৎ এখানে চর জাগে। এখনো বর্ষার শুরুতেই থইথই পানি থাকে। অনেক স্রোত বহমান এই জায়গা দিয়ে। এখানে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরির কারণে নদীভাঙন শুরুর আশঙ্কা রয়েছে। এমন একটি জায়গায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে তিনটি নদীর পানি প্রবাহিত হয়। বর্ষাকালে অনেক বেশি স্রোত থাকে।

নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, যিনি নদীর জমি জবরদখল করছেন, তিনি তো সমাজের একজন কর্তাব্যক্তি। উনি কী করে এমনটি করতে পারেন? এখানে তো কয়েক বছর আগেও নদী ছিল। কয়েক বছর হলো চর জাগছে। আবার হয়তোবা নদী হবে। মোহনার কাছে নদী একটি স্টেডিয়ামের মতো বড়। আজ দখল হতে হতে এতটুকু। তাও আবার উঁচু সীমানা নির্মাণ করে।

অভিযুক্ত ওয়াহিদুল রহমান বলেন, ‘আমার নিজস্ব জমিতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছি। এখানে কিছু অংশ থাকতে পারে নদীর। তবে মাপজোখ করা হয়নি।’ ‘আপনি তো নদীর বিরাট অংশ দখলে নিয়েছেন, যেটা দৃশ্যমান নদী।’ এ কথার জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন নদী নেই।’

নদী পরিব্রাজক দল শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা একটি বড় দখল। এমন দৃশ্যমান দখলের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে সীমানাপ্রাচীর অপসারণের উদ্যোগ নেবে।’

ইউএনও সজীব আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। দ্রুত সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কুমিল্লা দক্ষিণের ৬ আসন

ভোটের মাঠে: বিএনপি বিভক্তির সুযোগে আশা দেখছে জামায়াত

  • ছয় আসনের তিনটিতেই বিভক্ত বিএনপি।
  • জেলার কেন্দ্রস্থল কুমিল্লা-৬ আসনে বিরোধ চরমে।
  • চৌদ্দগ্রামে আলোচনায় জামায়াত নেতা ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ, কুমিল্লা
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৪১
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কুমিল্লা দক্ষিণের ছয় আসনের সব কটিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। তার আগে থেকেই এলাকায় সরব জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে ছয় আসনের তিনটিতেই বিএনপির বিভক্তি সামনে এসেছে। বিশেষ করে জেলার কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত কুমিল্লা-৬ আসনে বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। আসনটিতে দলের প্রাথমিক মনোনয়নবঞ্চিত আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন বলেন, কুমিল্লার মানুষের জন্য শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত কাজ করতে প্রস্তুত। বিএনপির কোন্দলের সুযোগে ভোটের মাঠে আশা দেখছে জামায়াত।

কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া)

আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সভাপতি হাজি জসিম উদ্দিন। তবে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে ইতিমধ্যেই প্রচারে নেমেছেন বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ টি এম মিজানুর রহমান। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও শিবিরের সাবেক সভাপতি ড. মোবারক হোসেন। নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। ইসলামী আন্দোলন থেকে আলোচনায় আছেন রাশেদুল হক রহমতপুরী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ব্যারিস্টার সোহরাব। এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট জোবায়েরও স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর-সিটি করপোরেশন-সদর দক্ষিণ)

জেলার কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী। তবে তাঁর প্রাথমিক মনোনয়নে ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের একাংশ। আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিনকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার দাবিতে এলাকায় একের পর এক নানা কর্মসূচি পালন করছেন তাঁর অনুসারীরা। উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, এমনকি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর সংঘাত আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘দল অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব নিয়েছে। খুব দ্রুত সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’ অন্যদিকে হাজী ইয়াছিন বলেছেন, ‘কুমিল্লার মানুষের জন্য শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত কাজ করতে প্রস্তুত। জনগণই আমার শক্তি, তাঁদের ভালোবাসাই আমার মূল প্রেরণা।’

বিএনপির তীব্র অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগে এখানে আশা দেখছে জামায়াত। নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিয়মিত সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থী কুমিল্লা মহানগর আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘নিজেরা দুর্নীতি করব না, কাউকেও করতে দেব না। লুটপাট, চাঁদাবাজি ও দখলদারত্বমুক্ত কুমিল্লা গড়ব।’ এনসিপি থেকে নির্বাচন করতে পারেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সমন্বয়ক নাভিদ নওরোজ শাহ। এবি পার্টির মিয়া মোহাম্মদ তৌফিক এবং ইসলামী আন্দোলনের মোহাম্মদ হারুনুর রশিদও সক্রিয় রয়েছেন।

কুমিল্লা-৮ (বরুড়া)

এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা শাখার সভাপতি জাকারিয়া তাহের সুমন। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শফিকুল আলম। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। ইসলামী আন্দোলন থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন মুফতি সাদিক মাহমুদ বিন নূরী।

কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ)

বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন দলের লাকসাম উপজেলা সভাপতি মো. আবুল কালাম। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ এ কে এম সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকী। দুজনেই এলাকায় ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলন থেকে প্রার্থী হতে পারেন সেলিম মাহমুদ।

কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট-লালমাই)

আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের নাঙ্গলকোট উপজেলা শাখার সদস্য আবদুল গফুর ভূঁইয়া। যদিও মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার মনোনয়ন দাবিতে এলাকায় রেলপথ ও মহাসড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে তাঁর অনুসারীরা। দীর্ঘদিন থেকেই এলাকায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের মজলিশে শুরা সদস্য ইয়াসিন আরাফাত। এনসিপির মনোনয়ন পেতে পারেন জয়নাল আবেদীন।

কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম)

জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের নায়েবে আমির সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। হেভিওয়েট প্রার্থী হওয়ার পাশাপাশি এলাকায় দলীয় অবস্থান বিবেচনায় আসনটি নিয়ে আশাবাদী জামায়াত। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে আগেও এলাকার উন্নয়নে সোচ্চার ছিলেন তিনি। নির্বাচিত হলে এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, উন্নয়নকাজের পরিসর আরও বাড়ানো হবে। বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন দলের উপজেলা সভাপতি কামরুল হুদা। জামায়াত প্রার্থীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ২০০১ সালের হিসাব এখন আর চলবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত